#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৪০
#নবনী_নীলা।
” দেখুন, কনসিভ করার দুই সপ্তাহের মাথায় প্রতিটা মেয়েই কিছু পরিবর্তন খেয়াল করে। আপনার স্ত্রী ও বুঝেছে, তাকে যদিও আমরা কিছুই জানাই নি, তবে তিনি নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে ওনার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ। হয়তো আগে থেকেই মানসিক চাপের স্বীকার তিনি। তাই ওনার দিকে একটু বিশেষ যত্ন নিবেন।” ডাক্তারের কথায় আহানের চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। রুহিকে সামলানটাই এখন আহানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
ডাক্তারের সাথে কথা শেষে আহান দ্রুত রুহির কাছে গেলো। আহান দরজা খুলে ভেতরে যেতেই দেখলো চুপ চাপ বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে কান্না করে। আহানের উপস্থিতি বুঝে রুহি মাথা নিচু করে রইলো। আরো অঝোরে কান্না পাচ্ছে তার। আহান নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললো,” আমি আমার ওয়াইফের সাথে কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।”
নার্স আহানের কথা শুনে বেড়িয়ে গেলো। আহান এগিয়ে এসে রুহির পাশে বসলো। রুহি এখনো মাথা নিচু করে আছে, চোখ বন্ধ করে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে রুহি। আহান রুহিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। রুহি আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না। আহানকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেদে উঠলো। সবটাই ক্ষণিকের মাঝে হয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরেই এই অনুভূতিটা রুহির মনের কোণে জমা বেধেছিল। কিন্তু সেটা এমন ক্ষণিকের মাঝে শেষ হয়ে যাবে রুহি ভাবেনি।
রুহি কাপা কাপা গলায় বলল,” আমি আস্তে আস্তে বুঝেছিলাম, জানেন? কতো কি ভেবেছিলাম আমি কিন্তু সবটা এভাবে শেষ হয়ে যাবে আমি ভাবিনি। আমার সা..থেই কে..নো এ..মন হয়?”, সব অভিযোগ যেনো আজ বাধ ভেঙেছে, কান্নার মাঝে হিচকি তুলতে তুলতে লাগলো রুহি।
আহান নিজেকে একদম শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। রুহিকে ভেঙে পড়তে দেখে আহানের আরো বেশী কষ্ট হচ্ছে। আহান রুহির মুখ তুলে ধরলো নিজের দিকে, তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,” এভাবে ভেঙে পড়লে কি করে হবে? তুমি ভেঙে পড়লে বাকিরাও তো কষ্ট পাবে বলো। নিজেকে শক্ত রাখো।”
রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর চোখের পানি মুছে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,” সব দোষ আমার। আমার আরো সাবধান হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করুন মেঝেতে তেল পরে ছিলো আমি একদম খেয়াল করিনি।” বলতে বলতে আবার কেদে ফেললো রুহি। নিজের ভুলের জন্যে কষ্টটা যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে রুহির।
” একদম বোকার মতন কথা বলবে না। পুরোটাই একটা অ্যাকসিডেন্ট সেখানে তোমার কোনো দোষ নেই। আর যেটা হবার সেটা হবেই, তুমি আমি চাইলেও আটকাতে পারবো না। কান্না থামাও,বাহিরে সবাই বসে আছে। তোমার নানু এভাবে তোমাকে দেখলে ভেঙে পড়বেন।” আহান রুহির চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর রুহির বাহু ধরে নিজের বুকে মাথা রেখে বললো,” আর উ ওকে? বডিতে কোনো পেইন হচ্ছে নাতো। মাথাটা তো ফাটিয়ে বসে আছো। হাতে পায়ে কোথাও লেগেছে?”, রুহির মাথার ব্যান্ডেজটা ঠিক আছে কিনা দেখতে দেখতে প্রশ্ন করলো।
রুহি নিরবে না সূচক মাথা নাড়লো। তারপর আহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো রুহি। আজ সে বুঝতে পারছে তার মা কেনো এতো কষ্ট করে এতো অপমান নিয়ে শুধু বেচেঁ ছিলো তাকে পৃথিবীর আলো দেখাবে বলে। আজ যখন সে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি তখন মায়ের ভালোবাসাটা সে উপলব্ধি করতে পারছে। মায়ের ভালোবাসা বোঝা যায় যখন একটা মেয়ে নিজেও একদিন মা হয়। এসব যেনো রুহিকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। চোখের পানি সে ধরে আছে ঠিকই কিন্তু মনের ক্ষতটা যেনো আরো গভীর হচ্ছে।
রুহি আহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলো। কিছুক্ষণ বাদে রুহির নানু, মনোয়ারা বেগম আর রুহির ছোটো ছোটো মামা ভীতরে এলেন। দরজার শব্দে রুহি চোখ খুললো। সবাইকে আসতে দেখে রুহি আহানের বুক থেকে মাথা তুলে সরে বসতে চাইলো কিন্তু আহান রুহির বাহু ধরে নিজের কাছেই রাখলো। রুহির নানু এক দৃষ্টিতে নাতির দিকে তাঁকিয়ে রইলো। ঠিক রুহির মায়ের চোখে সেদিন যেই ভয়টা ছিলো আজ তা রুহির চোখে স্পষ্ট কিন্তু রুহিকে সেই ভয়টা আকড়ে ধরেছে। এতক্ষণ নানু নিজেকে সামলে নিলেন।
আহানের দিদা এগিয়ে গিয়ে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। রুহিকে সাহস দিলেন। কিছুক্ষণ পর নার্স আসলো তারপর বলে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যেই ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে যাবে তখন পেশেন্টের সাথে শুধু একজন থাকতে পারবে। ছোট মামা আহানের জন্যে একটা শার্ট নিয়ে এলো কারণ আহান অনেক্ষন হলো রক্ত মাখা শার্ট পরে আছে। আহান সেটা নিয়ে চেঞ্জ করতে গেলো। ছোট মামা আহানের দিদাকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গেলো।
রুহির পাশে শুধু নানু বসে আছে। নানু নিজের হাতে রুহিকে খাইয়ে দিলেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা ভালোভাবে জানলেন। তারপর কিছুক্ষণ আশে পাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,” আহান কোথায়?”
