#বিয়ে_থা
#পর্ব-১৭
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
(কপি নিষিদ্ধ)
বেলা নয়টা। বাহিরে রোদের আলোয় চারিদিক ঝলমল করছে। ফারিন আজ স্কুলে যায়নি। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা। বিকেলে পাইভেটে যাবে শুধু। হাতে মুঠোফোন নিয়ে সে অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত ফোনের। ঘড়ির কাটা আরও দশ মিনিট অতিক্রম করলো। তারপরই তার মুঠোফোন শব্দ করে বেজে উঠলো। রিসিভ করে কানে চেপে ধরলো সে।
‘ কেমন আছিস বনু? ‘
ফারিন ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো,
‘ মাম্মা তোমাকে আবার বিয়ে দিতে চাইছে ব্রো! ‘
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,
‘ সে জানলো কিভাবে? ‘
‘ পাপা বলেছেন। সে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। তুমি এলে তার পছন্দের পাত্রীর সাথে বিয়ে করিয়ে দিবে বলেছে। ‘
‘ আর কি বলেছে বাবা? ‘
ফারিন নাক টেনে টেনে বলল,
‘ তুমি ভাবিকে ফিরিয়ে আনতে দার্জিলিং গেছিলে, এবং মাম্মামের সাথে ঝগড়া করা মেয়েটিই আমার ভাবি। সেগুলো সব জেনে গেছে মাম্মাম। পাপা সব বলে দিয়েছে ব্রো। ভাবি বর্তমানে বান্দরবান আছে, তোমার ক্যাম্পেও গিয়েছে। সেগুলো ও মাম্মাম জানে। ‘
ধ্রুব নিজের চুল এক হাতে মুঠো করে ধরলো। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো।
‘ বাবার থেকে সব জেনে নিচ্ছে সে? বাট..বাবাকে সব বলছে কে… ও মাই গড নিরব!’
ফারিন ফুসফুস করে উঠলো,
‘ তোমার ওই অফিসার বাবাকে ফোনে না পেয়ে আমাকে ফোন করে বলে বাবাকে সব বলতে। বুঝতে পারছো কতবড় শয়তান সে?’
ধ্রুবের কপাল দপদপ করছে।
‘ স্কুলে যাস নি আজ? ‘
ফারিন ঠোঁট ফুলালো,
‘ মাম্মা বকেছে রাতে। সেজন্য আজ যাইনি৷ ব্রো আমি ভাবিকে দেখবো। ‘
‘ তোর ভাবিকে আমিই দেখিনি। ‘
ফারিনের উত্তরটি পছন্দ হলো না। রেগে বলল,
‘ তুমি মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে নিবে তাই না? আমি একদম করতে দিবো না বিয়ে তোমাকে। তুমি বাড়িতেই আসবে না আর। ‘
ধ্রুব এবার শব্দ করে হাসলো,
‘ তোর কেন মনে হচ্ছে আমি মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে নিবো? আচ্ছা যা বিয়ে করবো না। এবার ছবি পাঠা দেখি মায়ের পছন্দের মেয়েকে। ‘
ফারিন চিৎকার করলো,
‘ তোমাকে আমি ছাড়বো না, তুমি বিয়ে করতে চাইছো! আমি তোমাকে….. ’
ফারিন কাঁদছে। ধ্রুব সিরিয়াস হলো।
‘ আ’ম স্যরি সিস্টার। মজা করছিলাম। তবে আমি আসছি এক সপ্তাহ পর৷ ‘
ফারিন ফুপাতে ফুপাতে বলল,
‘ তাকে সাথে নিয়ে এসো। ’
ধ্রুব ‘ দেখা যাক ‘ বলে ফোন রেখে দিলো। ফারিনের ঠোঁটের কোণে হাসি। এবার সে দেখবে মাম্মা কিভাবে ভাইকে আবার বিয়ে দেয়!’
