সুগন্ধি ফুল২ (পর্ব ১৭)

0
3

#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

ফিজা আবরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। তাকে সারারাত জ্বালাতন করে এখন কত নিশ্চিন্তেই না ঘুম হচ্ছে। তার কায়াজুড়েও এখনো ব্যাথা। বুক টা বড্ড ভারি লাগে। এই মানুষ টা তার কাছে কী উন্মাদ। বেপরোয়া। তাকে ভালোবাসে। ফিজার লজ্জা এখন দীর্ঘ শ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে। বেডসাইড টেবিলের কর্ণারে ঝুলে থাকা আবরাজের শার্ট নিয়ে গায়ে দেয়। বাটন লাগাতে গিয়ে দাঁত দ্বারা ঠোঁট চেপে ধরে। শরীরে এখনো মানুষ টার চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। এগুলো প্রায় কালচে। প্রতিবার একই যায়গায় আঘাত কতোটা ব্যাথার হয় এটা সে খুব ভালো করে টের পায়। এলোমেলো চুল বেঁধে ওঠে যেতে চায় সে। আবরাজ ওর হাত পেছন থেকে আচমকাই টেনে ধরে। আর বিছানায় ফেলে দেয় আবারও। ফিজা কিছু টা চমকায়। হকচকিয়ে বলে,

-“সকাল হয়েছে।”

-“আহ।”

আবরাজ ঠোঁট সামন্য ফাঁকা করে আওয়াজ করে। ফিজার শরীর শিরশির করে। কী ভয়ংকর আওয়াজ। ফিজার শরীর জুড়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। তার শরীর তার মনের বিরুদ্ধে। সে মুখ ঘুরিয়ে এই চিন্তা মাথা থেকে বের করতে চায়। আবরাজ আবারও ওর গলায় মুখ গুঁজে আর ফিসফিস করে বলে,

-“তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করে না, সুগন্ধি ফুল।”

-“ঢং বাদ দিয়ে আপনার কাজে যান।”

ফিজা আবরাজ কে ছাড়িয়ে নেয় আর ওয়াশরুম যাওয়ার জন্য টাওয়াল নেয়। আবরাজ বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে,

-“চলো তোমাকে হেল্প করছি আমি।”

-“আমি পারবো।”

-“আমি জানি।”

বলতে বলতে আবরাজ ওকে পেছন থেকে কোলে তুলে নেয়। আর ওয়াশ রুমে চলে যায়। ফিজা জানে। এখন তাকে আরও একদফা বেসামাল স্পর্শের সম্মুখীন হতে হবে।

-“আপনি কিছু বলেন নি আমাকে আর।”

ফিজা জিজ্ঞেস করে। আবরাজ শাওয়ার চালু করে আর না বোঝার ভান করে উলটে জিজ্ঞেস করে,

-“কী নিয়ে?”

-“আমরা এখান থেকে কবে যাবো? সংসার কবে হবে?”

-“সব হবে।”

আবরাজ আস্তে করে বলে। কণ্ঠে কোনো কিছুর ছোঁয়া নেই। তবে কিছু একটা আছে। শরীর পানি লাগতেই সব ক্ষত জ্বলতে থাকে। ফিজা ঠোঁট কামড়ে ধরে। আবরাজ ওর কোমরে হাত চেপে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখে। ওপর থেকে পানি পরে দুজনকেই ভিজিয়ে দিয়ে যায়। রেখা বেয়ে শরীরে প্রতিটি ভাজ ছুঁয়ে যায় সেই পানি। পুরুষালী উষ্ণ, আর্দ্র ছোঁয়া ফিজার ত্বকে লাগতেই তার শরীর কম্পিত হতে থাকে বারবার। ফিজা ফিসফিস করে বলে,

-“আপনি আমায় আর ধোঁকা দিয়েন না আবরাজ।”

আবরাজ ওর ভেজা চুলে ভেজা মুখে চুমু খায় মাথায়। তার অনেক কাজ। হয়তো সে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এতোটাই এগিয়ে গিয়েছে যে সে এখন পেছনে ফিরে যাওয়ার রাস্তা টা ভুলে গিয়েছে।