রুহি পানির গ্লাসটা নামিয়ে অবাক হয়ে তাকালো। নানু আহানকে খুঁজছে কেনো? রুহি নীচু স্বরে বলল,” চেঞ্জ করতে গেছে।”
নানু রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তারপর জিজ্ঞেস করলেন ,” ভালোবাসিস ওকে?”
নানু এমন প্রশ্ন করলেন কারণ রুহি কখনো মুখ ফুটে এটা বলেনি যে সে আহানকে ভালোবাসে। প্রতিবার শুধু আহানের দোষগুলো ঢেকে গেছে। হয়তো তাকে ভয় পেয়েও বলতে দ্বিধা করেছে তাই রুহির মনের কথাটা নানুর জানা দরকার।
নানুর হটাৎ এমন প্রশ্নে রুহি অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি বলবে? কি বলবে না রুহি কিছুই বুঝতে পারছে না। তারপর নীচের ঠোঁট কামড়ে সাহস যুগিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।
” হুম,ছেলেটা ভালো। আগলে রাখতে জানে।”, নানুর মুখে আহানের প্রশংসা শুনে রুহি চমকালো। তাহলে কি নানুর মন গলতে শুরু করেছে। এর মাঝেই চেঞ্জ শেষে আহান ভিতরে এলো। নানু সরল ভঙ্গিতে আহানের দিকে তাকালো তারপর জিজ্ঞেস করলো,” তুমি যাও নি।”
” নাহ, আমি থাকছি।”আহান কিছু না ভেবেই বললো কারন রুহিকে এ অবস্থায় রেখে গেলে শান্তি পাবে না সে। রুহি অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আহান আরো বললো,” আমি বাহিরে ম্যানেজ করে নিচ্ছি।” বলেই আহান বেরিয়ে যেতেই নানু বললেন,” রুহির নানা বাড়িতে একা তো, ওনার আবার হাই প্রেসার। তুমি রুহিকে দেখে রেখো আমায় যেতে হবে।”
রুহি অবাক হয়ে নানুর দিকে তাকালো। সবচেয়ে বেশি অবাক হলো আহান। নানু উঠে দাড়িয়ে রুহির মাথায় আদর করে দিয়ে আহানের কাছে গেলেন তারপর বললেন,” রুহিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে তাই হাতটা সাবধানে রাখতে হবে। ঘুমিয়ে গেলে তো রুহির হুশ থাকে না তুমি একটু খেয়াল করো। আমি যাই তাহলে।”, বলেই তিনি বেরিয়ে গেলো।
আহান মাথা ঝাকিয়ে বিষয়টা হজম করার চেষ্টা করছে। ঘটনাটা কি হলো? বরফ কি গলে পানি হয়ে গেছে!
আহান এগিয়ে এসে রুহির পাশে বসলো তারপর রুহির কপালের সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,” তোমার হিটলার নানি হটাৎ এমন বনলতা সেন হয়ে গেলো কিভাবে?”
রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বললো,” জ্বি না, মোটেও আমার নানু হিটলার না। ওনার বাহিরের দিকটা এমন শক্ত কিন্তু উনি যখন আপন করে নেয় তখন সবটা দিয়ে নেয়।”
আহান বালিশগুলো ঠিক করতে করতে বলল,” হয়েছে বুঝেছি। এবার তুমি ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।” বালিশটা ঠিক করে রুহিকে শুইয়ে দিতেই রুহি আহানের শার্টের হাতা ধরে টানতে লাগলো। আহান রুহির কাছে এগিয়ে এসে বললো,” হুম বলো, এভাবে শার্ট ধরে টানলে কিভাবে বুঝবো?”
