হৃদয়ে আগন্তুক,পর্ব:৪

0
678

#হৃদয়ে_আগন্তুক
#ফরহাদ_হোসেন
#গল্প

পর্ব-৪

হাসান ঘড়ি দেখল। মাত্র দুটা বাজে। হাতে এখনো কিছুটা সময় আছে ভেবে সে রূপাকে নিয়ে গেল ফাউন্টেন প্লাজার ওয়াটার গার্ডেনে। ফাউন্টেনের পানির নৃত্য দেখে রূপা বাচ্চা মেয়েদের মত চিৎকার দিয়ে উঠল। সে পানির মধ্যে দিয়েই দৌড়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগল। রূপার উছ্বাস দেখে হাসানের খুব ভাল লাগল। আবার শঙ্কাও হলো ভিজে যাবে বলে। তাই সে সাবধান করে বলল, ‘রূপা, ভিজে যাবে কিন্তু!’

‘অসুবিধা নেই। পানিতে ভিজতে আমার খুব ভাল লাগে।’

‘কিন্তু ভিজা কাপড়ে বাসায় ফিরবে কি করে? ঠান্ডা লেগে যাবে না?’

‘পানিতে ভিজলে আমার কখনোই ঠান্ডা লাগে না। আহ, যা ভাল লাগছে আজ!’

রূপা লক্ষ্য করল হাসান একটু আনমনা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে রূপার সারা শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে। সে হাসানের দিকে এগিয়ে এসে পরনে লং স্কার্ট চিপড়ে কিছু পানি বের করল। মাথার ভেজা চুল ঝাড়ল। তারপর হাতের তালু দিয়ে মুখ থেকে পানি সরিয়ে হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই হাসান ভাই, আপনি এত গম্ভীর হয়ে আছেন কেন?’

‘তুমি তো দেখি বেশ পাগল আছো! পানিতে ভিজতে তোমার এত ভাল লাগে?’

‘ভীষণ! ভীষণ ভাল লাগে। বৃষ্টিতে ভিজতে আরো বেশি ভাল লাগে। আচ্ছা, এখানে বৃষ্টি হয় না?’

‘হবে না কেন? অবশ্যই হয়। এপ্রিলে অনেক বৃষ্টি হয় এখানে।’

ভেজা কাপড় গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গিয়ে রূপার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে আছে। মেঘের মত চুল লেপ্টে রয়েছে পিঠে, সেগুলোর ডগা দিয়ে চুইয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু পানি। কী অপরূপ লাগছে দেখতে। হাসান মদির চোখে রূপার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনেক্ষণ। রূপার ভেজা শরীরটা ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। নিজেকে সংযত রাখার কোনো চেষ্টাই করল না হাসান। সে হাত বাড়িয়ে ঘাড় স্পর্শ করল রূপার। তারপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল, ‘তুমি তাকাও তো দেখি আমার দিকে! তোমাকে ভাল করে দেখি একবার!’

‘ভাল করে দেখবেন? আমি পাগল না আপনি পাগল?’ বলেই খিলখিল করে হেসে উঠল রূপা।

‘তাহলে দু’জনেই।’

‘মোটেই না—আপনার সঙ্গে পাগল হবার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।’

‘ভাগ্যিস তুমি এসেছিলে! নাহলে কখনোই জানা হতো না…’

‘কি?’

‘তুমি কত সুন্দর!’

‘আর তিথি?’ রূপার চোখে-মুখে দুষ্টুমির হাসি।

‘তিথিও সুন্দর।’

‘শুধু সুন্দর না, অনেক সুন্দর। আমাদের কলেজের কত ছেলে যে ওর জন্যে পাগল ছিল তা যদি আপনি জানতেন!’

