#নতুন_শহরে
#কুরআতুল_আয়েন
৬.
রাতের খাবার না খেয়েই ইসু ঘুমিয়ে পড়ে।সারাদিনের কান্নার ফল এখন ঘুমে পরিণত হয়েছে।সকালে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ইসুর ঘুম ভেঙে যায়।ভিতরের অসহ্য রকমের অস্থিরতা নিয়ে ইসু বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো।ইস্পাতের কথা মনে আসতেই ইসু বাচ্চাদের মতো কেঁদে দেয়।বিছানার চাদর টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ইসু বিরবির করে বলতে লাগলো,
‘আমি আপনাকে অন্য কারোর সাথে সহ্য করতে পারবো না।কেন আপনি রাজি হয়ে গেলেন বিয়েতে!!আমি আপনাকে নিজের হৃদয়ের গহীনে অনুভব করতে পারি।আমার কিছুই ভালো লাগছে না।আপনাকে শুধু কাছে পেতে ইচ্ছে করছে স্যার!’
ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে নিচে নেমে পড়ে ইসু।মনমরা হয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।কিছুটা সামনে আগালেই ভার্সিটির প্রাঙন।রুমুকে ফেলেই ইসু চলে আসে।নিজেকে একা রাখতে খুব ইচ্ছা করে ইসুর।ভার্সিটিতে গিয়ে কোনোমতে ক্লাস শেষ করে পুনরায় বেরিয়ে পড়লো ইসু।সামনে ইস্পাত আর শিমুকে দেখে ইসুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।তার উপর ইস্পাত শিমুর হাত টা আঁকড়ে ধরে আছে।কোনোমতে ইসু দু’জনকে ক্রস করে চলে আসলো।তবে,ইসুর খুব কষ্ট হয়েছে দু’জনকে ডিঙিয়ে আসতে।টুপ টুপ করে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।একপ্রকার দৌড়েই ইসু ভার্সিটি পেরিয়ে বাসায় চলে আসলো।সারাটা রাস্তা ইস্পাতের কথা মনে করে এসেছে।
ইস্পাত দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে শিমুর হাত টা ছেড়ে দিলো।দূর থেকে ইসুকে দেখেই রাগে শিমুর হাত টা ধরেছিলো।ইস্পাত একবার শিমুর দিকে তাকালো।হাত ধরাতে কি খুশিই না হলো মেয়েটা।শিমুর ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখে ইস্পাতের খুব রাগ লাগছে।ভ্রু কুঁচকে একবার শিমুর দিকে তাকিয়ে জায়গা ত্যাগ করার জন্য দ্রুত গতিতে হাঁটা ধরলো।শিমু ইস্পাতের এরূপ আচরণে কিছুটা বোকা হয়ে গেলো।কেন জানি ইস্পাতের এই আচরণ টা শিমু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।কয়েকদিন পর তাদের বিয়ে তারা এখন দু’জন দু’জনকে সময় দিবে,আরো ভালো করে জানবে একে অপরকে,তা না করে ইস্পাত শুধু শিমুকে ইগনোর করে।আজকে যাও একটু হাত টা ধরেছিলো!তাও আবার কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিলো।শিমু ইস্পাতকে বকতে বকতে চলে যায় নিজের কেবিনে।
—-
চোখ,মুখ ফুলিয়ে ইসু ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো।দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একদফা কেঁদেও নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না।এখন প্রায় নয়টা বাজতে চললো।ছাঁদে কেউ নি।না হলে অন্যদিন আটটা পর্যন্ত অনেকেই থাকতো।ইসু ইচ্ছা করেই আজকে একটু দেরি করে এসেছে।সম্পূর্ণ একা সময় কাটানোর জন্য।চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে।আর নিচ থেকে বিভিন্ন গাড়িঘোড়ার আওয়াজ।ইসু একমনে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গণনার চেষ্টা করছে।অনেকক্ষণ সময় ব্যয় করে ইসু ছাঁদ থেকে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।কিন্তু,সিঁড়ির সামনে ইস্পাতকে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইসু উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়লো।চোখের কোণে লেগে থাকা পানিটা মুছে নিয়ে নিজেকে শক্ত করে পুনরায় হাঁটা ধরলো।
ইস্পাত ইসুকে লক্ষ্য করছে আর ভিতরে ভিতরে জ্বলছে।ইসু যদি একবার তাকে বিয়ে করতে মানা করে তাহলে সে এই বিয়ে ভেঙে দিবে।ইসুকে চলে যেতে দেখেই ইস্পাত কোমল কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ইসু!’
