#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমি ওদের ভয়ংকর মৃত্যু দেবো, সুইটহার্ট। আমার ফুলের দিকে নজর দেওয়ার মাশুল ভয়ংকর হবে।”
আবরাজ ফিজার দেহটা জড়িয়ে রেখে ফিসফিস করে বলে। ফিজার জ্ঞান নেই। সে বেঘোরে ঘুমচ্ছে। ডক্টর তাকে রেস্ট রাখতে বলেছে। চিন্তামুক্ত রাখতে বলেছে। সেদিনের ঘটনা তার ব্রেনে প্রভাব ফেলবে। যতোটা সম্ভব চোখে চোখে রাখা যায় আর এই ট্রমা থেকে বের করে আনা যায় এমন কিছুই করতে হবে। আবরাজ গত চব্বিশ ঘন্টা বউয়ের কাছ থেকে একটু সময়ের জন্য দূরে যায় নি। কিন্তু আজ যেতেই হবে। সে মেয়ে টার কানের কাছে মুখ নিয়ে আবারও চোয়ালে, চুলের ভাজে, কানে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে থাকে। কতবার সে হিসাব করে না। এরপর ফিসফিস করে বললো,
-“তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও, জান।”
আবরাজ নিজের গায়ের উলের সোয়েটারের ওপর একটি হাঁটু সমান কোট পরে নেয়। আর মাথায় হুডি টা তুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে অবশ্যই সার্ভেন্ট কে ফিজার দেখাশোনার নির্দেশ দিয়ে যায়।
—–
-“কোথায় কোথায় টাচ করেছিস ওকে?”
আবরাজ শান্ত স্বরে জি করে। জুনায়েদ দুর্বল দৃষ্টি তুলে আতংকিত নয়নে চেয়ারে বসা আবরাজের দিকে তাকায়। গত চব্বিশ ঘন্টায় অনাহারে তারা। আবরাজ তাদের তাদেরই গোডাউনে বেঁধে রেখেছে। কী হাস্যকর। জুনায়েদ ঢুলতে ঢুলতে জবাব দেয়,
-“গাল।”
-“আর?”
-“হাত।”
-“ওর হাত কে বেঁধেছে?”
আবরাজ চোয়াল শক্ত করে জানতে চায়। তৃণার ও একই অবস্থা। বরং আরও অবনতি হয়েছে। তার বা হাতে গুলি লেগেছে। আর এটাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর কোনো চিকিৎসা নয়। তার জুনায়েদের চেয়ে ও খারাপ অবস্থা। সে ভয়ার্ত এখন। তার বাবা তাকে আজ দুই দিনে ও খুঁজে পায় নি। এটা স্বাভাবিক। নিজের আস্তানায় নিজের মানুষ কে কেউ খুঁজতে আসবে না। তার ফোন সিম আবরাজ কী করেছে কে জানে। তৃণা ফিসফিস করে জবাব দেয়,
-“আমি।”
-“মুখ?”
-“আমি।”
-“ওর গায়ে ইনজেকশন কে পুশ করেছে?”
-“আমি।”
তিনটা প্রশ্নেরই তৃণা উত্তর দেয়। আবরাজ আবারও জুনায়েদের দিকে তাকায়। সে এদের ভয়ংকর মৃত্যু দেবে। যা কল্পনার ও বাইরে। আবরাজ দাঁতে দাঁত চেপে রাখলো। তার পেছন থেকে জন জিজ্ঞেস করলো,
-“কারে কে তুলেছে?”
-“আমি।”
জুনায়েদ ফিসফিস করে বলে। বলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবরাজ ওর টুঁটি চেপে ধরে আর আরেক হাতে ওর চুল মুঠোয় করে ধরে। জুনায়েদ কাতরায় ব্যাথায়। আবরাজ ওর টুঁটিতে চাপ দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“গাড়ি থেকে এখানে কিভাবে এনেছিস?”
