#কাঞ্জি
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৩৫
পুরো রুমটা অন্ধকার। কোনো উপন্যাসের নায়িকার মন খারাপ হলে যেমন চারিপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, মেঘ জমে চারিধারে, ঠিক তেমন অন্ধকার।বাইরে মেঘ টুপ টুপ করে ঝরছে।মেঘের আড়ালে চাঁদের আলো ঠাহর করা যায় না তেমনি আবৃতির মন খারাপের কারণ ঠাহর করতে পারে না রত্না বেগম।চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন তিনি।যেমন ভেবেছিলেন মেয়ের জীবন ওদিকেই ধাবিত হচ্ছে। ভদ্রমহিলা ভেবেছিলেন মেয়েকে তিনি শক্ত করতে পেরেছেন।তাকে সকল প্রকার মানসিক কষ্ট দিয়ে শক্ত ধাতু বানাতে পেরেছেন।তবে আজ সেই ধারণা একদম বদলে গেছে।মেয়েটা কিছুই হয়নি বরঙ ধীরে ধীরে অধপতনের দিকে যাচ্ছে এটা স্পষ্ট। কিন্তু তিনি মুখে কিছুই বললেন না। সেই প্রসঙ্গে না গিয়ে বললেন,
“তোমার বাসায় তেল আছে?”
“কী তেল?”
“চুলে দেওয়ার তেল থাকলে নিয়ে এসো।না থাকলে আজমী কে বলো। সে যেন দিয়ে যায়।”
“আছে মা।শাহ আমার কিছুর কমতি রাখেনি।”
“স্বামী স্ত্রীর খেয়াল রাখবে এটাই স্বাভাবিক।”
আবৃতি তেল বের করে এনে দিলো।রত্না বেগম নিজ হাতে মেয়ের চুলে তেল দিয়ে দিলেন।বিনুনি করে বললেন,
“যাও ভালো ভাবে হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে এসো।”
আবৃতি মায়ের কথা মাফিক সব করলো।কেন যেন আজ তার মায়ের প্রতি কোনো অভিযোগ কাজ করছে না। মনে হচ্ছে তার মা তাকে ভীষণ ভালোবাসে।কণা নামের যে মহিলাটা মাঝেমধ্যে আসতো তার প্রতি মায়ের অসম্ভব ক্ষোভের কারণ,অদিতিকে দেখা না করতে দেওয়া সব কিছুই স্বাভাবিক মনে হলো।একজন নারী কি করে মেনে নিবে তার দ্বিতীয় স্বামীর স্ত্রী কে?যখন স্বামীই পৃথিবীতে নেই? তাছাড়া নিজের মায়ের ধৈর্য্য দেখেও অবাক হয় সে। না হলে সতীনের মেয়েকে নিজ নামে,নিজ পরিচয়ে বড় করাটা সহজ ছিল না।রত্না বেগম নিজ সন্তান এবং সতীনের সন্তানের জন্য সব সুখ ত্যাগ করেছিল সেখানে কণা নিজ সুখের সন্ধানে নিজের মেয়েকে অবধি সাথে নেয়নি।আবৃতির ইদানীং মনে হয় সে কখনোই তার মায়ের মতো এতোটা সাহসী ছিল না।তার মা রূপকথার সেই নারীদের মতো যারা দৈত্য রাক্ষসের হাত থেকে রাজকুমারী কে বাঁচিয়ে আনে।
আবৃতির জীবনে তার পরিস্থিতি সবসময় দৈত্য রাক্ষস ছিল।আজকেও ব্যতিক্রম নয়।বেসিনের সামনে মুখে পানির ঝাপটা দিতে দিতে এসব ভাবছিল সে। ভালোবাসার মানুষে অন্য জনের ভাগ দেওয়ার মতো কষ্ট পৃথিবীতে আর একটিও নেই।আবৃতি জানে এই কষ্টটা কেমন।বিয়ের পর বরাবর সে শাহরিয়ারকে নিয়ে ইনসিকিউরড। ওয়াজিফার প্রতি তার সমবেদনা থাকলেও সে মেনে নিতে পারে না ওয়াজিফার উপস্তিতি। গুরুতর ভাবে আহত করে তাকে এই বিষয়টা।অথচ এই মুহুর্তে হয়তো ওই বাড়িতে দুজন এক সাথেই আছে।ওয়াজিফা তার দেখাশোনা করছে, খাবার বেড়ে দিচ্ছে বা দুজনে একান্তে ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত…….
না আর ভাবতে পারে না সে। দম বন্ধ হয়ে আসে তার। মাথা ধরে ওয়াশরুমে বসে পড়ে সে। কিছু একটা পড়ার শব্দে আজমী দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে যেতেই দেখতে পেল আবৃতি মাথা ধরে বসে আছে ফ্লোরে।তার কাছাকাছি যেতেই হরহর করে বমি করে দিলো সে। দ্রুত বোনের পাশে এসে দাঁড়ায়।উচ্চস্বরে মাকে ডাকে।প্রিয় মানুষ এক বার নয়, বার বার হারিয়েছে। হারানোর যন্ত্রণা তার থেকে বেশি কে জানে?
আবৃতিকে নিয়ে তারা যখন হাসপাতালে যাচ্ছিলো গেটের সামনে শাহরিয়ারের সাথে দেখা। বাজার করে ফিরছিল সে। আবৃতিকে এই অবস্থায় দেখে সকল তাল কেটে গেল তার। বাজারের ব্যাগ হাতে থেকে পড়ে গেছে।আজমীর কাছে ছুটে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে ওর?”
“এভাবে ওকে শেষ না করলে চলছিল না?”
“ও কি সুই সাইড…..
কথা শেষ করতে পারে না সে।গলায় কান্না আটকে যায়। হাত বাড়িয়ে আবৃতিকে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি আমার জীবনের সব আলো নিয়ে এভাবে হারাতে পারো না।আমি তোমাকে সেই অনুমতি দেইনি।”
চলবে (এডিট ছাড়া।যারা পড়বেন তারা রেসপন্স করবেন। আমার নতুন ইবুক #টেল_মি_হোয়েন পড়েছেন তো? যদি আপনি নতুন কারোর প্রেমে পড়তে চান তবে এটা মিস করা যাবে না। তাই দ্রুত পড়ে ফেলুন বইটই এপে মাত্র ৫০ টাকায়।
পড়ুন ইবুক “টেল মি হোয়েন”
https://link.boitoi.com.bd/rt44
#ছবিয়াল:পিন্টারেস্ট