#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
শেষ পর্ব (প্রথমাংশ)
রুদ্র একপ্রকার ছুটে আসে। কি হয়েছে ওর? ভাবতে ভাবতে মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। সিয়ার চারিদিকে তাকিয়েও কোনোরকম আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পায় না। সকলের সঙ্গে ঠেলতে থাকে স্ট্রেচার। সঙ্গে রয়েছে সিয়ার মা ও বাবা। সিয়া তাদের একমাত্র মেয়ে। একমাত্র সন্তানকে যেমন মানুষ বেশিই আগলে রাখে সিয়ার ক্ষেত্রেও তাই। উনারা কেঁদে কূল পাচ্ছে না। রুদ্র স্ট্রেচার নিয়ে যেতে যেতে বলে,
–“কি হয়েছে ওর?”
–“ঘু…ঘুমের অনেকগুলো ঔষুধ খেয়ে ফেলেছে সিয়া। জা…জানি না ও এমন কেন করল! তোমায় বলেছিলাম মেয়েটার বিয়ে এখনি ঠিক করতে হবে না। ও বিয়ে করতে চাইছে না। দেখলে তো এর পরিণাম?”
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে উঠলেন সিয়ার মা। শেষ কথাগুলো ছিল সিয়ার বাবার উদ্দেশ্যে। রুদ্র সিয়ার দিকে তাকায়। ফ্যাকাশে বর্ণ হয়ে গেছে ওর মুখ। শেষমেশ কিনা সিয়া নিজের জেদটাই রাখল। নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে মেয়েটা। ইমারজেন্সি রুমের সামনে এসে স্ট্রেচার থামায় রুদ্র। সে প্রথমে সিয়ার নাকের নিচে হাত রাখে। শ্বাস চলছে এখনো। ভালোভাবে পার্লস চেক করে রুদ্র। পার্লস চলছে তবে আস্তে। দ্রুত যদি পেট থেকে ঔষুধগুলো ওয়াশ না করানো হয় তাহলে রুদ্রের সামান্য রিজেক্টের জন্য অনেক বড় মূল্য দিতে হবে। এই ভেবে শিউরে ওঠে সে। রুদ্র সিয়ার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“যত তাড়াতাড়ি পারেন তত তাড়াতাড়ি ফর্মালিটিস পূরণ করে আসুন। কুইক। আমি ব্যবস্থা করছি।”
সিয়ার বাবা চলে যান। সিয়ার মা এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। রুদ্রের হাতে সময় নেই। সে দ্রুত চলে যায় ডক্টরের কাছে। এই কাজটা তার নয়। সে তো সার্জারি স্পেশালিষ্ট। এরজন্য অন্য ডক্টরের প্রয়োজন। ফোনটাও কেবিনে। নিজের ওপর রাগতে রাগতে কেবিনের দিকে যায় সে।
বেশ অনেকক্ষণ হলো। ওটির বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বার বার ওটির দরজার দিকে তাকাচ্ছেন সিয়ার মা-বাবা। সিয়ার বাবা মাথা নিচু করে বসে রইলেন আর সিয়ার মা এখনো ফুঁপিয়ে যাচ্ছেন। সেই সময় হন্তদন্ত হয়ে রুদ্র আসে। হসপিটালের কাজকর্ম ছেড়ে সে এখানে থাকতে পারেনি। তবে হসপিটালের কাজে মনও দিতে পারেনি সে। রুদ্র এসে দেখে এখনো ওটির দরজা লাগানো। ওপরে লাল লাইট জ্বলছে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সিয়ার মা-বাবার দিকে তাকায় সে।
–“মেয়েটা কেন এমন করল বলতে পারো?”
