সুগন্ধি ফুল২ (পর্ব ৩)

0
2

#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“কাল সন্ধ্যায় আমার ফ্লাইট আছে আব্বু।”

ছেলের কথায় মিলন খান আশ্চর্য হলো। আজই বিয়ে করলো আর কাল চলে যাবে? এ কেমন কথা? তিনি চেহারায় যথেষ্ট গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুললেন। রাগী চোখ তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“আবরাজ এ-সব কী ননসেন্সের মতো কথা?”

-“তোমরা চেয়েছিলে আমি যেনো বিয়ে করি। বিয়ে করেছি। দেশে থাকতে হবে এমন কোনো কথা তো ছিলো না।”

-“এভাবে একটা মেয়ের জীবন নিয়ে তুমি খেলতে পারো না। তোমার ইচ্ছে না থাকলে বিয়ে না করতে। আমরা তোমাকে ফোর্স করি নি। তুমি স্বেচ্ছায় নিজে আমাদের তাগাদা দিয়ে বিয়ে করেছো।”

আবরাজ চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। পরনে রয়েছে ট্রাউজার। পকেটে হাত গুঁজে জবাবে বললো,

-“ওকে আমার ভালো লেগেছে তাই বিয়ে করেছি। আর তুমি কী কোনো ভাবে ভাবছো আমি একা যাচ্ছি? উঁহু, আমার সাথে যাবে ও।”

মিলন খান একটু স্বস্তি পায়। যাক তিনি তো ভেবেছিল ছেলে যা বদরাগী বিয়ের জন্য জোর করাতে হয়তো বিয়ে করে বউ কে ফেলে চলে যাবে। কিন্তু না তেমন কিছু যেহেতু হচ্ছে না তাই চিন্তার কিছু নেই। আবরাজ স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মিলন খান তখনও বসে থাকে সেখানে। এবার ছোট ছেলে কে একটা বিয়ে দিতে পারলেই তিনি স্বস্তি পাবে।

——-

রাতে খাবার-দাবার কিছুই খাওয়া হয় নি ফিজাদের বাড়িতে। বিয়ের পর সামন্য পরিমাণ খেজুর দিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে ছিলো সব। ফিজা কে কিছু ওই বাড়ি থেকে আনতে ও দিলো না আবরাজ। বউ নিয়ে পুরুষ টা বাড়ি ফিরে এলো। ইলা বেগমের আহ্লাদ শেষ হয় না। আসার পরপরই সাথে করে তিনি ফিজা কে নিজের রুমে নিয়ে গিয়েছে। ফিজা এসছে পর আবরাজ কে আর দেখে নি। মিসেস ইলা রুমে এসে নিজের বিশাল বিল্ট-ইন ওয়ার্ডরোব খুলেন। সেখানে শাড়ী কালেকশন দেখে ফিজার তেমন ভাবান্তর হলো না। এমন ধনী একজন ব্যাবসায়ীর স্ত্রীর একটা ওয়াক-ইন ক্লোজেট থাকলে-ও সে অবাক হবে না। মিসেস ইলা বেগম খুঁজে খুঁজে সেখান থেকে একটা গাঢ় নীলাভ সবুজ রঙের শাড়ী হাতে তুলে নিলেন। সেটার সাথে রাখা জুয়েলারি বক্স নিয়ে এসে ফিজা কে শাড়ী টা দিয়ে বললো,

-“যা চেঞ্জ করে আয়। আমি তোকে সাজিয়ে দেবো। আমার ভীষণ শখ নিজের হাতে নিজের মেয়ে কে সাজিয়ে পুতুল করে রাখবো।”

ফিজা অবাক হয়। মনে মনে বেশ ভালো লাগে। এমন একজন শাড়ী পাওয়া চাট্টিখানি কথা নহে। সে শাড়ী পড়তে জানে। শাড়ী তার নিজেরও ভালো লাগে। তাই আগের শাড়ী টা চেঞ্জ করে এটা পড়ে আসতে তেমন সময় অপচয় হলো না। শাড়ির রঙটি একদিকে যেমন শান্ত, অন্যদিকে তেমন রুচিশীল। শাড়ী টা গায়ে জড়িয়ে ফিজার বুঝে গেলো শাশুড়ির রুচি সত্যি চমৎকার। শাড়ী টার গায়ে হালকা সূচিকর্ম করা, ছোট ছোট সাদা ফ্লোরাল মোটিফ দিয়ে। যা পুরো শরীর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। পাড় এবং আঁচলে আছে সূক্ষ্ম জিগজ্যাগ প্যাটার্নের সাদা এমব্রয়ডারি। যার ফলস্বরূপ আরও পরিপাটি ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। শাড়ী টা হ্যান্ডলুম কটন।
সবুজ চুড়ি ও সাদা একটা পাথরের চকচক হার। ফিজার গলায় যখন হার টা মিসেস ইলা পরিয়ে দিলো ফিজার বুঝতে একটু অসুবিধা হলো না হার টা হিরে। গাঢ় নীলাভ সবুজ রঙের এই শাড়িটি ফিজার গায়ে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। বোঝা দায় শাড়ী টা সুন্দর না-কি সামনে দাঁড়ানো ফিজা নামের রমণীর গায়ে গিয়ে শাড়ী টা নিজের সৌন্দর্যের খোঁজ পেয়েছে। সাজ শেষ করে তিনি কাজল দিলেন ফিজার কানের গোড়ায়। মৃদু হেঁসে বললো,

