মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৮

0
1873

#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৮

আয়াশ ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে চেয়ে আছেন। তীক্ষ্ণ উনার দৃষ্টি। আমার পিঠে হাত রেখে আমায় নিজের বুকে ফেলে দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়ে বললেন,
–“তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!”

আমি হতাশ নয়নে উনার দিকে তাকালাম। আয়াশ বেশ কয়েকটা শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে বললেন,
–“আগে তো একাই ঘুমাতে। তখন ভয় করত না? এখন হঠাৎ ভয় করছে কেন?”

–“আপনি এটা শোনেন নি নাকি? যে মানুষ অভ্যাসের দাস? আপনিই তো অভ্যেস করিয়েছেন। এখন অভ্যেস ছাড়াতে চাইলে তো হবে না মি. রায়হান!”

–“তো এখন আমাকে কি করতে বলছো?”

আমি ফট করে মুখ ফসকে বললাম,
–“আমি আপনার সঙ্গে ঘুমাবো।”

এবার আয়াশের চোখজোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম! উনি হয়ত ভাবছেন এটা সত্যিই আমিই কিনা! আমি উনার এমন রিয়েকশন দেখে বললাম,
–“আপনি আমার সঙ্গে ঘুমাবেন না তাই তো? আমি জানতাম আপনি এমনই করবেন। আপনি বদলে গেছেন আয়াশ। আপনি একেবারে বদলে গেছেন।”

চোখজোড়া সরু হয়ে এলো আয়াশের। একটু সরে গিয়ে ধমক দিয়ে বললেন,
–“একদম চুপ! আজকাল ড্রামা করতে শিখে গেছো। শুয়ে পড়ো।”

আমি আর কথা না বাড়িয়ে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। আয়াশ একটু সরে গিয়ে চোখ বন্ধ করলেন। বেজায় রাগ হলো আমার। আগে তো একেবারে জড়িয়ে ধরে ভর্তা বানিয়ে দিতে ছাড়তেন না। একপ্রকার যেন কোলবালিশ বানিয়ে ফেলেছিলেন। আজকে যখন আমি নিজে থেকে লোকটার কাছে এসেছি তখন সরে যাচ্ছেন? এটা তো হতে পারে না! মেনে নেওয়ায় যায় না। একবার উনার দিকে কটাক্ষ করে সরাসরি আয়াশের পেটে আক্রমণ করে বসলাম। চোখ খুলে হকচকিয়ে আমার দিকে তাকালেন উনি। তারপর নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি বাঁকিয়ে বললেন,

–“এমন উইয়ার্ড আচরণ করছ কেন? এখন কি চাই?”

আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম,
–“কিছু না। আমি তো শুধু আপনার পেটের মেদ চেক করছিলাম। বুঝলাম আপনার মেদ বেড়ে গিয়েছে এই কয়েকদিন জিম না করায়।”

আয়াশ আবারও নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন যে আমার কথা কি সত্যি? নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকেন উনি। তার প্রমাণ উনার খাওয়াদাওয়া। আমি যতটা না সচেতন তা থেকে আয়াশ বেশি সচেতন। ভেজিটেবল স্যালাদ, ভেজিটেবল স্যুপ, ফলমূল, ফ্রুট কাস্টার্ড ইত্যাদি খেয়ে সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে নেন। ফলস্বরূপ আমাকেও তাই খেতে হয়। জীবনে যা কোনোদিন মুখে দিইনি সেসব খেতে হয় এখন।

রাতে বড়জোর দুটো রুটি খাবেন সবসময়। আর দুপুরেই শুধু ভাত মুখে দেন। বাইরের কোনো খাবার এলাও না। স্ট্রিট ফ্রুট তো একদম না। যেন ওসব আয়াশের দুচোখের শত্রু। নিজের পেট ভালোভাবে দেখে উঠে বসলেন উনি। আমার দিকে তাকিয়ে ফিচেল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
–“কি বলছো? সিরিয়াসলি?”

–“তো কি মনে হচ্ছে আপনার? আমি মিথ্যে বলছি?”

–“অভিয়েসলি। মনে হবার কিছু নেই। তুমি তাই-ই বলছো। এটেনশান পেতে চাও সেটা সরাসরি বলে দিতে পারো। সমস্যা নেই সাত দিন মানে ১৬৮ ঘন্টা রয়েছে। ততক্ষণ এডভান্টেজ নিতেই পারি? ইয়েস ওর নট?”

