সুগন্ধি ফুল২ (পর্ব ১৬)

0
3

#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“আপনি কোথায় ছিলেন?”

-“একটু বাইরে।”

আবরাজ রুমের ভেতর প্রবেশ করতে করতে উত্তর দেয় ফিজার প্রশ্নের। ফিজা বিছানার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আবরাজ ওর কাছাকাছি পৌঁছতেই ফিজা নাক চেপে ধরে কৌতূহল নিয়ে জানায়,

-“কিন্তু আপনার শরীর থেকে কিসের যেনো দুটো স্মেল আসছে।”

-“এক মিনিট, এক মিনিট। একটা সিগারেট। আরেকটা,,,

-“গান পাউডার।”

ফিজা কে থামিয়ে দিয়ে আবরাজ খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলো। ফিজা হতবাক হয়ে গেলো। তার পায়ের নিচের জমিন টা মূহুর্তেই ফাঁকা মনে হচ্ছে। সে যেনো শূন্যে ভাসছে। আবরাজ কথা বলে না আর। বরং নিজের শার্টের নিচ থেকে একটা রিভলবার বের করে নিয়ে ক্যাবিনেটে রাখে। ফিজা ধপ করে বসে পড়ে বিছানায়। এক হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ ঘুরায় এদিক-ওদিক। ফ্লোরে যেনো নিজের ভবিষ্যতে দেখতে চাইছে সে৷ একজন মানুষের শরীর থেকে বারুদের গন্ধ। একটি রিভলবার। এতো এতো বডিগার্ড। এতো অর্থসম্পদ। তার রাতবিরেত বাইরে থাকা। নিজের কাজ সম্পর্কে বউ কে কখনোই অবগত না করা। যদিও জানার প্রয়োজন ফিজা কখনোই করে নি। বিশ্বাস করে ছিলো মানুষ টাকে। আর সেই বিশ্বাস নিয়ে সে মানুষ টার সাথে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিতে ও দ্বিধা করে নি। তার একটা সংসার একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসার। সহজ জীবনযাপন কী তবে এটুকুই ছিলো? আর সব অভিনয়? যা সে এতোদিনে ধরতে পারে নি? ফিজা অস্থির হলো। ছুটে আসে আবরাজের কাছে। দুই হাতে আবরাজের বাহু আঁকড়ে ধরে। আর অস্থির কণ্ঠে বলে,

-“এসব মিথ্যা। আপনি খারাপ হতেই পারেন না। একবার বলুন না। প্ল,,,

-“সব সত্যি। তুমি যা ভাবছো আমি তাই।”

আবরাজ শান্ত স্বরে বাকিটুকু কথা শেষ করে। সে জানে তার বউ বিচক্ষণ। এটুকু এতোক্ষণে ঠিকই বুঝেছে।
ফিজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেনো। দুনিয়া টা স্থির নয়। চারদিকে ঘুরছে। তার মাথায় এখন কিচ্ছু আসে না। সে শুধু জানে এই মানুষ টাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। সে থেকে যাবে। আবরাজ খান কে শুধরে নেবে। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরে কিন্তু সেদিকে ওর খেয়াল নেই। আবরাজ হাত সামন্য উঁচু করে ওর গাল থেকে চোখের পানি মুছে দেয়। ফিজা ফিসফিস করে বলে,

-“আমি আপনাকে ভালোবাসি আবরাজ। আমারা একটা সংসার সাজাবো। আপনি একবার শুধু আমার হয়ে থাকুন। সবকিছু না বলুন।”

-“তুমি আমার জীবনের এক এমন অংশ যাকে ছাড়া আমি নিজে অসম্পূর্ণ, সুগন্ধি ফুল।”

-“আমি জানতাম আপনি আমায় ভালোবাসেন।”

