#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২৬
#নবনী_নীলা
” রুহি, সত্যি বলছি আমাকে আর রাগিয়ে দিও না। দুই মিনিটের মধ্যে এগুলো পরে বেড়িয়ে এসো ওয়াশরুম থেকে , নইলে আমি ভিতরে আসছি। এই দরজা ভেঙ্গে ভিতরে যেতে আমার
দুই মিনিট ও লাগবে না।”, কড়া গলায় বললো আহান। সব রাগ শেষমেষ দরজায় গিয়ে না পরে মনে তো হচ্ছে ভেঙেই ফেলবে। রুহি একটা ঢোক গিললো।
এই লোকটার মাথায় যে কি ঘুরে? তার জামা কাপড় আমি পড়তে যাবো কেনো? এগুলো কি বিশাল বিশাল! লোকটার মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতে দরজায় আবার টোকা পড়তেই রুহির হুস ফিরল, দরজাটা না ভেঙ্গে ফেলে ঐ লোকটা। উপায় না পেয়ে আহানের দেওয়া শার্ট প্যান্ট পরে নিলো রুহি। প্যান্টটা নিচের দিকে ভাজ করে ঠিক করে নিলো কিন্তু শার্টটা? সেইটা তো কাধ বেয়ে পরে যাচ্ছে। গলা কাধের অনেকটা খোলা বললেই চলে।
আহান রুহির বাড়িতে ফোন করে ব্যাপারটা সামলে নিলো। রুহির নানা নানি সবাই চিন্তায় পরে গিয়েছিলো। আপাদত সামাল দেওয়া গেছে। আহান কল কেটে পিছনে ফিরতেই রুহি বের হলো। আহান রুহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। ভেজা চুলগুলো থেকে টপ টপ করে পানি পরছে, পরনে সাদা শার্টটায় গলা আর কাধের দিকটায় চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো আহান।
ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আহানকে এমন খালি গায়ে দেখতে দেখতে হবে কে জানতো। এর আগেও দেখেছে তবে মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছিল রুহি। আজ আহানের দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে গেলো রুহির। চওড়া কাঁধ, লাল ফর্সা গায়ের রঙ এক কথায় সুদর্শন পুরুষ। এমন খুঁটিয়ে সে আগে দেখেনি। আহানের চোখের দিকে তাকাতেই হুশ ফিরল রুহির। একটা ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে নিলো রুহি।
” তোমার চুল থেকে এভাবে পানি পড়ছে কেনো?”, বলেই আহান তোয়ালে খুজতে লাগলো।
রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে একবার চুলের দিকে তাকালো তারপর বলল,” ও আমি তোয়ালে নিতেও ভুলে গেছিলাম।” এর মাঝে আহান তোয়ালে এনে রুহির মাথাটা মুড়িয়ে দিলো। তারপর চুলের পানি তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগলো। রুহি বুঝতে পারছেন না আহানের কাজ গুলো। কয়েকমাস পর যখন অন্য কাউকে বিয়েই করবে তাহলে এতো যত্ন নিচ্ছে কেনো তার। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি এখণও। আহান এভাবে মাথা মুছে দেওয়ার কারনে রুহির কেনো জানি ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আহান তোয়ালেটা খুলে নিতেই দেখলো রুহির গলায় বিন্দু বিন্দু পানির ছিটে। আহান রুহির চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিয়ে গলা ও কাধের অংশের পানি মুছে দিতেই রুহির শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো। রুহি সরে যেতে চাইলে কিন্তু আহান এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে রাখলো।
দুজনের নিরবতায় অন্য এক পরিবেশ হয়ে গেলো। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মুহূর্তেই সামিরার বলা কথাগুলো গুলো মনে পড়তেই রুহি বলে উঠলো,” কয়েকমাস পর যে চলে যাবে তার জন্য বেশী কেয়ার হয়ে যাচ্ছে না। আমাকে এভাবে অপমান করে এখন আপনি ঘায়ে মলম লাগাচ্ছেন?”
