ভ্রমর (পর্ব – ৪)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
ভেজা শরীরে জমিদার বাড়িতে স্নিগ্ধার প্রবেশ। ঠোঁট তার হাসিতে ভরপুর, গাল দুই লজ্জায় লালচে, মুখে ‘পেয়েছি পেয়েছি’ একটা ভাব। চুল থেকে এখনও টপটপ করে জলের ঝকঝকে ফোটা পড়ছে। চঞ্চল চোখ; সেই চোখ চারপাশ তাকিয়ে চোরের মতো নিজের ঘরের দরজায় গিয়ে থামল।
মাত্র পা টিপে টিপে উপরে যেতে লাগল স্নিগ্ধা। তখন’ই কোথা থেকে তাওহিদার আওয়াজ এলো, ‘পা টিপে টিপে কোথায় যাচ্ছিস?’
চোখ বন্ধ করে ফেলল স্নিগ্ধা। মহূর্তে মুখে একরাশ লজ্জা ঝিলিক খেলে গেল।
তাওহিদা স্নিগ্ধার পাশে এসে দাঁড়ালেন, ‘একি! কোথা থেকে ভিজে এলি?’
স্নিগ্ধা আমতা আমতা করে বলল, ‘নৌকা থেকে পুকুরে পড়ে গেছি।’
‘কোথাও লাগেনি তো?’ উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লেন তাওহিদা।
‘ব্যস্ত হওয়ার কিছু হয়নি মা। আস্তে কথা বলো। দাদু ঘরেই আছে।’
‘তুই নৌকায় উঠতে গেলি কেন?’
‘তুমি তো জানো, সবকিছুতেই আমার আগ্রহ বেশি।’
স্নিগ্ধার মিষ্টি হাসিতে তাওহিদার চিন্তা উবে গেল, ‘যদি কোথাও লেগে যেত? তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে কাপড়টা ছেড়ে আয়। বেলা হয়ে গেল। নাস্তা করবি কখন?’
ঘরে ঢুকে দ্রুত কাপড় ছাড়ল স্নিগ্ধা। শুকনো কাপড় পরে দরজা খুলতেই দেখল, মনি হাতের উপর হাত রেখে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা কিছু বলার আগেই সে ঘরে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি দিল। মুখে তার গোয়েন্দাগিরির ছাপ। নিশ্চয় বর্তমানে স্নিগ্ধার ভেজাভিজির উপর তদারকি চলবে।
স্নিগ্ধা ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল, ‘কী হয়েছে?’
‘কোথা থেকে ভিজে এসেছিলে?’
হাসতে হাসতে মাথা নিচু করল স্নিগ্ধা। সামনের চুলগুলো তার মুখের একাংশ ঢেকে দিল। স্নিগ্ধার ভেতরে যে তোলপাড় তোলার মতো অনুভূতি চলছে, তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না মনিকে।
‘একা একা মজা নেওয়া শেষ হলে কী আমাকে ব্যাপারটা বলবে?’ একটু থেমে মনি আবারও বলল, ‘মিন্টু ভাইয়ের কাছে গেছিলে তাই না?’
‘হুম।’
‘ভিজলে কীভাবে?’
আবারও মুচকি হাসল স্নিগ্ধা। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই বিছানায় ধপ করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। গুনগুন করে একটা চেনা সুর গাইতে লাগল।
মনি আর উত্তেজনা ঢেকে রাখতে পারল না। থ্যানথ্যানে গলায় বলে উঠল, ‘উফ, বলো-না!’
__________
কুরআন শরীফের মিষ্টি সুর ঘরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে আছে। চার দেওয়ালে ধাক্কা লেগে শুধু কান নয়, অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। সেই সুরের লহমায় চোখ বন্ধ করে আছে মিন্টু। পূর্ব জানালা বয়ে আসা রোদ, সুখ সুখ অনুভূতি আর তহমিনার চিকন গলায় কুরআন পাঠ—হৃদয় জুড়িয়ে দেওয়ার মতো সময়। সে সময়টির সবটুকুই উপভোগ করছে মিন্টু। তহমিনা থামলেন। কুরআন বন্ধ করে বুকে ঠেকিয়ে রেখে দিলেন।
‘শরিফ বাজানের নাতনিটারে দেখছিস মিন্টু?’
তহমিনার কথায় চট করে উঠে বসল মিন্টু। সে অনুভব করল, শরীরটা কেমন অবশ অবশ লাগছে। বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেল অনায়াসে। অতঃপর সে বলল, ‘হ্যাঁ, দেখেছি।’
‘মাইয়াডা ম্যালা সুন্দরী। গতকাল আইছিল বাড়িতে।’
মিন্টুর ইচ্ছে করল তহমিনাকে জিজ্ঞাসা করতে, তারপর কী হয়েছিল মা? কেন এসেছিল সে? কিন্তু কথাটা মনেই রয়ে গেল। উত্তেজনা ভেতরেই চাপা দিয়ে বলতে হলো, ‘ও!’