ইস্পাতের মুখে নিজের দু’অক্ষরের নামটা শুনে ইসু সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো।আচমকাই ভিতরে জমে থাকা অভিমান গুলো দলা পাঁকিয়ে গলায় এসে ভিড় করতে শুরু করলো।যেকোনো মুহূর্তে ইসু কান্না করে দিবে।ইসু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ইস্পাতের ডাক কে অবহেলা করে চলে যেতে নেয়।কিন্তু,ইস্পাত ইসুর হাত ধরে আটকিয়ে বললো,
‘তুমি খুশি তো ইসু!আমার বিয়ে হয়ে যাবে বলে!’
ইসু জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,
‘আমার খুশির জন্যই কি আপনি বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন স্যার?’
‘ধরে নাও অনেকটা ওইরকম।আমার বিয়ে হয়ে গেলে একজন তো আমার হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবে,আর তাকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না।আমার ছোঁয়া আর তার কাছে ফষ্টিনষ্টি মনে হবে।তবে এখন যা করবো শিমুর সাথে করবো।সে তো আমার হবু বউ।এইসবের অধিকার তো শুধু তার।’
ইসু মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কান্না দমানোর চেষ্টা করছে।ইসুর ঠোঁট ক্রমাগত কেঁপেই যাচ্ছে।ইস্পাত আড়চোখে ইসুকে খেয়াল করছে।ইসুর কোনো উত্তর না পেয়ে ইস্পাত আবারও বললো,
‘দাওয়াত তো পেয়েই গেছো মনে হয়!কি আসবে তো আমার বিয়েতে।আসবে মানে কি তোমাকে তো আসতেই হবে।তোমার সুখের সময় আসছে আর তুমি না থাকলে হয় নাকি।’
ইসু মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘হ্যাঁ!আমি আসবো আপনার বিয়েতে।আপনি খুশি থাকলেই হলো।’
ইস্পাত ইসুর হাত টা ছেড়ে দিয়ে কিছুটা ঠেস মেরে বললো,
‘এতো ভাবো তুমি আমার খুশি নিয়ে।তবে,আর একটা কাজ করলে আমি আরো খুশি হবো।আমার বাসর ঘর টা তুমি নিজের হাতে সাজাবে।সুগন্ধি ফুল যেনো বেশি থাকে।ফুলও তুমি পছন্দ করবে।আমার আর শিমুর সব ফুলেই পছন্দ।তবে গাঁদা বাদে।দেখলে আমাদের দু’জনের কি মিল।অবশ্য,এখন শীতকাল না তাই গাঁদা ফুল পাওয়ায় যাবে না।আসলে,তোমাকে জানিয়ে রেখেছি আমার আর শিমুর কোন ফুল পছন্দ আর কোন ফুল পছন্দ না।আর একটা কথা বিছানা টা যেনো ফুলে ভর্তি থাকে,যাতে আমি আদর সোহাগ করার সময় শিমু যেনো ফুলের রাজ্যে ভেসে যায়।’
ইস্পাত কথাগুলো বলেই গটগট করে ছাঁদ থেকে চলে যায়।রাগে সারা শরীর তার শিরশির করছে।এখন গিয়ে ঘন্টাখানিক সময় নিয়ে একটা গোসল দিবে।যাতে করে,মাথাটা একটু ঠান্ডা হয় আর সেই সাথে শরীরের শিরশিরানিও যেনো কমে আসে।
ইসু ঝাঁপসা চোখে তাকিয়ে আছে ইস্পাতের পিছন দিকে।ইস্পাতের যাওয়া দেখছে আর বিরবির করে বলছে,
‘মানুষটা কীভাবে পাল্টে গেলো।কি সুন্দর করে আমাকে বলে গেলো উনার বাসর ঘর সাজাতে।তাও,আবার ফুল দিয়ে যেনো বিছানা ভর্তি থাকে।ঢং কতো!ফুল না বিছুটী পাতা দিয়ে সাজিয়ে রাখবো।বাসর না করে একজন আরেকজন কে চুলকিয়ে দিতে দিতে ভোর হয়ে যাবে।’
