বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_৩৬

0
1149

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৬
#নবনী_নীলা

রুহি খাবার হাতে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো। বুকের ভেতরে আত্মাটা যেনো লাফালাফি করছে রুহির। নানু ভাগ্যিস সন্দেহ করেনি উনি শুধু বলেছে,” খাবার আগে এসিডিটির ওষুধ খেয়ে নিও।” প্রথমে কথাটা শুনে রুহির হাত পা কাঁপতে লাগলো রুহি ভেবেছে নানু আহানের এসিডিটির জন্য বলছে। পরে বুঝতে পেরে যেনো রুহির প্রাণ ফিরে এলো।উফ এই লোকটার জন্য আর কতো কিছুর মুখমুখি হতে হবে কে জানে!

রুহি খাবারটা টেবিলে রেখে সামনে তাকাতেই দেখে আহান শার্ট খুলে খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে। রুহির চোখ ছানবড়া হয়ে গেলো।

” আপনি এমন…… শার্ট খুলেছেন কেনো?”, বলেই চোখ এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।

” আমি শার্ট খুললেই তুমি উল্টা পাল্টা চিন্তা করতে থাকো কেনো?”, খানিকটা এগিয়ে এসে বলল আহান।

রুহি কড়া চোখে তাকালো,” উল্টা পাল্টা চিন্তা বলতে?”

” বলতে চাচ্ছি এতো অস্থির হয়ে যাও কেনো?”, ঠোঁট এলিয়ে বললো আহান।

” কিসের অস্থির? আমি ঠিক আছি। এতো কথা বলেছেন কেনো? আপনার না খিদে পেয়েছে? চুপ চাপ খাবারটা শেষ করুন।”, কড়া গলায় বললো রুহি।

আহান রুহির কাছে এসে বললো,” এই খিদে সেই খিদে না।”

” তাহলে এইটা এবার কোন খিদে? কি অদ্ভুত কথা!”আড় চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।

” সে তুমি বুঝবে না ছোটো মানুষ।”

” হ্যা আমি ছোটো মানুষ আর আপনি তো একে বারে বাচ্চা কাচ্চার বাপ হয়ে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।”তেড়ে গিয়ে বললো রুহি।

” যখন বউই বাচ্চা তখন বাচ্চার বাবা হবো কি করে?”আফসোস করে বললো আহান।

রুহি মুখ কালো করে তাকিয়ে রইল তারপর বললো,” ফালতু কথা বলবেন না। খাবারটা শেষ করুন।”

” পারবো না।খাইয়ে দাও।”, বলেই বিছানায় বসলো আহান।

” কিঃ! কেনো হাতে কি হয়েছে আপনার?”আড় চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।

” এমনিতে কি আর বাচ্চা বলি? নিজের বর..” এতটুকু বলতেই রুহি বেগ্রা দিয়ে বললো,” কিসের বর? আপনি আমার বর না।”

” এইযে এই জন্যই তোমাকে বাচ্চা বলি। বাচ্চাদের মতন কথার মাঝে হাত ভরে দিলে। ভালোবাসার মানুষ খাইয়ে দিতে বলছে আর তুমি! নাকি এখন বলবে ভালোবাসো না?”

আহান কথা গুলো বলায় মগ্ন ছিলো এর মাঝে রুহি এগিয়ে এসে আহান গাল পুরে খাবার দিয়ে দেয়। তারপর বলে,” বেশী কথা বলেন আপনি। আগে তো জানতাম আমি বেশী কথা বলি কিন্তু না আপনি দেখছি আমার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে।”

“আমি তোমার মতো আবোল তাবোল বলি না”,মুখের খাবারটা শেষ করে আহান রুহিকে খাইয়ে দিলো। প্রথমে রুহি খেতে চায় নি আহান জোড় করলো। রুহি একগাল খাবার মুখে নিয়ে আহানের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।

” এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?”, ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বললো আহান।