লজ্জায় মুখশ্রী লাল হয়ে এলো আমার। এডভান্টেজ মানে? কত বড় সুবিধাবাদী ভাবা যায়? আমার হাত ধরে হাতের পিঠে চুমু খেতে লাগলেন উনি। ধীরে ধীরে হাতের ওপরে উঠে আসতেই ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে হাত সরিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠতে নিতেই আয়াশ বললেন,
–“দম শেষ? আমার কাছে থাকলে এমনই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তোমায়। আমি সেকেন্ডে সেকেন্ডে আমার লাজুকলতার সেই গাল ও নাকের গোলাপি আভা দেখতে চাই। এ আমার কাছে এক সবথেকে ভয়ানক সুন্দর ও মোহময় দৃশ্য!”

আমি উঠে পা বাড়াতে নিলাম। এই ঘরে আর থাকায় যাবে না। আমারই ভুল। কেন যে আসতে গেলাম! দুই ধাপ এগোতেই পেছন থেকে কাঠকাঠ কন্ঠ ভেসে এলো।
–“যেহেতু আমার ঘরে এসে পড়েছো সেহেতু তোমায় ওই ঘরে যেতে দিচ্ছি না। আমি আগেই বলেছিলাম আমার ঘুম কেঁড়ে নিলে তোমার জন্য বিপদজনক। যেই দুইধাপ এগিয়েছো সেই দুইধাপ পিছিয়ে এসে পিচ্চিদের মতো শুয়ে পড়ো। আদারওয়াইজ… ”

বলেই থামলেন উনি। আমি পিছু ফিরে প্রশ্নাত্মক চেহারা নিয়ে বুঝতে চাইলাম আদারওয়াইজ কি করতে চান উনি? উনি আমার দৃষ্টি বুঝে মাথার নিচে দুটো হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,
–“সারা রাত আমার অত্যাচার সহ্য করতে হবে তোমায়। আমার স্পেশাল পানিশমেন্ট কি সেটা জানো তো? সারারাত সেটা তোমার ওপর এপ্লাই করব নিশাপাখি! আরো অনেক কিছু হতে পারে।”

বাকহারা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম আয়াশের দিকে। উনি নির্বিকার ভঙ্গিতে চোখ বন্ধ করে আছেন। এই মূহুর্তে ওই ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উনি যে লক খুলে ফেলবেন সেটা আমি জানি। তখনই আবিষ্কার করলাম আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। কি করে পারেন এমন কথাবার্তা বলতে? আমায় চুপ থাকতে দেখে চোখ মেলে আয়াশ ক্ষুদ্ধ হয়ে বললেন,
–“থ্রি পর্যন্ত কাউন্ট করব মাই হানি! ওয়ান, টু…”

থ্রি উচ্চারণ করার আগেই বিদ্যুতের বেগে গিয়ে শুয়ে পড়লাম আমি গুটিশুটি মেরে। চোখটাও খিঁচে বন্ধ করে রেখেছি। অতঃপর অনুভব করলাম আয়াশের দাড়ির ঘষা লাগছে আমার গালে।
–“গুড নাইট। হ্যাভ এ সুইট ড্রিমস। আমার ঘুম কেঁড়ে নিয়েছো। তোমার নেশা এতোটাই তীব্র যে ঘুমের ঔষুধও কাজ করছে না আমার ওপর।”

বলেই আমার চুলগুলো সরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন উনি। সেভাবেই শুয়ে থাকলেন। আমার শরীরে বয়ে গেল এক ঠান্ডা হারহিম করা স্রোত। যা আমি উপলব্ধি করতে পেরে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম আমি। বুঁজে এলো আমার চোখজোড়া।

আনিশা ঘুমিয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। আয়াশের ঘুম পেলেও চোখ মেলে কোনোমতে জেগে আছে সে। বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। একসময় এসির রিমোট হাতে নিয়ে টেম্পারেচার কমিয়ে দেয় সে। বাইরে থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দ আসছে। মাতাল করে তুলেছে পরিবেশ। আয়াশ পাশে তার প্রেয়সী তার হাত জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে ঘুমোচ্ছে! সে সাদা চাদরটি উঠিয়ে ভালোভাবে আনিশার ওপর জড়িয়ে দিয়ে হাফ ছাড়ে। খোলা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে গিয়ে ঘুমন্ত আনিশার থুঁতনি ধরে বলে,

–“আমার দেখা পৃথিবীর দ্বিতীয় সুন্দর রমনী! প্রথমজন ছিল আমার মা। দ্বিতীয়জন আমারই অর্ধাঙ্গিনী। এই সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধু আয়াশেরই থাকবে। বিকজ আই এম এ বিগ সেলফিশ ম্যান!”