ইস্পাত রুমে এসে গোসল করে বেলকনিতে দাঁড়ালো।গলায় পেঁচিয়ে রাখা তোয়ালে টা শক্ত করে ধরে ইসুকে বকে যাচ্ছে।ইসুকে বকে নিজের রাগটাকে সংবরণ করার চেষ্টা করছে।একটা সময় ইস্পাত বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে নিজেই নিজের সাথে বলতে লাগলো,
‘ফাজিলের বাচ্চা বলে কীভাবে!আমার বিয়েতে আসবে।ও কি আমাকে একটুও বুঝতে পারছে না।আমার মনের অনুভূতি গুলো তার কাছে কি পঁচা প্লাস্টিক মনে হচ্ছে!ওহহো ইস্পাত!পঁচা প্লাস্টিক হয় নাকি,প্লাস্টিক তো কখনো পঁচেই না।যাই হোক!ও কীভাবে রাজি হলো আমার বিয়েতে আসতে।ঠিক আছে!বিয়ে করে বাসর করেও একদম দেখিয়ে দিবো ওই ফাজিলের বাচ্চাকে।শখ কতো!আবার বলে,আপনি খুশি থাকলেই হলো।আমার যদি এতো খুশিই দেখতে চাইতো তাহলে এতোক্ষণে ওই ফাজিলের বাচ্চা আমার বুকে থাকতো।কিন্তু,সেই জায়গা টা এখন শিমুর জন্য বরাদ্দ।
—-
ইস্পাত আর ইসুর মান অভিমানের পাল্লায় পড়ে আরো কয়েকটা দিন কেটে যায়।আর দু’দিন পর ইস্পাত আর শিমুর গা’য়ে হলুদ।এপার্টমেন্টের সবাই মিলে ইস্পাতের মা রিনি আহম্মেদকে নানান কাজে সাহায্য করছেন।তাঁদের মধ্যে আছিয়া বেগমও আছেন।কয়েকদিনে,রিনি আহম্মেদ আর আছিয়া বেগমের মধ্যে অনেক সুন্দর একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।ইস্পাত রুমে বসে সিগারেট ফুঁকছে।আগে,টুকটাক খাওয়া হতো,বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে।কিন্তু,তিনদিন ধরে ইস্পাত প্রচুর পরিমাণে সিগারেট খাচ্ছে।তার মন শুধু অস্থিরতায় ভরপুর।আর দু’দিন পর থেকেই ইস্পাতের ইসুর দিকে তাকানোটাই হারাম হয়ে যাবে।কিন্তু,কীভাবে থাকবে ইস্পাত ইসুকে ছাড়া।বড্ডো ভালোবেসে ফেলেছে ইস্পাত ইসুকে।
অন্যদিকে ইসু নিজেকে শক্ত রাখতে গিয়েও পারছে না।আর দুটো দিন পর তার ভালোবাসার মানুষটি অন্যকারোর হয়ে যাবে।হ্যাঁ!ইসু ইস্পাত কে ভালোবেসে ফেলেছে।ইস্পাতের অবহেলা গুলোয় যে ইসুর মনে ইস্পাতের ভালোবাসার জাগান দিয়েছে।প্রতি নিয়ত ইসু ইস্পাতের অবহেলায় পুঁড়েছে।কিন্তু,ইসু চাইলেও এখন আর আগের মতো কিছুই ঠিক করতে পারবে না।
রাত বারোটার সময় অনেক টা ইতস্তত করেই ইসু রুমুর কাছ থেকে ইস্পাতের নাম্বার টা নিয়ে ফোন করলো।ইস্পাতের সাথে দেখা করতে না পারলে ইসুর মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে আসবে।তাই সাত পাঁচ না ভেবে ফোন দিয়েই দিলো।অপাশে কল বাজতেই ইসুর বুক দুরুদুরু করে কাঁপতে শুরু করলো।হার্টবিট খুব দ্রুত চলছে।
ইস্পাত মনের সুখে সিগারেট ফুঁকছে।হুট করে ফোন আসায় কিছুটা চমকে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে অপরিচিত নাম্বার দেখে ইস্পাত না ধরেই রেখে দিলো।ফোনের রিংটোন পুনরায় বেজে উঠতেই ইস্পাত রাগে ফোন কানে চেপে ধরে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,
‘কে বলছেন?’
