ভয়_আছে_পথ_হারাবার পর্ব 25

0
1163

#ভয়_আছে_পথ_হারাবার
ফারিশতা রাদওয়াহ্ [ছদ্মনাম]

২৫,,

ধীর গতিতে গাড়িটা চলছে ভেজা রাস্তার বুক চিড়ে। মৃদু বিদেশি গানের সুর ভেসে আসছে যা পরিবেশের আবহটায় খানিকটুকু গাম্ভীর্যতা বজিয়ে রেখেছে।
‘Wise men say
Only fools rush in
But I can’t help falling in love with you.’

ডার্ক ভার্সনটায় কেবল এটুকুই বারবার আবৃত্তি করে চলেছে অদ্ভুত একটা মিউজিকের সাথে। তিলো অরিকের পাশের সীটে বসে বাইরে তাকিয়ে বললো,
-রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো! আমি টেরই পাইনি!

অরিক ওর দিকে না তাকিয়েই বললো,
-মরার মতো ঘুমালে টের পাবে কিভাবে?

-তাও ঠিক।

আবার দুজনের মাঝে নিরবতা। গানটা শেষ হতেই তিলো আবারও বললো,
-আমি ভেবেছিলাম তুমি এখন রবীন্দ্র সংগীত ছাড়বে।

ভ্রু কুঁচকে অরিক বললো,
-কেন?

-আসলে সেদিনের টেক্সটার কারণে।

অরিক হেসে ফেললো, যাতে ছিলো ও বোকা সেটা বোঝানোর ইঙ্গিত।

-হাসছো কেন? পছন্দ করো না তাঁকে?

-আসলে তাঁর সৃষ্টিকর্মকে অবশ্যই পছন্দও করি এবং সাথে সাথে শ্রদ্ধাও করি। কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে বলতে গেলে করি না। একজন গুণী মানুষের কর্মকে ভালোবাসলেই যে তাঁকে বাসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাঁর সৃষ্টির প্রতি অগাধ সম্মান আমার আছে। তবে তাঁর প্রতি সম্মানের ঘাটতি তুমি আমার ভেতর পাবে। তিনি বাংলাদেশে তাঁর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে একটা পাগলী মহিলার সাথেও প্রেম করে গিয়েছেন।

তিলো সীটের ব্যাকরেস্টে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে কেবল হাসলো। সেভাবেই বললো,
-তুমি কখনো প্রেম করোনি?

-সে সুযোগ আগে আসেনি৷ এখন তো করছি।

তিলো প্রত্যুত্তর করলোনা। কিছু সময় চুপ থেকে আবারও বললো,
-আমাদের প্রণয় ঘটিত সম্পর্কটা গভীর হচ্ছে। তাই না? শেষ পরিণতিটা কেমন? একটা মানানসই ঠিকঠাক পরিণতি নাকি হতাশাপূর্ণ গন্তব্য?

-সন্দেহ আছে? বলো না তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না। কথাটা বললে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটা কথা হবে। কারণ বিশ্বাস না করলে কখনোই তুমি এই সময়ে আমার সাথে বের হতে না। তাহলে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখো, সবটা ঠিক হবে।

তিলো চোখ মেলে অরিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে আর কখনোই ভাইয়া ডাকা হচ্ছে না। আমি কি তোমার নাম ধরে ডাকবো? কোনো সম্বোধন ছাড়া কথা বলা কষ্টকর। তুমি আমার থেকে বড়।

তিলো অরিকের উত্তরের অপেক্ষায় আছে। অরিক কিছু সময় ভেবে বললো,
-নাম ধরেই ডাকো। তবে আম্মুর সামনে সামলে থেকো।

-তুমি সম্বোধন করছো! আসলেই অদ্ভুতভাবে নিজেদের বেখেয়ালেই আমাদের ভেতরকার কথাগুলো পাল্টে যাচ্ছে। আমরা কিন্তু গভীর আলোচনাও করি। কথার ধরণ পাল্টাচ্ছে, প্রকাশভঙ্গিমা পাল্টাচ্ছে, প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছে, হয়তো কন্ঠটাও।

