বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_৩৩

0
1103

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৩
#নবনী_নীলা

রুহি হাল ছাড়লো না, আহানের মুখের কাছে মুখটা নিয়ে বললো,” ভালো করে দেখুন তো আপনি আগে কখনো দেখেননি আমাকে।”
আহান মুখটা রুহির একদম কাছে নিয়ে এসে বললো,”আরেকটু কাছে আসো তারপর দেখি।” রুহি সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা পিছিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,” কেনো আপনার চোখে কি সমস্যা? দূরের জিনিস দেখতে পান না?”

” দেখতে পাই কিন্তু তোমাকে দূর থেকে না কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে।”,

” একদম কথা ঘুরবেন না। আপনি বিয়ের আগে আমায় কখনো দেখেননি? বাইকটা আপনার হলে তো দেখার কথা।”, চিন্তা মগ্ন হয়ে বললো রুহি।

আহান না জানার ভান করে বললো,” মানে?”

” আচ্ছা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। রাতের বেলা বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন তারপর রাস্তায় একটা মেয়ে বিপদে পরে, তখন আপনি মেয়েটিকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচান। একটু ভালো করে মনে করুন।”

আহান কিছুক্ষণ ভেবে বললো,” এমন তো অনেকবার হয়েছে। কিন্তু তুমি এসব জানতে চাইছো যে?”

রুহির নীচের ঠোঁট উল্টে আহানের দিকে তাকালো তারপর বললো,” ধুর আপনাকে কিভাবে বোঝাই!”

” তুমি কি সেই বাইকের ছেলেটার সাথে আমাকে মিলানোর চেষ্টা করছো?”, একটু রাগী স্বরে বললো আহান।

রুহি না শুনেই হা সূচক মাথা নাড়ল তারপর হতবাক হয়ে তাকালো। আহান বাইকের ছেলেটার কথা জানলো কিভাবে?
রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” আপনি জানেন কি করে?”

” তোমার ডায়রি পরে জেনেছি।আমি কখনো ভাবিনি তুমি সেই ছেলেটিকে আমার মাঝে খুজবে। তারমানে তুমি ঐ ছেলেটিকে ভুলতে পারোনি?”, গম্ভীর গলায় রাগের বহিঃপ্রকাশ করে বললো আহান।

রুহি হতভম্ব হয়ে তাকালো। আহান এভাবে তাকে ভুল বুঝবে সে সেটা ভাবেনি।
” আপনি কি বলেছেন কি? আপনার মাঝে আমি তাকে খুজবো কেনো? আর ভালোবাসার কথা আসছে কেনো? ওনাকে শুধু আমার ভালো লাগতো।”ঘাবড়ে গিয়ে গর গর করে বললো রুহি।

আহান একটা ভ্রু তুলে বললো,” শুধূ তোমার ক্রাশ ছিলো?”

রুহি মাথা নিচু করে হা সূচক মাথা নাড়ল। আহান ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” বাহ্ শেষমেশ নিজের ক্রাশকেই বর বানালে।”

আহানের কথা শুনে রুহি হতবাক হয়ে তাকালো কারণ এতক্ষণ আহানের কথায় তার ভুলটা ভেঙে গিয়েছিলো? আহান সে হতেই পারে না। তারমানে লোকটা এতক্ষণ মজা করছিলো তার সাথে। রুহির রাগ চরম মাত্রায় বেড়ে গেছে।

” আপনি আমার সাথে মজা করছিলেন এতক্ষণ? ঠিক আছে থাকুন আপনি এইখানে থাকবো না আপনার সাথে।”, বলেই আহানের কোল থেকে উঠে যেতেই। আহান রুহির হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে জড়িয়ে ধরলো। রুহি নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আহান ধরেই আছে,তখনি একজন স্টাফ এসে একটা কেক আর এক গুচ্ছ হলুদ গোলাপ টেবিলে রেখে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” হ্যাপি বার্থডে ম্যাডাম।”