–
রমজান শেখ আজ অফিসে যাননি। নিজের ঘরেই বসে আছেন তিনি। এ কয়দিন মিথিলাকে এড়িয়ে গেছেন। তবে মিথিলা ও থামার পাত্রী নন। পঁচিশ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে আজ রমজান শেখকে নিজের কথায় মানাকে পেরেছেন। মূলত সেজন্যই রমজান শেখ আজ বাসায়।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন মিথিলা। সাথে একজন ডাক্তার। মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছেন এই ডাক্তার কে। রমজান শেখ ডাক্তার দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকালেন মিথিলার দিকে। মিথিলা পাশে বসলেন।
‘ ডাক্তার তোমার সাথে কথা বলবেন। প্লিজ না করো না। ‘
রমজান শেখ গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘ কিসের কথা? ‘
ডাক্তার কথা বললেন,
‘ হাই ইয়াংম্যান৷ আমি সাইকিয়াট্রিস্ট জয়নাল আহমেদ। বয়সে তোমার বাবার বয়সী হবো। তুমি কি তোমার সবকিছু আমাকে নির্ধিদ্বায় শেয়ার করবে? ‘
রমজান শেখ অকপটে জবাব দিলেন,
‘ আমি ইয়াং ম্যান নই, চব্বিশ বছর বয়সী আমার একটি সন্তান রয়েছে। আর আমার কোনো কথা শেয়ার করতে আমি ইন্টারেস্টেড নই। আপনি আসতে পারেন ডক্টর৷ ‘
মিথিলা অনুনয় করে বললেন,
‘ একটু কথা বলে দেখো না। প্লিজ? ‘
রমজান শেখ রেগে গেলেন।
‘ তুমি এই ডক্টর নিয়ে বিদায় হবে? নাকি আমি…! ‘
মিথিলা ঢুক গিললেন। মানুষটা ধীরে ধীরে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। সে ডক্টর কে নিয়ে প্রস্থান করলো। রমজান শেখ ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন।
‘ মিথি, বোকা প্রিয়তমা আমার। পঁচিশ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো ক্ষত তুমি একদিনে মুছে দিতে পারবে না। এসব ডক্টর আমার বুকের ক্ষত সারিয়ে দিতে পারবে না।’
মিথিলা এলেন আবারও। বসলেন রমজান শেখের পাশে। কাঁধে মাথা রাখলেন সন্তপর্ণে। রমজান শেখ কিছু বললেন না। সব জানার পর মিথিলার পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক। বরং বুকে টেনে নিলেন। এক হাত ডুবিয়ে দিলেন চুলে।
‘ তোমার ঘৃণা হচ্ছে না মিথি? ‘
‘ সব জানার পর তোমার প্রতি যা ঘৃণা ছিল তা নাই হয়ে গেছে। ‘
‘ আমি সেটা বলিনি। আমার কাছে আসতে তোমার ঘেন্না লাগছে না? আমাকে সাতজন সমকামী নির্যাতন করেছিল মিথি। এখন নিশ্চয়ই আমার সাথে ইন্টিমেট হতে তোমার ঘেন্না লাগবে? হা হা হা। ‘
মিথিলা মাথা তুলে তাকালেন। গালে এক হাত ডুবিয়ে চোখে চোখ রাখলেন।
‘ ভালোবাসা মানে কি শরীর ছোঁয়া শেখ বাবু? হ্যাঁ এটাও একটা অংশ। তবে একটা সময় পর যখন আমাদের শারিরীক চাহিদা কমে যাবে তখন একে অপরের সঙ্গী হয়ে থাকাটাই তো ভালোবাসা। শেষ বয়স পর্যন্ত হাতে হাত রেখে পাশে থাকাটাই তো ভালোবাসা। আর আমার কাছে তুমি সবসময়ই পবিত্র। অপবিত্র তো তারা, যাদের জন্য তুমি এরকম হয়ে গেছো। আর যদি প্রশ্ন করো আমার প্রতি তোমার এতোদিনের করা অত্যাচার। তবে বলবো আমি হয়তো তোমার কাছে তেমন কেউ ছিলাম না। তাই তুমি আমাকে নিজ থেকে কিছু বলোনি। একটা বার বলে দেখতে! আমার ভালোবাসা কি এতোটাই ঠুনকো মনে হয়েছিল তোমার? যে তোমার প্রতি হওয়া নির্যাতনের কথা শুনে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো!’ এই বুঝেছিলে তোমার মিথিকে? তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসোনি শেখ বাবু। যদি বাসতে তবে আমাকে এতোদিন কষ্ট দিতে পারতে না।’