-“কাঁধে তুলে।”
জুনায়েদ মুখ বাঁকিয়ে কাঁধ ইশারা করে বলে। সে হয়তো কখনো কল্পনা করে নি তার সাথে এমন কিছু হতে পারে। আবরাজ ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আর বা কাঁধে নিজের ডান বা দিয়ে চেপে ধরে। হিংস্রতা চোখে-মুখে পুরুষ টার। ক্রোধিত সে। জুনায়েদের চোখ লাল। দম টা গলায় এসে আঁটকে আছে যেনো। তার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে। মৃত্যুর ভয় সে ছটফট করতে থাকে। আবরাজ হাড় ভাঙার মটমট শব্দে একটু শান্ত হলো। জুনায়েদ জোরে জোরে চিৎকার করছে। ব্যাথায় তার চোখ দিয়ে জল আর মুখ দিয়ে অজস্র গালিগালাজ বের হচ্ছে যার সবগুলো ইতালিয়ান। তৃণা জুনায়েদ কে এভাবে দেখে সহ্য করতে পারলো না। জ্ঞান হারিয়ে ফেললো মেয়ে টা। তার সিকনেস আছে আগে থেকে। জুনায়েদ ব্যাথায় ছটফট করতে করতে এক সময় অনুরোধ করলো,
-“আবরাজ প্লিজ ফর গিভ মি। আর কোনো দিন তোমার,,,,
-“সেই চান্স পাবি না। তুই আমার বউয়ের গায়ে হাত দিয়েছি। কী করে ছেড়ে দেবো?”
আবরাজের কঠিন স্বর। জুনায়েদের ভ্রু বেয়ে মাথা থেকে রক্ত টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে। গায়ের পোষাক রক্তে মাখামাখি। কাঁধ টা ভীষণ ভারি লাগলো। তুলতে গিয়ে ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। তার দুর্বল চোখ দেখলো একটা বিশাল লোহার দরজা খুলে গেলো। আর দু’টো বড়ো বড়ো খাঁচা। গর্জন। সিংহের গর্জন? মূহুর্তেই চমকায় সে। এমন ভয়ংকর মৃত্যু তার প্রাপ্য নয়।
-“আবরাজ নো। এটা তুমি করতে পারো না। আমরা আমরা এতো বড়ো পাপ কর,,,,
-“অন্যের বউয়ের দিকে নজর। এরচেয়ে বড়ো পাপ কী হতে পারে? আর তুই? তুই পাপের কথা বলছিস?”
আবরাজের উচ্চস্বরের হাসি পুরো গোডাউনে প্রতিধ্বনিত হতে হতে ফিরে আসে কানে। জুনায়েদের চোখ মুখে হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। জোর করে বলে উঠলো,
-“আমাকে মারলে তোমার জীবন নরকে পরিণত হবে।মিস্টার জি তোমায় ছাড়বে না।”
-“আমি ছাড়লেই না তিনি আমাকে ধরবে। উপর থেকে দেখিস বাকিটা। এখন তোর সময় শেষ।”
আবরাজ অলস ভঙ্গিতে বললো। তারপর জুনায়েদের পেছনে থাকা গার্ডদের ইশারা করতেই ওরা জুনায়েদের দেহ টা তুলে নিয়ে ওই খাঁচার ভেতর ছুঁড়ে ফেলে এবং সিংহ দুটো মূহুর্তের ওর দেহের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। আর কিছু দেখার প্রয়োজন নেই। দরজা বন্ধ হয়ে আসে। জন নিজের আঁটকে রাখা দম টা ফোঁস করে ছাড়ল। পরপুরুষ নিজের বউয়ের গায়ে হাত দেওয়ার অপরাধে এক স্বামী রূপী ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ সেই লোককে সিংহের লাঞ্চ বানিয়েছে। হায়। জন আস্তে করে ঢোক গিলে। কী ভয়ংকর। আবরাজ জনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ওকে এমন এমন ড্রাগস দাও। যেনো ওর বাপ মেয়ের অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠেন। আর মেয়ে নিয়ে ব্যাবসা যেনো নিজ থেকে বন্ধ করতে বাধ্য হয়।”
তৃণার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে উঠলো। জন মাথা নাড়ে। আবরাজ বেরিয়ে যায় গোডাউন থেকে। জন আবরাজের নির্দেশ মতো গার্ডদের নিয়ে কাজ শুরু করে।
—-
ফিজা ঘুম থেকে কিছু সময় আগেই ওঠেছে। তখন দুপুর। বিদেশি সার্ভেন্ট টা সেই থেকে ওর সাথে সাথে আছে। ওর বিরক্ত লাগছে। তবুও কিছু বলছে না। বোনের সাথে কথা বলেছে সে। আবরাজ যে গত চারদিনের কথা বাংলাদেশ বলে নি সেটা তাদের কথার ধারায় বোঝা গিয়েছে। ফিজা স্বস্তি পায়। নয়তো অসুস্থ মা তার আবারও স্ট্রোক করতেন। ফিজা ব্যালকনি থেকে ফিরে এসে ফোন বিছানায় রাখে। আর নিজেও পা গুটিয়ে বিছানায় বসে। সার্ভেন্ট রুমে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। ফিজা সেই কখন থেকে ভাবছে আবরাজ কোথায় গিয়েছে কিছু কী জানে তিনি? কিছু বলে গিয়েছে কী? ফিজা যদিও জানে আবরাজ তেমন কিছুই করবেন না৷ তবুও আচমকাই জিজ্ঞেস করলো,
-“হুয়ের ইজ ইউর স্যার?”
