চিলেকোঠায়_সমাপ্তি বারোতম_পর্ব(শেষ)

0
2377

 


 

#চিলেকোঠায়_সমাপ্তি
বারোতম_পর্ব(শেষ)
~মিহি

সিদ্ধি বিছানায় শুয়ে, এখনো জ্ঞান ফেরেনি তার।তাহমিদের রাগে হাত-পা কাঁপছে। সিদ্ধিকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হচ্ছে,”আংটিটা পড়েই জ্ঞান হারাতে পারলি না?” তারেক রহমান গেস্টদের এটেন্ড করছেন।তাহমিদ সিদ্ধির পাশে বসে নখ কামড়াচ্ছে। একটু পরেই তারেক রহমান এসে বসলো তাহমিদের পাশে।

-“ভালোই হয়েছে মেয়েটা অজ্ঞান হয়েছে। বিদেশী কোম্পানির লোকগুলোর আসতে আরো আধ ঘণ্টার মতো লাগবে।”

-“বাবা, রাখো তো তোমার কোম্পানি। যত তাড়াতাড়ি বাগদান শেষ হবে তত ভালো। তারপরেই ঐ আয়াশকে মেরে ফেলবো আমি।”

-“সবদিক ভাবতে হয়। কোম্পানিটার সাথে আমাদের ডিল হয়েছে, এরপর সম্মান না দিলে পরে বিপদে পড়বো। কি এক গ্রামের স্কুল, তা নিয়ে আবেগের শেষ নাই। ঐ রফিকউদ্দিনকে মারাটা কিন্তু সহজ ছিল নাহলে এত সহজে স্কুলের প্রপার্টি পেপার্স আমরা পেতাম না। গ্রামে ঐ একটাই ছিল অতিশিক্ষিত, ঐটা মরছে। ব্যস! কয়েক লাখ টাকার বদলে কোটি টাকার ডিল লক হলো। চার লাখ টাকার জমি বেচলাম আড়াই কোটি দিয়ে।”

-“তোমার টাকার গল্প রাখবা? জ্বালিয়ো না তো বাবা।”

-“যাচ্ছি। সিদ্ধি উঠলে নিচে নিয়ে আয়।”

তারেক রহমান চলে গেল। তাহমিদ সিদ্ধির দিকে তাকিয়ে আছে। ঘুমন্ত এই সিদ্ধিকে তার পছন্দ নয়। তার পছন্দ নিশ্চুপ সিদ্ধিকে যে চুপচাপ তার কথাগুলো শুনবে শুধু। বিরক্ত লাগছে তার। বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে সিদ্ধির কাছ থেকে উঠে নিচে বন্ধুদের কাছে আসে তাহমিদ।

সিদ্ধি আজও ক্যাম্পাসে আসেনি, ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। অয়নের কিছুটা চিন্তা হচ্ছে, তার উপর শ্রুতির সকাল থেকে মনমরা হয়ে বসে আছে। শ্রুতিকে ডাকলো অয়ন।

-“শ্রুতি, কী হয়েছে তোর?”

-“শ্রাবণ চলে গেছে রে।”

-“চলে গেছে মানে? কাল না তোর ওকে প্রপোজ করার কথা ছিল? সেজন্যই তো তোদের প্রাইভেসির কথা ভেবে আমরা কেউই যাইনি।”

-“তুই আর সিদ্ধি যাসনি, তানভী ঠিকই গিয়েছিল। আমার আর শ্রাবণের সম্পর্কটা নষ্ট করার জন্যই গিয়েছিল ও।”

-“কী বলছিস কী এসব? মাথা ঠিক আছে তোর? ও কেন তোর আর শ্রাবণের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে?”

-“জানিনা আমি।”

-“কী হয়েছে পরিষ্কার করে বল তো।”

শ্রুতি গতরাতের ঘটনা সব বললো অয়নকে। তানভীর কাণ্ডকারখানা শোনার পর অয়নের মাত্রাতিরিক্ত রাগ উঠলো। কতটা নোংরা হলে কেউ একইসাথে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার অবমাননা করতে পারে? তানভীর কথা না হয় বাদই দিল অয়ন কিন্তু শ্রাবণ? সেও এত সহজে হার মেনে নিল? নাহ! আর চুপ করে থাকলে এ বন্ধুত্বের অস্তিত্বই থাকবে না। সিদ্ধিকে জানাতে হবে সব।

-“শ্রুতি! আমার মনে হয় আমাদের সিদ্ধির সাথে কথা বলতে হবে।”

-“ওর ফোন তো অফ। ওর বাড়িতে যাই চল।”