রুহি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। মুখে খাবার থাকায় কথাও বলতে পারছে না রুহি। অন্যদিকে তাকিয়ে রাগে ফুলতে লাগলো রুহি।
আহান সেই গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

খাওয়া শেষে রুহি পানি আনতে যেতেই সামনে ছোটো মামা পড়লো। রুহি থমকে দরজার সামনে দাড়িয়ে পড়লো। এইবার না ধরা খেয়ে বসে। পথে পথে এতো কাটা! ভালো লাগে না। ছোটো মামা ঘুম ঘুম চোখে রুহির দিকে তাকালো তারপর হাই তুলতে তুলতে বললো,” কিরে ঘুমাস নি এখনো?”

রুহি না সূচক মাথা নাড়ল। আত্মাটা গলা পর্যন্ত উঠে আছে একটু পর না বেরিয়েই আসে। রুহি ঢোক গিলে বললো,” গলা শুকিয়ে গেছে। পানি খেতে উঠেছি।”

“আরে আমিও তো। আচ্ছা সবুর কর আমি এনে দিচ্ছি। তোর পানির বোতলটা দে।”, বলে রুহির হাত থেকে বোতলটা নিয়ে কিচেনে গেলেন তিনি। রুহি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
এর মাঝে আহান দরজার ওপাশ থেকে মাথা বের করে রুহির গালে একটা কিস করতেই রুহি কেপে উঠলো। তারপর কড়া চোখে আহানের দিকে তাকাতেই আহান মুখ এগিয়ে আনলো। রুহি কড়া চোখে তাকিয়ে আহানকে ঠেলে রূমের ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। লোকটার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই, ছোটো মামা দেখে ফেললে কি হতো? রুহি ঘাড় কাত করে কিচেনের দিকে তাকালো নাহ্ কেউ নেই। রুহি বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো।

ছোটো মামা পানির বোতল ভরে নিয়ে এসে রুহির হাতে দিয়ে বললো,” বেশী চিন্তা করিস না। মায়ের রাগ পড়লে তখন ঠিক বুঝবে। এখন আর রাত জাগিস না ঘুমিয়ে পড়।”

রুহি হা সূচক মাথা নেড়ে দ্রুত রূমে ঢুকেতেই আহান এগিয়ে আসতে লাগলো। রুহি তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে বললো,” আপনি কি শুরু করেছেন বলুন তো? এমন সময় আপনার এসব করতে হবে? মামা দেখলে কি হতো বলুন তো।”

“দেখলে দেখতো। আমার সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।”

আহানের কথা শুনে রুহি ঢক ঢক করে পানি খেতে লাগলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে তার। তারপর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছতেই আহান রুহির একপাশের দেওয়ালে হাত রেখে দাড়ালো।

রুহি আর চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
” রাত সাড়ে তিনটার কাছাকাছি, আপনি যাবেন না? সকালে আলো ফুটলে যাবেন কি করে?”

“নিজের বয়ফ্রেন্ডকে চলে যেতে বলছো? কেমন মেয়ে তুমি?”, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলল আহান।

রুহি হতবাক হয়ে বললো,” কিসের বয়ফ্রেন্ড? কোথাগার বয়ফ্রেন্ড?”

“অ্যাম ইউর বয়ফ্রেন্ড সুইট হার্ট।”, রুহির মুখের সামনের চুল ফু দিয়ে সরিয়ে দিতেই রুহি চোখ বন্ধ করে ফেললো তারপর বললো,” ইস কি শখ? নিজেকেই নিজে বয়ফ্রেন্ড ঘোষণা করে দিয়েছে। আমি মানি না এসব।”

” যখন বর মানো না তখন বয়ফ্রেন্ড তো মানতেই হবে। উ হ্যাভ নো চয়েজ সুইট হার্ট।”,

রুহি খিল করে হেসে উঠে বললো,” বর থেকে সোজা বয়ফ্রেন্ড! ছিঃ ছিঃ কি অবনতি আপনার।”

