#অনুপম_ভালোবাসা
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
অন্তিম পর্ব
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
রাদ নরম গলায় বলল,
__” আমি কি তোমাকে ছেড়ে ভালো আছি? কোন কারণ ছাড়া, বিয়ের পর বউকে এভাবে বাপের বাড়ি ফেলে রাখতে কোন ছেলেই নিশ্চয়ই চাইবে না। পরীক্ষার চলাকালীন সময় থেকে শুরু করে আজকে দুই দিন একটা চাকরির জন্য দৌড়ে বেড়াচ্ছি। যেন তোমাকে ভালো রাখতে পারি। যদিও ভালো রাখা সম্পূর্ণই আল্লাহ তালার হাতে। তবুও আমাদের কে বসে না থেকে চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। তার উপর তোমার মোহরানা এখনো পরিশোধ করতে পারছি না আমি। ইদানিং নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হয়।
নজরাত ভাঙা গলায় বলল,
__” তোমার মোহরানা দিতে হবে না, মোহরানা মাফ করে দিচ্ছি আমি। তবুও আমি তোমার কাছে থাকতে চাই। আশেপাশের মানুষ খারাপ মন্তব্য করে যেগুলো আমার একদম সহ্য হয় না। মন খারাপ হয়, ভীষণ কান্না আসে। এখন সবকিছু ছেড়ে কোথাও একটা চলে যেতে ইচ্ছে করে। যেখানে কোন দুঃখ কষ্ট আমাকে ছুঁতে পারবেনা। তাছাড়া বিয়ের পর থেকে সারাক্ষণ আপনার কথা মনে পড়ে আপনার সাথে একান্তে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে। আপনার প্রতি মাথা রেখে রাত পার করতে ইচ্ছা করে।
রাদ ক্ষীণ একটু হেসে বলল,
__” ঐ দিন রাতে তোমার সাথে কথা বলতে পারিনি বলে সারারাত ছটফট করে ঘুমাতে পারিনি। কেন জানো কারণ তোমাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে কেমন যেন অস্থির লাগে। আশেপাশের সবকিছু মূল্য থাকেনা আমার কাছে। তখন শুধু মনে হয় তুমি আমার সবকিছু। শরীর তখন কেমন যেন খারাপ লাগে মনে হয় তোমাকে পেলেই ভালো হয়ে যাবে। আমি হয়তো বোঝাতে পারছি না তোমাকে ভাববো ভালবাসি আমার বউটাকে।
__” তাহলে আজকে এখানে আমার সাথে থেকে যান প্লিজ? আজকে আপনি চলে গেলে আমি নিজেকে একদম সামলাতে পারবো না।
__” আমি থাকলে যে কিছু একটা ঘটে যাবে ম্যাডাম! তখন এই দায় কে নেবে বলেন?
নজরাত লজ্জা রাঙ্গা হয়ে বলল,
__” আমি তার জন্য প্রস্তুত। আমি চাই আজ ভিন্ন কিছু ঘটুক। ভিন্ন ভালোলাগায় ভেসে যেতে চাই আপনার হাত ধরে। নিয়ে যাবেন আমাকে?
__” ভেবে বলছো তো? পরে আবার আমাকে দোষ দেবে না তো?
__” উঁহু একদম না।
রাত এগারোটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। দরজায় নক করে রাফি। আর বলে,
__” এই আপু খাবার খেতে আয়। আম্মু খাবার বেড়ে বসে আছেন সেই কখন থেকে তোরা না আসা পর্যন্ত আমাকেও খেতে দিচ্ছে না। এদিকে খিদায় আমার পেটে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে।
নজরাত আর রাদ হাসি দিয়ে একজন আরেকজনকে ছেড়ে দাঁড়ায়। তারপর নজরাত গিয়ে দরজা খোলে। রাফি দশটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন আজকে এখনো জেগে আছে বলে তার চেহারা বাংলার পাঁচের মত দেখা যাচ্ছে।
খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসলে। রাফি রাদ কে বলল,
__” আপনার বউ একটা শেখ হাসিনা! সেটা জানেন আপনি?
রাফির কথায় নজরাত বিষম খেয়ে বলল,
__” তুই একটা পলক বুঝলি? বেদ্দ প ছেলে কোথাকার।
রাদ ভাই বোনের খুনসুটি দেখে রাফি কে বলল,
__” কেন তোমার বোন কি করেছে বলো তো?
__” ভাইয়া আপনার বউ আমাদের বাসায় যেই রাজত্ব করে। মনে হয় যেন বাসাটা একা ওর। যেমন শেখ হাসিনা মনে করতেন দেশটা ওনার বাপের। সেজন্যই বলেছি।
রাফির কথায় খুব হাসে রাদ। এদিকে নজরাত তার ভাইকে ইচ্ছা মতো বকা দেয়।
খাবার খাওয়া শেষে রুমে এসে রাদ নজরাত কে পিঞ্চ মেরে বলল,
__” শেষে কিনা আমার বউ একটা শেখ হাসিনা!
নজরাত খুব রে গে যায় এ কথা বললে। রেগে ব্যালকনিতে চলে যেতে নিলে রাদ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে যেতে দেয় না। তারপর একপাশের চুল গুলো সরিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আকস্মিক এমন উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠে নজরাত। তারপর শান্ত হয়ে স্বামীর প্রশস্ত বুকে মুখ লুকায়। দুই হাতে গাল আলতো হাতে উপরে তুলে রাদ, নজরাত লজ্জাবতী পাতার মতো মিইয়ে যায় কিছুতেই তাকিয়ে থাকতে পারে না। রাদ মুচকি হেসে তার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়েত্তে দখল করে নেয়। তারপর দুজন দুজনের স্পর্শে হারিয়ে যায় বহুদূর।
.
