#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_২০
#নবনী_নীলা
আহানর হাতটা অনেকটা কেটে গেছে রুহি তখন থেকে বলে যাচ্ছে হাতে যেনো আহান বান্ডেজটা করে নেয়। এই মশাই কানের মাছিও নাড়ছে না। থমথমে মুখে বসে আছে। উফ এতো রাগ এই ছেলের মেরে মেরে নিবিড়ের যা হাল করেছে ওকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে তার পরও এর রাগ কমছে না। রুহির আহানকে বেশ ভয় করছে এই মুহুর্তে কিছু বললেই যদি এখন তাকেও বকা দেয়। তাও রুহি এগিয়ে এসে আহানের পাশে বসলো। আহানের হাতটা এখনো রক্ত লাগা। নিবিড়কে মেরেছে ভালো কথা নিজের হাতের দিকে খেয়াল রাখবে না। এইসব তো এখন বলাও যাবে না জনাব যেভাবে রেগে আছে।
আহান হাতটা এমন ভাবেই ফেলে রাখবে মনে হচ্ছে। রুহি কেই যা করার করতে হবে। রুহি একটা ঢোক গিললো। বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে তার। তারপর সাহস করে আহানের হাতটা ধরে এদিকে আনতেই আহান হাত ছাড়িয়ে শক্ত চোখে রুহির দিকে তাকালো। রুহি হাল না ছেড়ে ভয়ে ভয়ে হাতটা আবার ধরলো।
তারপর বিনয়ী গলায় বললো,” এভাবে তাকাবেন না, ভয় লাগে। হাতটা একটু..”, বোলেই চুপ করে গেলো রুহি। আহান আর কিছু বললো না দৃষ্টি সামনে স্থির করা তার।
রুহি আহানের হাতটায় ব্যান্ডেজ করতে লাগলো। ইস কি অবস্থা করেছে হাতের। রুহির মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার জন্যেই এমন টা হয়েছে তাকে বাঁচাতে গিয়ে আজ হাতটার এই অবস্থা। রুহি আহানের হাতটা যত্ন নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বক্সটা রেখে আসতে উঠে দাঁড়াতেই আহান ব্যান্ডেজ করা হাত দিয়েই রুহির হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসালো। রুহি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে কি হলো এইটা? তারপর হাতের দিকে চোখে পড়তেই রুহি রেগে গিয়ে বললো,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এভাবে কেউ..” বাকিটা বলে শেষ করার আগেই আহান বললো,” আমাকে থামলে কেন তখন?”
“থামালাম কেনো মানে? আপনার কি জেল খাটার শখ জেগেছিল?”, কটাক্ষ করে বললো রুহি।
” হোয়াট! আমাকে জেলে ভরবে? কারো এখনও সে ক্ষমতা হয় নি।”, রুহির কাছে গিয়ে বললো।
” হ্যা! আপনি মানুষ মারবেন আর পুলিশ এসে তো আপনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে যাবে তাই না। আরেকটু হলে তো মেরেই ফেলতেন।”,
” তোমার এতো গায়ে লাগছে কেনো? ঐ বাস্টার্ডটাকে নিয়ে তোমার কিসের এতো চিন্তা।”, রেগে গিয়ে বললো আহান।
” ওকে নিয়ে আমি কেনো চিন্তা করতে যাবো। একদম ফালতু কথা বলবেন না। আমি আপনার কথা চিন্তা করে বলেছি। ”
” আমি তোমাকে বলেছি তোমায় আমার জন্য চিন্তা করতে? এবার যে আমার রাগটা আরো বারছে তার বেলায় কি হবে। “রুহির একদম কাছে এসে বলল আহান।
” উফফ মনে হচ্ছে কোনো ইলেকট্রনিক মেশিনকে বিয়ে করেছি খালি কিছুক্ষণ পর পর গরম হয়ে যায়। এতো রাগ কিসের আপনার?”,
” তোমার জন্য ঐ বাস্টার্ডটাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারিনি। তোমাকে এবার কি করা উচিৎ? ইচ্ছে করছে তোমায়..”
” কি ইচ্ছে করছে? আমাকেও মারবেন নাকি!”, চোখ বড় বড় করে বললো রুহি।
” নাহ তোমাকে তো আদর করবো।”, বলে বাকা হাসি দিয়ে তাকালো আহান।
রুহি আহানকে হাত দিয়ে ঠেলে বললো,” এতো আদরের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। ছাড়ুন আমায়।”
আহান রুহির হাতটা বুকের কাছ থেকে ধরে নিয়ে বললো,” এতো সহজে? তোমার তো একটা পানিশমেন্ট হওয়া দরকার।”
” দেখুন মজা করবেন না। ছাড়ুন দরজা খোলা।”, রুহি আহানকে সরিয়ে দিতে বেস্ত হয়ে গেল।
আহান দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,” সো হোয়াট?”