দুর্বল কন্ঠে বললেন সিয়ার মা। সিয়ার বাবা কোনো উত্তর দিলেন না। উনারা না জানলেও রুদ্র জানে তার এমন পদক্ষেপের কারণ। এখন যদি সত্যিই সিয়ার কিছু হয় তাহলে রুদ্র কি করবে তার জানা নেই। সারাজীবন একটা অপরাধবোধ অনুভব করবে সে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে ওটির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ডক্টর। রুদ্রের সঙ্গে ছুটে যায় সিয়ার মা-বাবা। ডক্টর তাদের এগিয়ে আসতেই বলে ওঠেন,
–“রিল্যাক্স ডক্টর সিয়ার ইজ ফাইন নাউ। ভাগ্য ভালো সময়মত হসপিটালে আনা হয়েছে এবং ভেতর থেকে সব স্লিপিং পিল ওয়াশ করা গেছে। আদারওয়াইজ কি হতো জানি না। উনাকে এক্ষুনি কেবিনে দেওয়া হবে আপনারা কথা বলতে পারেন।”
রুদ্রের মনে শান্তির হাওয়া বয়ে যায়। হাফ ছাড়ে সে। নিজের কপালের ঘাম মুছে নেয় ভালো করে। ওটির দরজার সামনে গিয়ে হালকা ফাঁক দিয়ে দেখে সিয়াকে। মেয়েটা চোখ বুঁজে রয়েছে। চোখেমুখে কি মলিনতা!
কেবিনে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিয়াকে ধরে বসে পড়ে ওর মা-বাবা। কান্নাকাটি করে সিয়ার মা বকাঝকা করতে থাকেন, বোঝাতে থাকেন। সিয়া মাকে শান্তনা দিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। সিয়ার বাবা চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মাঝে মাঝে দুয়েকটা কথা বলছেন। এর মাঝে রুদ্র কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। সে সিয়ার সঙ্গে একা কথা বলতে চায়। কিন্তু মনে হয় সিয়াকে উনারা একা ছাড়বেন বলে। রুদ্র দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে চোরের মতো। সিয়ার চোখ আঁটকায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র ইতস্তত বোধ করে সরে আসতে নিলেই সিয়ার আগ বাড়িয়ে বলে,
–“রুদ্র দাঁড়াও!”
রুদ্র দাঁড়িয়ে যায়। ধরা খেয়ে তার মুখে দেখা দেয় লাল আভা। সিয়া জোর গলায় বলে,
–“ভেতরে এসো। কিছু কথা আছে।”
রুদ্র কি করবে না বুঝে ধীর পায়ে ভেতরে ঢোকে। সিয়ার মা রুদ্রকে দেঁখে বলে,
–“এই বুঝি রুদ্র?”
–“হ্যাঁ মা।”
সিয়ার মা ভালোভাবে রুদ্রকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে বলেন,
–“আসলেই ও ভালো ছেলে। তোর যখন ওই অবস্থা ছিল ছেলেটা কত ছোটাছুটি করল। তখন নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি বা কথা হয়নি। তোকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম তো!”
–“মা তুমি একটু বাইরে যাবে প্লিজ? বাবা তুমিও! আমার রুদ্রের সাথে কিছু কথা আছে।”
উনারা যেতে না চাইলেও বাইরে যান। মেয়েকে যথেষ্ট স্বাধীনতা এবং প্রাইভেসি দেন উনারা। রুদ্র ধীর পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়িয়ে থেমে থেমে বলে,
–“কেন করলে এমন? খুব কি জরুরি ছিল সিয়া?”
সিয়া মৃদু হাসে। তৎক্ষনাৎ হাসিটা মিলিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে বলে,
–“আই এম সরি। তখন মাথায় কিছু আসছিল না তাই পাগলের মতো কাজ করে ফেলেছি। আই নো দ্যাট এসব মূহুর্ত তোমার জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর ছিল। কারণ বিষয়টা তোমাকে ঘিরেই।”
–“আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার কোনো ধারণা নেই আমি কি পরিমাণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। যদি তোমার কিছু হতো তাহলে…”
–“তাহলে তুমি অপরাধবোধে বাঁচতে পারতে না তাই না? সেটারই ভয় পাচ্ছিলে রাইট?”