হাসান কিছু বলার আগেই রূপা কাঁধ থেকে হাসানের হাত দুটি নামিয়ে দিয়ে বলল, ‘যাই, আরেকটু ভিজি।’ বলেই সে ছুটে চলে গেল ঝরনার দিকে।

তিথি আবার ফোন করল হাসানকে। এবারও হাসানের ফোন বন্ধ পেল। তিথি এবার বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। এক ধরনের অনিশ্চয়তা আর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ভয়েজ মেসেজ রাখল সে—‘হাসান, কি ব্যপার ফোনও ধরছ না, কল ব্যাকও করছ না। তুমিতো চিন্তায় ফেলে দিলে। বুঝতে পারছি না কিছু, কি হচ্ছে।’ তিথি ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে সময় দেখে আবার বলল, ‘এখন ২টা ৪০ বাজে। তিতলিকে তুমি তুলতে পারবে কিনা তাও জানিনা। এনিওয়ে, আমি তিতলিকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। হোপ এভ্রিথিং ইজ অলরাইট উইথ ইউ!’

তিথি তিতলিকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে বাসায় ফিরে গাড়ি থেকে নামতেই হাসানের গাড়ি এসে থামল সামনের ড্রাইভওয়েতে। তিথি আর তিতলি দাঁড়িয়ে রইল। হাসান আর রূপা বের হয়ে এলো গাড়ি থেকে। তিথি লক্ষ্য করল রূপার শরীর ভেজা। কিন্তু রূপাকে কিছু না বলে সে গিয়ে দাঁড়াল হাসানের সামনে। তারপর কৈফিয়ত চাওয়ার ভঙ্গিতে জানতে চাইল, ‘তোমার ব্যাপারটা কি হাসান? এতোবার ফোন করলাম, একবারও ফোন ধরলে না!’

হাসান কিছুটা বিব্রত হয়ে বলল, ‘বিশ্বাস করো তিথি, রিংটোন একদমই শুনতে পাই নি। মনে হচ্ছে ফোনটা সত্যিই এবার বদলাতে হবে। মাঝে মাঝেই এটার ভলিউম অটোমেটিকলি সাইলেন্সে চলে যায়।’

‘সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে কেন?’

‘না মানে, তুমি যদি ভাবো, আমি ইচ্ছে করে ফোন ধরিনি।’

‘আশ্চর্য্য, আমি কেন সেটা ভাববো? আর তুমি ইচ্ছে করেই বা ফোন ধরবে না কেন? এসব কি ধরণের কথা বলছো হাসান? যাই হোক, একটা কল ব্যাক অন্তত করতে পারতে! তিতলিকে তুমি আনতে পারবে কি পারবে না, আমাকে জানাবে না?

‘আমিই তো যেতাম, দেখলাম ফোনে মেসেজ রেখেছো যে তুমি ওকে নিয়ে আসবে। তাই আর…’

এবার তিথি একটু আহত স্বরে বলল, ‘মেসেজ চেক করেছো, তবুও একটা কল দাও নি, সত্যি অবাক হচ্ছি।’

হাসান কোনো উত্তর দিল না। তিথি রূপার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই তো দেখি ভিজে কাঠ হয়ে গেছিস। ভিজলি কিভাবে?’

রূপা কিছু বলার আগেই তিথি হাসানের দিকে ফিরে বলল, ‘তোমরা যেখানে গিয়েছিলে, সেখানে কি বৃষ্টি হয়েছিল নাকি?’

‘না না বৃষ্টি হবে কেন? ফেরার পথে একটু ফাউন্টেন প্লাজার ওয়াটার গার্ডেনে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। রূপা যে এতো ছেলেমানুষ জানতাম না। ও তো না ভিজে আসবেই না। হা হা হা, সত্যিই ছেলেমানুষ।’

‘রূপা ছেলেমানুষ, আর তুমি?’

তিথি কটাক্ষ করল হাসানকে। হাসান আবারো বিব্রত হলো। সে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি অবশ্য নিষেধ করেছিলাম।’

‘তিতলি এসো, লেটস গো ইনসাইড।’ বলেই তিথি তিতলিকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল।

হাসান আর রূপা অপ্রস্তুতভাবে একে অপরের দিকে একবার তাকাল তারপর তারাও বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ল।

রাতে খাবার টেবিলে তিথি খুব স্বাভাবিক আচরন করল। রূপা যদিও বা একটু অস্বস্থি বোধ করছিল কিন্তু তিথি এত কথা বলল যে দিনের বিষয়টা সে ভুলেই গেল। দুই বান্ধবী অনেক রাত জেগে গল্প করল। ঘুমুতে যাবার আগে তিথিই বলল, ‘কালকে সাউথফোর্ক র‍্যাঞ্চ দেখতে যাবার প্লান ঠিক আছে তো?’