তহমিনা বলেই চললেন, ‘বেজায় ভালো চালচলন। আমার এই এত কাছে বইসা গল্প করছিল। শহরে থাইকাও একটুও দেমাগ নাই। সোনার টুকরা একখান।’
চুপ করে থাকল মিন্টু। স্নিগ্ধার কথা তার শুনতে ভালো লাগছে, অদ্ভুত ভালো লাগছে। কেন তা কে জানে! তহমিনা বালতি নিয়ে কলপাড়ে গেল। সকালের ভাত যে এখনো খাওয়া হয়নি!
মাসখানেক অধোয়া বালিশটা দেওয়ালে ঠেকিয়ে হেলান দিল মিন্টু। চোখ বন্ধ করতেই চোখের পাতায় ভেসে উঠল স্নিগ্ধার মায়াময় চঞ্চল মুখ। আজ কী কাণ্ডটাই না করল মেয়েটি! বটের মিরমিরে মাথায় তখন রোদ। আপনমনে মাছকে খাবার দিচ্ছিল মিন্টু। সে স্নিগ্ধার দিকে তখন আর একটাবারের জন্য তাকাতে পারেনি। কারণ হতে পারে স্নিগ্ধার মায়া মুখ, স্নিগ্ধার এড়াতে না পারা সুন্দর চাহনি, অথবা ফর্সা লালচে লোভনীয় গাল। স্নিগ্ধা তখনও বাম দিকে হেলে পুকুরের অথৈ জল স্পর্শ করছিল। হঠাৎ মিন্টু একটু দূরে খাবার দিতে গিয়ে এক পা নৌকার কিণারে দিতেই নৌকাটা আরও দ্বিগুণ হেলে যায়। ফল ভুগতে হয় স্নিগ্ধাকে। গুড়ুম করে পানিতে পড়ে হাত পা ছুঁড়তে থাকে সে। মিন্টু তখন বাক্যহীন, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মাছরাঙা যেমন মাছের জন্য পুকুরে শিকারি চোখ ফেলে, তেমনি মাছের মতো কীসের এক আশায় এক’ই চোখে তাকিয়ে আছে সে। দুই চোখে পরে ভর করল আরও রাজ্যের বিস্ময় আর ভয়—স্নিগ্ধাকে ছুঁয়ে ফেলার ভয়! যে মেয়ের দুষ্টু চাহনি তাকে অর্ধেক রাত নির্ঘুম রাখে, সেই মেয়েকে ছুঁয়ে দিলে অনর্থ হয়ে যাবে। আচ্ছা, স্নিগ্ধাকে ছোঁয়ার অভিশাপ কী হবে? এবার কি পুরোটা রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে তাকে?
‘মিন্টু, ওঠাও আমাকে। আমি সাঁতার জানি না।’
স্নিগ্ধা হাঁফাচ্ছে, প্রচণ্ড হাঁফাচ্ছে। তহমিনার যখন শ্বাসকষ্ট হয়, তখন তিনিও এমনভাবে হাঁফান। জীবন বেরিয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট হয় না কি তখন। স্নিগ্ধারও বোধহয় ওরকম কষ্ট হচ্ছে। হাজারও ভাবনার ফলক ভেঙে চারপাশে তাকাল মিন্টু। দূরে তার সমবয়সী ছেলেরা মাঠে গরু চরাচ্ছে। চিৎকার করলেও তাদের কান পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছাবে না। এই পুকুরটা বেশ গভীর। সাঁতার না জানা কেউ পড়লে বাঁচার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। গত বছর এই পুকুরেই একটা সতেরো বছরের ছেলে ডুবে মারা গেছিল। গত বছরের কথা মনে পড়তেই ভেতরে ভেতরে আরও ভীত হলো মিন্টু।
‘আমি সত্যি সাঁতার জানি না। মিন্টু…’ স্নিগ্ধা আকুতিটুকুও শেষ করতে পারল না। অথৈ জলের মাঝে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না সে।
কোনো উপায়ন্তর না দেখে, স্নিগ্ধাকে ছুঁয়ে অভিশাপ কাঁধে নেওয়ার ভয় নিয়েই পুকুরে লাফ দিল মিন্টু। স্নিগ্ধাকে ধরে পাড়ের দিকে সাঁতরাতে লাগল। স্নিগ্ধা খুব শক্ত করে মিন্টুর গলা জড়িয়ে রেখেছে; যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে ফেলবে। দুইজন পছন্দের মানুষ, একে অপরের এত কাছে—হৃদপিণ্ডের ধকধক শব্দ মানুষ ছাড়া সমস্ত প্রাণীকূল যেন শুনতে পাচ্ছিল। আর তারা সহজেই ভবিষ্যৎবাণী করে দিচ্ছিল, “এরা বাঁধা পড়ে যাবে। অচিরেই দারুণ রকম ভালোবেসে ফেলবে একে অপরকে।”
