#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৮ #প্রথম_স্পর্শ
#নবনী_নীলা
” এবার কি করবো ? সারারাত এই জঙ্গলে বসে মশা তাড়াবো আমরা? তোমার দরকার কি ছিলো এই জঙ্গলে আসার আমি সেটাই বুঝতে পারছি না।”, অনেক্ষন হেঁটেও বের হবার রাস্তা না পেয়ে রেগে গিয়ে বললো আহান।
” আপনি এভাবে চেঁচাবেন না। আপনার কন্ঠে এই জঙ্গলে পশু পাখি বিরক্ত হয়ে আমাদের তাড়া করবে।”, মুখ কালো করে বললো রুহি।
” স্টিল তুমি মজা করছো? আমাকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে তোমার এইসব মজা নিতে আমি বসে আছি। কখনো তো স্বাভাবিক কোনো কাজ তোমার দ্বারা হয়নি। তুমি যেখানে যাও ব্যাগ ভর্তি করে সমস্যা নিয়ে যাও। রুহি যেখানে যাবে সেখানে কি শান্তি থাকবে? কখনই না।”,
” আরে মশাই আপনি থামুন তো। তখন থেকে রেগে যাচ্ছেন। আমি কি নিজের ইচ্ছায় এসেছি নাকি?”
” নাহ্ নিজে থেকে আসোনি তোমায় পাখিরা জোর করে ডানায় বসিয়ে নিয়ে এসেছে।”
“না না, আমি মোহে চলে এসেছি।”, চোখ বড়ো বড়ো করে বললো রুহি।
আহান একটা ভ্রু তুলে প্রশ্ন করলো,” মোহে?”
” হ্যা একটা বাচ্চা খরগোশ দেখেছিলাম। একদম সাদা ছিলো। অনেক ছোটো ছিলো। কি সুন্দর দৌড়াচ্ছিল। আমি ছুটে এসেছিলাম ধরতে কিন্তু ধরতে পারিনি। এতটুক ছোটো ছিলো।”, হাত দিয়ে খরগোশটা কতটুকু ছিলো দেখাতে লাগলো আহানকে।
আহান কোমরে একটা হাত রেখে বিরক্তি নিয়ে রুহির তামাশা দেখছে। এই জঙ্গলে নাকি এই মেয়ে খরগোশ দেখেছে।
” রুহি তুমি থামবে? এইসব তোমার কাছেই কেনো আসে আমি বুঝি না? দৌড়ানোর আগে নিজের পা দুটো দেখতে পারতে। ছোটো ছোটো পা নিয়ে খরগোশ ধরতে এসেছে।”
” তো কি হয়েছে আমার ছোটো পা? আপনার মতো লম্বা না ঠিক আছে কিন্তু আমি এটাও খাটো না। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৩’, আপনি ৬ফুট তাই বলে আপনি আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারেন না।”, প্রতিবাদী ভঙ্গিতে বললো রুহি।
” আমি সব পারি। এতদিনে বুঝনি।”, বলতে বলতে আহান আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে লাগলো। রুহি বাধ্য হয়ে আহানের পিছু পিছু যাচ্ছে।
কিছুদূরে আলো দেখতে পেয়ে ওরা দুজনেই এগিয়ে গেলো। আগুন জ্বালিয়েছে কেউ, এগিয়ে এসেই একজনকে দেখা গেলো। দেখে ফরেইনার মনে হচ্ছে, একটা ছোট পুরনো ঘর দেখা যাচ্ছে পিছনে। মেয়েটা মনে হয় কোনো কারণে এই জঙ্গলে থেকে গেছে। আহান এগিয়ে গিয়ে কথা বলে হেল্প চাইলো।
” চলো। একটা ব্যাবস্থা হয়েছে অন্তত।”, রুহিকে বললো আহান।
” আচ্ছা এই মেয়েটা একা একা এখানে কি করছে? বাবা! এর ভয় করে না?”, হতবাক হয়ে বললো রুহি।
রুহির কথার মাঝে মেয়েটা এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে বললো,” হাই অ্যাম এলেন।”