” আরে আপনি চাইছেনটা কি? ছাড়ুন যদি কেউ এদিকে এসে দেখে ফেলে এ মুখ আমি কাউকে দেখাতে পারবো না।”
” কেনো মুখে কি হয়েছে? “, বলে আহান হাত দিয়ে রুহির গাল দুটো ধরে এপাশ ওপাশ করে দেখতে লাগলো।
এর মাঝেই নুড়ি রূমে হাজির, নুড়ি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নুড়িকে দেখে আহানের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। রুহি লজ্জায় চোখে মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। এবার এ মেয়ে দুনিয়া রটিয়ে দিবে। সব শেষ মান ইজ্জত কিছুই থাকবেনা। রুহির চোখ বন্ধ করে এভাবে মুখে হাত দিয়ে মুখ লুকানো দেখে আহান বললো,” কোনো কান্ড জ্ঞান নেই, যাবার সময় দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে যাবে না।”
কথাটা শুনে রুহি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মুখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে বলল,” কেনো দরজা চাপাবে কেনো? আপনি সরুণ তো যদি নানী বা নানা চলে আসে।” বোলে ঠেলে আহানকে সরিয়ে দিলো রুহি। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।
” আপনি এভাবে আমাকে সবার সামনে আমাকে অপ্রস্তুত করে কি পান?”, রেগে বললো রুহি।
আহান বাকা হাসি দিয়ে গা হেলিয়ে শুয়ে পড়ল। এটা দেখে রুহি রাগে কটমট করে বেরিয়ে গেলো।
____________
আহান আর রুহিকে এভাবে একসাথে দেখে দিদা বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে রাজি হয়েছেন। তাই পরের দিন সকালে আহান রুহি বাড়িতে ফিরে যায়। আজ রাতে দিদার ফ্লাইট। আহানদের বাড়িতে সবাই কাজে ব্যাস্ত। আহান আর রুহি পৌছে যায় সময় মতন। রুহি দিদার সাথে কথা বলছিলো ওনার ওষুধপত্র সব গুছিয়ে দিচ্ছে। সবাই অনেক কাজ করছে কারোর দম ফেলার সময় নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে কিছুক্ষন পর দিদা গাড়ি করে বের হবে। সন্ধ্যা ৭টায় ফ্লাইট। আবির ভাইয়া দিদাকে নিয়ে এয়ারপোর্ট যাবেন।
অনেকেই যেতে চাইলো কিন্তু দিদা না করলেন। যাবার আগে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” আমার আহানটাকে দেখে রেখো।”
তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমার আবদারটা যেনো মনে থাকে,ফিরে এসে যেনো একটা সুখবর পাই।”
আহান এ বিষয়ে কিছু বললো না। রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাই আহান শুধু হা সূচক মাথা নাড়ল। দিদা চলে যাবার পর কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগছে সবার বাড়ির সবার মন ভালো নেই। সুপ্রভা তো সেই তখন থেকে কান্না করে চলেছে। রুহি কিছুক্ষণ বসে সুপ্রভার কান্না থামলো। কান্না শেষে বেচারী ঘুমিয়ে পরেছে। এদিকে ভাবি জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে। রুহি এটা দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” ভাবি কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
” ফ্লাটে ফিরে যাচ্ছি। এখানে থেকে আর কি হবে? দিদা নেই। খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। দাদু তো গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে কালকে।”, আলমারি থেকে সব কাপড় ভাজ করে ব্যাগে রাখছে ভাবি।
” হ্যা, তোমরা সবাই চলে গেলে আমি থাকবো কি করে?”, মন খারাপ করে বললো রুহি।
” তোমরাও তো যাচ্ছো। আহানকে তো দেখলাম ড্রাইভারকে ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে সকালে সব পরিষ্কার করার ব্যাবস্থা করেছে। আজ রাতেই চলে যাবে, যা মনে হচ্ছে। কেনো তোমাকে কিছু বলে নি।”,
ভাবির কথায় রুহির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আজ যাবে মানে। কিছু ভেবে ওঠার আগেই আহান রুহিকে ডাকতে লাগলো।