ফিজা উচ্ছ্বাস নিয়ে আওড়ায়। আবরাজ ওর ভেজা চোখের পাতায় চুমু দেয় আর বলে,

-“হ্যাঁ বাসি। কিন্তু সরি জান, তোমার কথা আমি রাখতে পারছি না। তোমাকে যেমন আমি আমার লাইফে জোর করে এনেছি প্রয়োজনে জোর করে আঁটকে রাখবো।”

ফিজার শক্ত করে আঁকড়ে রাখা আবরাজের বাহু হঠাৎ করে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়। কান্নারত চোখে আবরাজের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। কিন্তু আবরাজ ওর হাত খপ করে ধরে আর নিজের বুকে চেপে ধরে। ফিজা চুপ করে থাকে। কিছু সময় পর ফিসফিস করে আবারও জিজ্ঞেস করে,

-“আপনি মানুষ খুন করেন?”

-“আমি মেয়েদের নিয়ে ও বিজনেস করি, সুগন্ধি ফুল।”

আবরাজ খুব স্বাভাবিক ভাবে জানায়। ফিজার বুকের ভেতর মোচড় দেয়। সে জানে আবরাজ তার প্রতি দূর্বল। না হলে নিশ্চয়ই তার ঠায় এখানে হতো না। সে সেই প্রসঙ্গে আর কথা বাড়াল না। রাত তিন টা তখন। সে বিছানায় গিয়ে একপাশে চুপ করে পিঠ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলো। আবরাজ দাঁড়িয়ে তখন। সে জানে না। এরপর কী হতে পারে। তবে এমন কিছু সে হতে দিবে না যাতে করে এই রমণী তার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। প্রয়োজন তার যা করতে হয় সে তাই করবে।
আবরাজ আলগোছে বিছানায় আসে। আর অন্ধকারে বউয়ের পেছনে শুয়ে কাঁধে ঠোঁট বুলিয়ে দেয়৷ ফিজা ফিসফিস করে বলে,

-“আমার একটা আবদার রাখুন।”

-“বলো।”

-“আমাদের একটু বাবু হলে সব ঠিক হবে।”

ফিজা বোকা বনে যায় কথা টা বলে। সে মরিয়া হয়েছে যেনো। সবার মতোই সংসারে স্বামীর সমস্যা সমাধান বাচ্চা মনে করছে। আহ। মানুষ কে পরিস্থিতি কতোটা বোকা বানিয়ে দেয়। আবরাজ ওর কাঁধের নাইট স্যুট সরিয়ে দেয়। উন্মুক্ত করে নিজের নরম অধর সেখানে চেপে ধরে বলে,

-“বেবি আমরা নেবো, জান। কিন্তু এখন নয়।”

ফিজা চোখ বন্ধ করে। সে জানতো আবরাজের উত্তর টা এমনই হবে। আগে ও এমন বলেছে। ফিজা চোখ বন্ধ করে, আবরাজ ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। আর ধীরে ধীরে বউয়ের অধর নিজের অধরের ভাঁজে চেপে ধরে। ফিজার কিছু করার থাকে না। সে হারিয়ে যায়। আবরাজের প্রতিটি স্পর্শে সে ভালোবাসা খুঁজে পায়। ঠিক আগের মতোই।

——-

সকাল কখন হয়েছে ফিজা জানে না। আবরাজ তাকে আজ-ও সব সময়ের মতো সীমাহীন ভালোবাসা দিয়েছে। প্রতিবারের মতো মধুময় মূহুর্ত শেষ যত্ন করে তাকে বুকে আগলে নিয়েছে। ফিজা শান্তি পেয়েছিলো। তবে অস্থিরতা নিয়ে ঘুমিয়ে কখন গিয়েছিল সেটাও মনে নেই। রাতের কথা সে তখনও ভুলে নি। বুকের ভেতর হাহাকার করছে। সে চোখ খুলে পাশ ঘুরে দেখে নিলো। আবরাজ নেই। ফিজা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। জীবন টা এতোটা জটিল হওয়ার কথা ছিলো না। সে এসব ভাবছে তখনই কানে আসে।