ইসু থম মেরে বসে রইলো।কথা বলতে গেলেই গলায় আটকে যাচ্ছে।কিছুতেই কথার বুলি ফুটেছে না।
ফোনের অপাশে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ইস্পাত কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললো,
‘কথা বলছেন না কেন আপনি?আর কিসের জন্যই বা আপনি আমাকে এতো রাতে ফোন করেছেন?’
ইস্পাতের রাগান্বিত গলার আওয়াজ শুনে ইসু গড়গড় করে বলতে শুরু করলো,
‘আমি ইসু!একটু ছাঁদে আসবেন।আমি অপেক্ষা করছি।’
ইসু কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয়।ফোনটা বুকে চেপে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।ইস্পাত কিছুক্ষণ চুপ মেরে বসে থেকে বুঝার চেষ্টা করলো আসলে কি হয়েছে।যখন ফোনের অপাশে ইসুর বলা কথাটা মনে পড়ে যায় তৎক্ষণাৎ ইস্পাত দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে ছাঁদে চলে যায়।
—-
প্রায় বিশ মিনিটের মতো হলো ইস্পাত দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদের এককোণায়।তারই সামনে ইসু মাথা নিচু করে রেখেছে।বুড়ো আঙুল টা দিয়ে ছাঁদের ফ্লোরটায় চেপে ধরে রেখেছে।ইস্পাত গলা পরিষ্কার করে বললো,
‘তুমি কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকো তা দেখানোর জন্যই কি ডেকে এনেছো আমাকে।’
ইসু শুধু মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
ইস্পাত আবারও বললো,
‘তাহলে কেন ডেকেছো আমাকে।’
ইসু ইস্পাতের কথার উত্তর না দিয়ে আগের ন্যায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো।ইস্পাত এবার রেগে গিয়ে বললো,
‘তোমার এইসব বেখেয়ালি আচরণ দেখার সময় নেই আমার।শুধু শুধু ডেকে সময় নষ্ট করার ধান্দা।তার থেকে শিমুর সাথে কথা বললে ভালো হতো।সময় টা কাজে দিতো।তাও,আবার নিজের হবু বউ।’
ইসু দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরলো ইস্পাতকে।ইস্পাতের বুকে মুখ লুকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।ইসুর কান্না দেখে ইস্পাত মুখে প্রাপ্তির একটা হাসি টানলো।পরমুহূর্তেই নিজেকে কঠিন করার চেষ্টা চালাতে শুরু করলো।ইসুকে একটু কষ্ট না দিয়ে সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।
ইসু ইস্পাতকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত গলায় বলতে শুরু করলো,
‘আপনি কেমন পুরুষ হ্যাঁ!আমার কষ্ট কি আপনার চোখে পড়ে না।’
ইস্পাত মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি কে!তোমাকে আমি চিনি না।’
‘আমাকে ক্ষমা করে দিন!আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।’
