#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_৭[স্পেশাল পর্ব]
#জান্নাত_সুলতানা
[রোমান্টিক পর্ব, পড়তে না চাইলে স্কিপ করুন।]
-“আবরাজ আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
গভীর রাত। জানালার পর্দা হালকা বাতাসে দুলছে। ঘরের প্রতিটা কোণে ছড়িয়ে আছে গোলাপের পাপড়ি। বিছানার পাশে আলোর মৃদু ঝলক। ঠিক যেনো আবরাজ খানের চোখে পাগলপারা উন্মাদনা এমনি ঝলক।
-“হোক জান। তোমার অস্বস্তি হোক। সেটা শুধু আমার স্পর্শে।”
গলায় মুখ গুঁজে দেয়া অবস্থায় বলে আবরাজ। ফিজার শরীর টা থরথর করে কাপে। হৃদপিণ্ডটা অস্বাভাবিক ভাবে করছে লাফঝাঁপ। অসহ্য গরমে লাগছে হাসফাস। মোচড়ামুচড়ি করতেই আবরাজ ওর গলায় দাঁত বসিয়ে দিলো। বললো,
-“টু নাইট ইউ আর মাইন। অনলি মাইন।”
তার গলা কাঁপছে উত্তেজনায়। মাথা তুলে ফিজার মুখের দিকে চাইলো। গভীরভাবে চোখে চোখ রেখে বলে,
-“আই সুয়্যার আই ক্যান সেট দা হোল ওয়ার্ল্ড অন ফায়ার, জাস্ট টু সি ইউ ব্লাশ লাইক দিস।”
মেয়েটা মুখ ঘুরিয়ে নেয় লজ্জায়। যা দেখে আবরাজ বাঁকা হেসে বলে,
-“নো এস্কেপ নাউ, জান। ইউ ম্যারিড আ ম্যাডম্যান।”
তারপর হঠাৎ হাত ধরে টেনে আনে নিজের খুব কাছে। চোখে চোখ রেখে আবার বলে,
-“শ্ নো মোর ডিস্ট্যান্স, নো মোর ওয়েইটিং।”
ধীরে ধীরে আবরাজ ফিজার কপালে একটা চুমু দেয়। মেয়েটার কাঁপতে থাকা নিঃশ্বাসের মধ্যে মুখটা কাছে এনে ফিসফিস করে বলে,
-“টুনাইট ইজ নট জাস্ট আ নাইট ইট’স দা বিগিনিং অফ আওয়ার ফরএভার।”
আবরাজ একটা হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে একটা রিমোট হাতে তুলে নেয়। পরপরই আলো নিভে আসে। বাইরে তুষারপাত বদ্ধ ঘরে এক নারীর স্পর্শে পাগল উন্মাদ পুরুষ। আর তার সঙ্গিনীর রানীর সাথে শুরু হয় এক পাগলামো।
কিছু সময় পর-ই শোনা যায় মেয়ে টার গোঙানির শব্দ। ফিজা অসহায় কণ্ঠে বলে,
-“আবরাজ প্লিজ আর না।”
-“প্লিজ জান ডোন্ট স্টপ মি। পাগল হয়ে যাচ্ছি। একটু সহ্য করে নাও। আস্তে ধীরে ঠিক সয়ে যা,,”
আর কিছু বলতেই পারলো না আবরাজ। ফিজা তার আগেই আবরাজ কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে আঁচড় কাটে পিঠে। আবরাজ মৃদু হাসে। ঠোঁট কামড়ে ধরে বউয়ের ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে উঠলো,
-“আরও একটু কাঁদো সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা ফুঁপিয়ে উঠলো। নাক টেনে নিলো। বললো,
-“আপনি খুব খারাপ। জঘন্য আবরাজ।”
সাথে সাথে আবরাজ দাঁত বসালো মেয়ে টার গলায়। ফিজা আর্তনাদ করে ওঠে। আবরাজ আরও উন্মাদ হয় সেই শব্দে।
——
অতিরিক্ত ব্যাথায় শরীর আগুন গরম হয়ে আছে ফিজার। আবরাজ বউয়ের মাথা টা বুকে চেপে ধরে রেখেছে। ফিজা গুঙিয়ে উঠতেই আবরাজ অস্থির হয়ে গেলো। ফিজার এলোমেলো শরীর টা নিজের বাহুর ওপর নিয়ে কাত হয়ে অস্থির কণ্ঠে বললো,
-“সুইটহার্ট!”
