#লাভ_গেমন
#ফাবিহা_নওশীন
২৬.
আদ্রিশ রুশার সামনে এসে রকিকে একবার দেখে প্রশ্ন করল,
“কি করছো তোমরা এখানে?”
রুশা আদ্রিশকে এত সহজ আর শান্তভাবে কথা বলতে দেখে অবাক হলো। আদ্রিশ দূর থেকে ওদের কথোপকথন কিছুই শুনেনি।
রকি রুশার উত্তর দেওয়ার আগেই উত্তর দিল,
“আমি রুশাকে নিতে এসেছি।”
আদ্রিশ রুশার দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“তোমার প্রেমিক তোমাকে নিতে এসেছে। আমার অগোচরে আমার বাড়িতে এতকিছু হচ্ছে। বাহ! আমার প্রতারক স্ত্রীর প্রেমিক আসে, তাদের প্রেমালাপ চলে। পালিয়ে যাওয়ার প্লানও হয় আমার বাড়িতে। আর আমি কিছুই টের পাই না।”
রুশা ওর কথা শুনে উত্তর দিল,
“আদ্রিশ তুমি যা ভাবছো ঠিক তা নয়। রকি এর আগে কখনও এ বাড়িতে আসেনি। আজই প্রথম বার এসেছে। আর ও আমার প্রেমিক নয়।”
“ও তোমার প্রেমিক না কি সব জানি। দুশ্চরিত্রা মেয়ে, আমার বাড়িতে প্রেমিক নিয়ে এসেছিস৷ কি ভেবেছিস ওর সাথে পালিয়ে যাবি? একদম মেরে দেব দুটোকে। আমার বাচ্চা না দিয়ে এক পা নড়তে পারবি না।”
রুশা দাঁত খিচিয়ে বলল,
“আদ্রিশ! একদম আজেবাজে কথা বলবে না। মুখে যা আসছে তাই বলছো। আমি কিন্তু সহ্য করব না।”
“কি করবে তুমি হ্যা? ওর সাথে পালিয়ে যাবে?”
আদ্রিশ ওর এক গার্ডকে ডাকল। রুশা ভয় পেয়ে রকিকে বলল,
“রকি, প্লিজ চলে যাও। তাড়াতাড়ি চলে যাও এখান থেকে।”
রকি চলে যেতে যেতে বলল,
“শীঘ্রই তোমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাব।”
রকি দেয়াল টপকে বের হয়ে গেল। আদ্রিশের ইচ্ছে নেই রকির সাথে লড়াই করার। ওকে ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিয়েছে। আদ্রিশ রুশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে ওর হাত চেপে ধরে ঘরে নিয়ে গেল।
ঘরে গিয়ে বলল,
“তোমাদের এই নোংরামি কত দিন চলবে? আমার বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসেছো। আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছি না। কি করে যে তোমাকে সহ্য করছি।”
রুশা ওর কথায় জবাব দিচ্ছে না। দেওয়ার ইচ্ছে নেই। আদ্রিশ নিজের কথা বলেই যাবে। ওর কাছে নিজেকে সৎ প্রমাণ করার দায় পড়েনি। যা খুশি ভাবুক।
রুশার কাছে উত্তর না পেয়ে আদ্রিশের আরো রাগ হচ্ছে। রুশার নীরবতা ওর রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
“কথা বলছো না কেন? ডেম ইট!”
“কি বলব? কি শুনতে চাইছো? রকির সাথে আমার সম্পর্ক আছে? তুমি তো বলেই যাচ্ছো রকির সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাহলে কেন জিজ্ঞেস করছো? আর কি জানতে চাও? হ্যাঁ, রকির সাথে আমার সম্পর্ক আছে। খুশি?”
আদ্রিশ চাইছিল রুশা বলুক ওর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু রুশা স্বীকার করে নিচ্ছে।
আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“বাচ্চাটা আমার তো?”