স্নিগ্ধাকে পাড়ে উঠিয়ে সবুজ ঘাসে ধপ করে শরীর ছেড়ে দিয়েছিল মিন্টু। পাশেই শুয়েছিল স্নিগ্ধা। তখনও শ্বাসকষ্টের রোগীর মতো হাঁফাচ্ছিল সে। মিন্টু উঠে দাঁড়ায়নি। ভালো লাগছিল স্নিগ্ধার আশেপাশে থাকতে। ওই সময় মিন্টুর কেমন যেন বোধ হচ্ছিল। সবকিছু সাজানো, গোছানো, সুন্দর মনে হচ্ছিল। অন্যসময় হলে সে প্রচণ্ড বিরক্ত নিয়ে পুকুরে পড়া মানুষটিকে আচ্ছামতো ঝাড়ি দিত। কিন্তু তখন স্নিগ্ধার প্রতি রাগ, বিরক্ত কিছুই সে নিজের মাঝে নিয়ে আসতে পারছিল না। চাইলেও পারছিল না। তখন এমন কেন লাগছিল মিন্টুর? স্নিগ্ধাকে যে অঙ্গগুলো ছুঁয়ে ফেলেছে, সে অঙ্গগুলো তাদের কার্যক্ষমতা এখন অবধি হারিয়ে বসে আছে মনে হচ্ছে। বিশেষত বুক! হৃদপিণ্ডের শব্দ এখনও এতটুকু কমছে না, বরং মহূর্তে মহূর্তে বেড়ে চলেছে। অথচ মনে হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে হৃদপিণ্ড জমে চুপ করে আছে। কই, আগে তো এমন হয়নি!
মাত্র দুইদিন হলো স্নিগ্ধা এসেছে। অথচ এই দুই দিনে সে মিন্টুর মনে, মস্তিষ্কে এতটা জায়গা করে নিল! এটাই কি ভালোবাসা? ভালোবাসা না কি এত সহজে হয় না। তাহলে এই অনুভূতির নাম কী দেবে বিজ্ঞরা?
তহমিনা ঘরে ঢুকলেন। ছেলেকে আনমনা দেখে কাছে গেলেন। লোকে বলে, মায়ের চোখকে নাকি ফাঁকি দেওয়া যায় না। মায়েরা নাকি সন্তানের সব জানতে পারে, বুঝতে পারে। তহমিনা প্রমাণ করে দিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন মিন্টুর উদাসীনতার কারণ। তবে ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু স্নিগ্ধা—তা বুঝতে পারলেন না। মিন্টু ছোটবেলা থেকে প্রেম, ভালোবাসা বিরোধী। এই বয়সে তার বন্ধুরা যখন এই গ্রামের, ওই গ্রামের মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেড়ায়, তখন মিন্টু একা বিস্তৃত বটগাছের ছায়ায় বসে বাঁশি বাজায়। সেই ছেলের মুখে আজ মিটিমিটি হাসি, লুকিয়ে রাখা ভাবনা, কাজের প্রতি উদাসীনতা—এ যে অবিশ্বাসযোগ্য!
তহমিনা মিন্টুর পাশে বসলেন। বলতে লাগলেন, ‘তোর আব্বায় আর আমি এ গ্রাম, ও গ্রামে থাকতাম। হঠাৎই একদিন তোর আব্বার সাথে আমার দেখা হইছিল। তারপর কেমন কইরা যে কী হইল কইবার পারি না কেউ। খুব ভালোবাইসা ফেলি তোর আব্বারে। এখনকার মতো সেই সময় এত প্রেম-পিরিতি আছিল না। মাইনা নেওয়ার কথা তো বাদ। কথায় আছে না, প্রেম কাঁঠালের আঠা? সেই আঠা লাগলে কি ছাইড়া দিবে? আমারেও ছাড়ে নাই। আম্মার হাজার কথা ধূলিসাৎ কইরা তোর আব্বার লগে ঘর ছাড়ছিলাম। ভালোবাসার জোরে ভেদভেদি মাইয়া আমি সেই সাহস যে কেমনে জুগাইছিলাম! মনে হয়, আম্মা-আব্বারে কষ্ট দিছিলাম বইলা ভাগ্য তোর আব্বারে কাইড়া নিছে। আজ কপাল দোষে তোর আব্বা নাই, কিন্তু যেই সময়টুক আছিল, আমি ধইরা রাখছিলাম।
মিন্টু তহমিনার কোলে মাথা লুকিয়ে বলে উঠল, ‘অনেকবার শুনেছি মা।’
‘হ শুনছিস। আজ কী ভাইবা আবার কইলাম।’
তহমিনার শাড়ির আঁচলটা ধরে মথার উপর দিল মিন্টু। উশখুশ করে গলা পর্যন্ত আসা একটি কথা হজম করল সে। চোখ বন্ধ করল। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিল। প্রতিবার একটি কথা জিজ্ঞাসা করার প্রস্তুতি নিতে লাগল সে, কিন্তু কিছুতেই তহমিনাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে না। কথাটি জিজ্ঞাসা না করার অশান্তি নিয়ে শান্ত থাকাও কঠিন।
সময় গুনতে লাগল মিন্টু। টিক-টিক, টিক-টিক। একসময় সাহস করে জিজ্ঞাসা করল সে, ‘কাউকে ভালোবাসলে কেমন লাগে মা?’
