#ইহান_ভাই
#সাদিয়া
৭
ইহান রেগে মেগে এগিয়ে গেল। গিয়ে আরো অবাক হলো। সেদিনের সেই ছেলেটা মিহুর সামনে। ওর সাহস কত। সে আগেই বুঝে ছিল ওমন নজর দেখে। ইহানের রাগ আরো বেড়ে গেল।
“প্লিজ মিহু উত্তর দাও।”
ইহান মিহু কে হাত দিয়ে পাশে ঠেলে ছেলের সামনে দাঁড়াল সে। ইহানের ওমন চোখ দেখে ছেলেটা নিচ থেকে উঠে দাঁড়াল।
“আপনি..”
“….
“দেখুন আমার মিহুর সাথে কথা আছে। আপনি প্লিজ সরে দাঁড়ান।”
ইহান তখনো চুপচাপ রাগান্বিত চেহারায় তাকিয়ে ছিল তার দিকে। ছেলেটা হঠাৎ মিহুর হাত ধরে বলতে লাগল মিহুর এদিকে এসো। মিহু নির্বাক। ভীষণ ভয়ে আছে সে। কি হয়।
ইহান দাঁত কিটে ছেলেটার হাত সরিয়ে দিয়ে কলার চেঁপে ধরল। বড় বড় চোখ করে তাকাল ছেলেটার দিকে।
“তোমার সাহস কি করে হয় মিহুর হাত ধরার?”
“কি করছেন? কে আপনি?”
“মিহুর সামনে আর ভুলেও তোমাকে যেন না দেখি।”
“ভালো হচ্ছে না ছাড়ুন বলছি। ছাড়ুন।”
ছেলেটা রীতিমত তার সাথে হাতাহাতি শুরু করে দিয়েছে। ততক্ষণে তার বন্ধু গুলিও মাঠে চলে এসেছে। আশেপাশের লোকজনে ভীড় জমেছে। মিহুর ভয়ে আত্মায় পানি নেই। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। কি করা উচিৎ মাথায় আসছে না। ইহানের বন্ধু গুলি ইহান কে ছাড়িয়ে ছেলেটাকে তাদের সাথে আড়ালে নিয়ে গেল।
ইহান ভীষণে রেগে গিয়ে মিহুর দিকে তাকাল। আত্মা যেন কেঁপে উঠছে তার ওমন চোখ দেখে। কাঠ গলায় ঢোক গিলল সে। ইহান তার হাত ধরে মাঠের মাঝে টানতে টানতে নিয়ে গেল। পিছন থেকে ছেলেটা মিহু মিহু বলে ডাকছে। মিহু বারবার তাকাচ্ছে ছেলেটার দিকে। ইহানের হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
“ছেলেটা কে ছেড়ে দিতে বলুন। উনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা?”
মিহুর একটু কথাই ইহান কে জ্বালিয়ে দিল। মাঠের সামনেই তেড়ে গিয়ে ইহান তার গাল চেঁপে ধরে চোখের দিকে তাকাল। এলোমেলো দৃষ্টি নিয়ে সে মিহু কে পর্যবেক্ষণ করছে। গাল থেকে হাত সরিয়ে তারপর আবার তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
সারারাস্তায় ইহান একটাও কথা বলে নি। পরিস্থিতি বুঝে মিহুও চুপ ছিল। বাসার সামনে এসে ইহান ব্রেক কষল। মিহুর নেমে যাওয়ার আগে সে রূঢ়গলায় জানিয়ে দিল,
“কাল থেকে আমি ছাড়া এক পাও বাসার বাহিরে যাবি না তুই। যেখানে যেতে হয় আমি নিয়ে যাবো। কথাটা মাথায় রাখিস।”
“আপনি..”
“এখন বাসায় যা।”
মিহু বলতে চেয়েও বলল না। রাগে ফুতফুত করে সে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে গেল। স্বপ্না বেগম তাকে এভাবে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন “কিরে এভাবে আসছিস কেন? কি হয়েছে?”
মিহু কোনো জবাব দিল না। সিঁড়ি বেয়ে নিজের মতো উঠতে লাগল। এতে স্বপ্না বেগম ক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন।
তিনি রান্নাঘরে রেহেলা বেগম কে গিয়ে বললেন,
“ভাবি আপনারাই ওই বদমাইশ মেয়ে কে লাই দিয়ে দিয়ে এমন করেছেন।”
তিনি জিজ্ঞেস করলেন “কি হয়েছে?”
উত্তরে স্বপ্না বেগম বললেন “আমি ভালো করে জিজ্ঞেস করলাম এভাবে আসছিস কেন কিছু হয়েছে কি না সে আমার কথার জবাব না দিয়েই ঢেঙঢেঙ করে চলে গেল।”
“কেন ওর আবার কি হলো?”
“আপনারা ওকে একটু বেশিই লেম দিয়ে ফেলেছেন। এর পরিণতি খুব একটা ভালো হবে না ভাবি। দেখে নিয়েন।”
স্বপ্না বেগম রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলেন। পিছন থেকে রেহেলা বেগমের ডাক তিনি শুনেনই নি। মিহুর প্রতি রাগ টা উনার তবে থেকেই যবে থেকে ছেলেকে ওর প্রতি দূর্বল দেখেছেন তিনি। এখন আরো রাগের কারণ হলো ইহান। দুজন যেভাবে লেগে থাকে দেখলে উনার শরীর জ্বলে যায়। মিহু এ বাড়ি থেকে বের হলে তিনি বাঁচেন।
মিহু সেই যে নিজেকে ঘর বন্ধি করেছে আর বের হয় নি। বিকেল পেড়িয়ে সন্ধে হয় সে বের হচ্ছে না। এদিকে ইহানেরও খবর নেই সকাল থেকে। রেহেলা বেগম খুবই চিন্তিত। ছেলের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে সে চলে এলো। ইহান কে দেখেই তিনি রেগে তার কাছে গেলেন।
“সারাদিন কোথায় ছিলি তুই?”