” আচ্ছা বুঝেছি তুমি চাও না আমি এইখানে থাকি। ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।”, বলেই আহান সরে এলো। আহান চোখ মুখ সিরিয়াস করে ফেললো। আহান চলে যাবে বলতেই রুহির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। আহান এগিয়ে গিয়ে নিজের শার্টটা হাতে নিতেই রুহি এগিয়ে এসে ক্ষীণ স্বরে বললো,” এক্ষুণি চলে যাবেন?” আহান হা সূচক মাথা নাড়তেই রুহির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এক্ষুণি কে যেতে বলেছে, আহান চলে গেলে তার মোটেও ভালো লাগবে না। রুহি এগিয়ে এসে আহানের হাত থেকে শার্টটা টান মেরে সরিয়ে নিয়ে বললো,” আরেকটু পরে যান।”

” আমি এক্ষুনি যাবো।”, রুহিকে বললো আহান।
” আমি যেতে দিবো না।”, অভিমানি সুরে বললো রুহি।

আহান এগিয়ে এসে বলল,” কেনো?”
রুহি হুট করেই আহানকে জড়িয়ে ধরে আহানের বুকে মাথা রেখে বললো,” এখন যেতে হবে না। আরো পরে যান।”
আহান নিরবে হাসলো তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো,” একটু পর তো আলো ফুটবে, আমায় এক্ষুনি যেতে হবে।”

রুহি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভিমানি গলায় বললো,”নাহ্”
রুহির চোখ ভিজে আসতেই রুহি চোখ বন্ধ করে ফেললো। আহান রুহিকে কোলে তুলে বললো,” আচ্ছা, যাবো না। কিন্তু আগে মানো যে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড।”

” আচ্ছা,মানছি।”, ছল ছল চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।

আহান রুহিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুহির হাত থেকে শার্টটা চাইতেই, আহান চলে যাবে ভেবে রুহি শার্টটা লুকিয়ে ফেলে বললো,” না আমি দিবো না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”, বলে আহান রুহির পাশে শুয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বললো,” ঘুমাও নইলে শরীর খারাপ করবে।” তারপর রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
রুহি হাতে থাকা আহানের শার্টটা শক্ত করে ধরে রাখলো। আহানের উষ্ণ স্পর্শে চোখ বন্ধ করতেই রুহির ক্লান্ত শরীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

সকালে দরজায় নক করার শব্দে রুহির ঘুমের ভাঙলো। ঘুম ঘুম চোখ খুলতেই তাকে ঘিরে থাকা উষ্ণ স্পর্শটার অনুপস্থিতি খেয়াল করতেই লাফিয়ে বসলো রুহি। তারপর হাত দিয়ে চোখ ডলে পুরো ঘরটায় নজর কাটলো। আহান কোথাও নেই। আবার অস্থির হয়ে উঠলো রুহি। এর মাঝে ছোটো মামা আরো কয়েকবার দরজায় টোকা দিয়ে বললো,” কিরে উঠিস নি এখনো? নাশতা করবি না।”

” হ্যা মামা উঠেছি। তুমি যাও, আমি আসছি।”, রুহির কথায় আশ্বস্থ হয়ে ছোটো মামা চলে গেলেন।

রুহি এক দৃষ্টিতে হাতে মুষ্টিবদ্ধ শার্টটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর মলিন চোখে জানালার দিকে তাকালো। রুহিকে ঘুমের মাঝে রেখেই চলে গেছে আহান। চেয়ারে আহানের জ্যাকেটটা নেই। শার্টটা ফেলে গেছে কারণ রুহি শক্ত করে সেটাকে আকড়ে ঘুমিয়ে ছিলো। রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শার্টটা যত্নে ওয়ার্ডরোবে রেখে টেবিল দিকে তাকাতেই একটা চিরকুট দেখতে পেলো। চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়েই রুহির মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

[ #চলবে ]

[ পার্টটা ছোট করে দেওয়ার জন্যে দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here