#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]
অন্তিম পর্ব,,
অরিকের সাথে তিলোর আজকে ঝগড়া হওয়ার মূল কারণ ঘর পরিষ্কার। এখানকার গ্রাণী ফ্ল্যাটটা সপ্তাহের ছুটির দিন কথা ছিলো দুজনের একসাথে পরিষ্কার করার। কিন্তু এতো বেলা হয়ে গেলো অরিক ঘুম থেকেই উঠছে না। আজকে গরমটাও একটু বেশি। তিলো নিজের জন্য বরাদ্দ কাজগুলো করে সোফায় শরীরটা এলিয়ে দিলো। অরিক সবে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে করতে চারপাশ দেখে তিলোকে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কাজের দু’একটা বলতেই তিলো তেড়ে আসলো ওর দিকে। তারউপর পাশের ফ্ল্যাটের ভারিক্কি চেহারার বুড়োটার মিষ্টি নাদুসনুদুস বউটা এসে আজকে ওদের নিজেদের বিবাহবার্ষিকীর দাওয়াত দিয়ে গিয়েছে। এই চারবছরে ওদের মাঝে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর বিবাহবার্ষিকীতে ওনারা দাওয়াত দেন। তিলোর অবশ্য মহিলাটাকে ভালো লাগলেও ওনার স্বামীকে একদম ভালো লাগে না। একটা খিটখিটে মেজাজের বুড়ো। মাঝে মাঝে তিলোর মনে হয়, অরিক বুড়ো বয়সে এমন হয়ে গেলে ও কিভাবে অরিকের সাথে থাকবে?তিলো মাঝে মাঝে গালিও দেয় ওই বুড়োটাকে। কোনোদিনও একটু হাসিমুখে কথা বলেনি সে। কিন্তু তার বউটা! সে তো তিলোর সাথে দেখা হলেই, ভাল্লুকের মতো থাবাযুক্ত হাত বাড়িয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তিলোর এই বিষয়টা খুবই ভালো লাগে।
অরিক তিলোর দাবড় খেয়ে নিজের ভাগের কাজ দ্রুত শেষ করে তিলোর পাশে বসলো। তিলো সোফার ব্যাকরেস্টে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে বললো,
-আমি ঘৃণা করি, এই উষ্ণ ময়লা এলোমেলো খড়খড়ে দিনগুলো। অরিক, আমি তোমাকে আবারও বলছি আমার পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরে যাবো। আমার আর ভালো লাগছে না এখানে।
অরিক তিলোর এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তার পড়াশোনা আপাতত শেষ। সে এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করছে। রিসার্চ করার সুযোগও তার রয়েছে। তার আয় রোজগারও অনেক ভালো এখানে। অরিক ফিরে যেতে চায়না। আবার তিলো এখানে থাকতে চায়না। আবার ফাহমিদা বেগমও তিলোর পেছনে লেগেছেন অরিককে ফিরিয়ে আনার জন্য বোঝানোর দ্বায়িত্ব দিয়ে। তিলোর সাথে প্রায়ই এটা নিয়ে মান অভিমান লেগে থাকে।
এই মূহুর্তে অরিক বেশ ক্লান্ত। ওর সাথে ঝগড়া করার জন্য যথেষ্ট ভালো মেজাজ ওর নেই। অরিক চুপ করে তিলোর কথাগুলো কেবল শুনলো।
তুলি নিজের গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। পাশাপাশি ইশানকেও একটা স্কুলে ভর্তি করেছে। রোজ স্কুলে দিয়ে আসার দ্বায়িত্ব আনিস সাহেবের। আনিস সাহেবের চাকরিরও আর বেশিদিন বাকি নেই। সারাজীবন খাটাখাটুনি শেষে অফুরন্ত অনাগত ছুটি নিতে ওনার আসলে মন চাইছে না। ওনি কাজের মানুষ। কিভাবে থাকবেন বয়সের ভারে যখন চাকরিটার মেয়াদ পুরে যাবে। সেই চিন্তাতেই তিনি প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন তুলি ওনাকে