“….
“কি হলো উত্তর দে।”
“এমনি আম্মু কিছু না।”
“এটা আমার প্রশ্নের জবাব নয় ইহান। কি অনিয়ম শুরু করেছিস তুই?”
“আম্মু বেশ ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমাব।”
মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইহান উপরে চলে গেল। ছেলের এমন কান্ড দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি। চিন্তিত মস্তিষ্কে নিশ্বাস ছেড়ে দিলেন।
—-
রাতে ইহান খেতে আসে নি। মিহু কোনো রকম খেয়ে চলে গেল আবার নিজের রুমে। রেহেলা বেগম ছেলের পছন্দের চাইনিজ বানিয়ে নিয়ে গেলেন উপরে। তখনো ইহান ঘুমাচ্ছিল। সারাদিন চিন্তায় না খাওয়ায় অনেক ক্লান্ততে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তার।
“উঠে দেখ তোর জন্যে কি এনেছি।”
“কি আম্মু?”
“চাইনিজ।”
“রেখে দাও সকালে খেয়ে নিব।”
“এ কি কথা ইহান? উঠ এটা খেয়ে আবার ঘুমা।”
“আম্মু..”
“চুপচাপ উঠ।”
ছেলেকে উঠিয়ে নিজের হাতে খায়িয়ে দিলেন তিনি।
নিজের কাছে নিজের বেশ ছটফট লাগছে ইহানের। কি এক অস্থিরতা! যেন উথালপাতাল ভাঙ্গনের এক জোয়ার উঠেছে বুকের অতল গহ্বরে। আর সে ছন্নছাড়ার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে শুধু। মায়া নামক এক রোগে ধরেছে তাকে। কিছুতেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিচ্ছে না। ভীষণ ভালো লাগে যে মিহু কে। ওর মুখটা দেখলেই ভেতরটা কেমন ঠান্ডা লাগে। মিহু কি একটুও বুঝে না? মিহু কে কেউ কিছু বললে ওর কেন রাগ উঠবে। তিতাস কে তেমন সহ্য হয় না। ও কেন মিহুকে নূপুর দিতে যাবে? কেন মিহুর কাছে ঘেষতে চাইবে। কেউ কি বুঝতে পারে না তার অনুভূতি টা? খুব একা লাগছে।
পানি শেষ হয়ে যাওয়া তে মিহু নিচে নামল। হঠাৎ ধমকা হাওয়ার বেগে কেউ তাকে সিঁড়ির রেলিংএ ঠেসে ধরল। অন্ধকারে কে এমন করল বুঝতে পারছে না সে। চোখে মুখে নিশ্বাসের গরম আভা পাচ্ছে। তরাশ গতিতে ঢোক গিলল মিহু। গায়ের গন্ধ তো বলছে এটা ইহান ছাড়া কেউ নেই। নিশ্চিত হওয়ার জন্যে সে ধীর গলায় প্রশ্ন করল “কে?” কিন্তু উত্তর এলো না।
আমতাআমতা করে বলল “ইহান ভাই?”
“শুহহ। তোকে না মানা করেছি আমাকে ইহান ভাই বলবি না।” ফিসফিস কন্ঠে বলল ইহান। হুট করে মিহুর গাল হাতের আঁচলে নিয়ে এলো সে। মিহু ক্রমশ ভয় পাচ্ছে। ভেতরে ধক ধক আওয়াজ হচ্ছে। শরীর থরথর করে কাঁপছে তার।
“ভয় পাচ্ছিস আমাকে?”
“….
“এত কাঁপছিস কেন?”
অন্ধকার তবুও উপরের থেকে মিটমিট করে আসা আলো তে বেশ দেখতে পাচ্ছিল মিহু কে। মিহুর ছলছল চোখ গুলি তাকে অবলোকন করছে দেখে অনুভূতি হতে লাগল।
“আমাকে কেন পছন্দ করিস না তুই?”
“….
“মিহু বল না। আমাকে কেন তোর ভালো লাগে না?”
“কারণ আপনি সবসময় আমার সাথে ঝগড়া করেন।”
“যদি ঝগড়া না করি তবে পছন্দ করবি?”
“….
“বল ঝগড়া না করলে আমার সাথে তোর ওই মধুর মতো ঠোঁটে আসা মিষ্টি কথা বলবি?”
ইহান ঘোরে উপনীত হয়েছে। বৃদ্ধাঙ্গুল কখন মিহুর ওই নরম কাপন্ত ঠোঁট স্পর্শ করে ফেলেছে টেরই পায়নি সে। মিহু তখনি সরে এলো। কাঁপা কাঁপা হৃদয়ে থেমেথেমে নিশ্বাস নিচ্ছে সে। ইহানের দিকে একবার তাকিয়ে মামপট নিয়ে দৌড়ে ঘরে চলে গেল। দরজা লাগিয়ে ধপ করে নিচে বসে পড়ল। ভেতরটা ধড়ফড় করে কাঁপছে। গলাটা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। হৃদপিন্ড টা অনবরত আওয়াজ তুলে লাফাছে। সাথে মনে কতশত প্রজাপতি। এমন হওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না মিহু। চোখের সামনে শুধু ইহান ভাই কে ভাসছে।
চলবে♥