ভ্রমর (পর্ব – ৯)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
একে একে দিন কেটে যেতে লাগল। মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার—শনিবার দিনে এসে সময় আটকে গেল। এই কয়েকটা দিন এক বুক কষ্ট নিয়ে ফড়িংয়ের মতো অস্থির সময় পার করেছে মিন্টু। লুকিয়ে বেড়িয়েছে স্নিগ্ধার থেকে। কোনো না কোনো বাহানায় সৈকত নামের ছেলেটিকে প্রত্যেকদিন গরু চরাতে পাঠিয়েছে; তবুও স্নিগ্ধার সামনে সে যায়নি৷ ইতিমধ্যে জমিদার শরিফ মিন্টু ও স্নিগ্ধার ব্যাপারটা জেনে ফেলেছেন। শাশাননি তিনি। মিন্টুকে বুঝিয়েছেন, মনে করিয়ে দিয়েছেন তাদের অতীত। শরিফ কীভাবে তাদের ঠাঁই দিয়েছিলেন, কীভাবে মিন্টুকে বড় করেছিলেন, পড়িয়েছিলেন—সবকিছু আবারও বলেছিলেন তিনি। শেষে শরিফ কথা নিয়েছেন, স্নিগ্ধা যা’ই পাগলামি করুক না কেন, মিন্টু স্নিগ্ধাকে নিজের আবেগ দেখাবে না, ভেতরের ভালোবাসা দেখাবে না।
মিন্টু জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনার ঋণ কি এভাবে শোধ করতে হবে দাদামশাই?’
শরিফ প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ।’
কুঁড়েঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে মিন্টু। চোখের অশ্রু চোখেই হারিয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা তো তার কান্না মা’কে, মনিকে দেখাতে পারবে। কিন্তু মিন্টু তার কান্না কাকে দেখাবে? কীভাবে মনটা হালকা করবে তার? আদৌ কি স্নিগ্ধাকে ছাড়া মন হালকা হবে? শরীরের ভেতরে থাকা মনকে বয়ে বেড়ানো আজ প্রচুর কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে মিন্টু। কেন স্নিগ্ধা তার জীবনে আসতে গেল?
‘মিন্টু ভাই!’ ঘরের দরজায় আঘাত করল মনি, ‘দরজাটা একটু খুলবে?’
চোখে টলটল জলের ঢেউকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে মুখ মুছল মিন্টু। কপালের ঘাম, ভেজা চোখের কোণ, এলোমেলো চুল তার কান্নার সাক্ষী হয়ে রইল। দরজা খুলল সে।
মনি ঘরে ঢুকে একটা চিরকুট বাড়িয়ে দিল, ‘এটা স্নিগ্ধা পাঠাল তোমার জন্য।’
‘ফিরিয়ে নিয়ে যান।’ ভেতরের কষ্ট বেশ ভালোভাবে চাপা দিল মিন্টু।
‘ভ্রমরের দায়িত্ব ভ্রমর খুব ভালো করে পালন করতে জানে।’ জোর করে মিন্টুর হাতে চিরকুটটা দিল মনি। আবেগি স্বরে বলল, ‘ওর কথা একটু শুনো।’
চুপচাপ মিন্টু। চিরকুটটা হাতে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করে মুড়িয়ে ফেলল।
মনি কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ফের হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই দরজায় এসে মিন্টুর পানে তাকিয়ে বলল, ‘স্নিগ্ধা কিন্তু তোমায় খুব বেশি’ই ভালোবাসে।’
মুখ ফিরিয়ে নিল মিন্টু। আড়াল করে নিল প্রতিনিয়ত মনে বয়ে চলা কষ্টের অস্বাভাবি ঝড়।
ঘরে ঢুকে দরজায় হুড়কো দিয়ে এক পায়া ভাঙা চেয়ারে বসল সে। চেয়ারটা অনেক পুরোনো। এক পায়া ভাঙা সত্ত্বেও বসে পড়াশোনা, সময় কাটানোর উপযোগী। মেহগনি কাঠের চেয়ার; ভেঙেও ভাঙে না ভাব—একদম মিন্টুর মতো। মিন্টু দরদর করে ঘামছে। ঘেমে ওঠা হাতে এক তৃতীয়াংশ ভেজা মুষ্টিবদ্ধ স্নিগ্ধার আবেগ মেশানো চিরকুট চোখের সামনে ধরল সে। এই চিরকুটে স্নিগ্ধার লেগে থাকা ছোঁয়া, ক্ষীণ সুগন্ধ সব অনুভব করতে পারছে।