কথাটুকু শেষ করার পরপরই বেজে ওঠে ফোন। তাড়াহুড়ো করে ফোন হাতে ধরে রিসিভ করে আনিশার দিকে চোখ বুলিয়ে নেয় আয়াশ। আনিশার ঘুম ভাঙেনি দেখে বড় নিশ্বাস নিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
–“হ্যালো? যা বলেছি সেটা হয়েছে?”

–“ইয়েস স্যার। কাজটা হয়ে গেছে। কাল সকালেই তার প্রমাণ পেয়ে যাবেন।”

–“ভেরি গুড। আমি রাখছি। আশা করছি কাল সকালে এই রায়হান বাড়িতে ছোটখাটো একটা ঝড় বয়ে যাবে।”

বলেই ফোনটা কেটে দেয় আয়াশ। এক অদ্ভুত হাসিতে মেতে ওঠে সে। হাসিটা ভয়ানক! সেই হাসিতে মনে মনে কাউকে ধ্বংস করে ফেলছে সে।
–“কাল সকালের অপেক্ষা। দেন বম ব্লাস্ট হবে! মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়বে।”

আয়াশ আনিশার হাতটি ধরে নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে নেয়। হাতটিতে এখনো ব্যান্ডেজ জ্বলজ্বল করছে। এখনো নিশ্চয় তার নিশাপাখি এই আঘাতের জন্য কষ্ট পায়! ভেবেই বুকে তীব্র ব্যথা হয় আয়াশ। ব্যান্ডেজের ওপর চুমু খেতে থাকে সে। মাথা তুলে কন্ঠে দৃঢ়তা মিশিয়ে বলে,
–“আমি আয়াশ রায়হান। সব উশুল করে নেব। যা যা যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে সব ফিরিয়ে দেব।”

সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ। চারিদিকে ঝলমলে আলো! অর্ক থম মেরে বসে রয়েছে। আজ তার এন্টারভিউ রয়েছে চাকরির। চাকরিটা বেশ বড়সড় মাপের। ভালো এমাউন্টের সরকারি চাকরি। সারারাত দুটো কারণে ঘুমাতে পারেনি সে। প্রথমটা হচ্ছে মৃধা নামক সেই চঞ্চল মেয়েটা। কি এমন আছে তার মুখশ্রীতে? যা অর্ককে চোখের পাতা এক করতে দেয় না? কিছু তো আছেই! দ্বিতীয় কারণ হলো চাকরির ইন্টারভিউ। তার সিলেক্ট হওয়া ভীষণ জরুরী। এবার তো ভেবেছে চাকরি পেয়ে গেলে মৃধাকে নিজের মনের কথা বলেই দেবে সে। তার জন্য অপেক্ষা করা বড়ই দায় হয়ে পড়ছে।

আচ্ছা, ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে একবার মৃধার সাথে কথা বললে কেমন হয়? ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিল সে। দুরুদুরু মন নিয়ে বের করল মৃধার নম্বর। অর্ক খুব ভেবেচিন্তে মৃধার নাম সেভ করেছে ‘মিষ্টি’ নামে। যদি অর্ক ফোন করেও ফেলে তাহলে কি বাহানা দেবে সে? এটা ভেবে থেমে যায় সে। এতদিন আয়াশের বাহানায় কথা বলতো। আজ কি করে বলবে? ভাবতে ভাবতে ফোনটা করেই ফেলল অবশেষে। রিং হতে হতে একসময় ওপাশ থেকে রিসিভড হতেই হৃদপিণ্ড পাল্লা দিয়ে চলতে শুরু করল অর্কের।

–“হ্যালো? কিছু বলবেন?”

ওপাশ থেকে ভেসে আসে ব্যস্ত কন্ঠ। মেয়েটা কোনো খোঁজখবর না নিয়ে সরাসরি কিছু বলবেন বলে বসল? এখন সে কি বলবে? অর্ক আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
–“ওই আসলে…”

–“আসলে মানে? আয়াশ স্যার ঠিক আছেন তো? কিছু হয়নি তো? সুস্থ আছেন তো?”