-“এখন যা।”

ফিজার বুক টা কেঁপে উঠলো। এতোক্ষণ তো ভালোই ছিলো সে। আরও একটু কী শাশুড়ির সঙ্গে থাকা যাবে না। তবে তা আর মুখে প্রকাশ করতে পারলো না। একজন মেড এসে বললো,

-“ম্যাম স্যার নতুন ম্যাম কে ডেকে পাঠিয়েছে।”

লজ্জার কথা নয় কী এটা? একজন মানুষ এতোটা অস্থির? বিয়ে হয়েছে চার ঘন্টা আর সে পুরুষ টার চোখের আড়াল হয়েছে মাত্র চল্লিশ মিনিট হবে। এতেই এতো অধৈর্য? শাশুড়ির সামনে লজ্জায় ফিজার মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। নতুবা পাখি হলে সে এক্ষুনি উড়ে পালিয়ে যেতো। কিংবা জাদু জানলে সে জাদু করে নিজে কে অদৃশ্য করে ফেলতো। তবে ইলা বেগম এর কথা শুনে সে তাজ্জব বনে গেলো। ইলা বেগম বললেন,

-“ইশ রাত অনেকটা হয়ে গেলো। যা তো তাড়াতাড়ি রুমে যা। আমিও ঘুমতে যাচ্ছি।”

বলতে বলতে তিনি ফিজা কে ঠেলে দিলেন। ফিজার পা টা ঠিক যেনো চলছে না। সে অবশ পা এবং শরীর টা টেনে নিয়ে মেড এর পেছনে এলো। সিঁড়ি বেয়ে একটু সামনে গিয়ে মেড একটা রুমের সামনে ফিজা কে রেখে দিয়ে চলে গেলো। দরজা নক করতে হলো না। ভেতর থেকে তার আগেই গম্ভীর স্বরে আবরাজ খান বলে উঠলো,

-“কাম ফাস্ট। কুইক। কুইক সুগন্ধি ফুল।”

এতো অধৈর্য্য কণ্ঠস্বর শুনে ফিজার গলা টা যেনো শুঁকিয়ে আসে। কী অদ্ভুত। সে নিজে কে স্থির কেনো রাখতে পারছে না আজ সন্ধ্যায় থেকে? না না সন্ধ্যায় থেকে নয়। যখন থেকে এই আবরাজ খান তাকে ছুঁয়ে দিয়েছে তখন থেকেই সে এলোমেলো। তবে কী সত্যি আবরাজ খান তার নিজের হৃদয় দিয়ে ফিজা নামের রমণীর হৃদয়ে আঁচড় কাটতে পেরেছে! ফিজার ভাবনার সময় আছে কিন্তু আবরাজ খান এর কী অপেক্ষা করার মতো এতো ধৈর্য্য আছে? হাতে হেঁচকা টানে রুমের ভেতর ছিটকে গিয়ে শক্ত-পোক্ত এক বক্ষে স্থান হলো তার। ভয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলেও সামনের পুরুষের উন্মুক্ত বক্ষ অনুভব করে তার ভয় কেটে গেলো। লজ্জায় আর অস্থিরতায় নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার জোরদার চেষ্টা চালিয়ে গেলো। তবে সফলতা এলো না। বরং নিজের গলায় সুক্ষ্ম একটা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। তীব্র থেকে তীব্র হলো সেই আঘাত। উষ্ণ নিঃশ্বাস আর পুরুষালী শরীর থেকে আসা সুমিষ্টঘ্রাণ তাকে মাতাল করে যেনো। ভেতর থেকে এলোমেলো হয়ে গেলো। কোনো সদ্য জন্মানো নরম বৃক্ষে আঘাতে তা যেমন নেতিয়ে যায় তেমন নেতিয়ে গেলো ফিজা। চোখের কোলে জল জমে চিকচিক করতে থাকে। আবরাজ বউ কে ছাড়লো কয়েক মিনিট বাদে। ফরসা চামড়ার গলায় লাল একটা ক্ষত। রক্ত জমাট বেঁধে যায় সাথে সাথে। আবরাজ বউয়ের মুখ টা নিজের হাতের আজলে নিলো। বাঁ হাতের বৃদ্ধা আঙুল টা মেয়ে টার গলার ডান পাশের সেই লাল হয়ে থাকা স্থানে স্পর্শ করলো। ফিজার গভীর টানাটানা চোখের মনির দিকে তাকিয়ে হাস্কি আওয়াজে বললো,

