#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪
জ্ঞান ফিরল আমার। আশেপাশে হাতাতে থাকলাম আমি। চোখ খুললাম। ঠান্ডা লাগছে খুব। মনে হচ্ছে এসি চলছে। কিন্তু আমার বাড়িতে এসি আসবে কোথা থেকে? আমার মুখে ওপর পড়ছে গরম নিঃশ্বাসের উত্তাপ। সেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমার নিঃশ্বাসও জোরে জোরে ওঠানামা করছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার ওপর উবু হয়ে রয়েছে। দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম আমি। কিন্তু লাভ হলো না। একটা হাত আমায় আগলে ধরতেই ভয়ে কেঁপে উঠলাম। কম্পিত সুরে বললাম….
–“ক…কে? কে?”
–“যার হওয়ার কথা!”
কন্ঠটা চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল হলো না। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম। গায়ের ওপর থেকে চাদর ফেলে নিচে নামতে গেলাম। আশেপাশে হাতড়াতেই কারো গাল আমার হাতের সামনে এলো। গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি উপলব্ধি করে চিৎকার করে বললাম….
–“এটা কোথায় এনেছেন আমায়? আমি বাড়ি যাব।”
–“তোমার ওই হাতটা দিয়ে আবার আমায় টাচ করো দেখি। তোমার হাতের ছোঁয়া আমার খুব ভালো লাগছে। টাচ করো। এসো এসো।”
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আয়াশ প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইছেন। রাগ হলো আমার। আরো দ্বিগুণ জোরে চেঁচিয়ে বললাম….
–“আমি কি বললাম শুনতে পাননি? কোথায় এনেছেন আমায়? আর আমার শাড়ি? আমার গায়ে তো শাড়ি ছিল। এই জামা নয়। কে চেঞ্জ করেছে এসব?”
নিজের হাত আর মুখে হাত বুলিয়ে দেখলাম। আমার শাড়ি চেঞ্জ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কে শাড়ি চেঞ্জ করতে পারে? আয়াশের কথা ভাবতেই লজ্জা আর রাগে কুঁকড়ে গেলাম আমি। অস্বস্তি আর লজ্জা সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে বলে উঠলাম……
–“এটা আপনি কি করে করতে পারলেন? এতোটা খারাপ আপনি? ছি! শেষমেশ কিনা আমার ড্রেস চেঞ্জ? আপনার লজ্জা না থাকতে পারে কিন্তু আমার তো আছে। বিয়ে করতে পারলেন না বলে শেষে কিনা এইভাবে আপনি আমায়……”
পুরোটা বলতে পারলাম না। শেষের কথাগুলো বলার মতোই না। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললাম। আচমকা আয়াশ আমার গাল দুটো নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলেন। অপ্রস্তুত হয়ে বসে পড়লাম আমি। ঘাবড়ে গেলাম। হয়তবা বেশিই বলে ফেলেছি এই ভেবে। আয়াশ আমার গাল ক্রমশ জোরে গাল চেপে ধরছেন।
–“শোনো, না আমার কোনো খারাপ ইন্টেনশান আছে আর না তোমার জামাকাপড় আমি চেঞ্জ করেছি। যদি তোমার সঙ্গে খারাপ কিছু করারই হতো যেদিন তোমায় তুলে নিয়ে গেছিলাম সেদিনই করতাম। হোটেলের লেডি স্টাফ তোমার কাপড় চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছে। যদি তখনই ভিজে শাড়ি তোমার শরীর থেকে না সরানো হতো জ্বরে পুড়ে যেতে এতোক্ষণে।”
আক্রোশে ফেটে পড়ে কথাগুলো বললেন আয়াশ। আমার গাল দুটো ছেড়ে দিয়ে একপ্রকার ধাক্কা দিলেন উনি। আমি টু শব্দও করলাম না। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। নিজের হতভম্বতা কাটিয়ে কোনোরকমে বললাম…..