” ওই যে ডাকছে। যাও এমনিতেও এ ফাঁকা বাড়িতে ভালো লাগবে না। বাবা মা ও দাদুর সাথে কাল দেশের বাড়িতে যাবে। যখন দিদা থাকে বাড়িটাই অন্যরকম হয়ে যায়।”, ভাবির কথার মাঝে আহান আবার ডাকতে লাগলো রুহিকে। ভাবি হেসে উঠে বললো,” তোমার জামাইয়ের দেখি দর সইছে না। যাও যাও।”
রুহি বিরক্তি নিয়ে মুখ দিয়ে তিক শব্দ করে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,” ভাবি আসছি।”
এই লোকটার ধৈর্য বলে কিছু নেই। রুহি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে একটা জিনিস খেয়াল করলো সামিরা শাকচুন্নিটা আশে পাশে নেই। রুহি রুমে ঢুকেই দুই ব্যাগ দেখে বুঝে গেছে ভাবি ভুল কিছু বলে নি এই মশাই ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে বসে আছে। রুহির যাবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। রুহি মুখ কালো করে ঘরে ঢুকলো। আহান কিছু দরকারী ফাইলগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। রুহিকে আসতে দেখে বললো,” কোথায় ছিলে এতক্ষণ? তাড়াতাড়ি করো আমাদের যেতে হবে।”
” কোথায় যাবো।”, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রুহি।
” ফ্ল্যাটে যাবো এবং আজ রাতেই।”, শক্ত চোখে বলল আহান কারণ সে জানে রুহি না যাওয়ার বাহানা করবে।
” সবাই তো কাল যাচ্ছে, আমরা কেনো আজ যাবো?”গাল ফুলিয়ে বললো রুহি।
” তোমার কাছে ১ ঘণ্টা সময় আছে সব গুছিয়ে নাও। নিশ্চই তুমি চাইবে না আমি তোমার কাপড়ে হাত দেই।”, একরকম হুমকি দিয়ে বললো আহান।
” আপনি তো এইসব ই বলবেন। আপনি কি কোনোদিন ভালো কথা বলেছেন।”
” আর ৫৯ মিনিট আছে তোমার কাছে। এরপর তোমাকে সহ ব্যাগে ভরে নিয়ে যাবো কথা না বলে কাজ করো।”, আহান নিজের ফাইলের ব্যাগটা নিয়ে নিচে নেমে গেলো।
রুহির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এই লোকটাকে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ঠেলে ঠান্ডা পানিতে ফেলে দেয়। তাহলে যদি এর মাথা ঠান্ডা থাকে। তাকে সুদ্ধু নাকি ব্যাগে ভরবে। কত বড় সাহস!
রুহি সব গুছিয়ে একেবারে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আহান সব ব্যাগগুলো ড্রাইভারকে দিয়ে আগেই ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার তাদের যাবার পালা। রুহির একদম যেতে ইচ্ছে করছে না। মুখ ভার করে গাড়িতে এসে বসলো। দিদা থাকলে এগুলো আর হতো না। দিদার কথা খুব মনে পরছে তার। হটাৎ দিদার বলে যাওয়া শেষ কথাটা মাথায় এলো রুহির। দিদা কি এমন আবদার করেছে যাওয়ার আগে। আহান ড্রাইভিং সিটে এসে বসতেই রুহি প্রশ্ন করে ফেললো,” আচ্ছা দিদা কিসের সুখবর চাইলো আপনার কাছে?”
আহান সিটবেল্ট পড়তে গিয়ে আড় চোখে রুহির দিকে তাকালো। তারপর দৃষ্টি সরিয়ে সিটবেল্ট পড়ে বললো,” হটাৎ এই প্রশ্ন?”
” আপনি না বললেন কি আবদার করেছে। তা আবদারটা পূরণ করতে হবে না। তাহলে দিদা এসে দেখে অনেক খুশি হয়ে যাবে।”, রুহির কথা শুনে আহান আহান হালকা কেশে উঠলো।
” কি হলো বলুন।”, রুহির আবার প্রশ্ন করলো।
” তোমার এখন জানতে হবে না।”, গাড়ি পিছনের সিটে নিজের ওভারকোর্টটা রেখে বললো আহান।
” আমাকে না বললে আমি আপনার সাথে যাবো না।”, বলেই রুহি নিজের পাশের দরজা খুলতে যাবে আহান নিজের সিট বেল্ট খুলে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দরজাটা বন্ধ করে ফেললো। এই মেয়েটা আচ্ছা জ্বালাতন শুরু করেছে।
রুহির একদম কাছে চলে আসায় রুহি এলো মেলো দৃষ্টিতে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে। আহান রুহির কাধের দিকে হাত বাড়াতেই রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক শুরু করেছে। রুহি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আহান রুহির আচরণে হেসে ফেললো। ভয় দেখাতে ইচ্ছে করছে রুহিকে।
[ চলবে ]