অরিক তিলোর কথা শুনে ব্রেক কষলো। যদিও অন্ধকারে তিলোকে সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট দেখা গেলো না তবুও অরিক হয়তো দেখতে পেলো তিলোর নাকের রন্ধ্রগুলো ফুঁসে উঠেছে, ঘোষণা করে দিচ্ছে ওর অসন্তোষ বা হয়তো ওর নিজের ভেতরকার অস্থিরতা, অবশ্যম্ভাবী সেটা তার উত্তেজনা, তার চোখগুলোর আগেই।
অরিক জড়তার সাথেই বললো,
-তাতে কি বিষয়টা জটিল হয়ে যাচ্ছে।

তিলো হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিমা করে বললো,
-আরেহ্ না। এমনিই বলছি। আগে কেবল তুমি সাধারণ কুশলাদিই বিনিময় করতে। এটা গত দুমাস আগের ঘটনাও বলতে পারো। তবে এখন তুমি খেয়াল রাখো আমার। আর দেখো আবদারও করো। যেটা কিছুদিন আগে কল্পনাও করোনি।

অরিক আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলো। তিলোর আচরণ অদ্ভুত লাগছে ওর। আসলে মানুষের মাঝে এমন একটা অনুভূতি মাঝে মাঝেই আসে। সে তখন অবচেতন একটা উত্তেজনায় উত্তেজিত থাকে। কারো সাথে মিশতে মিশতে সব কথা বলার জন্যই তাকে ভরসাযোগ্য মনে হয়। সে নিজেকে নিজের অজান্তেই সামলাতে পারে না এবং কথাগুলো বলতেই থাকে৷ পরবর্তীতে আবার সেই কথাগুলো চিন্তা করে নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হয়।

তিলো নিজের অবস্থানে ফিরে চোখ বুজে বললো,
-কেন আমাকেই বেছে নিলে?

-অনুভূতিটা সম্পূর্ণ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যেকারো প্রতি যখন তখন তৈরি হতে পারে। নিয়ন্ত্রণের লাগামটা মালিকপক্ষ পরবর্তীতে পেলেও শুরুটা তার হাতে থাকে না। তোমার গোলগাল মুখ আর চোখের তির্যকতা হয়তো আমার আসক্তির পঙ্কতিমালা।

অরিকের কথাগুলো শুনে তিলো দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললো। তিলোত্তমার পিছে পিছে ঘোরাটা অরিকের জন্য পরিকল্পনা মাফিক যায়নি। তার জন্য তিলোর হওয়া উচিত ছিলো একটা সহজ বিজয়মাত্র। আরেকজন নারী যে তার বুদ্ধিমত্তায় আর ব্যক্তিত্বে বশীভূত হয়ে যাবে এবং নিজের হৃদয় ভঙ্গ হতে দেখবে। তিলো সেটা ছিলোনা বলেই হয়তো অরিক নিজের অজান্তে নিজের হৃদয় পেতে দিয়েছিলো, যাকে তিলো চাইলে ভাঙতে পারবে বা চাইলে গ্রহণ করে নিজের হৃদয়ের পাশে আশ্রয় দেবে। তিলো লতার মতো জড়িয়ে জড়িয়ে ওকে বেয়ে উঠতে শুরু করেছে, পরিণত হয়েছে একপ্রকার বাধ্যবাধকতায়, প্রায় একটা আসক্তি। আসক্তিরও নিজস্ব পঙক্তিমালা রয়েছে – ত্বক, ঘ্রাণ, চুল, মুখের গঠন, দাঁত, ভালোবাসার মানুষটার আঙুলের দৈর্ঘ্য, তার স্বভাব, তার চরিত্র, তার ব্যক্তিত্ব, তার হাঁটার ভঙ্গিমা, তার কথা বলার ভঙ্গিমা সহ অনেক কিছু। যেকোনো কিছু ভালো লেগেই আসক্তিতে পরিণত হতে পারে। হয়তো রোজ সকালে প্রিয়তমার হাতে তৈরি এককাপ চা। বা তার শব্দসহিত হাসি বা সকালে ঘুম ভাঙাতে তার চুলের পানি। হতে পারে রাতে তাকে বুকে আশ্রয় দেওয়া, হতে পারে তার চুলের ঘ্রাণ নেওয়া, হতে পারে কাজে যাওয়ার আগে তার কপালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে সে না বলা পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন না করা।