ইশানের দ্বায়িত্ব দেওয়ায় তিনি খুশি মনেই সে দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। সারারাস্তা ইশানের এটা ওটা জিজ্ঞাসা করা নিয়ে ওনি একদমই বিরক্ত হননা। ছেলেটা খুব বেশি বকবক করে। তার হাজারটা প্রশ্নের উত্তর না দিলে সে বলে ওঠে, ওরে আল্লাহর রাসূল, এরা তো আমার সাথে কথাই বলে না দেখি। গাট্টা গাট্টা ফর্সা হাতদুটো নাড়িয়ে নাড়িয়ে যখন কথা বলে তখন দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
দুদিন হলো আনিস সাহেব শহরের বাইরে গিয়েছেন। তুলিই এখন ইশানকে স্কুলে দেওয়া নেওয়া করছে। তুষার পড়াশোনা করে রাজশাহীতে। ওখানেই হোস্টেলে থাকে।
তুলির মনে হচ্ছে কেউ ওকে লক্ষ্য করে। কিন্তু কোনো প্রমাণ সে আসলে পায়নি।
নাসীরা পারভীন এদিকে আনিস সাহেবকে তুলির দ্বিতীয় বিয়ের জন্য বলে রেখেছেন। কিন্তু আনিস সাহেবের সেদিকে তেমন একটা গরজ নেই। মেয়ে যেমন আছে, থাক না। ওর ইচ্ছা হলে নিজে এসেই বলবে।
রোৎশীর পরিবার সেদিন সানজিদকে মেনে নিয়েছে। আসলে সানজিদ রোৎশীর জন্য একটু বেশিই ভালো সম্বন্ধ। বিশেষ করে রোৎশীর কোনো সম্বন্ধই টিকছে না যখন ওর স্থুলতার দরুন। সেটা রাকিব বোঝেনি৷ সে এখনও সানজিদের উপর চটে আছে। কিন্তু তাতে তার পরিবারের কিছু যায় আসে না। ওরা বলেছিলো রোৎশীর পড়াশোনা শেষ হলে ওদের বিয়ে দেবে। রোৎশীর শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষাও শেষ হয়েছে। তাই বিয়ের আয়োজন চলছে। আজকে সানজিদ আর রোৎশী শপিং মলে এসেছিলো। আর এখানে সানজিদ একটা আশাতীত ঘটনা প্রত্যক্ষ করে ভীষণ খুশি হয়েছে। সে সোহাকে দেখেছে। সেদিনের পর থেকে আর সোহার সাথে তার যোগাযোগ ছিলোনা। আজকে সোহার কোলে একটা দুবছরের বাচ্চা মেয়েকে দেখে সানজিদ এগিয়ে গিয়েছিলো ওর সাথে কথা বলতে। সোহা বেশ হাসি মুখেই কথা বলেছে। তার স্বামী, সৃজনের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সানজিদকে বন্ধু বলে। সোহার পর রোৎশীকে নিজের জীবনে পাওয়ার আগে সানজিদের আর কারো প্রতি কোনো আকর্ষণের সৃষ্টি হয়নি। হয়তো রোৎশীর সাথে দেখা না হলে সোহার প্রতি আকর্ষণটুকুকেই ওর প্রেম মনে হতো বরাবরের জন্য।
শপিং মল থেকে বেরিয়ে সানজিদের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ওকে জাপ্টে ধরেছে রোৎশী। সানজিদ মৃদু হেসে মোটরসাইকেল স্টার্ট দিলো। রোৎশীকে নিয়ে কোলাহলে পরিপূর্ণ শহরটা ছেড়ে একটু দূরে যাওয়ার জন্য সানজিদ মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে গতিসীমা অতিক্রম করলো। রোৎশী আরো শক্ত করে ওকে আঁকড়ে ধরলো। ওর এই গতিটা বেশ ভালো লাগছে। রোমাঞ্চকর একটা অনুভূতি হচ্ছে নিজের ভেতর। রোৎশী গুনগুনিয়ে নিজের মোটা গলায় গান ধরলো,
Baby, take my hand
I want you to be my husband
Cuz you’re my iron man
And I love you 3000
সানজিদ ভ্রু কুঁচকে বললো এই পর্যায়ে,
-Only 3 thousands?
রোৎশী গান থামিয়ে দিয়ে বললো,
-উঁহু। 3 trillions.
-Only?
-Ok then. A galaxy.
-Only?
-আর কি?
-But I love you whole multiverse.