চিরকুটে কাঁপা কাঁপা হস্তাক্ষরে লেখা, ‘কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছ আমার থেকে? শুধু একটিবার দেখা করো। আজ রাতে এশার পর বাড়ির পেছনে এসো। অপেক্ষা করব। আমি কিন্তু ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকব তুমি না আসা পর্যন্ত।’
চিরকুটের মাঝে তিন ফোঁটা অশ্রুর চিহ্ন। দুই ভ্রু কান্নার দমকে এক হওয়ার জোগাড়! সে কী করে যাবে স্নিগ্ধার সামনে? যদি মেয়েটি উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলে! নিশ্চিত প্রচণ্ড পরিমাণে কাঁদবে সে। সেই কান্না কীভাবে সহ্য করবে মিন্টু? কী উপায়ে কান্না থামাবে তা প্রেয়সীর? বুকপকেটে চিরকুটটি রেখে ঢোক গিলল মিন্টু। ওপরে তাকিয়ে মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকটে কিছুর নালিশ করল বোধহয়।
সন্ধ্যার আবছা আলোয় জমিদার বাড়ি থেকে নিজ কুঁড়েঘরে ফিরলেন তহমিনা। স্নিগ্ধার বিয়ের জন্য সেখানে হৈহৈ রৈরৈ কলরব। চার গ্রামের মানুষ দেখতে আসছে জমিদার বাড়ির বড় নাতনীর বিয়েতে কেমন জাঁকজমক আয়োজন, সাজসজ্জা করা হয়েছে। তাদের সাথে আলাপ সারতে গিয়ে এত দেরি তহমিনার। কুঁড়েঘরের দরজায় ভেতর থেকে হুড়কো দেওয়া দেখে আঁতকে উঠলেন তিনি। কয়েকদিন যাবত মিন্টুর শরীরটা খারাপ। ঠিকমতো কিছু খায়, আগের মতো কথাও বলে না। স্নিগ্ধা তিন-চার বার এসে খোঁজ নিয়েছে, কিন্তু তখন’ই অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও উধাও হয় মিন্টু। বেচারি প্রত্যেকবার নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। গতকাল এ ব্যাপারে আচ্ছা-মতো মিন্টু বকেছেন তহমিনা। মিন্টুর মুখ থেকে একটা উত্তর বেরোয়নি।
দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করলেন তহমিনা। শান্ত কণ্ঠে ডাকলেন, ‘মিন্টু, দরজাটা আটকে রাখছস কেন বাপ?’
ভেতর থেকে উত্তর এলো না। আরেকবার দরজায় করাঘাত করতেই মিন্টু দরজা খুলল। দুপুরের খাবার খায়নি মিন্টু। রোগা শরীরটা আরও রোগা হয়ে গেছে। মুখে তার অর্ধমৃত হাসি।
কপালে আছড়ে পড়া মিন্টুর চুলগুলো সরিয়ে দিলেন তহমিনা। আঁচলের নিচ থেকে ঢেকে রাখা খাবার বের করলেন তিনি, ‘কিছু খাইয়া ল।’
‘খেতে ইচ্ছে করছে না মা।’
মিন্টুর ভাঙা গলা শুনে তহমিনা আতঙ্কিত হলেন। খাবারের প্লেট নামিয়ে রেখে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। মিন্টু নীরবে মায়ের কাঁধে মাথা রাখল। তার ইচ্ছে করল তহমিনাকে সবকিছু বলে দিতে। মনটা একটু হালকা হবে। কিন্তু সাহস হচ্ছে না। কীসের এক ভয় এসে কাঁটার মতো হৃদয়ে বিঁধে যাচ্ছে। সুক্ষ্ম ছিদ্র করে দিচ্ছে হৃদয়ের প্রত্যেকটা কোণে।
‘আমি খাওয়াইয়া দিব তোরে? তোর না মোরগ-পোলাও পছন্দ? তোর জন্যই তো লইয়া আইলাম।’ মিন্টুর চুপ করে থাকা দেখে তহমিনা আবারও বললেন, ‘খাওয়াইয়া দেই?’