অস্থিরতার সঙ্গে এক নিশ্বাসের কথাগুলো বলে ফেলে মৃধা। অর্ক হতভম্ব হয়ে যায়। যদিও এটা নতুব কিছুই না। সে ফোন করলে সবসময় আয়াশের খবরই জানতে চায় চিন্তিত হয়ে। একবারের জন্যেও সে কেমন আছে, ঠিক আছে কিনা সেটা জানতে চায়নি। আয়াশের প্রতি এতো ওভার কেয়ার অর্কের মস্তিষ্কে মাঝে মাঝে উঁকি দিলেও সে পাত্তা দেয় না। তবুও হতাশ হয় বা অর্ক। সে নিচু সুরে বলে,
–“আমি ফোন করলে আপনার এমন কেন মনে হয় যে আমি শুধু আয়াশের কিছু হয়ে গেলেই আপনাকে ফোন করব?”

–“ওই আসলে আপনাকে তো উনার খবর দিতেই নম্বরটা দিয়েছিলাম তাই ভাবলাম কিছু হলো কিনা! অন্য কোনো কারণে ফোন করেছেন?”

–“তেমন বিশেষ কোনো কারণ হয়ত এটা নয় আপনার জন্য। তবে আমার জন্য খুবই বিশেষ কারণ! আর আমার বিশেষ কারণেই আপনাকে বিরক্ত করা।”

–“কি সেই কারণ?”

অর্ক গলা খাঁকারি দিয়ে পরিষ্কার করে স্পষ্ট কন্ঠে বলে,
–“আজ আমার একটা জবের ইন্টারভিউ আছে। তাই ভাবলাম আপনজনদের সাথে কথা বলে মনটা ভালো করে নেওয়া ভালো। এতে ইন্টারভিউ ভালো হবে।”

–“আমি আপনার আপনজন? কীভাবে?”

বিস্ময় নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে মৃধা অর্ককে। অর্ক শান্ত গলায় বলে,
–“কিছু কিছু কারণ খুঁজে নিতে হয়। মুখে বলতে নেই।”

মৃধা হয়ত কিছুটা আন্দাহ করতে পেরে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল। হালকা কেশে বলল,
–“বেস্ট ওফ লাক আপনার জবের জন্য। আমি এখন রাখছি।”

বলেই ফোনটা কেটে দিল মৃধা। ফোন কেটে দিয়েই বড় বড় শ্বাস ফেলতে থাকল সে। লোকটা কেমন জানি অদ্ভুত লাগে মৃধার কাছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এসেছিল অর্কের শেষ কথাগুলো বলাতে। ওপরদিকে ফোন কেটে দেওয়ায় অর্ক আর কিছু বলার সুযোগ না পাওয়ায় কিছুক্ষণ ফোনের দিকে একধ্যানে চেয়ে থাকে। তারপর ভাবতে থাকে, মেয়েটা হয়ত লজ্জা পেয়ে ফোনটা কেটে দিয়েছে। মৃদু হেঁসে ফোনটা রেখে রেডি হতে চলে যায় সে।

সকাল সকাল নিউজপেপার পড়ার অভ্যেস রয়েছে মিসেস. মালিহার। একদিন না পড়লে তার দিনই কাটে না। সঙ্গে চাই উনার আদা দেওয়া চা। বর্তমানে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে সেই কাজটাই করছেন উনি। চায়ের কাপে আলতো চুমুক দিয়ে উঠিয়ে নিলেন খবরের কাগজ। ভাঁজ করে রাখা কাজটি খুলতেই ফ্রন্ট পেজ বেরিয়ে এলো। তার নজরে এলো একটা ছবি। আচমকা মনে হলো এটা তারই ছবি। তৎক্ষনাৎ ভালো করে চোখ বুলাতেই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায় উনার। হ্যাঁ এটা তো উনারই ছবি। তাও আবার একবছর আগের। যেদিন আয়াশ তার নামে পুলিশে এফআইআর করেছিল সেদিন যখন তাকে তুলে নিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ছবিটা ঠিক তখনকার।

ছবির নিচে বড়বড় করে লিখা ‘বিজনেসম্যান সাহাদ রায়হানে বর্তমান স্ত্রী মালিনা রায়হানের পর্দা ফাঁস।’