রূপা বলল, ‘নারে কোথাও যেতে চাচ্ছি না। উইকএন্ডে তুই যখন ফ্রি থাকবি তখন দেখব।’

‘আরে নাহ, উইকএন্ডের জন্যে বসে থাকতে হবে না। উইকএন্ডে আমি অন্য প্লান করেছি তোকে নিয়ে। তুই বরং সময়টা কাজে লাগা। আর হাসান তো বাসায়ই আছে। ডালাসে এসে সাউথফোর্ক র‍্যাঞ্চ দেখবি না, তাই হয় নাকি?’

(সাউথফোর্ক র‍্যাঞ্চ নিয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে। আশির দশকের বিখ্যাত টেলিভিশন সিরিজ ‘ডালাস’ এর শুটিং হয়েছিল এই র‍্যাঞ্চে। আমেরিকার যে কয়েকটি শহরের নাম বাঙালি সবার আগে জেনেছে, তার মধ্যে ডালাস একটি। এবং তার অন্যতম কারণ এই টিভি সিরিজ বিশ্বের আরো প্রায় ৯৬টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দেখানো হতো।

‘ডালাস’ সিরিজের ঘটনাবলি যে সাউথফোর্ককে ঘিরে আবর্তিত, সেই জায়গার অস্তিত্ব সত্যিই আছে মূল ডালাস শহরের সামান্য বাইরে। Southfork Ranch লেখা মূল ফটক, যেমনটি সিরিজে দেখা যেতো, ছাড়াও ভেতরে আছে ইউয়িং-দের বাড়ি ও চারপাশের বিশাল চত্বর। ভেতরে গেলে দেখা যায়, টিভিতে দেখা ঘরদুয়ার ও আসবাব, সুইমিং পুল, বাথরুম, আস্তাবল ইত্যাদি সবই আছে। গাইডের বিবরণ শুনে জানা যাবে, সিরিজের কিছু কিছু শুটিং এখানেও হয়েছিলো। তবে বেশিরভাগই হলিউডে হয়েছে, সেখানেও হুবহু এই রকমের সব বাড়িঘর তৈরি করা আছে। আরো জানা যাবে, সিরিজের কাজ শুরু করার আগে এটি ব্যবহারের অনুমতির জন্যে মূল মালিকের কাছে আসে হলিউডের প্রোডাকশন কোম্পানি। মালিক প্রথমে রাজি হননি। কিছুদিন পরে হলিউডিরা আবার আসে, এবার অবশ্য তারা চেকবইটি সঙ্গে আনতে ভুল করেননি।

সিরিজের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে সাউথফোর্কও তীর্থস্থানের মর্যাদা পেয়ে যায়। দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকলে দর্শনীর প্রথা চালু হয়। প্রথা আজও আছে। ডালাস সিরিজ বন্ধ হয়ে গেছে বহু বছর আগে, পুরনো এপিসোডগুলো আমেরিকার কোনো কোনো চ্যানেলে অবশ্য মাঝে মাঝে দেখানো হয়। কিন্তু দর্শক আজও ভুলেনি ববি-প্যাম বা জে আর-স্যু অ্যালেনকে। এখনো প্রতিদিন এ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দল বেঁধে বাসভর্তি মানুষ আসে এই তীর্থদর্শনে। এ দেশীয়দের পাশাপাশি বিদেশী ভ্রমণকারীও কম নেই।

বাংলাদেশ থেকে বা আমেরিকার অন্য কোনো শহর থেকে আসা আত্মীয়-পরিজন বা বন্ধুদের কেউ ডালাসে এলে তাদেরকে সাউথফোর্ক দেখাতে নিয়ে যাওয়াটা স্থানীয় বাঙ্গালিদের জন্যে খানিকটা বাধ্যতামূলক হয়ে আছে মুলত দুটি কারণে। প্রথমত, বিশেষ একটি বয়সী বাঙালির স্মৃতিতে ডালাস সিরিজটি এখনো জাগ্রত। দ্বিতীয় কারণ, জেএফকে’র আততায়ীর গুলিতে নিহত হবার স্থানটি ছাড়া পরিচিত আর কিছুই দেখানোর নেই!)