রোৎশী সানজিদের পিঠে একটা চাপড় বসিয়ে বললো,
-ফাজলামি করার আর জায়গা পাওনা, তাই না? ফাজিল লোক!
সানজিদ মোটরসাইকেলটা একটু ঘুরিয়ে বেসামাল হওয়ার ভঙ্গিমা করতেই রোৎশী মৃদু চিৎকার করে চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে সানজিদের শার্টটা খামচে ধরলো। সানজিদ জোরে হেসে দিয়ে বললো,
-আরেকবার মারবে তো এখনই অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। খেয়াল তো রাখো, কোথায় আছি।
রোৎশী ওকে মুখে আর কিছু বললো না ঠিকই। কিন্তু বিড়বিড় করে ওকে বলে চলেছে। সানজিদের কথায় ওর বিড়বিড় করা থেমে যায়।
-যেবছর অভেঞ্জার্স এর ওই মুভিটায় আয়রন ম্যান বলে ‘আই লাভ ইউ থ্রি থাউসেন্ডস’ সেটা বলার কারণ ছিলো, মার্ভেলস এর কোনোকিছুর তিন হাজার পূরণ হয়েছিল। আমার মনে নেই সঠিক, আসলে কিসের তিন হাজার পূরণ হয়েছিল।
রোৎশী ওর কথার প্রত্যুত্তর করলো না। ও সানজিদের পিঠে নিজের মাথা ঠেকিয়ে চুপ করে চোখ বুজে ফেললো।
আজ বিকালে তুলির অফিসের ক্যাফেতে কেউ একজন ওর সাথে দেখা করতে চায় বলে পাঠিয়েছে। তুলি ভ্রুযুগলকে আপনাআপনি কুঁচকে সেদিকে পা বাড়ালো। মানুষে ভর্তি ক্যাফেটায় একটা কোণার টেবিলে কাউকে পেছনে ফিরে বসে থাকতে দেখে তুলি ধীর পদক্ষেপে সেদিকে এগিয়ে গেলো। লোকটার সামনে গিয়ে তার মুখ দেখে তুলি চমকে উঠলো। প্রায় পাঁচবছর পর সেই মানুষটাকে আবারও দেখছে ও। তুলি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে আসতে নেবে, ইমন কাতর কন্ঠে ওকে অনুরোধ করলো একটুখানি ওর সাথে কথা বলার জন্য। তুলি আশেপাশে একবার তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বসলো ওর সামনে। কেন যেন ওরও ইমনের কথা শুনতে ইচ্ছা করছে। ইমনের চেহারা একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সারা মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। তুলি আন্দাজ করতে পারছে, ইমন ভালো নেই।
কিছুক্ষণ ওদের ভেতর নিরবতায় কেটে যাওয়ার পর তুলি বিরক্ত হয়ে উঠলো। ইমন চোখ নিচের দিকে আবদ্ধ রেখে বললো,
-কেমন আছো?
তুলির রাগ এখন পাহাড়সম। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-এই ফালতু কথা শুনতে এখানে এসেছেন? সরি, আমার হাতে সময় নেই আপনার জন্য।
ইমন অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপনি? এতোটা পর হয়ে গিয়েছি?
-একদম ন্যাকামি করবেন না আমার সাথে। কেন এসেছেন এখানে? জানতে চান, আমি কেমন আছি? খুব ভালো আছি। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক বেশি ভালো আছি। আপনিও নিশ্চয়ই সুখে আছেন। এখন আসুন।
বলে তুলি উঠতে নিতেই ইমন বললো,
-আমার কাছে ফিরবে?
তুলি থমকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কিছু বলতে গিয়েও গলার স্বর নামিয়ে বললো,
-লজ্জা করেনা এখন এসব কথা বলতে? কেন? আপনার বউ আবার ভেগেছে নাকি?
ইমন নাক শিটকে বললো,
-কি অবস্থা তোমার ভাষার!
-আপনার জন্য এর থেকে ভালো ভাষা মুখ থেকে বের হয়না। খবরদার, আর আমাদের জীবনে আসবেন না।
-তুমি ইশানকে তবে আমায় দিয়ে দাও।
তুলি এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা। লোকটা পেয়েছে কি হঠাৎ করে? তুলি কিছু বলার আগে বললো,
-ইতির কখনো সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তুলি তাচ্ছিল্য ভরে হেসে বললো,
-তো আমি কি করতে পারি? সেটা আপনাদের স্বামী স্ত্রী’র বিষয়। এতে আমাকে কেন জড়াচ্ছেন?