ফ্যালফ্যাল করে সিয়ার পানে চেয়ে থাকে রুদ্র। ও কি বলছে? এর মানে কি ও বোঝাতে চাইছে ওকে নিয়ে রুদ্রের কোনো চিন্তা নেই? রুদ্র কিছু বলতে গেলে সিয়া আবারও বলে,
–“আই এম রিয়েলি সরি।”
–“আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই সিয়া। ব্যাস… তুমি শুধু সুস্থ হয়ে ওঠো। এমন পাগলামি করো না। এজ এ ডক্টর, এটা তোমাকে মানায় না।”
রুদ্রের তপ্ত নিঃশ্বাস পড়ছে সিয়ার চোখেমুখে। ফ্যালফ্যাল করে কিছু রুদ্রের দিকে চেয়ে রইল সিয়া। অতঃপর মুখে হাসি না এনে উল্টো ফিরে শুয়ে নিরস কন্ঠে বলল,
–“না রুদ্র! আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই না। অনেক হয়েছে আমার পাগলামি। আমি চাই না তুমি আমার পাগলামি থামাতে শুধু বাধ্য হয়ে বিয়ে করবে। আমি নেক্সট উইক ইউকে চলে যাব। আমি চাই না তোমার বোঝা হতে।”
রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মুখে আর কোনো কথা আসছে না। সবটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সে নিজের ভুল মনে মনে গুনছে, তার প্রথম ভুল হচ্ছে দেশে আসা, দ্বিতীয় ভুল আচমকা কাউকে ভালোবেসে ফেলা, তৃতীয় ভুল সিয়াকে সবসময় কঠিন কথা শোনানো। এখন কি করবে রুদ্র। সিয়া ওপাশ থেকে ফিরেই বলে,
–“এখন তুমি যেতে পারো রুদ্র। সরি বলার ছিল বলে দিয়েছি। ভুলে যাবার চেষ্টা করবে আমায়। ভাববে আমি তোমার লাইফে একটা ঝড় ছিলাম। সেটা কেটে গেছে।”
রুদ্র কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারল না। চশমা খুলে হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে।
এক সপ্তাহ পর…
গভীর রাত। সকলে ঘুমে মগ্ন। এমনিতে আজকে সকলে দেরিতে ঘুমিয়েছে। আজকে আমার আী আয়াশের গায়ে হলুদ ছিল। যদিও অনুষ্ঠান দুটো আলাদা আলাদা ভাবে করা হয়েছে। আমি রয়েছি আমার বাড়িতে এবং আয়াশ রয়েছেন রিসোর্টে। সকলের কড়া আদেশ বিশেষ করে দাদিমার যে আমরা বিয়ের আগে একে ওপরের সাথে থাকতে পারব না। এটাই নাকি সাধারণ নিয়ম। তবে এটা আয়াশের কাছে অত্যাচার বলা চলে। দিনেরাতে ফোন দিয়ে যাচ্ছেন উনি। অথচ কালকেই বিয়ে। একেবারে আইনি ভাবে রেজিষ্ট্রি করা হবে বিয়ের। তবুও উনার এরূপ আচরণে কি রিয়েকশন দেব জানা নেই আমার।
অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে থাকতে আচমকা একটা বিকট শব্দ কানে এলো। চোখ লেগে গিয়েছিল তখন কিন্তু ঘুম ছুটে গেল। উঠে বসলাম আমি। আওয়াজটা আমি ভুল না হলে আমার পাশের ভাঙাচোরা ঘর থেকে আসছে যেখানে একটা বাইরে যাওয়ার দরজা আছে। হঠাৎ আমার ফোনটা জ্বলে উঠল। আয়াশ মেসেজ করেছেন। লিখেছেন,
–“তাড়াতাড়ি তোমার ঘরের পাশের ঘরে এসে দরজা খোলো। আদারওয়াইজ দরজা ভেঙে ফেলব। কুইক!”
চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল আমার। দৌড়ে চলে এলাম পাশের ঘরে। দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে একটা হাত টেনে বাইরে নিয়ে এলো আমায়। ক্লান্তমাখা আয়াশের মুখখানি দেখে দ্রুত বলে উঠলাম,
–“এটা কেমন আচরণ?আর এভাবে এতো রাতে আপনি…”
কথাগুলো বলার আগেই আমার গালে নিজের হাত রেখে দিলেন আয়াশ। ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম গালে। হাতটা টান দিতেই বুঝলাম উনার হাতে হলুদ। আমার অন্যগালে মূহুর্তেই ঠোঁট রেখে বললেন,
–“আমার স্ত্রীকে দুনিয়ার সবাই হলুদ লাগাবে অথচ আমি এই অধিকার পাবো না? তা তো হয় না! সবার আগে তো হলুদ লাগানোর কথা আমার নিশাপাখি। আজকের জন্য কাউকে কিছু বললাম না। বাট আমি তো হলুদ লাগাবোই।”
আমি ঢক গিলে বলি,
–“একবার যদি কেউ দেখে ফেলে কি হবে বুঝতে পারছেন?”