রমজান শেখ কিছু বললেন না। মিথিলা চোখের জল মুছে তার শার্ট নষ্ট করে দিলেন। অভিমানী কন্ঠে বললেন,
‘ এই বয়সে এসেও নিজেকে এতো সুদর্শন বানিয়ে রেখেছেন। রাখুন। কিন্তু খবরদার আজকের পর থেকে আমি ছাড়া আর কারো দিকে যেনো তাকাতে না দেখি। নাহলে…
‘ নাহলে? ‘
মিথিলা নাক টানলেন,
‘ তোমাকে মেরে নিজেও মরে যাবো। ‘
রমজান শেখ উঠে দাঁড়ালেন। বের করে আনলেন কিছু চিঠিপত্র। সবকটা মিথিলার সামনে রেখে বললেন,
‘ এ পর্যন্ত পাওয়া সব প্রেমপত্র। ‘
মিথিলা ফুসফুস করতে লাগলেন। রমজান শেখ ঠোঁট কামড়ে হাসলেন।
‘ খুলে দেখো। এরমধ্যে কয়েকটা এডাল্ট চিঠিও আছে। তোমার স্বামী মারাত্মক হট কি না! ‘
মিথিলা রেগে চিঠি পড়তে শুরু করেছেন। সত্যিই কয়েকটা এডাল্ট চিঠি আছে। ঘৃনায় তার চোখমুখ কুঁচকে গেলো।
‘ এদের সাথে কি করেছেন? ‘
‘ এরা সবাই আমার মেয়ের বয়সী ম্যাডাম। কিছু করার চান্স নেই। ‘
মিথিলা মানলেন না। সাহস দেখিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরলেন।
‘ সত্যি বলো আমায়! ‘
রমজান শেখের হাত শক্ত করে কোমড় পেচিয়ে ধরেছে। কানে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
‘ আমার জানামতে আমি তুমি ছাড়া আর কাউকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেখিনি মিথি! যাদের নিয়ে দরজা বন্ধ করেছি সবাইকে টাকা দিয়ে অভিনয় করাতে বাধ্য করেছি। ‘
মিথিলা নাক ফুলালেন,
‘ সেই তো আজ সব স্বীকার করেছো। শুধু শুধুু জীবন থেকে পঁচিশ বছরের আনন্দ এভাবে নষ্ট করে দিলে! ‘
রমজান শেখ কিছু বললেন না। তার স্পর্শের হিংস্রতা বাড়লো। মিথিলা চোখের জল ঝরালেন। রমজান শেখ অনুতপ্ত হলেন,
‘ স্যরি, অভ্যাস তো! ‘
মিথিলা কঠিন চোখে তাকালেন,
‘ আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো, যদি তুমি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে না যাও! ‘
রমজান শেখের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। গাল চেপে ধরলেন মিথিলার।
‘ তোমাকে আমি…তোমাকে আমি বন্দী করে রাখবো প্রিয়তমা। যেমন করে রেখেছি পঁচিশ বছর ধরে! আর একবার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে দেখো! মেরে ফেলবো, একদম মেরে ফেলবো! তোমায় আমাকে ভালোবাসতে হবে না। ঘৃণা করো, তবুও থেকে যেও! ‘
(চলবে)
[ সবাই বেশি বেশি করে ‘পর্বটা ছোট হয়েছে’ বলে কমেন্ট করেন। না মানে সবচেয়ে বড়ো পর্ব যেটা ছিল সেটাতে সেম কমেন্টই করেছিলেন আপনারা। আজকের পর্বটা ছোট। বেশি বেশি করে কমেন্ট টা করবেন ঠিক আছে? ]