মিন্টু অনুভব করল, তার হৃদয়ের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। মায়ের দিকে আর তাকাতেও পারছে না। বেকুব বেকুব ভাব নিয়ে উত্তরটা না শুনেই তহমিনার আঁচল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল সে। তহমিনা ডাকলেন না। মুচকি হেসে মা-ছেলের কাহিনী সমাপ্ত করলেন।
__________
জমিদার শফিক আরাম কেদারায় বেশ আরাম করে বসে আছেন। তার সামনের চেয়ারে বসে আছে পাশের গ্রামের আতিক মণ্ডল। আশে-পাশের চার গ্রামে বেশ দাপট তার। একবার মেম্বার পদপ্রাপ্ত হয়েছিল বলে এ উন্নতি। মাসে একবার হলেও জমিদার বাড়িতে তার আগমন ঘটে। শফিকের সাথে আতিকের খুব ভাব। সিকিন্দার চলে যাওয়ার পর থেকে আতিককে ছেলে হিসেবে মানেন শফিক। আতিকও যথেষ্ট সন্মান করে। প্রতিবার শফিকের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্যে এলেও, এবার তার আগমন অন্য ব্যাপারে।
‘কী হলো আতিক?’ চায়ের কাপ এগিয়ে বললেন শফিক, ‘চা নাও। ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।’
‘জি আব্বাজান। তার আগে একটা কথা ছিল।’
নিজের চায়ের পাত্রও নিচে নামিয়ে রাখলেন শফিক। বললেন, ‘বলো কী কথা!’
‘আমাদের স্নিগ্ধাকে দেখলাম আজ। মাশাআল্লাহ্ অনেক মিষ্টি মেয়ে। সম্ভবত উনিশ বছর চলছে ওর। গ্রামে তো মেয়েদের এই বয়স অনেক। বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন কী?’
মুচকি হাসলেন শফিক। আরাম করে চায়ের কাপে চুমু দিলেন তিনি। আতিক যে তার ছেলের কথা বলতে এসেছে, তা বুঝতে পারলেন। কথাটা পেটে চাপিয়ে বলে উঠলেন, ‘ভালো ছেলের সন্ধান পেলে ভাবতে পারি। তাছাড়া, স্নিগ্ধার বিয়ে হলে সিকিন্দারকে ফিরিয়ে নেওয়ারও একটা সুযোগ তৈরি হবে। আমি যত’ই মুখে ত্যাজ্যপুত্র করি; ও তো আমার ছেলে।’
‘বেশ ভালো কথা বললেন।’ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আতিক জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার ছেলের সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?’
আতিকের ছেলেকে চেনেন শফিক। নাম শাওন। ছেলেটি খুব চালাক আর বুদ্ধিমান। গ্রামে দাবা খেলায় আজপর্যন্ত তাকে কেউ হারাতে পারেনি। দাবায় সময় ব্যয় করলে সে নিশ্চিত দেশের উল্লেখযোগ্য একজন দাবাড়ু হতো। কিন্তু এম.বি.বি.এস করার চক্করে তার আর সুযোগ হয়নি। একজন ডাক্টার হওয়া কি খামখেয়ালি কথা? শাওন বর্তমানে ডাক্টারি পড়ছে। ডাক্টারি পড়া মানে জীবনে উন্নতির খুঁটি পাওয়া। চাইলেই পড়ালেখা শেষে সে একটা নিজস্ব ক্লিনিক খুলে নিতে পারবে। এমন ছেলের হাতে নাতনিকে তুলে দেওয়া আর নাতনির সুখ কিনে নেওয়া—ব্যাপারটা এক।
শফিক কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। আর উত্তর শোনার জন্য উন্মুখ হয়ে রইল আতিক। শফিক উত্তরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বললেন, ‘আমি কিছুদিন পরে তোমাকে জানিয়ে দেবো।’
(চলবে)