রুহি হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে বললো,” অ্যাম রুহি। থ্যাংকস ফর ইউর হেল্প।”
” মেনশন নট। আর ইউ গাইজ লস্ট?”, প্রশ্ন করলো মেয়েটি।
” ইয়াহ।”,[ হ্যা] , মাথা নাড়িয়ে বললো আহান। তারপর আড় চোখে রুহির দিকে তাকালো।
“বাই দা ওয়ে আর উ গাইজ লাভারস? হি ইজ ইউর বয়ফ্রেন্ড, রাইট?”, মেয়েটি হাসি মুখে রুহিকে বললো।
রুহি কিছু না ভেবেই হা সূচক মাথা নাড়ল। আহান অবাক হয়ে রুহির দিকে তাকালো। এই মেয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে মনে হয়। উল্টা পাল্টা কি বলছে এসব। মেয়েটি কিছুক্ষণ ওদের সাথে কথা বলে আগুনে আরো কিছু শুকনো পাতা দিতে গেলো। আগুনটা নিভে নিভে এসেছেছিলো।
আহান রুহির হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
“আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড লাগি? আগে তো আধ পাগল ছিলে এবার কি পুরো পাগল হয়ে গেলে?”,
রুহি ভ্রু কুঁচকে বললো,”তো হয়েছে কি বলেছি দেখে। বললেই তো আর আমরা প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে গেলাম না। আর আমার কোনোদিন বয়ফ্রেন্ড ছিলো না তাই একটু ভাব নিতে বললাম। বলে দেখলাম কেমন অনুভূতি হয়। এমন করছেন কেনো?”
” বাহ্ অসাধারণ বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রী। বরের সাথে বয়ফ্রেন্ড ফ্রী! খুব ভালো। এইগুলো তোমার দ্বারাই সম্ভব।”, মাথা ধরে বলল আহান।
রুহি মাটিতে বসে পড়লো জায়গাটা পরিষ্কার করে তারপর আকাশের দিকে হটাৎ বললো,” আচ্ছা আমি তাকে কবে পাবো? যে আমায় ভালবাসবে?”
আহান হটাৎ এমন কথা শুনে রুহির পাশে এক হাঁটু ভাঁজ করে তার উপড় হাত রেখে বসলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,” কেনো পাওনি এখনো?”
রুহি আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আহানের দিকে তাকালো তারপর বললো,” নাহ্, পাইনি। পাবো বলেও মনে হয় না। ” তারপর আবার আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করলো।
” কেনো পাবে না কেনো? “, রুহির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে প্রশ্ন করলো আহান।
” মনে হচ্ছে পাবো না। সত্যিকারের ভালোবাসা কি এতো সহজ? আচ্ছা মানুষ ভালোবাসে কিভাবে? ভালোবাসা কেমন হয়? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।”, আকাশে তারা দেখতে দেখতে বললো রুহি।
রুহির অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে আহান চুপ করে আছে।
রুহি আবার প্রশ্ন করে বসলো,” আপনি কি জানেন ভালোবাসা কি? কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন?” আহানের দিকে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো রুহি।
আহান না সূচক মাথা নাড়তেই রুহি মুখ কালো করে ফেললো। কি সরলতায় প্রশ্ন করছে রুহি! আহান দৃষ্টি সামনে রেখে বললো,” বাট ইউ নেভার নো!”