-তুমি চাইলে ফিরতে পারো আমার জীবনে। নাহলে ইশানকে দাও। আমার ছেলেকে ফেরত দাও।
তুলি নিজের ডানহাতটা এবার ইমনের গালে বসিয়ে দিলো সশব্দে। পুরো ক্যাফের প্রত্যেকের নজর এখন এদিকে। তুলি চিৎকার করে বললো,
-হারা**। তোর এখনও লজ্জা হয়নি? যে ছেলেকে স্বীকৃতিই দিতে চাসনি এখন নিজের সংসারের প্রয়োজনে আমার থেকে আমার ছেলে কেড়ে নিতে এসেছিস! নির্লজ্জ! আমার আর আমার ছেলের মাঝে একদম ঢোকার চেষ্টা করবি না। আমার ছেলের দিকে হাত বাড়ালেও তোর হাত কেটে ফেলতে আমি দ্বিতীয়বার ভাববো না। কথাটা মনে রাখিস। তোর বাচ্চা হয়না, তুই তোর সংসার নিয়ে জাহান্নামে যা। আমাকে বিরক্ত করতে এসেছিস কেন?
তুলি কথাগুলো বলে হাঁপাচ্ছে। আশেপাশে সকলেই তুলিকে চেনে। কিন্তু ইমনকে চেনে না। তুলিকে উত্তেজিত হতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই সকলের কৌতুহল বেড়ে গেলো। ওরা তুলিকেই সাপোর্ট করতে এগিয়ে এলো।
ইমন রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
-আমি আইনের সাহায্য নেবো আমার ছেলেকে ফিরে পেতে।
তুলি ওর কলার টেনে বললো,
-যা না যা। যেখানে খুশি যা। আমার ছেলে জানে ওর বাপ মরে গিয়েছে। ওকে আমার থেকে আলাদা করার ক্ষমতা তোর কোনো আইনের নেই। তোর যতো ক্ষমতা আছে কাজে খাটিয়ে দেখ। আমি বলছি, তুই হারবি। একদম হেরে যাবি। বের হ এখান থেকে। তোর মুখ আমি দেখবো না।
ইমন কিছু বলার আগে এখানকার বাকি স্টাফদের আক্রোশের স্বীকার হয়ে ওকে এখান থেকে বেরিয়ে যেতেই হলো। তুলি চেয়ারে বসে পড়লো। ওকে অনেকেই সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে এসেছে। ও ওর এখানকার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মৃত্তিকার উদর জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো। মৃত্তিকা ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সকলকে যার যার কাজে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো।
আরো দুতিনদিন পর তুলি অফিসে এসেই নিজের ডেস্কে একটা গোলাপি রঙের খামে মোড়ানো চিরকুট পেলো। সাথে এক তোড়া লাল গোলাপ। তুলি আন্দাজ করতে পারে কাজটা কার। কিন্তু তবুও নিশ্চিত হতে পারে না। তুলির চিকন ওষ্ঠজোড়া আপনাআপনি খানিকটা উপরে উঠে গেলো। কয়েকমাস হয়েছে এখানে চাকরিটা ও করছে। এখানকার এমডি’র আচরণটাই একটু ভিন্নরকম ওর প্রতি। তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানের ছেলে। চিরকুটটা খুলে দেখলো ও।
‘আপনার রোজকার ক্লান্তিভরা মায়াবী মুখটার প্রেমে পড়েছি নিজের অজান্তেই। বিগত কয়েকদিন ছোট্ট ছেলেটার হাত আঁকড়ে ধরে রাস্তা পার হওয়ারত একটা মেয়ের মুখ কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। আমি এতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারি না। আমি স্পষ্টবাদী। আবার খুব রোম্যান্টিকও নই যে কয়েক পাতা প্রেমের কবিতা লিখতে পারি। গত পরশু একটা লোককে দেখলাম ঝামেলা করতে আপনার সাথে। তাই আর হেয়ালি করছি না। আমার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
ইতি,
খুঁজে নিন তাকে।’
তুলি চিরকুটটা পড়ে বেশ লজ্জা পেলো। ক্লাস নাইনে থাকতে একটা চিরকুট পেয়েছিলো ও। কিন্তু তখন ভয়ে আর উত্তেজনায় খুলে পড়া হয়নি। তবে শেষ বাক্যে তুলি বেশ বিরক্ত। খুঁজে নিন মানে কি? ও কি সকলকে ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করবে নাকি যে, আপনি কি আমাকে চিরকুট পাঠিয়েছেন? তবে তুলি এবার ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছে, কে তাকে এটা পাঠালো?