আমরা আবার ফিরে আসি রূপার রুমে। তিথি যখন বলল সাউথফোর্ক র‍্যাঞ্চ দেখতে যাবার কথা—রূপা কি বলবে ভেবে পেল না। তিথি বের হয়ে যাবার আগে রূপাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘খবরদার, তুই কিন্তু আমার উপর রাগ করতে পারবি না। আমি আসলে হাসানের উপর একটু বিরক্ত হয়েছিলাম। তাই একটু রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি।’

‘রাগ করিনি। তুই যা ঘুমুতে যা। তোর তো সেই সকালে উঠতে হয়।’

তিথি চলে গেল ওর রুমে। রূপা দরজা ভেজিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। সারাদিনের ঘুরাঘুরিতে রূপা কিছুটা ক্লান্ত ঠিকই কিন্তু ওর সহসা ঘুম এলো না। কিছুক্ষণ গরাগরি করে সে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল বাইরে—অন্ধকারে।

গতকাল হাসানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করায় আজ সারাদিন মোটেও ভাল সময় কাটছে না তিথির। দুপুর পর্যন্ত সে অস্থিরতায় কাটাল—বিশেষ করে রূপার সামনে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। রূপাই বা কি মনে করেছে? ও যতই বলুক রাগ করেনি। কিন্তু মনটা তো ঠিকই খারাপ হয়েছে। যদিও রাতে সে রূপাকে বলেছে সাউথফোর্ক র‍্যাঞ্চ ঘুরে আসতে হাসানকে নিয়ে।

সাউথফোর্ক থেকে ফেরার পথে হাসান রূপাকে নিয়ে গেল মুভি দেখাতে। বিশাল তেল সাম্রাজ্যের মালিক ইউয়িং পরিবারে প্রাসাদ দেখে রূপাকে খুব একটা আহ্লাদিত মনে হলো না। কোনো এক অজানা কারণে সে অন্যমনস্ক। সাউথফোর্ক ঘুরে দেখার সময়ও সে খুব একটা কথা বলেনি। আগ্রহ নিয়ে কোনো কোনো কিছু জানতে চায়নি। হাসান বিষয়টা লক্ষ্য করে ভাবল রূপাকে একটু চিয়ার-আপ করা দরকার। সে ভাবনা থেকেই মুভি দেখতে যাওয়া। রূপাকে বলাতে সেও কোনো আপত্তি করেনি।

মুভি দেখা শেষ করে হাসান আর রূপা মুভি থিয়েটার থেকে বের হয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। হাসান বলল, ‘তুমি একটু দাড়াও এখানে, আমি গাড়িটা নিয়ে আসি।’

রূপা বলল, ‘আমিও আসি আপনার সঙ্গে।’

‘না, না তোমাকে এতদূর যেতে হবে না।’ বলেই হাসান পার্কিং জোনের দিকে হেঁটে চলে গেল।

রূপা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন সিনেমার পোষ্টার দেখতে লাগল। রূপা লক্ষ্য করল একজন ভারতীয় চেহারার ত্রিশোর্ধ পুরুষ অনেক্ষণ যাবৎ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সে কি রূপাকে চেনে? রূপা ঠিক বুঝতে পারছে না। হঠাৎ লোকটি এগিয়ে এলো রূপার সামনে এবং কিছুটা দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এক্সিউজ মি। ইউ লুকস ভেরি ফ্যামিলিয়ার। আর ইউ ফ্রম বাংলাদেশ?’

রূপা উত্তর দিল, ‘ইয়েস।’

লোকটি এবার মোটামুটি নিশ্চিত ভঙ্গিতে পরিষ্কার বাংলায় বলল, ‘আমি মনে হয় আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই রূপা, কি ঠিক বলেছি?’

রূপা অবাক হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনি?’ রূপা ইতস্তত করে বলল।

‘আমি আকাশ। দেখতো চিনতে পারো কি না?’ আকাশ আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলো।

রূপা আকাশের দিকে ভাল করে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করল। তারপর বলল, ‘আকাশ, মানে আমাদের ডিপার্টমেন্টের সেই আকাশ?’