রুহির কথায় আহান রুহিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বললো,
” আমি তোমায় কোনো অপমান করিনি।”
” আপনি বলেছিলেন এই এগ্রিমেন্টের কথা আমি আর আপনি বাদে আর কেউ কোনোদিন জানবে না। সাত মাস পর আপনি আর আমি আলাদা হয়ে গেলেও কেউ জানবে না। কিন্তু নিজের গার্লফ্রেন্ডের মন ভালো করতে আপনি সব কিছু বলে দিলেন। আজ কাল আমার মতো মেয়ে নাকি পাওয়া যায় না যারা চুক্তিতে কারো সাথে থাকতে রাজি হয়। কথাটার ভার কতো আপনি জানেন? এইটা কি আমার প্রাপ্য ছিল। মানছি কথাটা সত্য কিন্তু.. ” কথা গুলো বলতেই রুহির চোখের কোণে পানি জমে যায় তাই আহানের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় সে।
কথাগুলো শুনেই আহানের মেজাজ বিগড়ে গেলো। শুধু তাকে ভুল বুঝে মেয়েটা চোখের জল ফেলছে। আহান হাত দিয়ে রুহির দুই গাল ধরে নিজের দিকে ফিরলো। তারপর মাথা ঠান্ডা করে বললো, ” প্রথমত সামিরা আমার গার্লফ্রেন্ড না, কথাটা শেষবারের মত আমি তোমায় পরিষ্কার ভাবে বলে রাখছি। দ্বিতীয়ত ঐ এগ্রিমেন্টের কাগজ আমি ওকে দেই নি, আমার অবহেলার কারনে কোনোভাবে ও আমার ঘরে এসে সেগুলো পেয়েছে। তোমাকে আমি কোনো অপমান করিনি তাই আমাকে ভুল বোঝাটা বন্ধ করো।”
” একটা মেয়ে শুধু শুধু আমাকে মিথ্যে কথা বলবে কেনো?।”, অভিমানী গলায় বললো।
” সত্যিটা আমি তোমায় জানালাম,তোমার আমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে না হলে করো না। সেটা তোমার উপর নির্ভর করে।”, বোলেই আহান রুহির গাল দুটো ছেড়ে দেয়। আহান চায় না জোর করে কাউকে কিছু বোঝাতে বুঝতে হলে সে এমনই বুঝবে না হলে কোনোদিন বুঝবে না। রুহি যদি ভুল বুঝে থাকতে চায় তাহলে থাকুক।
রুহি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো আহানের দিকে। এ কেমন দোটানায় পরে গেলো সে। ইচ্ছে তো করছে আহানকে বিশ্বাস করে তবে একটা কিন্তু থেকেই যায় তার মনে। অতীতটা তাকে কিছুই বিশ্বাস করতে দিচ্ছে না।
বেল বেজে ওঠায় আহান রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রুহি আড় চোখে আহানের যাওয়ার দিকে তাকালো, নিশ্চই শাকচুন্নিটা এসেছে। কে এসেছে দেখার জন্যে রুহি আহানের পিছু পিছু এসে ড্রয়িং রুমে দাড়ালো। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালো কিন্তু রুহির ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো ডেলিভারি বয় এসেছে। রুহি চোখ পিট পিট করে তাকালো তারপর নিজের রূমের দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেলো রুহির। একি দরজায় তালা মারা কেনো? কোথায় ঘুমাবে সে? কে করেছে এই কাজ। রুহি এগিয়ে গিয়ে রুমের তালাটা ধরে ঝাকানো শুরু করলো।
আহান দরজা লাগিয়ে ভিতরে এসে রুহিকে দেখলো তালা নিয়ে ঝাকাঝাকি করছে। আহান কিচ্ছু বললো না কারণ তালাটা সে মেরেছে। খাবার গুলো নিয়ে রূমে চলে গেলো। রুহি রেগে আহানের পিছে পিছে গেলো।
” ঐ রুমটায় তালা মেরেছে কে?”, রাগে ফুলতে ফুলতে বললো।
আহান একটু ভেবে সঙ্গে সঙ্গে বললো,” সামিরা, সামিরা তালা মেরেছে।”
আহানের কথা রুহির মাথার উপর দিয়ে গেলো
সামিরা তালা মেরেছে মানে? মানে কি এসবের? সব মিথ্যে, এই লোকটাই করেছে, হাড়ে হাড়ে চেনা আছে এই কুম্ভকর্ণটাকে। সব নষ্টের গোড়া এই মহাজন।
” হ্যা, কেনো সে তালা মারবে কেনো?”, হতবাক হয়ে বললো রুহি।
” জানি না, আমি তো সে জন্যই তোমার ব্যাগ আনতে পারলাম না। তাই আমার জামা পরে চাতক পাখির মতন ঘুরে বেড়াচ্ছ।”, বোলেই ঠোঁট চেপে হাসলো আহান।