অস্থিরতা নিয়ে সে পড়া শুরু করল লিখাগুলো। সেখানে লিখা ছিল, ‘বিজনেসম্যান সাহাদ রায়হান যে কমবেশি সকলের কাছে পরিচিত। দেশ ছাড়িয়ে বর্তমানে বিদেশের কিছু জায়গাতেও উনি নিজের ব্যবসা ছড়িয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক বছর আগে কোনো কারণে তাদের একমাত্র ছেলে আয়াশ রায়হান মালিহা রায়হানের নামে এফআইআর দায়ের করায় তাকে পুলিশ কাস্টারিতে নেওয়া হয়। উনি বেরিয়ে এলেও একবছর পর গোপনীয় ভাবে জানা যায় মিসেস. মালিহা রায়হান আয়াশ রায়হানের নিজের মা নন। সেই সঙ্গে এটাও জানা গেছে, আয়াশের মায়ের সবথেকে প্রিয় বান্ধবী ছিলেন মালিহা রায়হান। শোনা যায়, নিজের বান্ধবী জীবিত থাকা অবস্থায় তার সামনে পরকীয়া করে গেছেন সাহাদ রায়হান ও মালিহা রায়হান। বলা যায় এ এক বিশ্বাসঘাতকতা! এটাও সন্দেহ করা হয়েছে যে মালিহা রায়হান সাহাদ রায়হানকে পাওয়ার জন্য নিজের প্রিয় বান্ধবীকে মার্ডারও করতে পারেন।’

কথাগুলো পড়তে পড়তে চোখ ঘোলা হয়ে আসে মিসেস. মালিহার। মাথা ঘুরে যায় উনার। হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উনি দিয়ে ওঠেন এক চিৎকার।

চিৎকারের শব্দ শুনে আমি কিছুটা চমকে উঠি। আয়াশ অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলেন আর আমি কলেজে যাওয়ার জন্য। হঠাৎ উনার মায়ের চিৎকারে হাত থেকে সেফটিপিন পড়ে যায়। অস্ফুটস্বরে বলি,
–“হঠাৎ কি হলো?”

–“চলো। নিচে গিয়ে দেখা যাক।”

হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে মৃদু হেসে কথাটি বললেন আয়াশ। আমি অদ্ভুত নজরে তাকালাম। হাসছেন কেন হঠাৎ? সেদিকে নজর না দিয়ে আমি আর উনি চলে এলাম বাইরে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই আয়াশের মাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখতে পেলাম আমি। নিচে পড়ে আছে নিউজপেপার আর চায়ের কাপ। ড্রয়িং রুমে বাকি সব সার্ভেন্ট চলে এসে অবাক নয়নে দেখছে। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকার পর উনি উঠে আয়াশের সামনে আসেন। কঠিন গলায় বলেন,

–“এসব তুমি করেছো না? তোমার সাহস কি করে হয়? আমার নামে এসব নিউজপেপারে ছাপার সাহস কি করে দেখাও তুমি?”

চলবে…

[বি.দ্র. কিছু কথা! রুদ্র নামক চরিত্র নিয়ে কিছু কথা। অনেকে ভাবতে পারেন বা ভাবছেন রুদ্রকে নিয়ে আমি শুধু শুধুই বাড়াবাড়ি করছি। ওকে ইম্পরটেন্স দিয়ে আমি হুদাই গল্প টেনে নিয়ে যাচ্ছি। তাহলে বলব আমার এই গল্প না পড়তে। কারণ এখানে শুধু আয়াশ নয় রুদ্রও প্রধান চরিত্রের মধ্যে একজন। যার মনে থাকবে শুধু একপাক্ষিক ভালোবাসা। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, একদিনে এতো ভালোবাসা হয় কি করে?
তাদের জন্য উত্তর, একদিনে নয়। প্রায় বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেছে সেটা গল্প পড়লেই বুঝবেন। আর মনের অনুভূতি কারো এক সেকেন্ডেও জাগতে পারে আবার কারো বছরের পর বছরও লাগতে পারে। এটা আপনার মনের আর্কষণ। আয়াশ, অর্ক চরিত্র যেমন মূহুর্তেই ভালোবাসা বুঝেছে রুদ্রও তেমন চরিত্র। অন্যদিকে আনিশার চরিত্র কিন্তু দেরিতে নিজের অনুভূতি বুঝেছে। এটা মনের ব্যাপার। আমি রুদ্রকে যেভাবে সাজাতে চেয়েছি সেভাবেই সাজাব। এটা আমার আগে থেকেই কল্পনা করা ছিল। এখন যদি দ্রুত ইন্ডিং টানতে যাই তাহলে ইন্ডিং প্রচন্ড বাজে হবে। গল্পের তাল হারিয়ে ফেলব। তাই আমার ভাবনা মতোই না হয় গল্প হতে দিন। এমনটা নয় আমি আপনাদের কথা ভাবছি না। ভাবছি বলেই আয়াশ ও আনিশা এখনো একসঙ্গে আছে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এখানে বাস্তবতা খুঁজবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here