-“আপনি কাজে যান। আমি ঠিক আছি।”
ফিজা চোখ বন্ধ রেখে বললো। আবরাজ ঘড়িতে টাইম দেখলো৷ দশ মিনিট হবে ঔষধ দিয়েছে ফিজা কে। অথচ ব্যাথা টা এখনো যাচ্ছে না কেনো বুঝতে পারছে না। ফিজা কে শুইয়ে রেখে আবরাজ রান্না ঘরে গেলো। কিছু সময় পর-ই গরম গরম ধোঁয়া ওঠা স্যুপ নিয়ে ফিরে এলো। ফিজা কে খাবার খাইয়ে দিলো। এরপর নিজে রেডি হয়ে নিলো। ফিজা শুয়ে শুয়ে পিটপিট করে আবরাজ কে দেখছে। একজন পুরুষ এতো সুদর্শন কিভাবে হতে পারে সত্যি ফিজা ভেবে পায় না। যেমন মানুষ টার গড়ন তেমন চলাফেরার গতিময়। কী সুন্দর সবকিছু যেনো পুরুষ টার মধ্যে এক আর্টের মতো।
-“দ্রুত ফিরে আসবো সুইটহার্ট।”
আবরাজ বউয়ের কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ করে দিয়ে বললো। ফিজা মৃদু হাসলো। আবরাজ এরপর বেরিয়ে গেলো। ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো। মায়া জিনিস টা ভয়ংকর। “যার মায়ায় একবার পড়বে, মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার প্রতি মায়া কাটিয়ে উঠতে পারবে না।” ফিজাও যেনো ধীরে ধীরে আবরাজ খানের মায়ায় পরে যাচ্ছে। এতো অপরাধ নয়। স্ত্রী স্বামীর মায়ায় পরবে ভালোবাসবে এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম।
——
ফোন বেজে চলছে লাগাতার। ফিজা টাওয়াল টা গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আবরাজ কল করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সতেরো টা কল দিয়ে ফেলেছে। ফিজা ভয় পেয়ে গেলো। কিছু হলো কি-না সেই ভয় নিয়ে দ্রুত কল রিসিভ করে কানে তুলতেই শুনতে পেলো,
-“সুইটহার্ট আই মিসড ইউ। আম কামিং সুন জান।”
ফিজা হকচকিয়ে যায়। আস্তে করে ঢোক গিলে সে গলা ভিজিয়ে নেয়। এতো অধৈর্য আর অস্থিরতা এই আবরাজ খানের! সে গতরাতেই সেটা টের পেয়েছে। কয়েক ঘন্টা হয়েছে বাইরে গিয়ে এরমধ্যে আবার মিস করছে! ফিজা গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ফিজা কিছু বলবে তার আগেই আবার ও আবরাজ বলে উঠলো,
-“রাতের জন্য তৈরী হও, সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেললো। পাগল এই পুরুষ তাকে-ও পাগল করে ছাড়বে। ফিজার লজ্জায় কান গরম হয়ে আসে। কী ভয়ংকর লজ্জাজনক একটা অধ্যায় তার জীবনে শুরু হলো। যার সূচনা টা আবরাজ খানের বেহায়া নির্লজ্জ কথাবার্তা দিয়ে শুরু।
—–
দিন টা ভালোই কাটলো ফিজার। তবে শরীর টা মুর্ছা যায় যায় যেনো। দুপুরের জন্য একজন মেড এসে রান্না করে দিয়েছে গিয়েছে। যদিও ফিজা নিজেও রান্না করতে পারবে জানিয়েছিল। তবুও মেড যেহেতু বাড়ির পেছনে স্টাফ কোয়ার্টারে রয়েছে সেক্ষেত্রে অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্না করার প্রশ্নই আসে না। একটু অবাক হয়েছে যখন সকালে অনেকগুলো মেড পুরো বাড়ি টা পরিষ্কার করতে এসছে। বিকেলে ফিজা বাড়ি টা ঘুরে-ঘুরে দেখতে লাগলো। মূলত সে বুকস শেল্ফ থেকে বই খুঁজছে। খুঁজে খুঁজে একটা ইংলিশ বুক খুঁজে বের করলো। এরপর সেটাই নিয়ে রুমে ফিরে এলো। কম্ফর্টারের তলায় ঢুকে বই টা পড়া শুরু করলো। তবে অর্ধেক পড়ে ওর খুব বাজে লাগলো বই। ইংলিশ নোবেল গুলো প্রায় সতর্কতা মূলক কথোপকথন থাকে। কিছু সংলাপ পড়তে গা শিরশির করে। ফিজা বই টা বন্ধ করে বিছানায় রেখে শুয়ে পড়লো।
ঘুম চোখে এসে বাসা বাঁধল। কতক্ষণ তা স্থায়ী হলো তা জানা নেই। তবে নিজের গলায় উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে ঘুম ছুটে গেলো। চমকে উঠে নড়াচড়া করতেই আবরাজ ডাকলো,
-“সুইটহার্ট!”
-“আপনি কখন এসছেন?”