-“স্যার ইজ আউটসাইডা, ম্যাম।
গড়গড় করে মহিলা উত্তর দেয়। ফিজা ফোলা ফোলা চোখের ওপর ভ্রু জোড়া কুঁচকে আবারও জিজ্ঞেস করলো,
-“হাউ লং হ্যাজ হি বিন আউটসাইড?”
-“সিন্স মর্নিং, ম্যাম।”
-“ওকে, ইউ ক্যান গো নাউ।”
ফিজা অবাক হয়। সারাদিন? সে ঘুমিয়েছে এতো? ফিজা বিরক্ত এবং তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো। সার্ভেন্ট তবুও গেলো না। ফিজা বিরক্ত হলো। কী অদ্ভুত বলার পরে-ও যাচ্ছে না। তাই সে বিরক্ত হয়ে একটি ইংলিশ নোবেল বুক হাতে নিলো আর সেটার দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো।
——-
আবরাজ যখন সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো তখন ফিজা লিভিং রুমের লেদার সোফায় বসে আছে। সামনের বড়ো এলইডি টিভি টায় জ্বলজ্বল করছে একটা চাইনিজ ড্রামা। ফিজার মনোযোগ সেদিকে থাকলে-ও ব্যাক্তিগত পুরুষের উপস্থিতি এবং মানুষ টার শরীর থেকে আসা সুগন্ধি তার নাসারন্ধ্র পৌঁছাল। ফিজা ত্বরিত ঘাড় বাঁকিয়ে চাইলো। আর আবরাজ কে নিজের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখে অটোমেটিক হাসি ফুটে উঠলো। সে বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। পায়ের অসহ্য ব্যাথা উপেক্ষা করে সে বসা থেকে ওঠে এগিয়ে যায়। আবরাজ বউয়ের মুখের দিকে তাকায়। চোখ গুলো ফোলা। মুখ ভারি। হাতের কব্জি কালশিটে দাগ। আবরাজের মুখের ভাবভঙ্গি মূহুর্তে পরিবর্তন হয়। আর সে আবারও ইচ্ছে পোষণ করে ওই জুনায়েদ কে আবারও মারতে। ভয়ংকর মৃত্যু। আরও। আরও। আবরাজ নিজে কে সামলে নিলে। আর ফিজা ঠিক ওর বরাবর দাঁড়িয়ে। আবরাজ নিজের হাতের কোট ফেলে দেয় আর ঝট করে বউ কে কোলে তুলে সিঁড়ির দিকে যায়। ফিজা আবরাজের গলা জড়িয়ে ধরে মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,
-“আপনি কোথায় ছিলেন? আমি একা ছিলাম অনেক্ক্ষণ।”
-“সার্ভেন্ট ছিলো, সুগন্ধি ফুল।”
আবরাজ আস্তে করে ওর মুখে ফু দিয়ে বলে। ফিজা চোখ বন্ধ করে। চোখের পাতা তিরতির করে কাপে। আর চোখ বন্ধরত অবস্থায় জবাব দেয়,
-“আপনি ছিলেন না।”
-“তুমি আমাকে চাই ছিলে?”
ফিজা মাথা নাড়ে। আবরাজ ওকে বিছানায় রাখে আর বলে,
-“ফ্রেশ হয়ে আসছি। জাস্ট ফাইভ মিনিটস জান। এরপর তোমার পছন্দের ড্রাক রোমাঞ্চ হবে। এটা মনে হয় তোমার খুব পছন্দের।”
আবরাজে বেডসাইডে ফিজার বিকেলে পড়তে নেওয়া বইয়ের দিকে ইশারা করে বলে উঠলো। ফিজা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আবরাজ ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করার আগেই ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে। ফিজা থতমত খেয়ে বসে থাকে। মনে মনে বেশ কয়েকবার দোয়া আওড়ায় আবরাজ যেনো বইটার কথা ফিরে এসে ভুলে যায়।
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]