—-

মেহরিন শুক্রবার সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। মায়ের হাতে হাতে কাজ করে সাহায্য করে। আজও তাই করছে। কিন্তু বেলা এগারো টা বাজতেই তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। মায়ের কথা সে বুঝতে একটু ও অসুবিধা হয় না তাকে আজ দেখতে আসবে। কাজের মেয়ে টা ও কিছু বলছে না বেশি।

-“আম্মু আগে একবার বলতে আমায়।”

-“এখন বললাম।”

মেহরিনের মায়ের সাথে এইটুকু কথা। এরপর বিকেলে মানুষ এলো। মেহরিন রুমে গাপটি মেরে বসে রইলো। মোহিতা বেগম আর পাশের বাড়ির একজন আন্টি মিলে পাত্রপক্ষ আপ্যায়ন করে। মেহরিনের খুব পরিচিত মনে হয় বসার ঘরে থেকে আসা কণ্ঠস্বর। তাকে যখন নিয়ে আসা হয় মেহরিন লজ্জায় মাথা তুলেও সামনে দেখে না। অথচ সবাই তার পরিচিত। তার ভয় লাগে আব্রাহাম নামক যুবক কে। সে বিয়ে করবে না তাকে। না-কি কাউকেই নয়? তার মাঝেমধ্যে মনে হয় বিয়ে নিয়ে তার ফোবিয়া আছে। নয়তো কেনো বিয়ে কথা হলে তার ভয় লাগে। আব্রাহাম আসে নি। মেহরিন এতে আরও চিন্তায় পরে। তাহলে কী আব্রাহামের সম্মতিতে হচ্ছে না এসব? কতরকম চিন্তা সবাই বিদায় নিতেই সে চিন্তা করতে থাকে। কিভাবে কী হবে? বোনের সাথে এব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে।

——

আবরাজ রেডি হতে হতে সোফায় বসে থাকা ফিজার দিকে তাকায়। সব টা জানার পর মেয়ে টা একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। আগে আবরাজ কে রেডি হতে সাহায্য করলেও এখন করতে চায় না। চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে থাকে। আবরাজ ইশারায় ডাকে ওকে। ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেলে ওঠে আসে। আর আবরাজ ওর হাত নিজের শার্টের বাটনে রাখে। ফিজা কিছু না বলে এক এক করে সেগুলো লাগাতে থাকে। আবরাজ ওর লম্বা চুল কাঁধ থেকে সরিয়ে দেয়। আর গলা থেকে মাফলার সরিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় সেখানে। ফিজা কাপে। পরপরই আবরাজ কয়েকবার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আর চোয়ালের পাশে ও ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।

-“তোমার ফোন কোথায়?”

আচমকাই আবরাজ গায়ে ওয়েস্ট কোট টা পরতে পরতে জিজ্ঞেস করে। ফিজা সেটার বাটন লাগানোর আগেই টাই বাঁধে। আর জানায়,

-“আছে।”

-“কোথায়?”

-“বললাম তো আছে।”

ফিজা যেনো বিরক্ত হচ্ছে। আবরাজ ওর কথায় তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। শেষবারের মতো ওর কপালে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-“ফোন আর ঘড়ি সব সময় সাথে রাখবে।”

ফিজা মাথা নাড়ে। আবরাজ বেরিয়ে আসে। পেছন পেছন ফিজাও আসে। আবরাজ সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ও একবার পেছন তাকায়। আর মিষ্টি করে হাসে বউয়ের দিকে তাকিয়ে। চমৎকার একটা হাসি। গালে টোল গুলো স্পষ্ট হয়। এতো সুন্দর করে আবরাজ আগে কখনোই হাসে নি। ফিজা ঠোঁট চেপে নিজের অদ্ভুত অনুভূতি সামলাতে ব্যাস্ত হয়।

—–

ফিজা রুমে এদিক-ওদিক পায়চারি করছিলো। রুমে খাবার দেওয়া হলে-ও সে এই খাবার ছুঁয়ে দেখে নি। তার শুধু মন টা অস্থির অস্থির করছে। তার সেন্টার টেবিলের ওপর থাকা ফোন টা বাজতেই সে ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নেয়। আর কল রিসিভ করে কানে তুলে।

-“তোমার হাসব্যান্ড আমার সাথে আছে।”

-“কে বলছেন?”