বোলেই ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে উঠে চলে গেলো।
রুহির কি জানি হয়েছে? একটু আগে এগুলো কি বলছিলো সে নিজেও জানে না। এগুলো আহানকে বলার কি ছিলো। নিশ্চই এসব বোকা বোকা কথার জন্যে পরে আরো অনেক কিছু শুনতে হবে। রুহি পাশে তাকালো এলেনের দিকে, ভাবা যায় মেয়েটা এই জঙ্গলে একা একা আছে দুদিন ধরে। ফটোগ্রাফি করে বলে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। এই ফটোগ্রাফির জন্যই জঙ্গলে থাকা যদিও জঙ্গলে কোনো বাঘ, সিংহ নেই তবে পোকামাকরেরও অভাব নেই।
রুহির প্রচুর জল তৃষ্ণা পেয়েছে, তাই রুহি এগিয়ে গেলো এলেনের কাছে পানি চাইতে।
এলেনের কাছে পানি শেষ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু পান করার মতো ড্রিংকস ছিলো। এলেন সেটা রুহির দিকে এগিয়ে দিলো। রুহি পুরোটাই শেষ করে ফেললো। খাওয়া সময় কেমন জানি লাগে তার অদ্ভুত টেস্ট ছিলো ড্রিংকসটার।
রুহির তৃষ্ণা ঠিকই মিটেছে কিন্তু কেমন জানি লাগছে মাথাটা ভন ভন করছে। কিছুক্ষণ পর আহান এলো। এখান থেকে বের হবার রাস্তা সে পেয়েগেছে।
” রুহি চলো। এখান থেকে বের হবার রাস্তা পেয়ে গেছি। এলেন থ্যাংকস ফর ইউর হেল্প। ইটস এ প্লেজার মিটিং উ।”, বলে রুহির দিকে তাকালো অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে আছে রুহি।
এলেন উঠে দাড়িয়ে আহানকে সবটা বললো।
এলেন আহানকে বললো যে রুহি পানি চেয়েছিল কিন্তু পানি না থাকায় সে তাকে একটা বিয়ার এর ক্যান দেয়। আর রুহি পুরোটাই শেষ করে ফেলেছে তাই এমন করছে।
আহানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এবার এ মেয়েকে সামলাবে কি করে সে? আর কি কি সহ্য করতে হবে তার, কে জানে? আহান হাঁটু ভাঁজ করে রুহির পাশে বসে ঘাড় কাত করে রুহির দিকে তাকালো। বাচ্চাদের মতন গাল ফুলিয়ে বসে আছে সে। আহান রুহির হাত ধরে কোনো রকমে টেনে তুললো রুহিকে ঠিক মতন দাড়াতে পারছে না সে। দাড়াতে গেলেই পরে যাচ্ছে। শেষে আহান নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে রুহিকে জড়িয়ে রেখে দাড় করলো।
আহান রুহির অবস্থা বুঝতে রূহিকে ডাকলো,” রুহি, রুহি?”
রুহি চোখ বন্ধ অবস্থায় আহাকে জড়িয়ে ধরে শুধু হুম বললো।
” আমদের এখন যেতে হবে চলো।”, আহান বললো। রুহি কোনো জবাব দিলো না।
এভাবেই নিয়ে যেতে হবে রুহিকে কিছু করার নেই আহানের। আহান এলেনের সাথে শেষবারের মতন কথা বলে ধন্যবাদ জানাচ্ছিল। হটাৎ রুহি নড়ে চড়ে ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো তারপর আহানকে ছেড়ে দাড়ালো। এদিক ওদিক পরে যাবে এমন অবস্থা রুহির। আহান রুহির বাহু শক্ত করে ধরলো যাতে পড়ে না যায়। তারপর বললো,” কি শুরু করলে রুহি? এভাবে দাড়িয়ে পড়লে কেনো? পড়ে যাবে। আমায় ধরে দাড়াও।”
রুহি আধো খোলা চোখে বললো,” আমি কেনো ধরবো, ওর সাথে কথা বলছেন ওকেই বলুন আপনাকে জড়িয়ে ধরতে।” মুখে জড়তা নিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে শাসিয়ে বললো রুহি।
আহান রুহির কথার কিছুই বুঝলো না, ধমকের সুরে বললো,
” রুহি! কি বলছো এসব।” তারপর রুহিকে টেনে নিজের এক বাহুতে নিয়ে এলো আহান। তারপর এলেন কে বিদায় জানাতে যেই হ্যান্ডশেক করতে যাবে। রুহির মুখ হটাৎ রাগান্বিত হয়ে গেলো। রুহি আহানের শার্টের কলার ধরে নিজের দিকে টানলো আহানকে। এই ঘটনায় আহান হতভম্ব হয়ে গেলো। হটাৎ এমন শুরু করেছে কেনো রুহি।
” রুহি, ছাড়ো। কি করছো কি?”, কড়া চোখে তাকিয়ে বলল আহান।
রুহি এবার আহানের শার্টের কলার ধরে আরো কাছে নিয়ে এলো আহানকে। তারপর আহানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। সবটাই এলেনের সামনে হচ্ছে। এলেন একটু হেসে আহানকের বললো দরকার প্রয়োজনে রুহিকে ঘরে শুইয়ে দিতে। রুহি মনে হয় না হেঁটে আজ আর যেতে পারবেন। ওর অবস্থা বেহাল। আহানের সেটাই মনে হচ্ছে। আজরাত এই জঙ্গলে কাটাতে হবে মনে হচ্ছে তার।
এলেন ওদের রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। খুব সাধারণ একটা বেতের বিছানা ছাড়া কিছু নেই। পুরোনো এক কুড়েঘর আর কিই বা আশা করা যায়। চাঁদের আলোয় ভরে আছে ঘরটায়।
আহান রুহিকে ধরে শুইয়ে দিতেই রুহি চোখ খুলে তাকালো। তারপর আহান আহানের গলা থেকে হাত নামিয়ে রাখতেই। আবার আহানের গলা জরিয়ে ধরলো রুহি। তারপর অভিমান সুরে বললো,” কোথায় যাচ্ছেন?”