ইস্পাত ইসুকে জোর করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো,
‘আমি তোমার জন্য পরপুরুষ ইসু।দু’দিন পর আমার বিয়ে।আমি চাই না তোমার এইসব কাজের জন্য আমার বিয়েটা ভেঙে যাক।’
ইসু কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।ছলছল চোখে ইস্পাতের দিকে তাকালো।ইস্পাত দেখেও না দেখার ভান করে বললো,
‘আমি গেলাম ইসু।শিমু আমার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছে।আর,বিয়েতে কিন্তু অবশ্যই এসো।’
ইস্পাত দ্রুত গতিতে সামনের দিকে পা বাড়ালো।মুখে তার হাসি বিদ্যমান।ইচ্ছা করছিলো ইসুকে জাপটে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু না!অত্যন্ত আজকের রাতটা একটু কষ্ট পাক।অন্যদিকে,ইসু ইস্পাতের এমন ব্যবহারে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে না।ছাঁদের ফ্লোরে বসে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
—-
পরেরদিনের সকাল টা ইসুর কাছে আরো কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারণ,আজকের দিনটাই শুধু আছে।আর কালকেই ইস্পাতের গা’য়ে হলুদ।তারপর বিয়ে হয়ে অন্যকাউকে নিয়ে সুখে থাকবে।ইসু বারান্দায় মনমরা হয়ে বসে আছে।
রুমু নিজের রুমে বসে উপন্যাসের বই পড়ছিলো।হুট করে ফোন বেজে উঠায় রুমু উপন্যাসের বই টা থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের দিকে মনোযোগ দিলো।ফোনের স্ক্রিনে ইস্পাত স্যারের নাম্বার দেখে রুমু কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে ফোনটা কানে চেপে ধরলো।কিছু বলার আগেই ইস্পাত উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো,
‘আমি সোজাসাপ্টা একটা কথা বলতে চাই রুমু।আমার হাতে এতো সময়ও নেই।’
হুট করেই ইস্পাতের এরূপ কথায় রুমু অনেকটা ভ্যাঁবাচেকা খেয়ে যায়।কিছুক্ষণ চুপ মেরে ইস্পাতের কথাগুলো মাথায় ঢুকিয়ে নিলো।রুমু ভেবে পাচ্ছে না ইস্পাত কি বলতে পারে,তাই সিরিয়াস ভঙ্গিমা করে বললো,
‘জ্বি স্যার!আপনি বলুন আমি শুনছি।’
‘রুমু তোমাকে আমার সাহায্য করতে হবে।কিন্তু তার আগে আমার সব গুলো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে।’
রুমু আগের ন্যায় বললো,
‘জ্বি স্যার।’
‘রুমু তোমার ইসুকে নিয়ে আজকের জন্য বাহিরে বের হতে হবে।’
রুমু চমকে গিয়ে বললো,
‘কিন্তু কেন স্যার।’
‘আগে চুপ করে আমার কথা শুনো তুমি।আমি আজকেই ইসুকে বিয়ে করতে চাই।’
রুমু ভেবে পাচ্ছে না ইস্পাতের কথার পিঠে কি বলবে।রুমুর মনে হচ্ছে ইস্পাত পাগল হয়ে গিয়েছে।তাই,আমতাআমতা করে বললো,
‘স্যার!আপনার তো কালকে গা’য়ে হলুদ তাও শিমু ম্যাডামের সাথে।তো ইসুকে কেন বিয়ে করবেন?’