ফিজা ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করলো। এটা আবার কোত্থেকে উদয় হলো কে জানে। সমস্যার অভাব ছিলো এখন আবার এটা।

-“ইট’স মি, তৃণা। আবরাজের গার্লফ্রেন্ড।”

ফিজার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে যেনো। আবরাজের গার্লফ্রেন্ড আছে? এটা কতটুকু সত্যি? সে কিভাবে বিশ্বাস করবে এটা? সে তো দীর্ঘ দিন থেকেছে এখানে। কখনো তো এমন কিছু চোখে পরে নি। ফিজার মন না চাইতেও তাকে কথা বলতে হলো সেই মেয়ে টার সাথে। যার সাথে তার একটি বার দেখা হয়েছে মাত্র। তাও এদেশে আসার পর একটি পার্টিতে। সে তখন ও মেয়ে টাকে সহ্য হয় নি কেন জানি। অদ্ভুত ভাবে মেয়ে টা বেহায়ার মতো আবরাজের শরীরে ঢলে পড়ে ছিলো। এতে আবরাজ বিরক্ত এবং রেগে গিয়েছিল। সে স্পষ্ট দেখেছে। ফিজার বিশ্বাস না হওয়ার আরও একটি বড়ো কারণ সে আবরাজ কে এখনো বিশ্বাস করে।

-“কিভাবে বিশ্বাস করবো?”

-“কেনো করতে চাইছো না? হোয়াই?”

-“আমি ওনার ওয়াইফ। এবং তিনি আমাকে ভালোবাসে।”

-“সব মিথ্যা।”

-“সব সত্যি।”

-“কোনো প্রুফ আছে? এনি ক্লো?”

তৃণা তাচ্ছিল্য হেঁসে জানতে চায়। ফিজা থতমত খেয়ে যায়। তার মুখ বন্ধ হয়। সত্যি তো। তাকে আবরাজ মিথ্যা বলেছে। আর এটা? এটাও কী মিথ্যা না সত্যি? আবরাজ তাকে ভালোবাসে স্বীকার করেছে। শুধু প্রশ্ন। ফিজার ভাবনার মাঝেই তৃণা ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,

-“নেই তো। ওকে ফাইন। আমার কাছে আছে। তুমি চাইলে আমি সব দেখাতে পারি।”

-“দরকার নেই।”

-“ওহ কামন সুন্দরী। আবরাজ খান তোমাকে মাত্র ইউজ করছে৷”

-“যা ইচ্ছে করুক।”

ফিজা কাঁপা কাঁপা অধরে শুধালো। তৃণা বোধহয় বিরক্ত আর নিজের কাজে কিছু টা সফল। সে কণ্ঠস্বর নরম করে বলে,

-“আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।”

-“কেনো? আমি চাই না।”

-“আমি তোমার বাড়ির সামনে আছি। একবার দেখা করো।”

অনুরোধ করে তৃণা। ফিজা শক্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,

-“সরি।”

-“আমি প্রেগন্যান্ট। প্লিজ।”

ফিজার চোখ অন্ধকার হয়ে এলো৷ নিজে কে সবচেয়ে বেশি বোকা মনে হচ্ছে। হৃদয় ভাঙার শব্দ হলো বোঝা যেতো সে কতোটা শকট এই একটা কথায়। তবুও সে বিশ্বাস করে না। আবার তার মন না চাইতেও খারাপ দিক গুলোই ভাবছে। এইজন্যই কী আবরাজ এতো দ্রুত বাচ্চা নিতে চাই ছিলো না? আকাশ ঘুরছে না-কি তার মাথা? সে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সোফায় বসে পরে ধপ করে।

#চলবে…..….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

#জান্নাত_সুলতানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here