বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_৩৯

0
1223

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৯
#নবনী_নীলা

আহান আরেকটু এগিয়ে এসে বললো,” নেক্সট টাইম থেকে এভাবেই রাগ কমাবো। সো বিকেয়ারফুল! আর হ্যাঁ জলদিই তোমাকে আবার মিস থেকে মিসেস রুহি রহমান করছি। জাস্ট ওয়েট করো।”
রুহি আহানের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো,” তাহলেই হয়েছে, ততদিনে আমার মাথার চুল পেকে যাবে, দাত পড়ে আমি বুড়ি হয়ে যাবো।” এর মাঝেই নানুর ডাক কানে এলো রুহির। রুহি উঠে দাড়ালো। আহান আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” চ্যালেঞ্জ করছো আমায়? ঠিক আছে, তাহলে তৈরি থেকো।” রুহি আহানকে মুখ বাকিয়ে রুম থেকে বের হতেই ছোটো মামার মুখোমুখি হলো। রুহি চটজলদি দরজা চাপিয়ে ফেললো। ছোটো মামা দরজার ফাঁকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। রুহি দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,” মামা কিছু বলবে?”

” সে ভিতরে আছে?”, বলেই কি জানি একটা ঈশারা করলো।

রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর বললো,” সে আছে মানে? কে… কে… থাকবে?”

” ঢং করতে হবে না আমার সামনে। আমি সব জানি।”

ছোটমামার মুখে এই কথা শুনে রুহির বুকের ভিতরটা ঢুক করে উঠলো। সব জানে মানে! রুহি কিছু না বোঝার ভান করে বললো,” মানে কি! তু…..মি কি জানো?”

” আহান ভিতরে আছে কিনা বল ওর সাথে আমার দরকার আছে।”, কথাটা ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো ছোটো মামা। মামার কথায় রুহির পিলে চমকে উঠলো। অ্যহায় কি বলে মামা! রুহিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছোটো মামা বলে,” এমন বড়ো বড়ো চোখে তাকানোর কিছু হয় নি। আহানের সাথে আগেই কথা হয়ে আছে আমার। দেখি সর!”বলেই তিনি রুমের ভিতরে চলে গেলেন। রুহি খাম্বার মতন দাড়িয়ে আছে। মামা তাহলে সব জানে। বাহ্! বাহ্! এই লোকটা দেখছি তলে তলে আমার মামাকেও হাত করে নিয়েছে।
রুহি সময় নষ্ট না করে ছোটো মামার পিছু পিছু গেলো।

আহান ছোটো মামাকে দেখেই উঠে বসলো। তারপর বললো,” আরে আপনি কষ্ট করে আসতে গেলেন কেনো? আমাকে বললেই আমি যেতাম।”
ছোট মামা আহানের পাশে গিয়ে বসলো, তারপর বললো,” কোনো ব্যাপার না এইটা।”রুহি ভিতরে ঢুকে দরজাটা চাপিয়ে আড় চোখে তাকালো।

” তোমার দিদার সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিও একমত।”,
রুহি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। এরা তলে তলে কিসব করে বেড়াচ্ছে। রুহি প্রশ্ন করে উঠার আগে আবার নানির ডাক কানে আসতেই রুহি তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো পরে আবার নানু উপরে উঠে আসবে, তাকে খুজতে।সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হটাৎ রুহির মাথাটা কেমন যেনো করে উঠলো। রুহি চোখ বন্ধ করে মাথাটা একহাতে ধরে অন্যহাতে দেওয়াল ধরে ধরে নামলো। ইদানিং তার মাথাটা কেমন যেনো করে মাঝে মধ্যে। এতো চিন্তায় চিন্তায় পাগল না হয়ে যায় কোনদিন।

রুহি নিচে নেমে দেখলো নুড়ি আর সৌরভ ভাইয়া গল্প করছে পাশে নানু বসে আছে। রুহি গিয়ে একপাশ চুপ করে বসলো।

______________________

রুহির নানুর সামনে বসে আছে মনোয়ারা বেগম ( আহানের দিদা) আর পাশে আহান। এখণ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, গোধূলির রঙ ছড়িয়ে পরেছে চারিদিকে। তবে আকাশটার বুকে ঘন ঘন কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। মনোয়ারা বেগম আর আহান পাশাপাশি সোফায় বসে আছে আর কোনাকোনি সোফায় রুহির নানু বসে আছে। রুহির নানাভাই বাড়িতে নেই। ছোট মামা পাশের একটা চেয়ারে বসা। কেউই কোনো কথা বলছে না। রুহির নানু ভালোই বুঝতে পারছে ঠিক কি উদ্দেশ্যে এনারা এইখানে এসেছে।

সব ভঙ্গিমার শেষ করে রুহি নানু বললেন,” আশা করি সবটা জেনেই এইখানে এসেছেন?”