–“তার মানে আমি ঠিক ছিলাম। আপনিই সেদিন আমায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন!”
–“আমি ছাড়া তোমায় ছোঁয়ার সাহসটা কে দেখাবে বলো? সেদিনের কথা ভেবে আমারই হাসি পায়। মনে আছে? নিজের হাত-পায়ের বাঁধন খুলতে বলেছিলে? তার ওপর বলেছিলে মার্শাল আর্ট এক্সপার্ট তুমি। একবার তোমার বাঁধন খুলে দিলে আমায় মেরে গুম করে দেবে। খুলে তো দিয়েছিলাম। মারতে গিয়ে তুমি নিজেই উল্টে পড়েছিলে আমার ওপর। সেদিন আমি খুব হেসেছিলাম।”
আমি অসহায় ভঙ্গিতে বসে আছি। মনে তৈরি হয়ে চলেছে লোকটার প্রতি রাগ আর ক্ষোভ। উনার জন্য কতপ্রকার কথা শুনতে হয়েছে তা উনার ধারণাই নেই। আজ দাদিমার কথাগুলো মনে পড়ছে। দাদিমা বলে, আমার মতো অন্ধ তার ওপর আবার মেয়ে মানুষ বাইরে চলাফেরা করাই উচিত নয়। সেদিনের কথা এখনো ভুলতে পারিনি আমি। দুম করে বলে বসলাম……
–“আমি বাড়ি যাব। হোটেল থেকে বাড়ি পৌঁছে দিন। নয়ত আমি একা বেরিয়ে যাব।”
আয়াশ আগের মতোই একরোখা মনোভাব নিয়ে বললেন…..
–“তোমার কি মনে হয়? আমি এমনি এমনি আমার কাছে এনে রেখেছি?”
–“কেন রেখেছেন, কি উদ্দেশ্য আমি কিচ্ছু জানতে চাই না বিশ্বাস করুন। আমি শুধু বাড়ি যেতে চাই ব্যাস….! আপনি যদি আমায় না নিয়ে যান আমি একাই চলে যাব।”
বলেই উঠে দাঁড়ালাম আমি। আন্দাজ মতো একদিকে হাঁটতে লাগলাম। আয়াশ দ্রুততার সঙ্গে বললেন….
–“ওদিকে যেও না দেওয়াল আছে। ডোন্ট মুভ!”
আমি উনার কথা শোনার অবস্থাতে মোটেই নেই। রাগে ফেটে পড়ছি আমি। তবে কথা না শোনার বদৌলতে দেওয়ালে মাথা ঠুকে গেল আমার। মৃদু আর্তনাত করে ফ্লোরেই বসে পড়লাম। পায়েও বেশ লাগছে। এবার অস্থির হয়ে কেঁদে দিয়ে বললাম…..
–“আমি বাড়ি যাব। মা-বাবার কাছে যাব।”
আমার কান্নায় বিন্দুমাত্র মন গলেনি আয়াশের। হঠাৎ করেই শূন্যে ভাসতে লাগলাম। আয়াশ আমায় পাজকোলে তুলে নিয়ে আবারও বেডের নরম গদিতে বসিয়ে দিলেন। গাম্ভীর্যের সঙ্গে বললেন…..
–“পুরো সাড়ে বারো ঘন্টা আমার কাঁধে তোমায় মাথা রাখতে দিয়ে নিজে ড্রাইভ করে যখন নিজের বাড়িতে এলাম। আবার তোমায় বাড়ি দিয়ে আসতে যাব ভেবেছো?”
আয়াশের কথা শুনে আমার কান্নাটুকুও বন্ধ হয়ে গেল। এক ধ্যানে বসে কিছুক্ষণের জন্য ভাবতে লাগলাম উনি কি বললেন? আমার সঙ্গে কি মজা করছেন? কপাল কুঁচকে হাতের কাছে বালিশ দিয়ে একদিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললাম…..