রুহি অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো। একে তো এরা এইখানেই সাপ নেওলের মতোন ঝগড়া করছিলো মাঝখানে এই লোকটা কেক নিয়ে হাজির তার উপর আহান এখনো তাকে বাহুতে জড়িয়ে আছে। এর থেকে বেশী অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন তাকে আগে হতে হয় নি। রুহি নিরবে রাগ কমাচ্ছে, আহান স্টাফের উদ্দেশ্যে বললো,” thanks, তুমি এবার আসতে পারো।”
স্টাফটা মাথা নেড়ে চলে গেলো। স্টাফ চলে যাওয়ার সাথে সাথে রুহি আহানের হাতে জোড়ে চিমটি কাটতেই আহান আহ্ শব্দ করে রুহিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,” তুমি ভালো হবা না কোনোদিন।”

” হ্যা আমিই খারাপ। সারাদিন তো একবার উইশ করলেন না এখন শেষ বেলায় এসেছেন!”, ঠোঁট উল্টে বললো রুহি।

আহান রুহিকে টেনে নিয়ে রুহির মাথাটা নিজের বুকে রেখে বললো,”আরো আগে যদি তোমায় বলতাম তার কিছুক্ষণ পর তোমার আবার মন খারাপ হয়ে যেতো। তাই সবটা শেষের জন্যে রেখেছি কারণ সব শেষের রেশটা অনেক্ষন পর্যন্ত রয়ে যায়।”
রুহি আহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সত্যি তার মনটা এখন অনেকটাই ভালো। রুহি আহানের বুকে মাথা রেখে বললো,” আপনি কবে আমার ডায়রি পড়েছেন?”

” হু…. ম তোমার জ্বর হয়েছিলো যেদিন। আচ্ছা এবার কেকটা কাটো একটু পর বারোটা বেজে যাবে নইলে।”

রুহি হাসতে হাসতে আহানের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,” কি অদ্ভুত লাগছে শুনতে।”

তারপর রুহি কেকের পাশে থাকা ছুরিটা দিয়ে কেকটা কাটতেই চারিপাশে দিয়ে একসাথে অনেকগুলো ফানুস উড়তে লাগলো। আকাশের দিকে দৃষ্টি জেতেই চোখ আটকে গেলো রুহির, কি অপূর্ব দৃশ্য। আহান কেক নিয়ে রুহিকে খাইয়ে দিয়ে বললো,” হ্যাপি বার্থডে।”
রুহি একবার আকাশটা দেখছে আবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে। দিন শেষে এই হাসি মুখটাই আহানের প্রশান্তি। আহান হাতে থাকা কেকটা রুহির গালে আলতো করে মেখে দিতেই রুহি ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকালো। আহান বিরক্তি চোখে বললো,” এদিকে কি দেখছো? ওদিকে ফানুসগুলো উড়ে যাচ্ছে ওদিকে তাকাও।” বোলেই হাত দিয়ে রুহির মুখ ঘুড়িয়ে কেক মাখা জায়গায় কিস করতেই রুহি চমকে উঠলো। রুহি চোখ বন্ধ করে ওড়নার প্রান্তভাগ শক্ত করে ধরলো। পুরো শরীরে অন্যরকম শিহরন বয়ে গেল।

আহান নিচের অংশ ভিজিয়ে বলল,
” ডেলিসিয়াস।”

রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকিয়েই আবার চোখ সরিয়ে নিলো।
________________

এভাবে খুনসুটি চলছিল আহান আর রুহির জীবনে। একদিন সকালে হটাৎ ফোন কল পেয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো রুহি। আহান ছিলো অফিসে তাই একটা ট্যাক্সি নিয়েই রুহি বেরিয়ে গেলো। বুকের ভিতরটা অস্থির হয়ে আছে রুহির। বাড়ির সামনেই টেক্সি থামলো। রুহি ছুটে গেলো, ঘরে ঢুকতেই নানাভাই সোফায় গম্ভীর মুখে বসে আছে। রুহি এগিয়ে এসে নানাভাইয়ের পাশে বসলো। রুহির চোখে মুখে অস্থিরতা স্পষ্ট। রুহি হাপাতে হাপাতে বললো,” নানুর কি হয়েছে নানাভাই?”