-“হুম চল।”
____________________

ইন্সপেক্টর জয়নব বেশ সন্তর্পণে গোডাউনটার দিকে এগোচ্ছেন। এই গ্যাংটাকে ধরতে পারলে আজ তার প্রমোশন আর যদি না পারেন তাহলে খবর লিক হয়ে সাসপেন্ড। কনস্টেবল সোহেলও আশেপাশের দেখে পা ফেলছে জয়নবের পেছন পেছন। আচমকা সামনে তাকাতেই দেখলো তালাবদ্ধ একটা গোডাউন, আশেপাশে কেউ নেই। জয়নবের একটু সন্দেহ হলো, কাউকে আটকে রাখলে তো আশেপাশের অন্তত একজনকে রাখা উচিত লক্ষ রাখার জন্য কিন্তু সেরকম কাউকেই তো এখানে দেখা যাচ্ছে না। মস্তিষ্কটাকে আসামীর মতো করে খাটালো জয়নব। যদি সে আসামী হত, তাহলে এখানে কোন লোক রাখত না কেন? কেউ যাতে সন্দেহ না করতে পারে? মস্তিষ্কের দেওয়া সাজেশনটা পছন্দ হলো জয়নবের। ধীরে ধীরে গোডাউনের ভেতরে ঢুকলো সে। সোহেলও পেছন পেছন ঢুকলো। ভেতরে ঢুকতেই জয়নব দেখলো চেয়ারে দুজনকে শিকল দিয়ে বাঁধা, দুজনই অজ্ঞান। সোহেলকে বলে শিকল খোলানোর ব্যবস্থা করল সে। অতঃপর আয়াশ এবং তূর্যর মুখে পানি ছিটালো। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরলো দুজনের কিন্তু মাথার পেছনের অংশটা তখনো ব্যথা করছে আয়াশের। ইন্সপেক্টর জয়নব তূর্যের পিঠে চাপড় দিয়ে এপ্রিশিয়েট করলেন।

-“থ্যাংকস তূর্য। তুমি আগেই আমাকে সব না জানালে আমরা এতদূর আসতে পারতাম না। অবশ্য তোমার হ্যালো শোনার পর আর কোন কথা না শুনে ভয়ই পেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা কল কাটতে ভুলে গিয়েছিল এণ্ড থ্যাংক গড ওদের সব কথা রেকর্ড হয়েছে।”

-“ধন্যবাদ তো আমাদের আপনাকে দেওয়া উচিত স্যার।”

-“তোমরা তাড়াতাড়ি জীপে এসে বসো, আমি অপেক্ষা করছি। আর শুনো তোমার চাচা নিজের সব দোষ স্বীকার করেছেন কিন্তু এও বলেছেন যে রফিকউদ্দিনের খুনে তার কোন হাত নেই। দুলাভাই তাকে মাফ করেছেন। তুমিও করে দাও।”

জয়নব আর সোহেল চলে যেতেই আয়াশ বাঁকা দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকায়।

-“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তুই যেদিন সব বললি, সেদিনই আমি ইন্সপেক্টর সাহেবকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। উনি সম্পর্কে আমার দূরসম্পর্কের মামা হন।”

-“বুঝলাম। এখন চল, সিদ্ধির ওখানে যেতে হবে।”

-“হুম চল।”

__________________

সিদ্ধিকে বাড়িতে না পেয়ে আশেপাশে খোঁজ নিয়ে শ্রুতি-অয়ন জানতে পারলো আজ সিদ্ধির বাগদান আর সিদ্ধির বাবা হাসপাতালে। ওরা চটজলদি তাহমিদের ঠিকানা নিল। ভেবেছিল হয়তো এসে দেখবে বাগদান চলছে কিন্তু তা হলো না। শ্রুতি আর অয়ন এসে দেখলো সিদ্ধির জ্ঞান নেই, তখনো বিছানায় সে। শ্রুতির কান্না পাচ্ছে এখন। এত দ্রুত বুঝি জীবনের মোড়গুলো ঘোরে? এই তো দুদিন আগেও সব স্বাভাবিক ছিল।
বিদেশী কোম্পানির লোকগুলো এসেছে। তারেক রহমান বেশ তোষামোদ করছেন তাদের। তাহমিদের রাগে গা জ্বলছে। সবাইকে কি খেতে ডেকেছে সে? যে জন্য ডেকেছে, সেই কাজটাই তো হচ্ছে না। সিদ্ধির ঘরে এখন শ্রুতি আর অয়ন বসে। তাহমিদ ছাদে, নিচে কী হচ্ছে তার কোন ধারণা নেই। আচমকাই খবর পেল সিদ্ধির জ্ঞান ফিরেছে। তাহমিদ হন্তদন্ত হয়ে নিচে গেল। সিদ্ধির পাশে বসলোবেশ উত্তেজিতভাবে। পাশে যে শ্রুতি আর অয়ন ছিল তা খেয়ালই করলো না।

-“তুমি ঠিক আছো তো? কী হয়েছিল তোমার? উফফ! কত্ত টেনশন করছিলাম। আঙ্কেলও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চলো তাড়াতাড়ি বাগদান সেরে আঙ্কেলের কাছে যেতে হবে।”

-“কী হয়েছে বাবার?”

-“তেমন কিছু না! সেসব কথা পরে, আগে তো আংটিবদল হোক।”

-“আমার বাবার অসুখ আর আপনি পড়ে আছেন আংটি নিয়ে?”