মনোয়ারা বেগম মলিন হাসি হাসলেন তারপর বললেন,” হুম, সবটা জেনেছি। ওরা একটা ভুল করে ফেলেছে। আর ভুলটা মোটেও ছোটো খাটো কোনো ভুল না। এর শাস্তি ওদের প্রাপ্য কিন্তু ওদের এভাবে আলাদা করাও তো ভুল।”

আহান আর ছোটো মামা নিরবে বসে আছে। নানু এক পলক আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” ওদের আমি আলাদা করিনি, এটা আপনার ভুল ধারণা। আহানের করা সাত মাসের বিয়ে নামক চুক্তি অনুযায়ী ওদের মধ্যে আর কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা নিজেরাই নিজেদের থেকে আলাদা হওয়ার ব্যাবস্থা অনেক আগে করে রেখেছিল। সেখানে আমি কোনো ভুল করিনি।”

” ওরা তো নিজেরা নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। আর আপনি রাগ করে থাকবেন না। রুহিকে আবার আহানের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতিটা দিয়ে দেন।”, অনুরোধ করে বললো মনোয়ারা বেগম।

” ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। যেখানে কোনো সম্পর্ক নেই, ডিভোর্স হয়ে গেছে সেখানে কি পরিচয়ে পাঠাবো আমি আমার নাতনি কে? যা হয়েছে, হয়েছে। ভুলে যাওয়াটাই ভালো”, মুখের গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বললেন তিনি।

আহান নিরবতা ভেঙে বললো,” রুহিকে আমি আমার ওয়াইফের পরিচয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তার জন্য আবার বিয়ে করতে হলে আমি সেটাতেও রাজি। যেই ভুলটা আমি করেছি, সেটা শুধরে নিতে চাই।”

” প্রয়োজন নেই। আমার নাতনি আমার কাছেই ভালো আছে।”, রুহির নানুর জেদ আহানের সহ্যের পরীক্ষা নিচ্ছে বটেই। আহান একটা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো।

নীচে কি হচ্ছে রুহি কিছুই জানে না। সে নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিলো। ঘুম থেকে উঠেছে কিছুক্ষণ হলো। এমন অসময়ে রুহি কখনো ঘুমায় না তবে আজ শরীরটা তার খুব খারাপ লাগছিলো। রুহি উঠেছে কিছুক্ষণ হলো। মাথাটা কেমন জানি করছে। রুহি ঘুম ঘুম চোখে উঠে দাড়ালো।
আহান চুপ করে রুহির দিদার কথা শুনছে। উনি ওনার জেদে অটল। হটাৎ রুহির চিৎকার শুনতেই আহান চমকে উঠলো। আহান কোনোকিছু না ভেবেই ছুটে রুহির রূমে চলে এলো। সবাই রুহির চিৎকারে ঘাবড়ে গেলো।

__________________

হাসপাতালের সিটে বসে আছে রুহির নানু আর মনোয়ারা বেগম। চোখে মুখে তাদের চিন্তার ছাপ। আহান রূমের সামনে পায়চারি করছে।ভিতরে ডাক্টার রুহিকে দেখছে। আহানের ভয় হচ্ছে ভীষন। রুহির রুমে এসে রুহিকে অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পরে থাকতে দেখে আহান যেনো পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। রুহি মাথায় আঘাত পেয়েছে, সেই রক্ত আহানের সাদা শার্ট জুড়ে লেগে রয়েছে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্টার বেরিয়ে এলো। তারপর বাহিরের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,” পেশেন্টের হাসব্যান্ড কে?”

আহান ছুটে ডাক্তারের কাছে গেলো। আহানের চোখে মুখে অস্থিরতা দেখে তিনি আহান কোনো প্রশ্ন করার আগেই বললেন,” অস্থির হবেন না। আপনার ওয়াইফ ঠিক আছে। তবে তিনি এখন ভীষন দুর্বল।” কথাটা শুনে আহান যেনো প্রান ফিরে পেলো।
রুহির নানু কাছে এসে প্রশ্ন করলো,” ওকে দেখতে যেতে পারি কি আমরা?”

” না, এখন না। আপনি [ আহানকে উদ্দেশ্য করে বললো] আর মহিলাদের মধ্যে একজন আমার সাথে আসুন।”

আহান আর রুহির নানু ডাক্তারের কেবিনে ঢুকলেন। তিনি চিন্তিত মুখে ওনাদের বসতে বললেন। আহান ডাক্তারের চিন্তিত চেহারা দেখে ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,” ইজ এভরিথিং ওকে?”

” আপনার ওয়াইফের একমাসের মাথায় মিস্ক্যারিজ হয়ে গেছে। যেহেতু অল্প সময়ের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই পেশেন্টের ক্ষতিটা কম হয়েছে। যেই ভাবে তিনি পা পিছলে পড়ে গেছেন এতে করেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

ডাক্তারের কথা শুনে আহান নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো, ভাবতেই বুকের ভিতরটা খা খা করে উঠলো। কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো। তারপর রুহি কথা মাথায় আসতেই আহান বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” রুহি কি জানে যে…” এতটুকু বলেই থেমে গেলো আহান। রুহি নানু থমকে তাকিয়ে আছে। এতো বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছে তিনি সেটা মানতেই পারছে না।

” দেখুন, কনসিভ করার দুই সপ্তাহের মাথায় প্রতিটা মেয়েই কিছু পরিবর্তন খেয়াল করে। আপনার স্ত্রী ও বুঝেছে, তাকে যদিও আমরা কিছুই জানাই নি তবে তিনি নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে ওনার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ। হয়তো আগে থেকেই মানসিক চাপের স্বীকার তিনি। তাই ওনার দিকে একটু বিশেষ যত্ন নিবেন।” ডাক্তারের কথায় আহানের চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। রুহিকে সামলানটাই এখন আহানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here