-তোমাকে আমি কিছু বাজে কথা বলি?
তিলো নিজের স্বকীয়তা বজিয়ে রেখে বললো। অরিক একটু থমকে বললো,
-পরে আফসোস না হলে বা ভেবে লজ্জা না পেলে বলো।

-আহ্ আমি আসলে বাজে হয়ে যাচ্ছি। সবকিছুর একটা শুরু থাকে। সেটা কখনো প্রত্যক্ষ করা যায় তো কখনো যায়না। আমি বিশ্বাস করলাম, তুমি আমার কিছু বৈশিষ্ট্যে নিজেকে হারিয়েছো। এখন পঁচা কথা বলি। আমি একজনকে চিনি, তার ছেলেবন্ধু তার একটা বৈশিষ্ট্য শুনে তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছিলো। জানো সেটা কি? সে আসলে দিনের একটা সময় পটিতে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে বসে বিড়ি টানতো। মেয়েটা বিড়ি টানতো হাই কমোডের উপর বসে।

বলেই তিলো হেসে দিলো। অরিক বুঝতে পারছে, তিলো আসলে ঘোরের মাঝে আছে। ওর ঘুম পাচ্ছে। তিলো হয়তো ওর মনের কথা বুঝতে পারলো। আবারও বললো,
-ভুল ভাবছো। আমি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে কথাটা বলছি। আসলে সেই প্রণয় সম্পর্কটি টেকেনি। Wolf wore the sheep as a perfect disguise. সে ধীরে ধীরে বখে গিয়েছিলো। কারো চোখের মায়ায় পড়েছিলো। কিন্তু মূল্যটা একদমই জানতো না। Teen mistake.

অরিক গাড়িটা থামিয়ে একটা ব্রিজের ওপর দাঁড়ালো। বের হয়ে এসে তিলোর দিকে আসার আগেই তিলো নিজেও দরজা খুলে বের হলো। অরিক ঠিক নদীটার উপর দাঁড় করিয়েছে। ব্রিজের ওয়াকওয়ের রেলিঙের উপর হাত রেখে নিচে থাকা ঘোলা পানির দিকে তাকালো। আলোগুলো পড়ছে পানিতে মৃদুভাবে। হলদেটে আলোয় তিলোর মুখের দিকে তাকিয়ে অরিক নতুন কিছু আবিষ্কার করলো। আজ আরেক রকম লাগছে ওকে দেখতে। তিলো ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে বললো,
-আজকের জন্য মূল্য কি?

অরিক বুঝতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে ওর দিকে তাকালো। তিলো পানির দিকে তাকিয়েই বললো,
-সবকিছুরই একটা মূল্য আছে। তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম আরকি।

অরিক দুষ্টুমি করে বললো,
-আপাতত ধার নাও। সবকিছু বাকির খাতায় লিখে রাখছি। বিয়ের পর সুদে আসলে উসুল করে নেবো।

-ছিঃ। সুদের ব্যবসা করবে?

-ঠিক আছে। তবে আসলটুকুই।

ওদের মাঝে অনেকটা সময়ের নিরবতার পর অরিক বললো,
-মেয়েটা অনিমা ছিলো। তাই না?

তিলো চমকে তাকালো অরিকের দিকে। অরিক মৃদু হেসে বললো,
-তোমার সাথে এতো খোলামেলা আলাপ ও ছাড়া আর কেউ করার নেই।