রুশা ওর কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। আদ্রিশ একটা একটা কথা কি করে বলল। রুশা ওর কথা শুনে বসে পড়ল। কোনো জবাব দিচ্ছে না। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মুখ চেপে ধরে রেখেছে। আদ্রিশ রুশাকে ভেঙে পড়তে দেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
রকি ঘর জুড়ে পাইচারি করছে আর ভাবছে রুশাকে নিজের লাইফে কি করে ব্যাক করা যায়। আদ্রিশ রুশাকে কিছুতেই ছাড়বে না। একবার আদ্রিশ যদি রুশাকে ছেড়ে দেয় তবেই রুশা ওর লাইফে ব্যাক করবে। বাধ্য হবে। কিন্তু আদ্রিশ কেন ছাড়বে ওকে এটা ভেবেই মাথা খেয়ে ফেলছে। কিছুক্ষণ ভেবে মুচকি হাসল। আদ্রিশ ওকে রুশার প্রেমিক ভাবে আর এই ভাবনাকে পুঁজি করেই রুশার লাইফে ইন করবে।
কিছুদিন পরের কথা। আদ্রিশ আর রুশার সম্পর্ক আরো খারাপ হচ্ছে। কথা বললেই ঝগড়া হয়৷ একে অপরকে নানান বিষয়ের জন্য দোষারোপ করে। আদ্রিশ অফিসে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ একটা খাম দিয়ে যায় পিয়ন। আদ্রিশের নামে খাম এসেছে। আদ্রিশ খাম খুলে একটা কাগজ পেল। দেখে মনে হচ্ছে কোনো টেস্টের রিপোর্ট। আদ্রিশ রিপোর্ট পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর চোখ মুখ বিষাদে ঢেকে গেল। ওর পুরো পৃথিবী দুলছে।
অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে। ভেতরে ভাঙচুর হচ্ছে। আদ্রিশ দুই হাতে মুখ চেপে ধরল। ছলছলে চোখগুলো লাল হয়ে গেছে। কাগজটা হাতের মুঠোয় দুমড়ে মুচড়ে ফেলল।
রুশা বারান্দায় ব্যায়াম করছিল। কানে হেডফোন। আদ্রিশ ঘরে এসে ওকে হেঁচকা টানে ঘরে নিয়ে এল। রুশা কান থেকে হেডফোন খুলে ওর দিকে ঘাবড়ে গিয়ে চেয়ে রইল। মনে হচ্ছে আদ্রিশ কোনো কারণে বিধ্বস্ত।
“কেন এমন করলে রুশা? এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেলতে। রোজ রোজ কেন মারছো আমাকে? এক বারে মেরে ফেলো প্লিজ। আমি আর বাঁচতে পারছি না।”
রুশা বুঝতে না পেরে বলল,
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কি করেছি আমি?”
আদ্রিশ চোয়াল শক্ত করে ওর ডান বাহু চেপে ধরে বলল,
“বুঝতে পারছো না? অন্যের বাচ্চাকে আমার বাচ্চা বলছো যাতে আমার কাছে থেকে আমাকে আরো কষ্ট দিতে পারো, মন মতো প্রতিশোধ নিতে পারো।”
“অন্যের বাচ্চা!”
“আর নাটক করো না। আমি জেনে গেছি এই বাচ্চা তোমার আর রকির। এইজন্য রকি আসতো তোমার কাছে তাই না? তোমাকে নিয়ে যেতে চাইতো।”
রুশা ওর কথা শুনে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
“কি বলছো আদ্রিশ? কে বলেছে তোমাকে এসব?”
“আমি নিজের চোখে সব পেপার দেখেছি। তোমার এই বাচ্চা রকির। সব প্রমাণ দেকগে এসেছি। নিজের চোখ দুটো অন্ধ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কেন আমাকে এভাবে মারছো? খুব মজা পাচ্ছো তুমি? শান্তি হয়েছে তোমার? বাচ্চাটা শেষ ভরসা ছিল আমার তাও নাকি আমার না।”
আদ্রিশ বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল।
“তোমাকে এসব যে বলেছে মিথ্যা বলেছে। কেউ ষড়যন্ত্র করছে। তোমার সাথে আমার ঘৃণার সম্পর্ক। আমরা একে অপরের শত্রু কিন্তু এটা সত্যি যে এই বাচ্চা তোমার আর আমার। বিশ্বাস করো আদ্রিশ। আমি মিথ্যা বলছি না। রকি আমার শুধুমাত্র ফ্রেন্ড। ওর সাথে আমার….
“শাট আপ! শাট আপ এন্ড গেট আউট।”
আদ্রিশ উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল। হঠাৎ আদ্রিশকে এভাবে রিয়েক্ট করতে দেখে রুশা কেঁপে উঠে।
“গেট আউট। নয়তো তোমাকে তোমার বাচ্চাসহ শেষ করে দেব। চলে যাও। আমি নিষ্পাপ এক বাচ্চাকে তোমার পাপের শাস্তি দিতে চাই না।”
“ঠিক আছে চলে যাব কিন্তু এই বাচ্চা তোমার আদ্রিশ। এটা অস্বীকার করো না।”
“না, এই বাচ্চা তোমার আর রকির। ওর সাথে আমার নাম জড়াবে না।”
“মিথ্যা অপবাদ নিয়ে আমি যাব না।”
রুশা শক্ত কন্ঠে বলল।
আদ্রিশ ওর দিকে লাল চোখে তাকাল।
“ভালোবেসে মাথায় তুলে ফেলেছিলাম তাই সহজেই আঘাত দিতে পেরেছো। সে সুযোগ আর পাবে না তুমি। এতদিন শুধু নিজের বাচ্চার জন্য তোমার ক্ষতি করতে পারিনি। এখন কিন্তু হাত কাপবে না রুশা।”
“শুধু বাচ্চার জন্য?”