আহান রুহির এমন রূপ দেখে অনেকটাই অবাক হয়েছে। যে মেয়ে দুরত্ব বজায় রেগে জড়িয়ে ধরতে বলে সে কিনা গলা জড়িয়ে বলছে কোথায় যাচ্ছেন।
আহান রুহির হাত ছড়ানো চেষ্টা করছে কিন্তু রুহি নাছর বান্দা। সে টেনে আহানকে আরো কাছে নিয়ে আসছে।
” রুহি, কি শুরু করেছ? আমি যাচ্ছি না কোথাও। এখানেই আছি।”, বলে রুহিকে বোঝাতে চাচ্ছে।
অনেক কষ্ট গলা থেকে হাত সরিয়ে আহান উঠে দাড়ালো। চাঁদের আলো রুহির মুখে পড়েছে। বার বার আহানের চোখ আটকে যাচ্ছে রুহির দিকে। রুহি গাল ফুলিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর নিজের মাথার পাশে আহানের মাথা রাখার জন্যে হাত দিয়ে ঈশারা করছে আহানকে। আহানের আর করার আছেই বা কি এখন না গেলে হয়তো আবার কলার চেপে ধরবে নাকি আবার গলা টিপে ধরে। আহান গিয়ে রুহির মাথার পাশে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। চাঁদের আলো ওদের দুজনের মুখে এসে পড়েছে। রুহি চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে বাচ্চা সুলোভ হাসি হাসছে তারপর আহানের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। মুখে তার এক ঝিলিক হাসি।
আহান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। রুহি মুখের হাসি রেখে বললো,” জানেন আপনার এই চোখদুটো আমার খুব চেনা। আমি কোথায় যেনো দেখেছি।” বলতে বলতে থেমে গেলো রুহি।
আহান বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কোথায় দেখেছো?”
রুহি চোখ বন্ধ করে না সূচক মাথা নাড়ল। তারপর নিচের ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মত বললো,” বলবো না।”
আহান রেগে গিয়ে দৃষ্টি সামনে স্থির করলো। এমন অদ্ভুত কেনো রুহি? তাকে এর আগে কোথায় দেখেছে রুহি। তাকেও না তার চোখ দেখেছে নাকি? অর্ধেক কথা বলে এখন আবার বলছে বলবে না।
আহান রুহির দিকে মাথা ফিরাতেই একটা ঘটনা ঘটলো। সেটার জন্য আহান একদম প্রস্তুত ছিলো না। রুহি যে তার এতো কাছে এসে শুয়ে আছে সেটা সে বুঝতে পারেনি। তাই মুখ ফিরতেই রুহির স্পর্শ পেয়ে আহান থমকে যায়। আহানের কিছুক্ষণ লেগে যায় ব্যাপারটা বুঝতে তারপর নিজেকে সামলে সরে আসে সে। কিন্তু রুহি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, তাই হয়তো বুঝতে পারেনি।
[ চলবে ]
?? গল্প এখন থেকে ১১টার পর দিবো।
গুড নাইট সবাইকে ??