তহমিনার আদুরে কথায় কষ্টে কষ্টে যন্ত্রণায় ভরা মনটা একটু নরম হলো। মিন্টু হাতের উল্টোপাশ দিয়ে মুখ মুছল, ‘খাইয়ে দিলে খাব।’
তহমিনা মুচকি হাসলেন, খাইয়ে দিতে লাগলেন মিন্টুকে।
__________
স্নিগ্ধার অস্থির মন। বাড়িতে এত মানুষের হট্টগোল ভালো লাগছে না তার। কারো মুখের হাসিও সহ্য হচ্ছে। অন্যের হাসি, আনন্দগুলো বিষ হয়ে শরীরে ঢুকে যাচ্ছে স্নিগ্ধার। সবকিছু ধোঁয়াশা, রঙহীন, মলিন লাগছে। সিকিন্দারের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে তার। সে ভেবেছিল, সিকিন্দার এ বিয়েতে কখনোই মত দেবেন না। নিজের সাথে নিয়ে যাবেন স্নিগ্ধাকে, আর স্নিগ্ধা সময় বুঝে মিন্টুর কথা বলে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিকিন্দার এ বাড়িতে এলেন না। আসা তো তো দূরে—একবারও কল করে কিছু জানতে চাইলেন না; এমনকি স্নিগ্ধা কল করলেও সবসময় ব্যস্ত পাচ্ছে। পাগল পাগল বোধ হচ্ছে স্নিগ্ধার।
‘দেখ তো কোন শাড়িটা পরবি।’ বলতে বলতে ঘরে ঢুকলেন তাওহিদা। স্নিগ্ধা মলিন, বোধহীন মুখ থেকে আবারও হতাশ হলেন তিনি। স্নিগ্ধার এমন অবস্থা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। কোনো চঞ্চল মেয়ে হুট করে এমন নীরব, বাকহীন হয়ে গেলে মনে প্রচণ্ড খরাপ অনুভূতি হয়। তাওহিদারও সে অনুভূতি হচ্ছে। তিনি আলতো স্বরে ডাকলেন, ‘স্নিগ্ধা…’
স্নিগ্ধা তাওহিদার দিকে এক পলক তাকিয়েই মাথা নিচু করল।
তাওহিদা পাশে এসে বসলেন, ‘কী হয়েছে তোর?’