–“ফার্স্ট ওফ অল আমি অন্যের বউকে চুরি করছি না। নিজের বউয়ের সাথে চুরি করে দেখা করার মতো বাজে পরিস্থিতি আর একটাও নেই। যেখানে আমি পাবলিক প্লেসেও রোমান্স করতে ছাড়ি না।”
চোখ বড় বড় করে তাকালাম এবার। আমার এই দৃষ্টি দেখে উনি মুচকি হেঁসে বললেন,
–“মনে নেই? ওই লিফট, হসপিটালের কথা?”
–“একদম ওসব কথা মনে করাবেন না। লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যাব একদিন আপনার জন্য।”
–“লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এগুলো তো সামান্য ম্যাটার।”
রেগেমেগে একাকার হয়ে পড়লাম। এগুলো উনার কাছে সামান্য ব্যাপার হলো? উনার অন্যহাত থেকে হলুদের বাটি নিয়ে এক থাবা ছুঁড়ে মারলাম আয়াশের ওপর। মূহুর্তেই হলুদ ভূতে পরিণত হলেন উনি। উনাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ফিক করে হেঁসে ফেললাম আমি। হাসতে হাসতেই বললাম,
–“সিরিয়াসলি আপনাকে দারুণ লাগছে। মানে এই হলুদও কিন্তু আমার হ্যান্ডসাম চেহারাটাকে ঢাকতে পারেনি। অন্যরকম হ্যান্ডসাম লাগছে।”
বলেই জোরে জোরে হাসতে শুরু করলাম। উনার ঠোঁটেও হলুদে মাখামাখি অবস্থা। এসব ভেবে দম ফেটে হাসি পাচ্ছে আমার। কয়েক সেকেন্ড হাসতে গিয়েই আমার মুখ চেপে ধরে বাড়ির দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দিলেন আয়াশ। আশেপাশে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললেন,
–“হুঁশশ! চুপ চুপ! এভাবে হেঁসে কি নিজেও ফাঁসবে আর আমাকেও ফাঁসাবে?”
আমি এবার হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। সত্যিই তো! আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছি? এতো জোরে জোরে হেঁসে ফেললাম বাড়ির সবাই জেগে গেছে নির্ঘাত। এক পর্যায়ে দাদিমার কন্ঠ পেয়ে আঁতকে উঠলাম।
–“আনিশা? কই তুই? এতো হাসাহাসির শব্দ আসে কেন? আনিশা?”
পড়ে গেলাম বিপাকে। আয়াশ আমায় বললেন,
–“চলো দাদিমাকে সবটা বলে দিই।”
–“আহা! কথার কি বাহার! চলো দাদিমাকে সবটা বলে দিই? এরপর আমায় কি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানেন?”
আয়াশ আমার কথা পাত্তা দিলেন না। দিয়ে দাঁড়ালেন দরজার সামনে। দাদিমাও বোধহয় ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেকারণেই উনার কন্ঠে শুনতে পেলাম।
–“এই! এইটা কে? চোর নাকি? দেখে তো ছেলে মানুষ মনে হইতেছে। এই চোর থাম। থাম বলতেছি।”
মাথা ভনভন করে ঘুরে উঠল আমার। উনার হাত ধরে টেনে আড়ালে এনে নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকলাম। দাদিমা বাইরের দিকেই আসছিল। উনাকে আঁটকে বললাম,
–“কি হয়েছে দাদিমা? চোর না আমি।”
দাদিমা আমার মুখ- হাত ভালোভাবে নাড়িয়ে দেখলেন। অন্ধকারে উনি তেমন কিছু বুঝতে পারছেন না। তারপর কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললেন,
–“আরে, তুই এতো বড় আর লম্বা হইলি কেমনে? দরজার সামনে মনে হলো একটা লম্বা লোক দাঁড়িয়ে ছিল।”
–“না দাদিমা। ওটা আমিই ছিলাম।”
–“হ্যাঁ দাদিমা ওটা আমার বউই ছিল। বউ মানেই আমি। আমি মানেই বউ। দুটো একই বিষয় হলো না?”