–“কি যা তা বলছেন? আ…আমি আমার এলাকায় নেই? আমি কোথায়? আমার বাড়ি কোথায়? আমি কক্সবাজারে নেই?”
আয়াশ হাসতে হাসতে বলেন….
–“নো! তোমাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে হোটেলে গিয়ে চেক আউট করে সরাসরি ঢাকা নিজের বাড়ি চলে এসেছি। আসলে কি বলো তো আমার কেস আছে কিনা। কোর্টে ডেট পড়েছে। তোমায় রেখে তো চলে আসতে পারি না! আবার এটাও ভেবে দেখলাম নিজের এলাকায় থাকলে তুমি সবসময় তিড়িংবিড়িং করে লাফাবে। তা তো হয় না। এবার আমার বাড়িতেই থাকবে। কাল সকালে আমাদের বিয়ে হবে। তোমার ফ্যামিলির লোকজন আসছে। এবার আর কোনো চান্স পাবে না তুমি। অনেক ভুল করে ফেলেছো। অনেক ক্ষমাও পেয়েছো। তোমায় ভালোবাসি বলে মাথায় উঠে বসবে না। আমার সঙ্গে গলা নামিয়ে কথা বলবে।”
–“আপনি এটা কি করে করতে পারলেন? আমাকে কি করে নিয়ে আসতে পারলেন নিজের বাড়িতে? আর আমার অবাক লাগছে এটা ভেবে যে আমার পরিবারের কেউ বাঁধাও দিল না ব্যাপারটাই?”
আয়াশ চুপ থেকে আবার বললেন…..
–“দেওয়ার সুযোগই পায়নি। আমি ফোন করে জাস্ট তাদের জানিয়ে দিয়েছি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি। আর কাল যেন আমাদের বাড়িতে চলে আসে। আর একটা কথা! কথায় কথায় কান্না আমার পছন্দ নয়। তাছাড়া তুমি তো কাঁদছো না। ড্রামা করছো। মেলোড্রামা বন্ধ করো।”
আয়াশের ধমকানিতে কান্না থেমে যায় আমার। অবাক কন্ঠে বললাম…..
–“আপনি কি করে জানলেন? আমি কাঁদছিলাম না?”
–“চোখে পানি নেই অথচ চোখমুখ জড়িয়ে কান্না করে যাচ্ছো। নিজেকে চালাক ভাবার ভুলটা করবে না। আর লাস্ট ওয়ার্নিং ওই নীল না নীলাদ্র! ওর কথা যদি ভুল করেও নিজের মুখে এনেছো তোমার মুখটা পুরো দুই দিনের জন্য বেঁধে রাখব। খুলতেও পারবে না।”
উনার অগোচরে আমি মুখ ভেংচি কাটলাম। এটা সত্যি আমি কাঁদছিলাম না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শক্ত থেকে সেখান থেকে বের হওয়ার বুদ্ধি বের করার মতো গুনটা আছে আমার মধ্যে। আমি সহজে ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে নই।
–“হয়ত তুমি এখনো মনে মনে কোনো স্টুপিড আইডিয়া বের করার চেষ্টা করছো। কিন্তু তোমায় আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি। নিশাপাখি, একটা কথা বলো! গতকাল নীলাদ্র নীলাদ্র করে করে নিজের কত ক্ষতি করেছো? তোমার কষ্ট হয়েছে না? পায়ে ব্যাথা পেয়েছো। ওর কথা যত কম ভাববে তত ভালো। আমি তোমার পায়ে সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।”
উনার হুটহাট নম্র ব্যবহার আমায় হাজার ভোল্টেজের শক দেয়। হঠাৎ করেই আমায় ব্যান্ডেজ লাগানোর পায়ে চুমু খেতেই আমি ঝড়ের গতিতে পা উঠিয়ে চাদর হাতিয়ে পা ঢেকে নিলাম। এক নিশ্বাসে বললাম…..
–“অদ্ভুত তো! কি করছেন? পায়ে এভাবে চুমু খায় কেউ?”