আবিরকে তো আনিস সাহেব অনেক আগেই পুলিশে দিয়েছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে সে এই শহর ছেড়েছে লজ্জায়।
অনিকেত সেই শ্বেত সুন্দরীকে বিয়ে করে নিয়েছে। এখন অস্ট্রেলিয়াতেই স্থানীভাবে বসবাস করছে।
ফিরোজও সেই মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে। ছোট্ট একটা গ্রামের মেয়ে সে। তাতে ফিরোজের কি? সে তো মেয়েটার মায়ায় পড়েছিলো। তাড়াতাড়ি সে তাকে বিয়ে করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তৌকিরের বিয়েটা হয়েছে ওর বাবা মায়ের পছন্দ করা একটা মেয়ের সাথে। কোথাও মন না টিকলেও এই মেয়েকে মেনে নিয়ে সংসার করতে করতে এখন তাকে সাংসারিক ভালোবাসা খুব টানে। সুস্থ একটা মেয়ের জনক সে এখন।
রিতা গ্রাজুয়েশন শেষ করেও পড়াশোনা করে চলেছে। ইতিমধ্যে একটা ছেলে সন্তানের মা হয়েছে, যে কিনা ওর নাতি নাতনির থেকে ছোট।
মীরার জন্য অনেকেই আফসোস করে। পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো ও। কিন্তু তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করার সময়ই ছেলেটা ফিনল্যান্ড থেকে ফিরে এসেছিলো। বিয়ের সময় কথাদ দিয়েছিলো ওকে পড়াশোনা শেষ করতে দেবে। কিন্তু সংসারের চাপে মীরাকে তৃতীয় বর্ষেই পড়াশোনার ইতি টানতে হয়েছে। এখন সে যমজ ছেলেমেয়ের মা।
আহান আর রিয়া স্মৃতি হয়েই সবার মাঝে বেঁচে আছে। ওদের মাঝে মাঝে কেউ স্মরণ করে তো করে না। কিন্তু প্রায়ই অনেকের অনেক সময় ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনাগুলো ওদের মনে করিয়ে দেয়।
অনিমা পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে ওর শেষ ক্রাশের সাথে। এরপর ওর সাথে ওর বাবা মায়ের আর কোনো যোগাযোগ নেই।
অনিমা ঠকে গিয়েছে। খুব বাজেভাবে ঠকে গিয়েছে। ছেলেটার আসলে কোনো পরিচয়ই নেই। নেশাখোর, জুয়ারি একটা ছেলে সে।
অনিমা একদিন আদ্রিয়ান সাহেবকে ফোন করেছিলো। কিন্তু তিনি ওর মুখে ‘আব্বু’ ডাক শুনে ফোনটা কেটে দিয়েছেন বুক ভরা কষ্টের দরুন।
অনিমা আর যোগাযোগ করতে পারেনি ওনাদের সাথে।
অভ্রকে বিয়ের জন্য বারবার ফাহমিদা বেগম তাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু অভ্রের কোনো হেলদোল নেই। ফাহমিদা বেগম তো রাগ করে ওকে বলেছেন, সন্ন্যাসী হয়ে যেতে। অভ্র তাই হতে চেয়েছে। ফাহমিদা বেগম রাগ করে থাকলেও ঘটক লাগিয়ে মেয়ে খুঁজে চলেছেন ছেলের বিয়ের জন্য। ওনি প্রয়োজনে বস্তায় ভরে অভ্রকে বিয়ে দেবেন। ওনার একজন মামাকে সত্যিই বস্তায় ভরে বিয়ে দেওয়া লেগেছিলো। সেই মামা কোনোমতে বিয়ে করতে চাইতেন না৷ অবশেষে বিয়ে ঠিক হলে ওনাকে জানানো হয়নি। বিয়েরদিন সকালে জানতে পেরে পালিয়ে গেলেন। এরপর ফাহমিদা বেগমের নানা ছেলেকে লোকজন যোগাড় করে বস্তায় ভরে বিয়ে দিতে নিয়ে গেলেন। ফাহমিদা বেগমও তেমনি ষড়যন্ত্র এঁটে চলেছেন নিজের ছেলেকে নিয়ে।