-“মাই ফার্স্ট মার্ক, অন ইউর বডি।”

-“আপনি খুব বাজে আবরাজ খান।”

-“অনলি টু ইউ, সুইটহার্ট।”

বলতে বলতে আবরাজ কোলে তুলে ফিজা কে। ফিজার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে এলো। সে ভেবেই নিলো এই নির্লজ্জ পুরুষ কাল থেকে যা করেছে তাকে হয়তো আজ আর ছাড়বে না। কিন্তু তেমন কিছু হলো না। ফিজার ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবরাজ ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়লো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মাথা টা তুলে ফিজার বুকে রাখলো। ফিজার শরীর টা তখনও কাঁপছে। হাত দু’টো সোজা করে বিছানায় রাখা। আবরাজ অপেক্ষা করলো কয়েক সেকেন্ড। বউ জড়িয়ে ধরছে না সে বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারলো না। বউয়ের ব্যাপারে যেনো সে সত্যি অধৈর্য এক পুরুষ। গম্ভীর স্বরে বললো,

-“হাগ মি টাইটলি, সুগন্ধি ফুল।”

ফিজার হাত দু’টো যেনো আপনা-আপনি আবরাজ খানের পিঠ চলে গেলো। আলগোছে পিঠে হাত রাখলো। আবরাজ নাকমুখ ঘষে নিয়ে বললো,

-“তোমার জন্য কাল একটা সারপ্রাইজ আছে, সুগন্ধি ফুল। বি রেডি ফর এ সারপ্রাইজ।”

কিসের সারপ্রাইজ? হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যে সারপ্রাইজ সে পেয়েছে এরচেয়ে বড়ো সারপ্রাইজ আর কী হতে পারে? ফিজা তবুও জিজ্ঞেস করলো,

-“কিসের সারপ্রাইজ?”

-“আজ আমার ফার্স্ট নাইট। সেটা ভুলে গিয়েছো তুমি?”

-“এটার সাথে সারপ্রাইজ এর কী সম্পর্ক?”

-“আছে। স্পেশাল নাইট স্পেশাল ভাবে তোমাকে ফিল করাবো সুগন্ধি ফুল। জাস্ট ওয়েট।”

ফিজার ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো। একটু স্বাভাবিক সে হয়েছে। তবে শাড়ী পড়ে শুয়ে কেমন অস্বস্তি লাগছে। তারউপর সামনের পুরুষের শরীরের উষ্ণতা মেয়ে টার দম টা যেনো বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।

-“আবরাজ ছাড়ুন। আমার কেমন লাগছে।”

-“কেমন লাগছে?”

-“জানি না।”

-“বলো।”

-“আমার অস্থির লাগছে।”

-“আরও একটু করে দেই?”

বলেই অপেক্ষা করলো না আবরাজ। মেয়ে টার গলায় মুখ গুঁজে সেখানে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। বুকে, গলায় ঠোঁটের চারপাশে টুপটাপ চুমুতে সত্যি সত্যি মূহুর্তের মধ্যে মেয়ে টাকে অস্থির করে দিলো। ফিজা আবরাজের চুল গুলো খামচে ধরে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“আবরাজ আর না প্লিজ।”

-“ট্রাস্ট মি তোমাকে দেখার পর থেকে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সুগন্ধি ফুল।”

পুরুষ টার মাতাল করা কণ্ঠ। বহু দিনের তৃষ্ণার্ত যেনো। কিন্তু ফিজার সাহস হলো না মানুষ টার পাগলামোতে সায় দিতে। সে নিজের মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো। আবরাজ ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ফেললো। এরপর বউয়ের কপালে নিজের অজান্তেই অধর ছুঁয়ে দিলো। পরপরই গলা চেপে ধরে মুখ টা নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো। আবছা আলোয়ে বউয়ের উদ্দেশ্যে রাগান্বিত স্বরে বললো,

-“নেক্সট টাইম আমার থেকে কখনো মুখ ঘুরাবা না। এই চোখ শুধু আমার দিকে স্থির থাকবে।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here