নানাভাই রুহির মাথায় হাত রেখে বলল,” জানি না দরজা বন্ধ করে বসে আছে বার বার বলছে তোকে ফোন করে যেনো আসতে বলি। বুঝতে পারছি না কি হয়েছে।”

” আচ্ছা তুমি চিন্তা করে, শরীর খারাপ করো না। আমি দেখছি।”,

রুহির ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। বুকের ভিতরের অস্থিরতা কিছুতেই কাটছে না রুহির। শেষমেশ সাহস জুগিয়ে রুহি দরজায় নক করে বললো,” নানু! দরজা খোলো আমি এসেছি। নানু।” আরো কয়েকবার দরজায় নক পড়তেই নানু দরজাটা খুলে রুহির দিকে তাকালেন। তারপর গম্ভীর ঈশারায় রুহিকে ভিতরে বসতে বললো। নানু নিঃশব্দে দরজা লাগিয়ে রুহির সামনের চেয়ারে বসলেন। রুহি নানুকে বরাবরই ভীষন ভয় পায়। তাও খুব সাহস নিয়ে বললো,” নানু তুমি ঠিক আছো? কিছু বলবে আমায়?”

নানুর দিকে তাকিয়েই রুহি বুঝলো কিছু একটা হয়েছে চোখগুলো লাল হয়ে গেছে শেষবার নানুকে এমন দেখেছিল তার মায়ের ঘটনাটি বলার সময়। রুহির বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। নানু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পাশ থেকে কিছু পেপার রুহির সামনের টেবিলে ছুড়ে ফেলল।। পেপার গুলোর দিকে তাকাতেই রুহি আতকে উঠে নানুর দিকে তাকালো।

নানু কঠিন গলায় বললো,” এতো যে বড়ো হয়ে গেছো সেটা তো জানা ছিলো না। তোমাকে বিয়েটা করতে বলেছি তার মানে এই নয় তুমি কারোর চুক্তির বউ হতেও রাজি হয়ে যাবে। জীবনটা কি এতোই ছেলেখেলা? এ জীবনে কি আমার এইটাই পাওনা ছিলো? তোমার মাকে হারিয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে বেচেঁ থাকতে শিখেছি। তার মূল্য আজ এই পেলাম? তোমার মা একই ভুল করেছে তার পরিণতি জানার পর তুমিও এমনটা করবে ভাবতেই পারিনি।”রুহি ঘামতে লাগলো। নানুর কথার মাঝে কণ্ঠ বসে আসছে। কতটা কষ্ট সে পেয়েছে সেটা ভেবেই শরীরের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে রুহি। চোখ দিয়ে নিরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

“তুমি এই চুক্তিতে রাজি হলে কিভাবে? এতোটা চাপ তো আমরা দেই নি তোমাকে। খুব বড়ো হয়ে গেছো। নানু, নানাকে তো জানবার প্রয়োজন নেই। তোমার নানাভাই জানলে লোকটা সহ্য করতে পারবে? আমদের কথা না হয় বাদ দেও, সেটা নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবে না। কিন্তু নিজের জীবনের সাথে কি করেছো এটা।” বলেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো নানু। রুহি ভয় পেয়ে নানুর কাছে এগিয়ে যেতেই নানু হাত দেখিয়ে রুহিকে থামতে বাধ্য করে। রুহি চোখ মুছতে মুছতে বললো,” নানু একবার আমার কথাটা শোনো।”

নানু কোনো কথা শুনতেই চাচ্ছে না। নানু কিছুক্ষণ চুপ করে নিজেকে শান্ত করে বললো,” তোমার কোনো কথা শুনতে আমি রাজি নই। এবার আমি যা বলব তাই হবে।আজকের তারিখ জানো কতো?১৭ আগস্ট, এই চুক্তি অনুযায়ী তোমরা এখন তোমরা আলাদা, সে খেয়াল আছে? তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তোমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আজ থেকে তুমি আমাদের কাছে থাকবে আর ওদের সাথে তোমার সব যোগাযোগ বন্ধ। অনেক খেলেছ নিজেকে নিয়ে। এবার আমার কথাই শেষ কথা।”

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here