আমার প্রশ্নের কোনো জবাব পেলাম না। আমি চাতক পাখির মতো জবাবের আশায় বসে রইলাম। উত্তরটা না পেয়ে নিজের গালেও উনার ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে পিছিয়ে গেলাম আমি। এখানে থাকা বড়ই যন্ত্রণার! পিছিয়েও বোধহয় খুব একটা লাভ হলো না। গলায়ও ঠোঁট ছোঁয়ালেন ইচ্ছেমতো। নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করতেই আমি অনুভব করি উনি নিজে থেকেই সরে গেছেন।
–“আজ বিয়ে হয়নি বলে! তুমি যে শুধু শুধু পালাতে গেলে?”
আমি বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ছি। এক্ষুনি দম বন্ধ হওয়ার জোগার হয়েছিল। উনার এরূপ অত্যাচারে সাহস কমে এলো আমার। মিনমিন করে বললাম….
–“মায়ের সাথে কথা বলব!”
–“ওহ ইয়েস। আমি একটু পর একটা কাজ সেড়ে ফোন নিয়ে আসছি।”
আমাকে ঘরে রেখে উনি চলে গেলেন। দরজা লাগানোর শব্দ পেলাম। কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে অনেক কষ্ট করে দরজা পর্যন্ত পৌঁছালাম। ঘরটা বেশ বড়। দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে কত পরিশ্রম করতে হলো! দরজা টানতেই খুলল না। বেশ কিছুক্ষণ ধরে টানাটানি করেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন বুঝলাম আয়াশ বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গেছেন। মহা মুশকিল তো! এভাবে ঘরে বন্দি করে রাখবেন নাকি? এখন কি করব?
চোখের চশমা খুলে হাতে গুঁজে চেয়ারে বসে আছেন মাহমুদ আহমেদ। কপালে চিন্তার ছাপ। আরেক হাত দিয়ে ডান কানের কাছে ধরে আছেন উনি। কথা বলছেন আজীম কালামের সঙ্গে। আজিম কালাম আনিশার মামা হন। উনি আনিশাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। মাহমুদ আহমেদের মুখে সবটা শুনে আজিম সাহেব চকিতে বলে ওঠেন…..
–“কি বলছো মাহমুদ? এতো কিছু হয়ে গেল আনিশার সঙ্গে অথচ আমাদের কেবল জানাচ্ছো। আর ওর বিয়ে তোমরা আমাদের না জানিয়েই কি করে ঠিক করতে পারো?”
–“সবকিছু এতো তাড়াহুড়োর মাঝে হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। এখন কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। মেয়েটা আমাদের কাছেও নেই। নিয়ে চলে গেছে আয়াশ। ও কি করছে, কেমন আছে তাও জানি না।”
–“তোমাদের কি বলি বলো তো? না জেনে অচেনা ছেলের সঙ্গে কেন বিয়ে ঠিক করতে গেলে?”
মাহমুদ আহমেদ চিন্তার ভঙ্গিতে বললেন…..
–“আমার প্রথমে মত ছিল না। কিন্তু মা জোরাজুরি করল। ছেলেও ভালোই মনে হয়েছিল তাই না করিনি আর। আয়াশ বলে দিয়েছে আজ রাতে আমরা যেন ঢাকা যাই। কাল সকালে বিয়ে হবে।”
–“মাহমুদ আমার কথা শোনো। আয়াশ রায়হানের কথা আমিও শুনেছি। আজ পর্যন্ত যতগুলো কেস জিতেছে সব খারাপ লোকদের কেস। টাকা পেলে কিছু লাগে না তার। এই ভুলটা তোমরা করো না। আর সত্যি বলতে গেলে আনিশাকে আমার ছেলে খুব পছন্দ করতো এককালে। ও তো আমাদের বাড়ি থেকেই লেখাপড়া শিখেছিল। ভাবলাম বড় হলে বিয়ে দেব। কিন্তু মেয়েটা এক্সিডেন্ট করে বসল! আমাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করে মোটেও ভালো করো নি তোমরা। আমি দেখছি কি করা যায়।”
আরো কিছু কথাবার্তা বলে ফোন কেটে দেন মাহমুদ সাহেব। উনি নিরুপায় বসে বসে রইলেন। সবকিছুই এখন হাতের বাইরে।
–“হাউ ডেয়ার ইউ মি. বাহাদুর? আমার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কি করে পেলেন আপনি? কোন সাহসে আপনি আমার কেস জেতা সম্পর্কে সন্দেহ করলেন?”
