বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ #পর্ব_১৭

0
1073

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৭
#নবনী_নীলা

” বলেছিলাম না পালিয়ে কোথাও যেতে পারবে না। সেই তো আমার বাহুতে এসেই পড়তে হলো।”, আহানের কথায় রুহি ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এটা কি করে সম্ভব? আহান এখানে কি করে এলো। রুহি অপলকে তাকিয়ে আছে, ঘটনাটা ঠিক তার হজম হচ্ছিলো না। এমন সময়ে নুড়ি তুলো আর সেভলন নিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে। আহান আর রুহিকে এভাবে দেখে সবটা গুলিয়ে গেলো নুরির।
নুড়ি একটু কেশে উঠতেই, রুহির হুশ ফিরে। চোখ বড় বড় করে ছিটকে সরে গেলো সে।

” বলছিলাম সব সময় এমন পিছলে যাবার সভাব কেনো তোর?”, বাঁকা হাসি দিয়ে রুহিকে বললো নুড়ি।
রুহি কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। একে তো কোথা থেকে এই লোক উড়ে এসেছে তারমধ্যে নুড়ির বাচ্চাটা উল্টা পাল্টা কথা বলছে।
সামনে দাড়ানো মেয়েটির হাতে স্যাভলন এর বোতল আর তুলো ডেখে আহান প্রশ্ন করে বসলো,” এসব কার জন্য?”

রুহির নুড়ির হাতের দিকে তাকালো। এসব এনেছে কেনো নুড়ি।
” আরে দুলাভাই বলবেন না, আমাদের মেয়ের তো পিছলে পরার অভ্যাস। আপনি থাকলে তো আপনি ধরে ফেলেন কিন্তু আপনি ছিলেন না, ধরার ও কেউ ছিলো না তাই পরে হাতের কনুই ছিলে ফেলেছে।”

আহান ঘাড় কাত করে রুহির হাতের দিকে তাকাতেই রুহি হাত লুকিয়ে কটমট চাহীনিতে নুড়িকে বললো,” এতো উপকার করতে বলেছে কে তোকে। এসব আমার লাগবে না, এগুলো সরা আমার চোখের সামনে থেকে।”

আহান নুড়ির হাত থেকে স্যাভলন আর তুলো হাতে নিয়ে বললো,” এগুলো থাক আমার কাছে।”, রুহি কিছু বলতে যাবে আহানের গম্ভীর দৃষ্টি দেখে আর কিছু বলতে সাহস করলো না। এমন সময় সবাই বাহিরে চলে এলো। আহানকে দেখে সবাই অবাক, কারণ রুহি বলেছিলো আহান কাজের জন্যে আসতে পারবে না কিন্তু হটাৎ এই বৃষ্টির রাতে হাজির হয়ে যাবে সেটা কেউ কল্পনা করেনি। আহান এগিয়ে গিয়ে নানা নানীর সাথে কথা শুরু করলো। তাদের খবর নিলো। নানা আহানের হাতে স্যাভলনের বোতল দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন,” তোমার হাতে এটা কি?”

” আরে নানা, রুহি পরে ব্যাথা পেয়েছে শুনেই তো দুলাভাই ছুটে এসেছে।”, আহানের কথার মাঝে বেগ্রা দিয়ে বললো নুড়ি। আহান হা বা না সূচক কিছু বললো না। কারণ এখানে হুট করে আসার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না সে। এইটা একটা ভালো কারণ হিসাবে কাজে লাগানো যাবে।

নানা, নানি, মামা সবাই আহানকে নিয়ে ব্যাস্ত। রুহি মুখ গোমড়া করে চলে এসেছে নিজের রূমে। শরীরটাও ভালো লাগছে না রুহির। নুড়ি টাও চলে গেছে ওকে রেখে দিতে পারলে ভালো হতো। রুহি নিজের রূমের জানালাটা খুলে দিলো। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর। এর মাঝেই রুহির ডাক পড়লো। নানী ডাকছে, রুহি এগিয়ে গেলো।

” জামাই যে আসবে একবারও বলেছো আমায়। কান্ড জ্ঞান কোনোদিন হবে না তোমার।”, গম্ভীর মুখ বকছেন নানি।
নানির কম বয়সে বিয়ে হয়েছিলো তাই আজও তিনি বেশ জোয়ান। তাই বকা দেওয়ার সময় স্কুলের প্রিন্সিপালের মতন কঠিন ভাবে দেন। যাকে বলে ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দেওয়া।