তিলোর পরীক্ষা শেষে সে আর থাকবে না ইউএস এ। অরিক ভার্সিটি থেকে একটা কাজে ফ্লোরিডায় এসেছিলো। তিলোকেও সাথে এনেছে। আশেপাশে সবচেয়ে কাছে ক্লিয়ার ওয়াটার সি বিচে এসে বসেছে সে এবং তিলো। প্রায় দুদিন হলো এখানে এসেছে ওরা৷ তিলোর সাথে আবারও ঝগড়া হয়েছে। অরিক শেষবারের মতো ওকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিলো যাতে ওরা এখানে থেকে যেতে পারে। তিলো মানতে নারাজ। অরিক চুপ করে বসে আছে। তিলো তার পাশে মুখ ভার করে বসে আছে। অরিক দুবার ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছে। তিলো মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। অরিক অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে খুব বাজে একটা বুদ্ধি বের করলো। ও এখানে রোদ পোহাতে থাকা স্বল্প বসনা পরিহিত মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে তিলোর দিকে তাকাচ্ছে। ও চাচ্ছে, তিলো ওর কাজটা প্রত্যক্ষ করুক।
কিছুক্ষণ যাবৎ অরিকের উপস্থিতি টের না পেয়ে তিলো পাশে তাকিয়ে দেখে অরিক ড্যাবডেবে চোখে মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তিলোর এবার বেশ রাগ হলো। এই শ্বেত উলঙ্গ ভাল্লুকগুলোর কবল থেকে রক্ষা করতেই তো তিলো এতো কষ্ট করে ওর সাথে এই দেশে পড়ে আছে। এখানে সব কাজ তিলোর নিজে করতে হয়। এটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট ওর। এখন ওর সামনেই অরিক নিজের দুঃসাহস দেখাচ্ছে!! তিলো দাঁত কিড়মিড় করে অরিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
-She’s hot. Right?
অরিক ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
-Yeah.
তিলো নিজের মৃদু হেসে বললো,
-I think she is one of the reasons why hell is so hot!
অরিক হুট করেই নিজের দৃষ্টি সংযত করে তিলোর দিকে অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকালো। তিলো হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে হাঁটা ধরলো দপাদপ পা ফেলে। অরিক নিজের ভুল বুঝতে পেরে বুঝলো তিলো আরো রেগে গিয়েছে। ও নিজেও তিলোর পেছন পেছন যেতে আরম্ভ করলো।
অবশেষে অরিক হেরে গিয়ে দেশে ফিরতেই হলো। এতোবছর পর দেশে ফিরে তিলো তো বেজায় খুশি। ওদের ফিরে পেয়ে ওদের পরিবারও খুশি। অরিক এরপরও তিলোকে আরও পড়তে বলেছে। তিলো নিজেও সম্মতি প্রদান করেছে।
অরিক এখানেই একটা ভার্সিটিতে পড়ানোর দ্বায়িত্বে রয়েছে। পাশাপাশি এখানেই রিসার্চ করছে। এখন তারা ‘মায়ানীড়’ এ থাকে।
তিলো একরাতে অরিকের পাশে শুয়ে হঠাৎই বললো,
-অরিক, আমরা অনেকদিন ঝগড়া করি না। তাই না?
অরিক ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে। সত্যিই তো। আগে ওর সাথে নিয়মিত ঝগড়া বাঁধতো দেশে ফেরা নিয়ে। ফিরে আসার পর আর ঝগড়া করার প্রয়োজন পড়েনি।
তিলো ফট করে ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো,
-চলো আমরা ঝগড়া করি।
অরিক মৃদুস্বরে বললো,
-কি নিয়ে ঝগড়া করবে তুমি বাবাজানা?
তিলো কিছু সময় চিন্তা করলো। তারপর ওর দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,
-আমার অগোচরে তুমি কোনো ধলা ইঁদুরের সাথে কথা বলোনি তো ওই দেশে থাকতে?