রুহি আহানের হাত জড়িয়ে ধরলো। আহান বুঝতে পেরে রুহিকে জড়িয়ে রুহির পাশে শুয়ে পড়লো। তারপর রুহির মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। রুহির ক্লান্ত শরীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।
________________________
হসপিটাল থেকে পরেরদিনই রুহিকে ডিসচার্জ করে দিলো। বাড়ি নিয়ে আসা হলো রুহিকে। ধীরে ধীরে রুহি সুস্থ হয়ে উঠলো। রুহি সাভাবিক হওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই রুহির নানু আহানের সাথে রুহির বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। কারণ এ কয়দিনে আহান যে রুহির জন্য যোগ্য সেটা সে প্রমাণ করেছে।
আহান ছাদে রুহির জন্য অপেক্ষা করছিল। আহানের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হটাৎ নূপুরের শব্দে আহান মাথা তুলে তাকালো। গাঢ় বেগুনি রঙের শাড়ি পড়া খোলা চুলের এক কাঙ্ক্ষিত চেহারা তার সামনে। আহান অপলকে তাকিয়ে আছে,চোখের পাতাও নড়ছে না তার। রুহির নূপুরের শব্দে যেনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আহানের। রুহি এসে আহানের সামনে দাড়ালো তারপর একটা ভ্রু তুলে বললো,” মাঝে মধ্যে এমনভাবে তাকিয়ে থাকেন কেনো? ”
আহান রুহিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখতে দেখতে বললো,” কেমন ভাবে তাকিয়ে থাকি?”
” আপনার চেহারা দেখে মনে হয় যেনো প্রথম আমাকে দেখছেন।”, বলেই এগিয়ে এসে রুহি আহানের সাদা আর গোল্ডেন কাজের পাঞ্জাবির কলারটা ঠিক করে দিতে লাগলো।
” ঠিক আছে এরপর থেকে তাকাবোই না।”, আহানের কথায় রুহি আড় চোখে তাকালো। রুহির চাহনিতে রাগ স্পষ্ট।
আহান সেই চাহনি দেখে বললো,” তাকালেও দোষ না তাকালেও দোষ? তাহলে ম্যাডাম আমি কি করবো?”
” কিছু করতে হবে না।”, নিচের ঠোঁট উল্টে বললো রুহি। আহান রুহির মুখভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো।
তারপর রুহির কোমড় জড়িয়ে কাছে আনতেই রুহি হকচকিয়ে গেলো। আশে পাশের মানুষ দেখলে কি না কি ভেবে বসবে। রুহি নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করে বললো,” মানুষ দেখবে ছাড়ুন।”
” দেখুক। সবাই জানুক, যে তুমি আমার।”,
” কেনো সবাইকে জানতে হবে কেনো? আমি তো জানি, তাতে বুঝি আপনার হচ্ছে না।”,
আহান রুহির কাছে এসে ঠোঁট এলিয়ে বললো,” জানো বুঝি?”আহানের চাহনিতে রুহি লজ্জায় পরে গেলো লজ্জা সরাতে বললো,” আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে, এতো দিন আমরা প্রেম করেছি। সবে আমাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে।”
” তাহলে মানলে আমি পারফেক্ট বয়ফ্রেন্ড? তোমাকে শেষমেষ বিয়ে করছি তাহলে।”
” হ্যা সে আমাকে বিয়ে করার সংগ্রামে আপনি সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে আপনি কিন্তু আমার প্রথম বয়ফ্রেন্ড আর আমি আপনার?”, বলেই ভ্রু কুচকে রাগী রাগী চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে রুহি।
” তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।”, আহানের উত্তরে রুহির চেহারায় এক ঝিলিক হাসি ফুটে উঠলো।
[ #চলবে ]
❣️ কিছু কথা❣️
?প্রথমেই এতো দ্রুত গতিতে গল্পের এই পার্ট দুটো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কেনো সে বিষয়ে বলি,
প্রথম কারণ, মিস্ক্যারিজ সম্মন্ধে আমার ধারণা খুবই সামান্য। আর তাই তথ্য সংক্রান্ত কোনো ভুল হলে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
দ্বিতীয়,যেহেতু গল্পটা শেষের পথে তাই আমি আর অহেতুক পর্বও বাড়াতে চাই না। আর সেটা করতে গেলেও যেই বিষয়ে আমার জ্ঞান কম সেটা আমি কখনোই ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারতাম না।
? গতকালের পর্বের কমেন্টে গিয়ে দেখলাম কিছু কমন্টে এমন ছিলো যে, ওদের বাসর হলো কবে? রুহি প্রেগনেন্ট হলো কিভাবে?
এমন ?কমেন্টে আমি কি উত্তর দিবো আমার জানা নেই। বিয়ে যখন হয় তখন তো বাসরও হয়। গল্পটা একটু ভালোভাবে পড়লেই হয়তো বোঝা যেতো। যাইহোক নেক্সট টাইম থেকে আরো ভালো করে লেখার চেষ্টা করবো।?
[ নেক্সট,নাইস এইসব কমেন্ট দেখলে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই।? কেউ নেক্সট কমেন্ট করবেন না, নেক্সট পার্ট আমি অবশ্যই দিবো।? শুধু শুধু আমাকে বাকরুদ্ধ করবে না।]