-“ওঠো জান। খেতে হবে।”

-“খাবো না।”

ফিজা দুই শব্দে জবাব দেয়। আবরাজ ওর গা থেকে কম্ফর্টার সরিয়ে নিতে চায়। ফিজা শক্ত করে ধরে রাখে। আবরাজ আবারও গম্ভীর স্বরে বলে,

-“না খেলে কিভাবে হবে? খেতে হবে। ওঠে সুগন্ধি ফুল।”

-“আপনি এই মুখে আমার নাম নিবেন না। প্লিজ।”

-“এটা তোমার নাম, কিন্তু দিয়েছি আমি। নাম এবং মানুষ দুইটাই আমার।”

ফিজার অন্য সময় হলে হয়তো এই কথাগুলো শুনে নিজে কে ভাগ্যবতী মনে করতো। কিন্তু এখন শুধু তার রাগ আর কান্না পাচ্ছে নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে। সে খুব সহজে কোনো কিছু করতে চাইছে না। আবরাজের সাথে প্রয়োজনে সে আবার কথা বলবে। ভালোবাসার জন্য মানুষ কত কিছু করে। সে তো একবার এটা চেষ্টা করতেই পারে।

——

-“শোনো গার্ড আছে। কিন্তু তুমি বাসা থেকে একদম বের হবে না। প্রয়োজন গার্ড কল করবে। ফোন অলটাইম নিজের সাথে রাখবে।”

আবরাজ ফিজার হাতে একটি ঘড়ি পরিয়ে দিতে দিতে উপরোক্ত কথা গুলো বললো। ফিজা ভ্রু কুঁচকে নেয়। আর জিজ্ঞেস করে,

-“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

-“এতোদিন এই প্রশ্নের প্রয়োজন পরে নি।”

-“এখন পরছে। কারণ আপনি আমার বিশ্বাস নিয়ে ঠিক এভাবেই খেলেছেন।”

-“এখনো ও করো না?”

ফিজা জবাব দেয় না। আবরাজ বউয়ের কপালে শব্দ করে চুমু খায়। আর মৃদু হেঁসে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
ফিজা লিভিং রুমে সোফায় বসে একটি ম্যাগাজিন হাতে নেয়। যেখানে একজন ব্যাক্তি কে নিয়ে কিছু আর্টিকেলস আছে। লন্ডনের একজন ব্যাক্তি। কেউ দেখে নি তাকে। সে খারাপ লোক। কিন্তু ভালো কাজ করে। ফিজা কাঁধ উঁচিয়ে সে মনে মনে ব্যাক্তি কে বাহবা দেয়। তিনি এতো টাকাপয়সার মালিক যে মেয়ে পাচারকারী লোকেরা যতো মেয়ে নিলামে তুলে সে সব মেয়েদের সর্বোচ্চ মূল্যে ক্রয় করেন। কিন্তু এরপরের তথ্য কেউ জানে না। তিনি মেয়েদের সাথে কী করে এবং মেয়েদের কোথায় রাখে। কিছুই না। তিনি লন্ডনের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি এবং ওয়ার্ডের তিনজন ধনী ব্যাক্তির মধ্যে তিনি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফিজা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। একজন এতো বড়ো মানুষ। আর তাকে এখনো কেউ চিনেই না। ব্যাপার টা সত্যিই অদ্ভুত। আর আশ্চর্যজনক ও।

—–

আব্রাহাম মেহরিনের কথা বাবামা কে কিভাবে বলা যায় সে-সব নিয়ে বসে বসে চিন্তা করছিলো। তার সামনে একটা উপন্যাসের বই খোলা থাকলেও সে সেটা পড়তে পারছে না। মনোযোগ নষ্ট করছে মেহরিন। সে বিরক্ত হয়ে ওয়াশ রুম গেলো। রাত ন’টায় শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। ফিরে এসে দেখলো মা ইলা বেগম তখন বসে আছে।

-“তোমার বিয়ে ঠিক করতে চাইছে তোমার আব্বু। মেয়ে পছন্দই আছে। তৃণা।”

আব্রাহাম বিরক্ত হয়। তার মাথা ভনভন করতে থাকে। আব্রাহাম বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলো,

-“প্লিজ আম্মু। এসব কী?”

