#কাঞ্জি
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৩৬
“আমি ওর জীবন নষ্ট করে দিয়েছি?আজমী কি বলছিলি তুই?”
কেবিনের বাইরে বসে অপেক্ষারত আজমী কোনো জবাব দিলো না।শাহরিয়ারের সাথে কথা অবধি বলতে ইচ্ছে করছে না তার।সে তো বলেছিল তার বোনকে দেখে রাখবে,কখনো কোনো কষ্ট দিবে না। তবে এই হাল কেন হলো মেয়েটার?নিজের মনের প্রশ্নগুলো মনের মাঝে রেখেই শাহরিয়ারকে এড়িয়ে যেতে চাইলো কিন্তু শাহরিয়ার নাছোড়বান্দা। সে পুনরায় বলল,
“চুপ করে থাকার কথা নয় আজমী তোর।তুই বল কেন মনে হলো আমি ওর জীবন নষ্ট করে ফেলেছি?”
“তোর কি মনে হয় করিস নি?”
“কীভাবে করেছি?”
“বিয়ে করে।”
“মানে?আমি ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি, পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আগলে রেখেছি।”
“এটাই তোর উচিৎ হয়নি।”
“তুই কি বলতে চাইছিস?”
” তোর মা কখনো আমার বোনকে মেনে নিতে পারেনি।তুই পারিসনি তোর মা এবং আমার বোনের সম্পর্ক ঠিক করতে।তবে কি করেছিস?”
“আমি ওকে আগলে রাখার জন্যই বিয়ের আগেই আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেছি।তুই কখনো আমার পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করেছিস?বোনের ছেলেটা এখনো এন আই সি ইউ তে ভর্তি। বাবা প্রায় প্যারালাইজড হয়ে আছে।আমার ওদিকেও দায়িত্ব আছে।আমি একা তোর বোনের স্বামী না।আমি ছেলে এবং ভাই ও।তোদের এটা বুঝতে হবে।ছেলে হতে গিয়ে হয়তো স্বামীর ভূমিকায় হেরে যাই মাঝেমধ্যে কিন্তু আমার কি বিশ্বাস জানিস?তোর বোন সেটুক সামলে নিতে পারবে।”
“তুই পারছিস না সব দায়িত্ব পালন করতে তবে কেন যাচ্ছিস?আমার বোনকে আমাদের কাছে দিয়ে দে।”
“তুই পেরেছিলি?তোদের কাছে থাকতে কি তোর বোন খুব সুখে ছিল?”
“সংসার টিকবে কি না এমন অশান্তি ছিল না।”
” শোন আমি ওকে ভালোবাসি তাছাড়া আর কি বলতে বলিস আমাকে?”
দীর্ঘ শ্বাস ফেলল আজমীর। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“শোন আমিও পারিনি আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে। তোর মায়ের মতো আমার মা নিজেও আমার স্ত্রীকে একটা পছন্দ করতো না।একদিন বাইরে থেকে এসে তাকেও আমি ওয়াশরুমেই পড়ে থাকতে দেখেছিলাম।আমি স্ত্রী সন্তান উভয় হারিয়েছি। বাবাকে হারানোর পর বোন দুটোকে আগলে রাখার দায়িত্ব ছিল।আবৃতিকে শক্ত বানানোর চেষ্টায় মায়ের যে কাজ ছিল সেখানেও কি পেরেছি তাকে বাঁচাতে?আমি তোকে প্রশ্ন করার অধিকার রাখি না কিন্তু বোনকে তোর ঘরে না পাঠানোর অধিকার আমার রয়েছে।”
অসহ্য গরম লাগছে শাহরিয়ারের। টিশার্টের একটা বোতাম খুলে দিলো সে। আবৃতি তার জীবনের অংশ নয় তার জীবন।এই সময়টা তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।চারিদিক থেকে প্রেশার সে নিতে পারছে না।তার নিজস্ব কোনো মানুষ এই মুহুর্তে প্রয়োজন যে কোনো প্রশ্ন করবে না।প্রশ্ন না করে তাকে স্পেস দিবে।সময় হলে শাহরিয়ার নিজেই তাকে সব জানাবে।অভিযোগ করলে আবৃতির প্রতিও সে হাজার খানেক করে বসতে পারে কিন্তু সে চায় না। কারণ আগলে রাখার জন্য একটা কারণ যথেষ্ট আর সেটা হলো ভালোবাসা।