রুশা আদ্রিশের দিকে চেয়ে আছে আকুলতা নিয়ে। আদ্রিশ রুশার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“এতকিছুর পরেও কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আমি তোমাকে ঘৃণা করি। ঘৃণা হচ্ছে তোমাকে দেখে। চোখের সামনে দেখতে পারছি না। মনে হচ্ছে চোখগুলো অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে।”
আদ্রিশ ওকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। রুশা আকুতি মিনতি করছে কিন্তু আদ্রিশ শুনছে না।
আদ্রিশ ওকে গেটের বাইরে রেখে বলল,
“আর কোনো দিন আমার চোখের সামনে আসবে না।”
আদ্রিশ গেট বন্ধ করে দিল। রুশা কাঁদতে কাঁদতে গেট ধাক্কাচ্ছে। বারবার বলছে আমাকে ভুল বুঝছো। কিন্তু ওর কথা শোনার জন্য কেউ নেই। আদ্রিশ নিজের ঘরে গিয়ে সব ভেঙেচুরে ফেলছে। পাগলের মতো আচরণ করছে। রুশার বড় পোর্টেটটা ভেঙে ফেলল হকি স্টিক দিয়ে। আদ্রিশ মেঝেতে বসে পড়ল। ধ্বংসস্তুপের মাঝে বসে কাঁদছে। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে আর বলছে তোমাকে মাফ করে দিতাম রুশা। কিন্তু তুমি আমার পুরোটাই কেড়ে নিয়েছো। পারব না ক্ষমা করতে তোমাকে।
রুশা যাওয়ার জায়গা হিসেবে আশ্রমকেই ঠিক মনে করল। রকি কিছু একটা করেছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু এটা আদ্রিশের কাছে কি করে প্রমাণ করবে। যে করেই হোক প্রমাণ ওকে করতেই হবে। রুশা আপাতত আশ্রমে যাবে।
আশ্রমে যাওয়ার পর রকি অনেকবার রুশাকে নেওয়ার জন্য এসেছে প্রতিবারই ওর ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে ফেরত যেতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়েনি। রুশাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে। বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চেয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি। রুশা টুকটাক আশ্রমের কাজ করে। কথার সাথে বসে আশ্রমের কাজ করছে তখন রকি এসে হাজির। রকিকে দেখে রুশা ক্ষেপে যায়।
রকি কোনো কিছু না বলে রুশার মুখে রুমাল চেপে ধরে বলল,
“সরি!”
রকি বেহুশ রুশাকে কথার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ও কি করবে বুঝতে পারছে না। কথা বাঁধা দিতে যায় রকি ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। কথা জানে ওদের সাথে পেরে উঠবে না তার চেয়ে সেজানকে কল করা বেটার।
রুশার জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করল। পুরো রুমে কেউ নেই। হঠাৎ রকি এসে হাসি মুখে বলল,
“বাচ্চা নিয়ে সমস্যা তো? ওকেই সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
রুশা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, “মানে?”
“ওকে মেরে ফেলব৷ তারপর তুমি আমি এক সাথে। ছোট্ট একটা অপারেশন হবে।”
“পাগল হয়েছো তুমি? মাথা ঠিক আছে? আমি তোমাকে কেটে কুটিকুটি করব আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি হলে। আর আমি বাঁচব? এই মুহুর্তে অপারেশন করলে আমিও মরে যাব।”
“তোমার কিছু হবে না নিশ্চিত থাকো।”
রকি চলে গেল রুম থেকে। রুশার মাথা কাজ করছে না। কি করবে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। রকি যে পাগল হয়ে গেছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু নিজের সন্তানকে বাঁচাতে হবে। ডাক্তার রকিকে বারবার বলছে ওরা এমন কাজ করতে পারবে না। একটা ছয়মাসের বাচ্চাকে মারতে পারবে না। এতে মায়ের ক্ষতিও হবে। রকি ওদের কথা শুনছে না উল্টো ডাক্তারকে থ্রেট করছে।
রুশা পকেট থেকে মোবাইল বের করে আদ্রিশের নাম্বারে অনেকবার কল করল কিন্তু কল রিসিভ করছে না উল্টো মোবাইল অফ করে দিল। রুশা তারপর সেজানের নাম্বারে কল করল। সেজান কল রিসিভ করতেই রুশা বলল,
“আদ্রিশ কোথায়?”
“ভাই একটা মিটিংয়ে।”
“সেজান ভাই, প্লিজ হেল্প মি। রকি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। ওকে বাঁচাও প্লিজ।”
“নিজের বাচ্চা নিজে কেন মারবে?”
“সেজান ভাই, আদ্রিশের মতো কথা বলবেন না প্লিজ। এসব রকির কারসাজি। এই বাচ্চা ওর হলে আমাকে জোর করে হাসপাতালে নিয়ে আসতো না। বাচ্চাকে ওর পথের বাঁধা মনে করত না। প্লিজ আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান৷”
রুশা হাসপাতালের ঠিকানা দিল।
“আদ্রিশ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না। সরি।”
সেজান কল কেটে দিল। রুশা অসহায় মুখ করে বসে আছে। জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকাল। অনেক উঁচু তলায় আছে ও। এত ভারী শরীর নিয়ে নামা রিক্স। ততক্ষণে দুজন নার্স এসে ওকে চেপে ধরল। রুশা ধস্তাধস্তি শুরু করে দিয়েছে ওদের সাথে। এক পর্যায়ে হেরে গেল। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল হাতে লাগা ইঞ্জেকশনের প্রভাবে।
চলবে……
(অনেক তাড়াতাড়ি করে লিখেছি, রিচেক দেইনি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)