-“দেখো তৃণা নিজে থেকে আমাকে জানিয়েছে তোমাকে সে পছন্দ করে।”

-“আমি করি না। এমন মেয়ে কখনো আমি বিয়ে ও করতে চাইবো না।”

-“এখন কী করবো?”

-“না বলবে। তুমি না পারলে আমি বলবো।”

-“তোমার বাবা কে বলো।”

-“ওকে।”

আব্রাহাম কাঁধ উঁচিয়ে বলে। তার বিরক্ত লাগছে তৃণা নামের উটকো ঝামেলার কথা চিন্তা করে। এতোদিন তার ভাই কে জ্বালিয়েছে। আর এখন তাকে।

——

ফিজা রুমে বসে একটা এডাল্ট নোবেল পড়ছিলো আর মনে মনে সে বিরক্ত হচ্ছিল। উপন্যাসের মেল খুব জঘন্য। ফিমেল ক্যারেক্টার টাকে একটু বেশি কষ্ট দেয়। সেও নায়িকাকে খুব ভালোবাসে। আর জোর করে নিজের কাছে আঁটকে রেখেছে। ফিজা একটু নিজের কথা ভাবে। সে যদি সবকিছু ঠিক করতে না পারে আর আবরাজ কে ছেড়ে দিতে চাই, তবে আবরাজও কী তাকে এভাবে আঁটকে রাখবে? আর কষ্ট দিবে? উঁহু কখনো ই তো আবরাজ তার সাথে খারাপ করে না। আবরাজ রুমে প্রবেশ করতেই ফিজা বই তড়িঘড়ি করে বেডসাইড টেবিলের ওপর রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। আবরাজ মৃদু হাসে। বউ তার সাথে রেগে আছে, অভিমান করছে। সে ফিজার দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেলো একটু পর বিছানা ছেড়ে ওঠে দ্রুত বই টা হাতে নিয়ে শেলফে রাখতে গেলো। সে কোনো ভাবেই চাইছে না আবরাজের হাতে এটা পরে। ফিজা বই শেলফে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে ধাক্কা খেলো কিছুর সাথে। আর চোখ তুলে তাকিয়ে তার মুখ হা হয়ে গেলো। লজ্জায় গাল লাল হয়। এতো মাসেও এই পুরুষ কে সে এভাবে অর্ধ উন্মুক্ত দেখে লজ্জা পায়। আবরাজ ওর কোমর হাত রেখে আরেক হাত হাঁটুর নিচে নিয়ে যায় আর ঝট করে কোলে তুলে নেয় ওকে। ফিজা চমকে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।

আবরাজ ঝুঁকে এসে বউয়ের ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আর তার মাথা থেকে টপটপ করে জল কয়েক ফোঁটা ফিজার মুখে পরে। ফিজা চোখ বন্ধ করে নাকমুখ কুঁচকে নেয়। আবরাজ হেঁসে দেয় আর হাস্কি আওয়াজে বলে,

-“আই নিড সাম ফাস্ট এনার্জি, সুইটহার্ট।”

সারাদিন পর কী কীর্তি করে বাড়ি ফিরে এখন ঢং করা হচ্ছে। ফিজা বিরক্ত প্রকাশ করার আগেই আবরাজ ওকে ধপাস করে বিছানায় ফেলে নিজেও ওঠে আসে বিছানায়। ফিজা শ্বাশ বন্ধ করে শুধু চেয়ে থাকে। তার অনুভূতির শেষ নেই। এই মানুষ টা সবকিছুর দাম দিবে তো!

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

#জান্নাত_সুলতানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here