ইস্পাত সোজাসাপ্টা জবাবে বললো,
‘আমি ইসুকে ভালোবাসি তাই।তোমার বোন অনেক নাচিয়েছে আমায়।এবার ওর নাচার পালা।’
রুমু হেসে বললো,
‘আমি তাহলে ঠিক ধরেছিলাম!বেচারি বোন আমার আপনার বিয়ের কথা শুনে কেঁদেকেটে অর্ধেক জীবন পার করে দিয়েছে।’
‘আমার কি করার ছিলো বলো রুমু!তোমার বোন যে আমাকে এতো কষ্ট দিবে তা ভাবতেই পারি নি।তবে,তুমি আজকের জন্য ইসুকে যেভাবেই হোক বের করে নিয়ে আসো।’
‘ইসুকে নিয়ে আসলে শালী হিসেবে আমি কি পাবো স্যার।’
ইস্পাত আমোদিত গলায় বললো,
‘ম্যাথে পাস করতে চাইলে তাড়াতাড়ি তোমার বোনকে আমার হাতে তুলে দাও।’
রুমু মুখ ভোঁতা করে বললো,
‘জ্বি স্যার!আমি ইসুকে নিয়ে আসছি।’
‘গুড গার্ল।ঠিকানা তোমার ফোনে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
ইস্পাত ফোন কাটতেই রুমু তাড়াহুড়ো করে ইসুর রুমে এগিয়ে গেলো।ইসুকে রোগীর মতো বসে থাকতে দেখে বললো,
‘এইভাবে বসে না থেকে দ্রুত রেডি হয়ে নে।হাতে বেশি সময় নেই।’
ইসু রুমুর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কেনো?কোথায় যাবো আমরা।’
‘রাস্তায় যেতে যেতে বলবো।এখন রেডি হয়ে নে।একদিনের কাপড়ও গুছিয়ে নিস।’
রুমু দ্রুত গতিতে বেরিয়ে পড়লো ইসুর রুম থেকে।ইসু আর কিছু বলার সাহস পায় নি।
রুমু নিজে রেডি হয়ে ইসুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ইস্পাতের দেওয়া ঠিকানায়।রুমু আছিয়া বেগমকে বান্ধবীর বাসায় এক রাত থাকার কথা বলে বেরিয়েছে।আছিয়া বেগম রুমু আর ইসুকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে নিজের রুমে চলে যান।
—-
একটু আগেই ইস্পাত আর ইসু বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।তারা এখনো কাজী অফিসের সামনে বসে আছে।তাদের ঘিরে রেখেছে ইস্পাতের কয়েকটা বন্ধু।এদের মধ্যে আবার দুইটা মেয়েও আছে।রুমুর সাথেও সবার খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে।ইসু বিয়ে শুরু হওয়ার আগে থেকে এখন পর্যন্ত কেঁদেই যাচ্ছে।যখন শুনেছে ইস্পাত আর তার বিয়ে তখনি ইসু বেঁকে বসলো।সে কিছুতেই এই কাজ টা করতে পারবে না।কিন্তু,হুট করে মাথায় ইস্পাতের সাথে শিমুর বিয়ে হওয়ার কথাটা মনে পড়তেই ইসু গড়গড় করে কবুল বলে দেয়।অবশেষে,তারা আজকে থেকে স্বামী-স্ত্রী।
তারা সবাই মিলে একটা রিসোর্ট ভাড়া করে নিলো আজকের জন্য।রাত অনেক হওয়ায় ইস্পাত রুমে এসে ঢুকে পড়লো।দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে ইসুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘আলমারিতে একটা নাইটি রাখা আছে শাড়িটা খোলে ওইটা পড়ে নাও।’
ইসু ইস্পাতের কথা অনুসরণ করে আলমারীর কাছে এগিয়ে গেলো।নাইটি টা বের করে অনেকটা ইতস্তত করে পড়েই নিলো।শাড়িটা ফ্লোর থেকে তুলতে নিবে এমন সময় একজোড়া হাত ইসুর কোমর টা জাপটে ধরে।ইসুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ইসুর নাকে একটা চুমু খেলো।ইসু আর না পেরে ইস্পাত কে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো।নাক টেনে টেনে বললো,
‘আপনি খুব খারাপ মশাই।শিমু ম্যাডামের কি হবে এখন?আমার খুব ভয় হচ্ছে।’
ইস্পাত ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো,
‘কি আর হবে!আমার বউ হবে।দুই দুইটা বউ নিয়ে আমি আমার রাজ্যে রাজত্ব করবো।’
ইসু ইস্পাতের কথায় অভিমান করে ইস্পাত কে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গুটিসুটি মেরে এককোণায় শুয়ে পড়লো।ইস্পাতও ইসুর শরীর ঘেঁষে শুয়ে ইসুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।ইস্পাত নেশাতুর কন্ঠে বললো,
‘এই যে মিসেস ইস্পাত আহম্মেদ।আমার দিকে তাকাও।’
ইসু ইস্পাতের কথা কানেই নিচ্ছে না।ইস্পাতের কথা তোয়াক্কা না করে সে পাশে রাখা ঝাড়বাতি টার দিকে তাকিয়ে রইলো।ইসুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইস্পাত ইসুকে জোর করে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।ইসু আগের ন্যায় আছে।ইস্পাত ইসুর দিকে তাকিয়ে নাইটির প্রথম পার্ট টা খুলে দিলো।ইসু লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।ঠোঁট দুটো কাঁপছে তার।ইস্পাত ইসুর গলায় আর গালে চুমু দিতে শুরু করলো।ইসু সরে আসতে নিলেই ইস্পাত ফিসফিসিয়ে বললো,
‘হুশশ!একদম নড়বে না।আমি আর কষ্ট পেতে চাই না।তোমার হলদেটে শরীরে আমি আমার ভালোভাসার চিহ্ন বসাতে চাই।ভালোবাসার অনীল সাগরে তোমাকে নিয়ে ডুব দিতে চাই!!’