তিলোও হেসে দিলো। ওর ইচ্ছা করছে অরিকের প্রশস্ত কাঁধটায় মাথা রাখতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-ও হাইস্কুলে ওঠার পর ধীরে ধীরে বখে যাচ্ছিলো। আমি এসব পছন্দ করিনা বলে ও আমার থেকে দূরে থাকতো। আসলে ও সেটাই বলেছিলো আমাকে যখন কলেজে উঠে আমি আমার থেকে ওর দূরত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলি। অনিমাকে আদ্রিয়ান আঙ্কেল বেশি টাকা দিতো না৷ ও অন্তর নামের ছেলেটার সাথে প্রণয় সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলো। ছেলেটা ভালো ছিলোনা। অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন এটা ঘটেছিলো। অনিমা একরাতে অন্তরের সাথে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো। তাহরিমা আন্টির সমস্ত গহনা আর আদ্রিয়ান আঙ্কেলের টাকাগুলো নিয়ে ও বেরিয়ে পড়েছিলো। রাত আড়াইটার দিকে থানা থেকে ফোন করে আদ্রিয়ান আঙ্কেলকে বলা হয়েছিলো, ওনার মেয়ে থানায় আছে। ওনি বিশ্বাস করতে পারেননি সেটা। সারাবাড়ি খুঁজে ওকে না পেয়ে, বিশ্বাস করলেন। অনিকে আনতে থানায় গেলেন। অনি তখন পাথরের ন্যায় ছিলো। অন্তর ওর থেকে সমস্ত টাকা আর গহনা নিয়ে ওকে রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিলো। সময় থাকলে হয়তো আরও কিছু নিতো। অনি থানায় ছুটে এসে ওকে ওর বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে বলে। অনিমার বাবা, আদ্রিয়ান আঙ্কেল ওকে থানা থেকে নিয়ে আসার পর ধকলটা নিতে পারেননি। ওনি হার্ট অ্যাটাক করেন। সেবার বেঁচে ফিরলেও ওনার অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। ওনাকে প্রতিবছরই চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যেতে হয়। দেশে চিকিৎসা করিয়ে শান্তি পাচ্ছিলেন না বলে। আসলে এখনকার মানুষের ধারণাই এমন হয়ে গিয়েছে।

তিলো কথাগুলো বলে থামলো। অরিক মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলো যদিও ও একদমই আগ্রহী ছিলোনা। অরিক একজন মনোযোগী শ্রোতার দ্বায়িত্ব পালন করলো কেবল। তিলোর কথা শেষ হতেই ও প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,
-কিছু খাবে?

-এইরাতে তুমি কি পাবে? ফার্মেসির দোকান আর হসপিটাল ছাড়া কনস্ট্রাকশন সাইটে কিছু চায়ের দোকান খোলা পেতে পারো, এখন মালামাল আসে বিধায়। আর হাইওয়ের পাশে ভাত রুটির হোটেল দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য। তাছাড়া আর কি আছে?

-চা খাবে?

-জানো, আজকে অনি বলছিলো বাইরে বেরিয়ে চা খাওয়ার কথা। আমারও ইচ্ছা করছিলো। কি কাকতালীয় ঘটনা!

-আসলেই। কাকতালীয় ঘটনা ঘটেই থাকে। অনেকে এটাকে টেলিপ্যাথির সাথেও তুলনা করে থাকে। মনে করো, তোমার ইচ্ছা করছে কিছু খেতে। তোমার বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় সেটাই নিয়ে আসলেন কাকতালীয়ভাবে। তুমি বললে, এটা আমার ইচ্ছা করছিলো। আর তোমার বাবা বললো, আমার হঠাৎই ইচ্ছা হলো। এমনই।

তিলো ওর কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না। অনেকটা সময় সেখানে কাটিয়ে ওরা ফিরে আসার সময় একটা চায়ের দোকান খোলা পেয়ে চা খেলো। তিলোর ব্যস্ততা ছিলো বাড়ি ফেরার। কারণ ফজরের আযান দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিলো। ওর বাবা মা নিশ্চিতভাবেই এখন জেগে উঠবে। অরিক তিলোকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আবারও তুষারকে ফোন করলো। তুষার দরজা খুলে দিলো চুপিচুপি এসে।
সময়টা অরিকের ভালো কেটেছে। নতুনভাবে সে তিলোকে আবিষ্কার করেছে। কথা বলার মতো লোক পেলে তিলোও খুব কথা বলতে পারে।

তিলো নিজের রুমে ঢোকার আগে তুলির রুম পার হয়ে যাওয়ার সময় তুলির রুম থেকে ওর কন্ঠ শুনতে পেলো ক্ষীণভাবে। তুলি কারল সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে। অপর কোনো কন্ঠ শুনতে না পেয়ে বুঝতে পারলো, ও ফোনে কথা বলছে। তিলো না চাইতেও আড়ি পাতলো। দরজায় কান ঠেকিয়ে দিলো। তবে কোনো কথা স্পষ্ট শুনতে পেলো না। কিন্তু তুলির ব্যস্ততায় পরিপূর্ণ কথায় বুঝতে পারলো, তুলি রেগে আছে। তিলো আর দাঁড়ালো না। নিজের রুমে ফিরে আসলো। সরাসরি ওকে জিজ্ঞাসা করার সিদ্ধান্ত নিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here