এতগুলো বকা খেয়ে রুহির শরীর রাগে গজগজ করছে। সব হয়েছে ওই লোকটার জন্য। আমাকে জালিয়ে মারছে পুরো। রুহি নিজের রূমে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আজ ওনাকে এই ঘরে ঢুকতেই দিবো না। রুহি রুমের ভিতরে তাকানোর আগেই আবার কারেন্ট চলে গেলো। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো।

” হ্যা একটু বৃষ্টি শুরু হলেই এরা এমন করে। এই অন্ধকারে কি আমি এখন লুকোচুরি খেলবো?”, রেগে বলল রুহি।
হটাৎ গলার পাশটায় কারোর স্পর্শে রুহি কেপে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে হাত বাড়ালো কিন্তু কেউ নেই। ভয়ে কে কে করে চিৎকার করলো রুহি। কোনো সাড়া শব্দ নেই। রুহির বুকটা আতকে উঠলো। অজানা ভয়ে ঘামতে শুরু করল সে। সব অন্ধকারে ভয়টা বেড়ে যেতেই হটাৎ কেউ আস্তে মুখ চেপে ধরে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই বুকের ভিতরটা ধুক করে উঠলো। প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও এখন এই স্পর্শ তার চেনা লাগছে। নিজের হার্ট বিট নিজেই শুনতে পাচ্ছে রুহি। আহানের হটাৎ এমন আচরণের পরিবর্তনে রুহি হতবাক হয়ে গেলো।
দুজনেই চুপ আর মাঝে রুহির রাগ বেড়ে গেলো। রেগে আহানের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। আহান সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে নিলো।

” আমি জানি আপনি সেই কুম্ভকর্ণ। আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলেন আপনি। কোথায় আপনি? সাহস থাকে তো সামনে আসুন। একবার সামনে আসুন তারপর আমি আপনার কি করি শুধু দেখবেন।”, রুহি অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে আহানকে ধরার চেষ্টা করছিলো। আহান ওয়াশরুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালো তারপর হাত দিয়ে খুজে ছিটকিনি টা খোলার শব্দ করলো। এবং সঙ্গে সঙ্গে বললো,” হোয়াট দা হেল? এইখানে এতো ইলেক্ট্রিসিটি প্রবলেম কেনো?”, বলে হাতে থাকা ফোনের লাইট অন করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো আহান।

ফোনের লাইটের আলোয় আহানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে রুহি এগিয়ে গেলো।” এইতো হাতে নাতে ধরেছি আপনাকে। আমার সাথে আপনি একটু আগে কি করলেন এগুলো?”

আহান পিছনে ফিরে রুহিকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করলো।
” তুমি ? কখন এলে?”

” একদম নাটক করবেন না। একটু আগে যা করলেন লজ্জা করছে না আপনার।”, তীক্ষ্ণ চাহিনীতে বললো রুহি। কথা বলে নিজেই একটু লজ্জা পেয়ে গেল রুহি।

আহান না বোঝার ভান করে বললো,” কি করেছি? অদ্ভুত!”

” দেখুন একদম মিথ্যে বলবেন না এই রুমে আমি আর আপনি ছাড়া কেউ নেই। তার মানে আপনি ছিলেন।”, কটাক্ষ করে বললো রুহি।

আহান মোবাইলের দিকে একবার তাকালো তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বললো,” রুহি ভঙ্গিমা করো না আমি কি করেছি সেটা বলো আর লজ্জা নিয়ে কি জানি বললে। আবার বলবে একটু।”

রুহি থ মেরে তাকিয়ে আছে। আহানকে দেখে আসলেই বোঝা যাচ্ছে সে কিছু জানে না। খুব স্বাভাবিক আচরণ তার।
” দেখুন আপনি আমার সাথে রসিকতা করবেন না। একটু আগে আপনি আমার মুখ চেপে জড়িয়ে ধরেননি?”, লজ্জা আর ভয়ার্ত গলায় নিচে তাকিয়ে বললো রুহি।