অরিক বিরক্ত হয়ে বললো,
-তোমার মাথায় এগুলো ছাড়া কিছু ঘোরে না?
তিলো উঠে বসে কর্কশ গলায় বললো,
-এড়িয়ে যাচ্ছো কেন তুমি? তাহলে সত্যিই তোমার কেউ ছিলো। তাই না? আমি জানতাম। আমি জানতাম, তুমি এমনই। আমার মতো কালোকে তো আর ভালো লাগবে না তোমার ওখানে অতো সাদা সাদা মানুষ দেখে। দেখেছো, আমি চিনতে পারি মানুষকে। তুমি তো……
তিলো আরোও অনেক কিছু বলে চলেছে। অরিক উল্টো ঘুরে কানে বালিশ চাপা দিলো। তিলো ওর বলিশ কেড়ে নিয়ে আবারও বলতে শুরু করলো। বেঁধে গেলো ঝগড়া, তিলোর মনের প্রত্যাশা পূরণে।
সময় খুব দ্রুত চলে যায়। বর্তমানে তো আরোও দ্রুত যাচ্ছে। একবছরের হিসাবে কয়েক সেকেন্ড কমেও যাচ্ছে পুরো বছর থেকে। সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় অনেক কিছু। মানিয়ে নেওয়া, বদলে দেওয়ার একটা কারণ। আবার সম্পর্কগুলোও এগিয়ে চলে। ভেঙে যায়। স্থির হয়ে থাকে এক জায়গায়।
তিলো এবং অরিক ইউএস থেকে ফিরেছে প্রায় দুমাস হতে চললো। ফাহমিদা বেগমের সাথে তিলোর সম্পর্কে স্বাভাবিক শ্বাশুড়ি বউমার মতোই। মেয়ে হতে পারলোনা তিলো তাঁর। তবে এখন নিজের ষড়যন্ত্রের পার্টনার হিসাবে তিনি তিলোকে নিজের দলে ভিড়িয়েছেন। অভ্রর জন্য মেয়ে খোঁজার দ্বায়িত্ব এখন তিলোর উপরও বর্তিয়েছে।
তিলোর শরীরটা কিছুদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছিলো না বিধায় ও ফাহমিদা বেগমকে সাথে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছে। সামনেই ওর আর অরিকের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী। তিলোকে কিছু টেস্ট দেওয়ায় ও সেগুলো করেই এসেছে। এমনকি রিপোর্টটাও ওর হাতে এসে পৌঁছেছে। বাড়ির সকলেই জানে সুখবরটা। কেবল অরিক জানে না। তিলো ঠিক করেছে, ওদের বিবাহবার্ষিকীতে একবারে ওকে সারপ্রাইজ দেবে।
প্রতিরাতের মতো আজও সৃজন জেগে আছে সোহা আর ওদের মেয়ে দাহিয়ার ঘুমের অপেক্ষায়। ওরা ঘুমিয়ে পড়তেই সৃজন দাহিয়াকে ওদের মাঝখান থেকে উঠিয়ে বিছানার একপাশে শুইয়ে দিলো পাশে বালিশ দিয়ে। মেয়েটা জেদ ধরে থাকে দুজনের মাঝখানে ঘুমাবে বলে। সৃজন দাহিয়ার কপালে ছোট্ট একটা চুম্বন করে ফিসফিসিয়ে বললো,
-সরি মামনী। তোমার মা শুধু আমার।
দাহিয়াকে একপাশে রেখে মাঝখানে সৃজন শুয়ে সোহাকে নিজের বুকে চেপে ধরলো। বিয়ের পর থেকে এটাই ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। বুকের মাঝে সোহাকে নিয়ে ওর শরীরের ঘ্রাণ না পেলে সৃজনের ঘুম আসে না। সোহা জেগেই থাকে প্রতিরাতে। শুধু ঘুমের অভিনয় করে। সৃজনের বাচ্চামিতে ও ঠোঁট টিপে হাসে। সত্যিই ওর কপালে একটু বেশিই সুখ ছিলো। সৃজন ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে যতোটা ও সানজিদকে বাসতো তার থেকে হাজার গুণে বেশি। কেউ ঠকালেও অবশেষে সুখটা ঠিকই প্রকৃতির নিয়মে চলে আসে জীবনে।
সোহা নিজেও ঘুমের মাঝে নড়ে ওঠার বুঝ বুঝিয়ে সৃজনকে আঁকড়ে ধরে বরাবরই। মেয়ের সাথে সৃজনের এই হিংসাত্মক মনোভাবটা সোহা বেশ উপভোগ করে। সে বিশ্বাস করে, সে ভাগ্যবতী।