” আপনি হাসছেন কেনো তারমানে আপনি করেছেন। আপনার হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোরের মতো মিট মিট করে হাসছেন।”, কড়া গলায় বললো রুহি।
“আমি কেনো রুমটায় তালা মারতে যাবো। আমি করিনি, বিশ্বাস করো। আচ্ছা আমি দেখছি চাবিটা কোথাও খুজে পাওয়া যায় কিনা।”, বলে এক বাটি সুপ নিয়ে আহান এগিয়ে এলো তারপর সেটা রুহির হাতে ধরিয়ে বলল,” তুমি এটা শেষ করো আমি দেখছি কিভাবে দরজাটা খোলা যায়। আর শেষ করো নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।”,বলে আহান সত্যি সত্যি খুজতে লাগলো।
রুহি সুপের বাটিটা হাতে বিছানায় বসে পড়লো। আসলেই কি আহান তালা দেয় নি? ঐ শাকচুন্নিটা দিয়েছে কিন্তু কেনো? কি কনফিউজিং !
আহান কিছু বলে নি ঐ মেয়ে নিজে নিজে খুজে পেপার পেয়েছে। আহানের সাথে সময় কাটাবে বলে এলো,ফিরে এসে দেখি কোথাও নেই। আবার গেষ্ট রুমে তালা মেরে গেছে। ভাবতে ভাবতে পুরো সুপটা খেয়ে ফেললো রুহি। এতক্ষণ সে আনমনা ছিলো। আহানের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা চাবি হাতে দরজার দিকে যাচ্ছে।
” চাবি পেয়েছেন?”, বলেই বাটিটা একপাশে রেখে উঠে দাড়ালো। আহান কিছু না বলে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তারপর চাবি দিয়ে ভিতর থেকে লক করে দিলো। রুহি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি দরজা লাগলেন কেনো?”
” হুম, দেখলাম দরজাটার লক ঠিক আছে কিনা?”বলেই চাবি হাতে করে গা হেলিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আহান। রুহির বিস্ময়ের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তারমানে তাকে বোকা বানানো হয়েছে! এই কাজটা উনি করেছেন। রুহি রাগে ফুলতে লাগলো।
” আপনি এতক্ষণ ধরে এই চাবিটা খুজছিলেন?”, গাল ফুলিয়ে প্রশ্ন করতেই আহান রুহির হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হটাৎ টেনে ধরায় রুহি আহানের বুকের উপর পড়তেই চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়লো রুহির। আহান হাত দিয়ে আলতো করে রুহির গালে হাত দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিলো। আহান এক রাশ নেশা ভরা চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের চোখের দিকে তাকিয়ে দমে গেলো রুহি। সব রাগ যেনো উড়ে গেলো।আহান নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বললো,” আমি জীবনেও কোনো মেয়ের জন্য এতো কিছু করিনি। আজ তোমার জন্য মিথ্যে পর্যন্ত বললাম যে আমি কিনা মিথ্যে বলা পছন্দ পর্যন্ত করি না। তুমি এতো বিরক্ত করো সারা দিন উল্টা পাল্টা কথা বলো তারপরও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারি না। কেনো বলতো?”
রুহি ঘন ঘন চোখের পাতা ফেললো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে রুহি, এটা কি আহান! বুকের ভেতরে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। আহান রুহির কোমড় জড়িয়ে বিছানার সাথে মিশিয়ে দিতেই রুহি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,” কি করছেন?”এক রাশ লজ্জা ঘিরে ধরেছে রুহিকে।
আহান রুহির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,” খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তোমায়।”রুহি চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। তারপর লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরলো। বুকের ভিতরটায় উথাল পাথাল চলছে। আহান রুহির গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো,” লজ্জা পেলে তোমায় দেখতে দারুণ লাগে।তখন ইচ্ছে করে তোমায়………….”
[ #চলবে ]