এই লোকটা কি জীবনেও শোধরাবে না? এটা উনি কি বলে ফেললেন? পেছন ফিরে তাকালাম। উনি নেই। হয়ত আড়াল থেকেই কথাগুলো বলেছেন। আমায় কত সুন্দর করে ফাঁসিয়ে দিলেন ভাবা যায়? দাদিমার হাত থেকে আমাকে বাঁচায় কে?
–“আনিশা? কার গলা শুনলাম এইডা? কার সাথে কথা বলতাছস এই রাতের বেলা? হ্যাঁ?”
বাকহারা হয়ে রইলাম আমি। কাশি উঠে গেল আমার। কিছু বলতে উদ্যত হতেই দাদিমা আমার পাশ কাটিয়ে হন্তদন্ত হয়ে গেলেন বাইরের দরজার দিকে। আমি পেছন থেকে আটকাতে গিয়েও পারলাম না। বাইরের দরজায় দাঁড়িয়ে আশেপাশে উঁকি মেরে দেখলেন উনি। তারপর ফিরে তাকালেন আমার দিকে। আমি বেকুব হয়ে চেয়ে রয়েছি। এবার দাদিমা নিজেই বোকা হয়ে বললেন,
–“বাইরে তো কেউ নাই। কার গলা শুনলাম আমি?”
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। স্বস্তি নিয়ে বললাম,
–“দাদিমা আপনার বয়স হয়েছে। কখন কি শোনেন তা যে সঠিক হবে তার কি মানে? আমিও এখানে একটা শব্দ পেয়েই এসেছিলাম কিছু হয়েছে কিনা দেখতে। চলুন ঘরে চলুন। এখন ঘুম পেয়েছে আমার। আমি দরজা লাগিয়ে আসছি।”
দাদিমাকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বললাম। হয়ত উনি বিশ্বাসও করলেন। নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। আমি দরজা আটকাতে গেলাম। দরজাতে হাত দিতেই কোত্থেকে এসে তড়িৎ গতিতে আমার গালে আর গলায় আলতো কামড় দিয়ে হাওয়ার বেগেই আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলেন আয়াশ। আমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এটা কি ছিল আসলে?
সমুদ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আয়াশ। মুখে তার মুচকি হাসি লেগে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে সে। তার খুশি কে দেখে?
–“আজকে আমার জীবনটা রঙিন হয়েছে একজনের কারণে। তাকে নিয়ে আমি যত সুখের স্বপ্ন দেখেছি তা পূরণ হতে চলেছে। কখনো ভাবিনি জীবনও এভাবে পাল্টে যায়। অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসে। কখনো ভাবিনি কেউ আমার মনের অন্দরমহলে এতোটা জুড়ে থাকবে।”
আনমনে কথাগুলো বলতেই আয়াশের ফোনে একটা টোন বেজে ওঠে। তৎক্ষনাৎ ভ্রু কুঁচকে ফোনটা বের করে সে। নম্বরটা অচেনা হয়েও চেনা। তার বাবা সাহাদ সাহেবের নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে। আয়াশ অবাক হয়। কৌতুহল বশত মেসেজ দেখে। মেসেজটা দেখে সে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
‘আয়াশ! তোমার প্রতি আমি যত অন্যায় করেছি তা হয়ত বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু আমি এমনটা করতে চাইনি বিশ্বাস করো। জানি না প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিলাম। পাগল হয়ে গেছিলাম। কিন্তু কাজলকে আমি মারিনি। আমি জানতাম না কাজটা মালিহার। আর আনিশার সঙ্গে এতো নিচ কাজ করবে সেটাও ভাবিনি। আমি তো ভেবেছিলাম তুমিও আমাকে ওদের মতো পুলিশে ধরিয়ে দেবে। সেটা তুমি করোনি। কিন্তু এই মুখ নিয়ে আমি তোমার সামনে দাঁড়াতে পারব না। পারলে না হয় ক্ষমা করার চেষ্টা করিয়ো। ভালো থেকো। তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হক। আমি এক অজানা গন্তব্যে যাচ্ছি। কখনো ফিরব কিনা জানি না। টেক কেয়ার মাই সন!’
চলবে…
[বি.দ্র. রাইটিং ব্লকে আছি?। কি লিখলাম জানি না। আর শেষ পর্ব অনেক বড় হবে তাই এক পর্বে সমাপ্ত করা সম্ভব হলো না। কাল শেষাংশ দেওয়া হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]