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আয়াশ। ওর হাতে থাকা পানির গ্লাস রাগে শক্ত করে চেপে ধরেছে সে। ওর জেতার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে ওর মাথা কাজ করে না। আর রক্তিম বাহাদুর সেটাই করেছেন। আয়াশের অবস্থা বুঝে মি. বাহাদুর মিইয়ে গেলেন।
–“আই এম সরি মি. রায়হান। আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি আপনাকে কথাটা বলিনি। আপনি ভুল বুঝছেন আমায়। আসলে, আপনি তো সেদিন কোনো ইভিডেন্স কক্সবাজারে জোগাড় করতে পারেননি। তাই বললাম আর কি!”
–“ভুল আর ঠিক শেখাতে আসবেন না। আপনি আমার ক্ষমতার ওপর আঙ্গুল তুলেছেন। আপনার কেস আমি এখানেই ছাড়ছি। আমি আপনার হয়ে লড়ব না।”
–“এটা কি করে বলতে পারেন আপনি? এতোদূর এসে কোর্টের ডেট ফাইনাল হয়েও এসব কি বলছেন? দেখুন মাথা ঠান্ডা করুন। আপনি যদি বলেন আরো দশ লাখ টাকা আপনাকে এডভান্স দেব আমি।”
এবার রাগে কাঁচের গ্লাসটা নিচে ছুঁড়েই মারে আয়াশ। হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে…..
–“আপনি আমায় টাকার গরম দেখাচ্ছেন? আপনার চেয়ে দ্বিগুন টাকার মালিক এই আয়াশ রায়হান। ও ইয়েস! আপনিও তো একজন নারী পাচারকারী তাই না?”
ওপরপাশ থেকে আর আওয়াজ এলো না। বোধহয় মি. বাহাদুর বেশ অবাক হয়েছেন। এই কথা অন্যকেউ জানে না। আয়াশ কি করে জানলো?
ভয়ানক হাসি হাসে আয়াশ।
–“ভাবছেন এই কথা কি করে জানলাম? আমি আগে থেকেই জানতাম আপনি অযথা এই কেসটা করেননি। আসলে আপনার নারী পাচারের বিজনেসে তালা ঝুলে যাচ্ছিল ওই আরেক দলের জন্য যার বিরুদ্ধে আপনি কেস করেছেন। সেকারণেই তো ওদের রাস্তা থেকে সরিয়ে আপনার রাস্তার ক্লিয়ার করতে চাইছেন। আমি সব জানি। আমার ক্লায়েন্টের ব্যাপারে জন্ম তারিখ থেকে তার ঠিকুজিকোষ্ঠী আমার সব জানা। আপনি আমায় রাগিয়ে ঠিক করেননি। এর দাম আপনি সঠিক সময়ে পাবেন।”
বলেই ফোনটা কেটে দেয় আয়াশ। মাথায় আগুন জ্বলছে ওর। তাকিয়ে আছে ভাঙা গ্লাসের কাঁচের টুকরোর দিকে। হাত-পা রাগে ঠকঠক করে কাঁপছে। ফুলে উঠেছে কপালের রগ। অস্থির হয়ে উঠেছে সে। এক পর্যায়ে কাঁচের টেবিলে থাকা সবকিছু ফেলে দেয় সে। তবুও যেন ক্ষ্যান্ত হয় না তার মন।
চলবে…….
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]