‘কিছু না।’ স্নিগ্ধার মিইয়ে যাওয়া উত্তর।
রাগ করলেন তাওহিদা, ‘কবে থেকে জানতে চাইছি কিছু বলছিস না কেন? আমি তো তোর মা। কোনো পাড়াপড়শি নই যে বলা যাবে না।’
এই অসময়ে তাওহিদার রাগান্বিত কণ্ঠস্বর আচমকাই স্নিগ্ধার চোখে অশ্রু নিয়ে এলো। ঠোঁট কাঁপছে স্নিগ্ধার। কান্না আসবে আসবে করে থুতনিও কাঁপছে।
এহেন পরিস্থিতি এড়াতে শান্ত হলেন তাওহিদা। তার রাগ উদ্যম হারিয়ে ফেলল। কণ্ঠ নিচু, স্বাভাবিক হলো, ‘আমি তো তোর মা। বল-না কী হয়েছে। তোর মলিন মুখ দেখতে ভালো লাগে না। আমারও তো কষ্ট হয়।’ চুপচাপ স্নিগ্ধা। আবারও হতাশ হলেন তাওহিদা, ‘থাক, বলতে হবে না।’
তাওহিদা নতুন করে নিজের মেয়েকে চিনলেন আজ। স্নিগ্ধার মুখ থেকে কথা বের করানো বেশ কঠিন। একদম বাবার হাত ধরেছে সে। যেমন বাবা, তেমন মেয়ে। হঠাৎ তাওহিদা খেয়াল করলেন স্নিগ্ধার মাথাভর্তি এলোমেলো চুল। কাছে টেনে স্নিগ্ধার চুল আঁচড়ে দিতে লাগলেন তিনি। স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে, চুপ করে থাকল। স্নিগ্ধার লম্বা লম্বা শ্বাস নেওয়া আর ছাড়ার শব্দ কাঁপিয়ে তুলছে তাওহিদার অন্তর। দ্রুত চুল আঁচড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। স্নিগ্ধার কষ্ট এবার অসহ্য হয়ে উঠছে।
সহসা তাওহিদার হাত ধরে ফেলল স্নিগ্ধা। দৃঢ় কণ্ঠে তাকে বলতে শোনা গেল, ‘আমি মিন্টুকে ভালোবাসি, মা।’
_________
‘তুমি মনে মনে আমাকে ভালোবাসো তাই না?’
‘কী?’ অবাক হলো মিন্টু। বিস্ময় ঢেকে বলে উঠল, ‘কে বলেছে তোমায়?’
স্নিগ্ধা চোখ উল্টিয়ে বলল, ‘ভ্রমর।’
‘মনি?’
বটের বৃহৎ ডালে ভ্রমরের ছোট একটা চাক দেখিয়ে স্নিগ্ধা বলল, ‘না তো। সত্যিকারের ভ্রমর।’ বটের আশেপাশে জন্ম নেওয়া একটি নাম না জানা নীল ফুল তুলে নিল স্নিগ্ধা। মিন্টু আর নিজের মাঝে ফুলটিকে ধরে চোখ বন্ধ করল সে, ‘দেখ, এখানে একটা ভ্রমর এসে বসে প্রমাণ করে দেবে, তুমি আমাকে ভালোবাসো।’
স্নিগ্ধার পাগলামিতে হেসে উঠল মিন্টু, ‘এসব কী বলছ তুমি? দুপুর হয়ে গেছে। বাড়িতে যাবে চলো।’
‘না। আমি প্রমাণ নিয়ে তবেই যাব।’
আধাঘণ্টা পেরোনোর পরেও কোনো ভ্রমর এসে ফুলটিতে বসল না। কোনো ভ্রমর যেন ফুলটিতে এসে না বসে, মনে মনে তা’ই প্রার্থনা করে চলেছে মিন্টু। নইলে স্নিগ্ধা সারাক্ষণ বলে বেড়াবে, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো!’ বারবার কথাটিকে এড়িয়ে যাওয়া মিন্টুর পক্ষে সম্ভব হবে না।
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। রোদের তেজ বাড়ছে। তবুও কোনো ভ্রমর এসে নীল ফুলটিতে বসল না। মিন্টু কণ্ঠে অল্প ঠাট্টা মিশিয়ে বলল, ‘মৌমাছি হলে হয়তো বসত।’
স্নিগ্ধা নীল ফুলটি ফেলে উঠে দাঁড়াল। রাগ, বিরক্তে ভ্রু কুঞ্চিত তার। পাশেই একটা মাটির ঢিল পড়ে থাকতে দেখে তা উঠিয়ে তৎক্ষনাৎ ভ্রমরের চাকে ছুঁড়ল স্নিগ্ধা। সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমরের দল এলোমেলো হয়ে গেল।
‘করলে কী?’ বলে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে দৌড়াতে লাগল মিন্টু।
দ্বিগুণ শক্ত করে মিন্টুর হাত আঁকড়ে পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল স্নিগ্ধা। খিলখিল করে হেসে উঠল সে। তার হাসিতে প্রকম্পিত হলো আশপাশ, ধূ-ধূ প্রান্তর, সাথে এক ঘুমন্ত প্রেমিকের মন।
ঘুম ভেঙে গেল মিন্টুর। এশার আজান কর্ণগোচর হতেই বুকটা ধক করে উঠল তার। চেতনা ফিরে পেয়ে নিজেকে মায়ের কোলে আবিষ্কার করল সে। কয়েক রাত নির্ঘুম কাটার ফলে চোখজোড়া জ্বলছিল। এখন চোখ দু’টো মোটামুটি শান্ত, কিন্তু অশান্ত মিন্টুর মন। স্নিগ্ধার সাথে কোনো এক দুপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্বপ্ন হয়ে চোখে এসেছিল তার। আবারও ভাবনা ফুঁড়ে কানে আজানের আওয়াজ আসতেই চট করে উঠে পড়ল সে। এত তাড়াতাড়ি এশার আজান পড়ল? এবার সময় ঘনিয়ে এলো স্নিগ্ধার সামনে দাঁড়ানোর! স্নিগ্ধার শত শত প্রশ্নের উত্তর যে এখনও তৈরি হয়নি। অতগুলো প্রশ্নের কী উত্তর দেবে মিন্টু?