ইমন সত্যিই আইনের আশ্রয় নিয়েছিলো। কিন্তু সে হেরে গিয়েছে। তুলির মাতৃত্বের সামনে ইমনের দাবি টেকেনি।
পরিশিষ্ট :
বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অরিক তিলোকে নিয়ে একটা রেস্টরন্ট এ ব্যক্তিগত একটা ছোট কক্ষ বুক করেছে। তিলোকে সে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো। তিলো হেসে দিয়ে বললো,
-এটা তো মেয়েরা করে থাকে। জানো তো, পৃথিবীতে বিক্রি হওয়া মোমের ৯৬ শতাংশ মেয়েরা কিনে থাকে।
অরিক মুখ গোমড়া করে বললো,
-তুমি করলে না। তাই আমি করলাম।
তিলো মুচকি হেসে অরিকের খুব কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
-অরিক ইয়েসয়ি, আমাদেরও সময় এসেছে, আমাদের পৃথিবীতে নতুন কাউকে স্বাগতম জানানোর।।।
কথাটা অরিকের বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। বুঝতে পেরেই সে তিলোর মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। অস্ফুট স্বরে তিলোকে সে কিছু বললো, যেটা তিলো শুনতে পেলো ঠিকই। তিলোত্তমার ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো অরিকের কথায়। আজ তার মনে অবচেতন ভয়টা নেই পরিশেষে পথ হারিয়ে ফেলে নিজেকে হারিয়ে ফেলার।
–সমাপ্ত–
কিছু কথা,,
অরিকের এরপর কি প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা আপনারা ভেবে নিন। তিলোত্তমার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে সেটাও নিজেরা কল্পনা করে নিন। অভ্রর বিয়েটাও কল্পনা করুন। কিন্তু এই বস্তায় ভরে বিয়েটা কিন্তু সত্যিই ঘটতে গিয়েছিলো আমার মায়ের ফুফাতো ভাইয়ের সাথে ?। অবশেষে তাকে জোর করেই বিয়ে দেওয়ায় হয়।
তুলির সংসারটাও আপনারা ভেবে নিন। এতো বড়ো গল্পের (ছোট উপন্যাস) কিছুটা অস্পষ্ট থাকুক না হয়।
আরেকটা কথা, উপন্যাস লিখতে ভুলত্রুটি ছিলো অনেক। আশা করি, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সেগুলো। সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো, অরিকের পরিচয়ে। সে প্রফেসর ছিলোনা প্রথম দিকে। সে ছিলো লেকচারার। আর ভার্সিটিতে প্রিন্সিপালের জায়গায় ভিসি হবে। আমি আমার জ্ঞানের অপ্রতুলতার জন্য লজ্জিত। একজন পাঠক সেটা ধরিয়ে দিয়েছেন। ধন্যবাদ ওনাকে। আর বানান ভুল খুব সাধারণ বিষয় ছিলো। রাশভারী শব্দগুলো বোধগম্যতার বাইরে হওয়ার জন্যও দুঃখিত।
সর্বোপরি, আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন অনুগ্রহপূর্বক। তবে আক্রমণাত্মকভাবে নয়।
গল্পের কোন অংশ ভালো লেগেছে, কোন অংশ খারাপ লেগেছে জানাবেন। আজ একটু কমেন্ট করবেন আশা করি। প্রায় ৬২ হাজারের উপরে শব্দ লিখেছি। আপনাদের থেকে ১০ – ১২ টা শব্দের কমেন্ট তো আশা করতেই পারি?।
অনিয়মিত পর্ব দিয়ে বিরক্ত করেছি। এরপরও যারা এতোদিন সাথে ছিলেন, সকলকে ধন্যবাদ ??।
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং।
আল্লাহ হাফেজ।
বাই বাই। টা টা। খাতাম?