ইসু চোখ বন্ধ করেই বললো,
‘কিন্তু শিমু ম্যাডামের কি–
ইসু আর বলতে পারলো না।ইস্পাত ইসুর উপরে উঠে ইসুর ঠোঁটে নিজের সিগারেটে পোঁড়া হালকা হালকা কালো ঠোঁট দুটো চেপে ধরে।ইসু সম্পূর্ণ শরীর ঝাঁকিয়ে ইস্পাতকে নিজের সাথে চেপে ধরলো।ইস্পাত ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ইসুর কানের পাশে গিয়ে বললো,
‘এতো শিমু ম্যাডাম করছো কেন তুমি।শিমুকে বিয়ে করলে খুশি হবে নাকি?তবে!তুমি খুশি হলেও আমি শিমুকে বিয়ে করবো না।খুব পুঁড়িয়েছো আমাকে।সেগুলোর শোধবোধ করতে করতে সারাটা জীবন পার করে দিবো তোমার সাথে।সেখানে কোনো শিমু,ফিমু এলাউ না।শুধু ইসুর রাজত্ব থাকবে।’
ইসু মুচকি হেসে ইস্পাতের বুকে মুখ লুকালো।ইস্পাত নিজের টি-শার্ট টা খোলে নিচে ফেলে দিলো।ইসুর শরীরে অবশিষ্ট নাইটি টাতে হাত দিতেই ইসু দূরে আসতে নেয়।কিন্তু,ইস্পাতের সাথে পেরে উঠে না।ইস্পাত টান মেরে ইসুর শরীরের নাইটি টা খোলে নিচে ফেলে দেয়।ইসুর লজ্জায় যায় যায় অবস্থা।ইস্পাত ইসুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য শাস্তি পেতে হবে তোমাকে মিসেস ইস্পাত আহম্মেদ।প্রতিটা রাতের যন্ত্রণা আজকে অবসান ঘটাবো।আমাকে বাঁধা দিতে আসলেই মেরে একদম তক্তা বানিয়ে ফেলবো।’
ইসু ইস্পাতের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।ইস্পাত মুচকি হেসে ইসুতে ডুব দিলো।ইস্পাতের ছোঁয়া গভীর হতেই ইসু ইস্পাত কে আরো শক্ত করে জাপটে ধরে নেয়।সেই সাথে কামড় খামচির দাগ তো আছেই।সেই রাতে,ইস্পাত আর ইসু অনেকবার ভালোবাসার অতল সাগরে ডুব দিয়েছে।ইস্পাত এইভাবে নিজের ভিতরে জমে থাকা কষ্টগুলোকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।আর,ইসু শরীরের ব্যথায় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।প্রথম দিনেই তার উপর দিয়ে অনেকটা প্রেসার পড়ে গিয়েছে।কিই বা করার,ইস্পাত যে ইসুকে ছাড়তে নারাজ ছিলো।ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ইস্পাত ইসুকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে নিজেও ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলো।
চলবে..