কেবিনে প্রবেশ করে শাহরিয়ার দেখতে পেল আবৃতি ঘুমিয়ে আছে।অতিরিক্ত না খেয়ে থাকার পর ভরপেট খাবার খেয়েছিল বলে এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো সে। এই মুহুর্তে তার ইচ্ছে করছে না আবৃতিকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে কিন্তু তাকে ভাবতে হবে।বাবার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কাগজপত্র কিংবা শাহানারার ছেলের হাসপাতালের বিলের কথা।আবৃতি ইচ্ছেকৃত ভাবে না করলেও তার হাত থেকে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। হয়তো স্ত্রীর দোষ কিছুটা কমাতেই চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে শাহরিয়ার। পদ্মের ন্যায় ঠোঁটে আলতো স্পর্শ ঠোঁট ছোঁয়ায় শাহরিয়ার। আজমিকে অনেক বলে রত্না বেগমের সাথে বাসায় পাঠিয়েছে।কেবিনের দরজা লাগিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। মেডিসিনের প্রভাবে গভীর ঘুমে মগ্ন মেয়েটা।কেবিনের এক পাশে রাখা সোফায় বসে জুতো খুললো।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আবৃতি পাশে গিয়ে বসলো।অন্ধকারে শ্বাসের কারণে আবৃতির শরীরের সুরতাল স্পষ্ট। কিছু না ভেবে তার বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কিছু সময় পার হলো এভাবেই।আবৃতির ঘুম যখন কিছুটা হালকা হয়ে এলো তখন সে খেয়াল করলো উষ্ণ কিছুর স্পর্শ। তার জামা ভেদ করে শরীরের ত্বকে লাগছে।বুকের উপর ভারী বস্তুটা কি দেখার চেষ্টা করলো অথচ ঘর অন্ধকার।হাত বাড়াতেই বুঝতে পারলো শাহরিয়ার তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।স্মিত হাসি ফুটে উঠেছে তার মুখে।সে ফিসফিস করে বলল,
“ভয় পেয়েছিলেন?আচ্ছা যদি সত্যি হারিয়ে যাই তখন কি করবেন?”
চলবে(এডিট ছাড়া।পেজের রিচ একদম নেই।তাই অনুরোধ রইল রেসপন্স করবেন। আর হ্যাঁ আমার নতুন ইবুক #টেল মি হোয়েন পড়েছেন তো?পড়লে অবশ্যই রেটিং রিভিউ দিবেন ❤️)
ফ্ল্যাপ: “রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে না?
দূর হতে আমি তারে সাধিব
বিরহ যতনে বাঁধিব….
তবে আমি তাকে বিরহ যতনে বাঁধতে চাইনি।সে ছিল আমার দেখা আমার জীবনের সবচেয়ে শুদ্ধতম সুন্দর পুরুষ। যে পুরুষ দেখে অন্তরের অন্ধকার কোণে জ্বলে উঠেছিল এক চিলতে আলো। সে আলোয় ফুটেছিল শ’য়ে শ’য়ে রজনীগন্ধা,দোলনচাঁপা, শিউলি কিংবা গন্ধরাজ।আমি আমার ধ্বংসের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে দুই হাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।আমার সর্বনাশ এবং আমার আরাধ্য পুরুষকে। অথচ কে জানতো? আমি প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমার ধ্বংসের সন্নিকটে।
#ফোটো_ক্রেডিট: পিন্টারেস্ট