মিন্টু চট করে উঠতে দেখে ঝিমুনি ভেঙে গেল তহমিনার। আজান শেষ হতেই কলপাড়ে গেলেন অজু করতে। মিন্টু তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকল। আজ যদি স্নিগ্ধার সামনে সে নিজের ভালোবাসা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে; তবে জমিদার শরিফ নিশ্চয় এবার ছেড়ে কথা বলবেন না। নাতির মতো ভালোবাসলেও এমন কাজে তিনি রাগান্বিত হবেন। এমনও হতে পারে, তার দোয়ার হাত তহমিনার মাথা থেকেও উঠে যাবে। তখন কী করে পরিস্থিতি সামলাবে মিন্টু? দুই কূল’ই তো হারিয়ে যাবে। স্নিগ্ধাকেও পাওয়া হবে না, আর নিজেদের ভাঙাচোরা আশ্রয়টুকুও থাকবে না। হবে না উপকারীর মান রাখা। শরিফ বরাবর বলতেন, ‘উপকারী গাছের ছাল থাকে না।’—মিন্টুকে উদ্দেশ্য করে তিনি এই কথা বললে তহমিনা মেনে নিতে পারবেন না। মেনে নিতে পারবে না মিন্টুও। তাছাড়া স্নিগ্ধার মতো রাজকন্যাকে এনে সে রাখবে কোথায়? কেউ কী তার কাছে রাখতে দেবে এত মূল্যবান প্রাণকে?
চার গ্রামের লোক শাওনকে চেনে। শাওনের ভালো মানসিকতার, ভালো ব্যক্তিত্ব’র পরিচয় সবাই জানে। এমন ছেলের কাছে স্নিগ্ধা ভালোই থাকবে। তারচে’ বরং শক্ত থেকে স্নিগ্ধার প্রত্যেকটা কথার উত্তর দেবে সে। হৃদয়ের ক্ষতকে চাদরে ঢেকে হাসবে—হোক তা শরিফের জন্য অথবা স্নিগ্ধার সুখের জন্য। এই সময়টা স্নিগ্ধার আবেগের। ভালোবাসার চেয়ে তার আবেগ বেশি। মিন্টুর মতো ছেলের কাছে এসে সে যখন বছরে একটা কাপড় পাবে, দামি খাবারের পরিবর্তে শুধু ভাত-ডাল খেতে হবে, বড় আলিশান বাড়ি ছেড়ে কুঁড়েঘরে এসে থাকতে হবে—তখন একবার হলেও মনের কোথাও না কোথাও পস্তানোর বিষয়টির আবির্ভাব হবে। স্নিগ্ধাকে এতটুকু পস্তানোর সুযোগ দিতে চায় না মিন্টু। স্নিগ্ধার সুখের জন্য হলেও স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। ভীষণ প্রয়োজন!
(চলবে)