মেয়ে টা আতংকিত হয়ে জানতে চায়। আবরাজ ওর এলোমেলো চুল ঠিক করে দেয়। গায়ের কম্ফর্টার সরিয়ে তার ভেতর ঢুকে বউ কে গভীর আলিঙ্গন করলো। নিজের সাথে ঘনিষ্ঠ করে শুধালো,
-“জান।”
ফিজা পিটপিট করে চাইলো আবরাজের দিকে। পরনে তখনও সকালের পোষাক। ফিজা বুঝতে পারে মাত্র ফিরেছে পুরুষ। ফিজা বললো,
-“যান ফ্রেশ হতে।”
-“উঁহু, সারাটাদিন পাগল করে রেখে দিয়েছো। এখন সেটার শাস্তি ভোগ করো।”
ফিজা কে আবরাজ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। ফিজার অস্থিরতা বাড়লো। কাঁপা কাঁপা অধর জোড়া নেড়ে আওড়াল,
-“আজ না প্লিজ।”
-“আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ, সুগন্ধি ফুল। সহ্য করে নাও একটু।”
মেয়েটার নিঃশ্বাস অস্বাভাবিক দ্রুত। বুকের ভেতরে ধুকপুকানি যেনো কানে শোনা যায়। আতঙ্ক নয়, বরং একধরনের অচেনা শিহরণ তার চোখেমুখে।
আবরাজ ধীরে ধীরে ওর গলায় ওষ্ঠদ্বয় বুলিয়ে যাচ্ছে। এক হাতে এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দেয়। অন্য হাতে গায়ের কম্ফর্টারটা নামিয়ে দেয় নিচে। পুরুষ টার চোখে ছিল দাবানলের মতো গভীর কিছু যেখানে ক্লান্তি নেই, শুধু চাওয়া, তৃষ্ণা চোখ জুড়ে।
আবরাজ ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে খুব ধীরে বললো,
-“জান।”
ফিজা চোখ পিটপিট করে আবরাজের দিকে তাকালো। মানুষ টার চেহারায় ক্লান্তি, তবু চোখে এক অস্থির উন্মাদনা।
ফিজা আবারও নিচু গলায় বললো,
-“যান ফ্রেশ হন আগে। খুব ক্লান্ত লাগছে আপনাকে।”
আবরাজ ওর গলা বরাবর ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“অল ডে, আই কেপ্ট ইম্যাজিনিং ইউ ইন দিস বেড। ওয়েইটিং ফর মি। আই ওয়াজ লুজিং মাই মাইন্ড।”
পুরুষ টার কণ্ঠে গমগমে একরাশ আবেগ। ফিজা ধরা গলায় বললো,
-“আমি সিরিয়াস প্লিজ।”
আবরাজ হেসে উঠে কানের পাশে ঠোঁট রাখলো,
-“আই’ম নট টাইয়ার্ড আই’ম বার্নিং।”
আবরাজের কণ্ঠে যেনো অগ্নি লেগে আছে। ওর হাত ফিজার নরম কোমরের নিচে চলে গেল। ফিজা কেঁপে ওঠে। বেডশিট খামচে ধরে। শরীর এমনিই দুর্বল। তার মধ্যে এমন তপ্ত শরীর ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে যেনো কোনো আশ্রয়ের পথ নেই। তবুও মেয়ে টা আরও একবার চেষ্টা করে। কণ্ঠ ভেঙে আসে বলে,
-“আজ না প্লিজ।”
আবরাজ থামে না। বরং ফিজার ঠোঁটের খুব কাছে গিয়ে হাস্কি আওয়াজ বলে,
-“আই ওয়ান্ট ইউ, সুইটহার্ট। একটু জাস্ট একটু।”
এক মুহূর্ত থেমে আবার হিমশীতল গভীর চাহনি দিয়ে বললো,
-“ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু বি রেডি। জাস্ট বি হিয়ার। লেট মি ফিল ইউ লেট মি লাভ ইউ মাই ওনলি উইকনেস।”
ফিজা থরথর করে ওঠে। চোখ বুঁজে ফিসফিস করে বলে,
-“ইউ’র ক্রেজি কমপ্লিটলি ম্যাড।”
আবরাজ হেসে ওঠে নিঃশব্দে। সেই হাসির নিচে ছিল উন্মত্ত।
-“ফর ইউ! আই’ম বিয়ন্ড ক্রেজি। ইউ’র দ্য স্টর্ম দ্যাট রুইন্ড মি নাও লেট মি ড্রাউন ইন ইউ।”
সে মুহূর্তে যেনো ফিজার সমস্ত দুনিয়া থেমে যায়। কেবল শরীর নয়, আত্মার গভীর মিলন ঘটে সেখানে। ঘর নিস্তব্ধ, বাতাস ভারী। দু’জন ডুবে যায় ভালোবাসার নিষিদ্ধ এক গভীরতায়। যেখানে ভাষা অপ্রয়োজনীয় শুধু অনুভবই সত্য।
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]