#কাঞ্জি
#পর্ব-৩৩
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
পৃথিবীর সকল অনুভূতির সামনে এই অনুভূতির তুলনা হয়নি কখনো। যাকে কোনো শব্দ ব্যবহার করে বর্ণনা করা যায় না।প্রথম বার সন্তানের স্পর্শ বা কান্না পুরো জীবনের জন্য মস্তিষ্কে জায়গা করে নেয়। বাচ্চার কান্নার শব্দ মানেই একটি নতুন অধ্যায়, নতুন দায়িত্ব এবং ভালোবাসার শুরু। অথচ কেমন লাগবে?যদি কেউ প্রথম সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়?সহজেই কি তাকে মেনে নেওয়া যায়?মাফ করা যায়?
শাহানারার স্বামী রাকিব বুঝতে পারছে না তার এই মুহুর্তে কি করা উচিৎ। এক মন বলছে আবৃতির এখানে কোনো দোষ নেই।ভুল তাদের ও হয়েছিল কিন্তু অপর মন বলছে আবৃতির ঘুম পেলে তবে কেন বাচ্চাটাকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে গেল না? এসব চিন্তা করার সময় না এখন।বাচ্চাটাকে যে করেই হোক না কেন বাঁচাতে হবে। এন আই সি ইউ এর দরজার সামনে অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা রাকিব অথৈজলে হাবুডুবু খেতে খেতেও ভাবলো এই মুহুর্তে সে যদি চুপ থাকে তবে আবৃতির সংসার ভেঙ্গে যাবে। আকষ্মিক দূর্ঘটনায় কারোর হাত নেই।
অপর দিকে আবৃতি হাসপাতাল থেকে ফিরে নিজ রুমের দরজার সামনে বসে আছে। কি হারিয়েছে কি পেয়েছে হিসেব মিলছে না তার।তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের এতটা ঠুনকো অবস্থান মেনেও নিতে পারছে না। হাত বাড়িয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলো সে। চেনা রুমটা আজ তার বড্ড অচেনা।এক সময় ভালোবাসার চাদরে মোড়ানো এই ছোট্ট স্বর্গ আজ নিছক জাহান্নাম মনে হচ্ছে। টুংটাং শব্দে কলিং বেল বেজে উঠলো। দুই হাতে চোখ মুছে মাথায় ওড়না তুলে এগিয়ে গেল সদর দরজার দিকে।ধৈর্যের প্রতিদান হিসেবে সৃষ্টিকর্তা তার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছেন শাহরিয়ারকে। দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো আবৃতি। ষোড়শী আবৃতিকে দেখে প্রথমবার প্রেমে পড়েছিল শাহরিয়ার।তার জন্য আবৃতি ছিল ছোট্ট একটু পুতুল। যাকে দুই হাতে আগলে রেখেছিল সে।কত আশংকা, ভয়, ভীতি কিংবা অনিশ্চয়তা ছিল তাদের সম্পর্কে অথচ সবচেয়ে ভরসার কাঁধ ছিল শাহরিয়ার।আজ সেই জায়গা আর নেই।তাকে কেউ বিশ্বাস করছে না। শাহরিয়ার নিজেও কি বিশ্বাস করছে তাকে? সব যেখানে শেষ সেখানে দ্বিতীয় কোনো কথা বলা বোকামী।তাই দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো।ক্লান্ত শাহরিয়ার কোনো কথা না বলে রুমের ভিতরে চলে গেল।আবৃতির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে প্যাক করে বলল,
“তোমার আর কিছু নেওয়ার প্রয়োজন আছে?”
“আমার এসবের প্রয়োজনও নেই।”
“কি প্রয়োজন আছে কি না আমি বুঝবো।তুমি দেখবে তোমার কিছুর প্রয়োজন আছে কি না।”
“না আমার কিছুই প্রয়োজন নেই।”
“তবে এসো।”
“কোথায়?”
“এখানে তোমাকে রাখা যাবে না আবৃতি। আমি চাই না আমাদের সংসারটা ভেঙ্গে যাক।”
“মানে?”
“আমরা আজকে আমাদের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি।আজ থেকে তুমি ওখানেই থাকবে। ”
“আর আপনি?”
“সংসার কি একার হয়?তোমার কারণে আমাকেও ঘর ছাড়তে হলো। ঘর ছাড়া সম্ভব কিন্তু তোমায় ছাড়া সম্ভব না।”
গাড়ির দরজা খুলে অপেক্ষা করে শাহ। আবৃতি উঠে বসবার আগে একটা বার পিছন ফিরে তাকায়। কেন যেন মনে হয়, রি তার এবাড়িতে শেষ সময়।আর কোনো দিন ফেরা হবে না নিজ নীড়ে।অথচ শাহরিয়ার যেখানে সেখানেই তো তার সংসার হওয়ার কথা।নতুন ফ্ল্যাটটা তার ভীষণ অচেনা লাগলো। তাকে রেখে শাহরিয়ার চলে গেছে অনেক আগেই।বারান্দায় বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।নতুন বাসা তাই বাহির থেকে তালা দিয়ে গেছে শাহরিয়ার। চাইলেও বের হতে পারবে না মেয়েটা।একা নীরব বাসায় অস্থির লাগে তার।বারান্দায় দাঁড়িয়ে পথের দিকে তাকিয়ে রয় সে । এই বুঝি শাহরিয়ার এলো।অপেক্ষায় তার দুই চোখে ঘুম নামে অথচ শাহরিয়ার ফিরে না।রাত পেরিয়ে ভোর হয়, সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা।অথচ শাহরিয়ার ফিরেনি।সে কি ভুলে গেল আবৃতির কথা?তার কাছে যে একটা ফোন অবধি নেই।
চলবে( এডিট ছাড়া। যারা গল্প পড়বেন রেসপন্স করবেন।পেজের রিচ একদম নেই।)
পড়ুন ইবুক “টেল মি হোয়েন” মাত্র ৫০ টাকায় বইটই এপে
https://link.boitoi.com.bd/rt44
#ছবিয়াল:সাদিয়া মৃণালিনী