রুহির চেহারা দেখার মতোন হয়েছে। আহান আরেকটু রাগিয়ে দিয়ে বললো,” আমি!”, বলেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,” আমি কেনো তোমায় জড়িয়ে ধরবো? এমনিতেও তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
কথা গুলো যেনো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতন গিয়ে লাগলো। শেষের কথাটা শুনে রুহির রাগ আকাশ ছুলো। আহান বিরক্তির ভাব করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আহান বেড়িয়ে যেতেই রুমটা অন্ধকার হয়ে গেলো। ভয়ে রুহি আহানের পিছু পিছু আসতে লাগলো। আহান সেটা খেয়াল করে ভালোই মজা পাচ্ছে। আহানের হাব ভাব রুহিকে আরো কনফিউজড করে ফেললো।
কিছুক্ষণ পর কারেন্ট চলে এলো। সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। রুহির গলা দিয়ে খাবার নামছে না। মামা আহানকে নিজের লেখা একটা কবিতা শুনাচ্ছে, আহান উপায় না পেয়ে মনোযোগ সহকারে শুনছে। নানি বকা দিয়ে মামাকে থামলো অন্যসময় মামার কবিতায় রুহির হেসে লুটিয়ে পরে আজ রুহি নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে।

” কিরে তোর আবার কি হলো? আজ হাসলি না যে।”, সন্দেহের চোখে প্রশ্ন করলো মামা।

” আসলে নুড়ির সাথে অনেক হেসেছি তো, তাই গাল দুটো নিস্তেজ হয়ে গেছে।”, বলে পাশ কাটিয়ে গেলো রুহি।

আহান আড় চোখে রুহির উপর নজর রাখছে। যাক জব্দ করা গেছে তাহলে। রুহি সবার আগেই খাবার টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে গেলো খারাপ লাগছে বলে।

রুহি ঘরে পায়চারি শুরু করেছে। ওটা আহানই ছিলো না হলে কে হবে নাকি কোনো হেলোসিনেশন নাকি আরো ভয়ানক কিছু। রুহির বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে ভয়ে। আহান ঘরের সামনে আসতেই রুহি আহানকে টেনে নিয়ে রূমের দরজা বন্ধ করে ফেললো।

” কি করতে চাচ্ছো তুমি?”, বাকা হাসি দিয়ে বললো আহান।
চিন্তায় চিন্তায় রুহির মাথা পুরো হাং হয়ে গেছে। এসব বোঝার অবস্থায় সে নেই।

” ওটা আপনি ছিলেন। সত্যিই করে বলুন।”, কাপা কাপা গলায় বললো রুহি।

” আবার একই কথা। আমি ওয়াসরুমে ছিলাম রুহি, আমি কিভাবে তোমার মুখ চেপে ধরবো বলতো। তুমি নিশ্চই কোনো ভুল ভাল চিন্তায় ছিলে তাই এমন মনে হয়েছে।”, রুহিকে বুঝিয়ে বললো আহান।

” আমি ভুল ভাল কিছু ভাবছি না আমি আপনার স্পর্শ পেয়েছি। ওটা আপনিই ছিলেন। প্লীজ আমাকে ভয় দেখাবেন না।”, ভয়ার্ত গলায় বললো রুহি।

” আমার স্পর্শ? তুমি কি করে চিনো আমার স্পর্শ।”, ঘাড় কাত করে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো আহান।

রুহি লজ্জায় মরে যাচ্ছে। শেষ মেষ কেঁদেই ফেললো সে। এই রে বেশী হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আহান রুহির হাত ধরে বিছানায় বসালো।
” আরে আরে কাদঁছো কেনো? বলো আমায় কি হয়েছে।”, রুহি লজ্জায় কেঁদেই যাচ্ছে। তারপর কিছু না বলে উঠে যেতেই আহান রুহির হাত ধরে টেনে এনে নিজের কোলে বসালো। তারপর হাত দিয়ে রুহির চোঁখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তারপর আবার গলায় অধর ছুয়ে দিতেই রুহি কান্না কান্না চোখে মুখ তুলে আহানের দিকে তাকালো।

” ওটা আমিই, এবার শান্ত হও। আমি জাস্ট একটু মজা করছিলাম তুমি এতো ভয় পেয়ে যাবে আমি বুঝিনি।”, বলতে বলতে রুহির চোখের পানি মুছে দিলো।

রুহি রাগে ফেটে যাচ্ছে। এতো রাগ হচ্ছে তার যে যে কি বলবে কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। আহানকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করছে। আহান দুই হাত দিয়ে রুহিকে বাহুতে জরিয়ে ধরে পিছনে হেলে বেডে শুয়ে পড়লো।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here