‘হ্যাঁ। আমি সেই…’

আকাশ হঠাৎ করেই বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ল। সে কিভাবে তার আনন্দ প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না। সে খুশিতে রূপার একটি হাত শক্ত করে ধরে বলল, ‘তুমি সত্যি রূপা? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না তুমি আমেরিকাতে।’

‘তা তোমার এই অবস্থা কেন?

‘কি অবস্থা?’

‘এত মোটা হয়েছ কেন? এক মাথা ঝাঁকরা চুল ছিল, সে গুলো গেল কোথায়?’ রূপা আকাশের দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল।

আকাশ হেসে দিয়ে বলল, ‘এতোদিন পর দেখা হলো, এই একটি প্রশ্ন তুমি খুঁজে পেলে?

‘একটা কোথায় দু’টো প্রশ্ন করেছি।’

‘হা হা হা, তার আগে বলো, তুমি কেমন আছো? কবে এসেছো, কোথায় থাকো, পার্থ কেমন আছে? কোথায় সে? এনি কিডস?’ গড়গড় করে এক গাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিল আকাশ।

আকাশের কথা বলার ভঙ্গিতে রূপাও হেসে ফেলল। সে হাসতে হাসতে বলল, ‘থামো থামো। একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর তো একবারে দিতে পারব না।’

আকাশ একটু ভেবে বলল, ‘তাহলে, চলো কোথাও গিয়ে বসি। তারপর সব শোনা যাবে। তুমি কারো সঙ্গে এসেছ এখানে নাকি একাই?’ আকাশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

‘উম, এক মিনিট—দাঁড়াও, বলছি সবকিছু।’ রূপা তাকালো বাইরে, তারপর আকাশের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘এসো আমার সাথে।’

ইতমধ্যে হাসান গাড়ি নিয়ে এসে দাড়িয়েছে সামনে। হাসানকে দেখেই রূপা বের হয়ে এলো। পেছনে এলো আকাশ।

হাসান দেখল একজন অপরিচিত মানুষ রূপার পাশে দাঁড়ানো। হাসান গাড়ি থেকে বের হয়ে আসতেই রূপা আকাশকে বলল, ‘তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেই। ইনি হচ্ছেন হাসান ভাই, আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর হাজব্যান্ড। আমি ওনাদের বাসাতেই উঠেছি।’ তারপর হাসানের দিকে ফিরে বলল, ‘হাসান ভাই, ও হচ্ছে আকাশ। ভার্সিটিতে আমরা এক ডিপার্টমেন্টে ছিলাম। হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। আশ্চর্য্য তাই না?’

হাসান বলল, ‘আশ্চর্য্য তো বটেই। পৃথিবীটাও যে কত ছোট আবারো প্রমান হলো।’ বলতে বলতেই হাসান আর আকাশ দুজনেই হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল।

আকাশ বলল, ‘নাইস টু মিট ইউ হাসান ভাই।’

‘নাইস টু মিট ইউ টু!’

রূপা বলল, ‘হাসান ভাই, আমি একটু আকাশের সঙ্গে যেতে চাই। আপনার কোন অসুবিধা নেই তো?’
‘না, না আমার অসুবিধা কি?’ হাসান কিছু না ভেবেই বলল।

‘হাসান ভাই, ভাববেন না—আমি রাতের আগেই রূপাকে আপনাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবো। আসার আগে ফোন করে এড্রেসটা নিয়ে নেব।’ আকাশ হাসানকে আশ্বস্ত করল তারপর রূপার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার কাছে নাম্বার আছে না?’

‘হ্যাঁ, আছে।’

‘তাহলে চলো?’

‘চলো।’ বলেই রূপা হাসানের দিকে ঘুরে বলল, ‘হাসান ভাই, আসি। দেখা হবে রাতে।’

হাসান বলল, ‘বাই। হ্যাভ ফান।’

আকাশ রূপার হাত ধরে প্রায় টেনে নিয়ে চলল তার গাড়ির দিকে।

হাসান অবাক হয়ে ওদের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। এক ধরনের শূন্যতায় ছেয়ে গেল তার মন। কেন, কে জানে। সে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে ষ্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে ছুটে চলল।

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here