-“তুই যাবি কিনা? চল!”

সিদ্ধি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এমন করছে কেন ছেলেটা। শ্রুতি আর অয়নও অবাক। শেষমেষ তাহমিদ সিদ্ধির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো। সিদ্ধি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আরো চেপে ধরলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সিদ্ধিকে ওয়ার্ন করলো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাগদান না হলে তার বাবাকে মেরে ফেলা হবে। তাহমিদের কথায় আঁতকে উঠলো সিদ্ধি। এ কোন ঝামেলায় পড়লো সে? তাহমিদ নিজেও জানেনা সে কী করছে। সিদ্ধিকে পাবার আকুলতায় মানসিকভাবে উত্তেজিত সে। সিদ্ধিকে নিচে নিয়ে আসতেই পুলিশ ঢুকলো বাড়িতে। জয়নব, সোহেলসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ ঘিরে ধরলো তারেক রহমান আর তাহমিদকে। “ইউ বোথ আর আন্ডার এরেস্ট।” জয়নব বললো। বিদেশী কোম্পানির লোকগুলো পালানোর চেষ্টা করলেও সক্ষম হলো না। পুলিশরা সামান্য একটু অন্যমনস্ক হতেই সুযোগটা নিল তারেক রহমান। সিদ্ধির কপালে বন্দুক ঠেকাল। তাহমিদের তখনো রাগে শরীর জ্বলছে। তার উপর নিজের বাবার এমন কাণ্ডে সে আরো বিরক্ত। পকেটে থাকা রিভলবারটা তারেক রহমানের দিকে তাক করে বললো,”বাবা ছাড়ো ওকে।” তারেক রহমান ছাড়লেন না। নিজের পালানোর একমাত্র রাস্তাকে কী করে ছাড়বেন তিনি? তাহমিদ গুলি ছুঁড়লো। সোজা গিয়ে লাখল তারেক রহমানের কপাল বরাবর। সাথে সাথে ঢলে পড়লেন তিনি। সব নিস্তব্ধ। পুলিশ ধীরে ধীরে সবাইকে নিয়ে গেলো। সিদ্ধি ভয়ে যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে। আয়াশ ধীরে ধীরে এসে সিদ্ধিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। সিদ্ধি কাঁদতে কাঁদতে বললো,”বাবা হাসপাতালে, আমি বাবার কাছে যাবো।”

আটমাস পর||

-“অবশেষে বিয়েটা হচ্ছে মিস.চাশমিশ!”

-“নিজেও তো চশমা পড়েন।”

-“ইশস! জেনে গেছো? হুশশ!”

-“হুহ!”

ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল দুজন। আজ বিয়ে অথচ বর বউ কিনা ছাদে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। একটু পরেই শ্রুতি এসে নিয়ে গেল সিদ্ধিকে, সাথে আয়াশকে ভেংচি কেটে গেল। আয়াশ কেবল হাসলো, কিছু বললো না।

-“তানভীর খোঁজ পেলি?”

-“না রে সিদ্ধি। ওর আগের বাড়িতে কেউ থাকেনা। যেটুকু খোঁজ নিলাম ও নাকি বিয়ে করে স্বামীর সাথে বিদেশে গেছে।”

-“শ্রাবণ?”

-“আন্টিকে বলেছিলাম। আসবে কিনা জানিনা।”

-“তোর কী মনে হয়?”

-“শ্রাবণ আসবে আর শুধু আসবেই না, ফিরবেও। আমার জন্য।”

-“আয় হায়!”

শ্রুতি লজ্জা পেল। সিদ্ধিকে সাজিয়ে বাইরে আসতেই চোখে পড়ল পরিচিত মুখটা। অয়নের সাথে কথা বলছে সে, গায়ে নীলরঙা পাঞ্জাবি। আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে ছেলেটা। শ্রাবণকে দেখে শ্রুতির মাথায় কবিতার লাইনগুলো ভেসে উঠে,”দেখা হলো বছর চারেক পর।” অবশ্য শ্রাবণ এখনো শ্রুতিরই আছে। শ্রাবণ শ্রুতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। শ্রুতি তাকিয়ে রয় সেদিকে। পূর্ণতার অনুভূতিটা খুব সুন্দর, তাই না?

______________________

“এত সুন্দর সমাপ্তি হবে? এত সহজে নাহ! অন্তত আমি থাকতে তো না-ই। তোমাদের জীবনে কেবল দুঃখ আসবে আয়াশ-সিদ্ধি। দুঃখের সাগরে ভাসবে তোমরা, তীরে দাঁড়িয়ে তোমাদের মৃত্যু উপভোগ করবো আমি।” বিকট শব্দে হাসে ব্যক্তিটি …

সমাপ্ত||

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আসলে অনেক বেশি পর্বের গল্প লিখিনা, অল্প পর্বের মধ্যে সবটুকু লেখার চেষ্টা করি। এন্ডিং দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন না, এই গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায় আসবে শীঘ্রই। ধন্যবাদ সবাইকে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here