.
এক সপ্তাহ পর পরিবারকে নিয়ে এসে নজরাত কে নিজের বাসায় নিয়ে যায় রাদ। এক বন্ধুর থেকে টাকা ধার করে নজরাত এর মোহরানার টাকা পরিশোধ করে কিন্তু নজরাতকে বলে না। আপাতত ছোট একটা কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে সরকারির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে রাদ।
শুরু হয় তাদের নতুন সংসার জীবন। নজরাত সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলে। শশুর বাড়িতে মেয়েদের এই এক যুদ্ধ বলা চলে। যদিও ভাগ্য গুনে নজরাত তার শশুর বাড়ির লোকজন ভালো পেয়েছে। তারা ও মিলেমিশে কাজে সবকিছুতেই সাহায্য করে তাকে। চৈতির সাথে ও খুব সুন্দর মিলেমিশে থাকে নজরাত তাছাড়া চৈতির কখন কি প্রয়োজন সবকিছুর খেয়াল রাখে। চৈতির জন্য ভীষণ মায়া হয় মেয়েটার। মাঝে মাঝে চৈতির জায়গায় নিজেকে ভাবলে কষ্টে চোখে পানি চলে আসে। স্বামী ছাড়া একটা নারী কতটা অসহায় তা চৈতি কে দেখে বুঝতে পারে নজরাত। তাই সবসময় চেষ্টা করে চৈতি কে একটু ভালো রাখার।
এক বছর পর,
চৈতির বাবা মা এতো দিনে তাকে মেনে নিয়ে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলে লিপি বেগম দিতে অমত করলে ফারুক সাহেব বুঝিয়ে বলেন,
__” তুমি যতই আদর যত্ন করো না কেন এই সময় তো পার করে এসেছো জানোই তো মেয়েরা এই সময় মায়ের কাছে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এখন তুমি যেতে না দিলে মেয়েটার মন খারাপ হবে। তাই তুমি আর অমত করো না যেতে দাও।
লিপি বেগম হয়তো বুঝতে পারলেন তাই যেতে দিলেন। তবুও তার দুশ্চিন্তা হয় যদি চৈতির বাবা মা তাকে দ্বিতীয় বিয়ে দিতে চান তাহলে তার নাতনির যে অবহেলা হবে। আর এটা লিপি বেগম একদম মানতে পারবেন না। এমনিতেই মেয়েটার বাবা নেই এখন যদি মাকেও হারায় তাহলে মেয়েটা যে পুরোপুরি অনাথ হয়ে যাবে।
তাই তিনি ভয় পান চৈতি কে বাপের বাড়ি যেতে দিতে।
একদিন নজরাত চৈতির মেয়ে তাইয়্যেবা কে নিয়ে আদর করছে আর তাইয়্যেবা ছোট্ট ঠোঁট প্রশারিত করে হাসছে। রাদ তাইয়্যেবার গাল ছুঁয়ে দিয়ে বলে আমাদের ও এমন ছোট্ট একটা মেয়ে বাবু চাই। নজরাত মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
__” আমার ও খুব ইচ্ছা তাইয়্যেবার মতোই একটা ফুটফুটে মেয়ে বাবুর।
একমাস হলো নজরাত জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।তাই রাদ চিন্তিত হয়ে বলল,
__” আচ্ছা, এই শরীরে তুমি পরীক্ষা গুলো দিতে পারবে? তিন মাস তো ফুল রেস্টে থাকতে হয়।
উত্তরে নজরাত বলে,
__” পারবো ইনশা আল্লাহ। পড়াশোনা টা আমি শেষ করতে চাই প্লিজ আপনি নিষেধ করবেন না।
__” আমি কি একবারও নিষেধ করেছি? এখন তোমার শরীরের কথা ভেবে বলেছি।
নজরাত এর এবার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। তাই রাদ তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে আসে। যতই হোক শশুর বাড়িতে টুকটাক কাজ না করে বসে থাকা যায় না এতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। তাছাড়া নজরাত এর এখন রেস্টে থাকা উচিৎ সবকিছু মিলিয়ে রাদ নজরাত কে তার মায়ের কাছে নিয়ে আসে।
তাছাড়া রাদ অফিস শেষ করে রাতে তার বউয়ের কাছে চলে আসে। নজরাত কে ছেড়ে তার একদম ঘুম আসে না।
মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় নাস্তা সহ বিভিন্ন বাজার করে নিয়ে আসে শাশুড়ি মায়ের বাসায়। এগুলো তাকে ফারুক সাহেব শিখিয়ে দিয়েছেন। তরিকা বেগম মহিলা মানুষ হয়ে বাহির ঘর দুটোই সামলাতে হয় তাই ছেলেকে বলেছেন সে যেন কখনো খালি হাতে ও বাসায় না যায়। বাবার কথায় তার উপর শ্রদ্ধায় বুক আনন্দে ভরে যায় রাদ এর। তাদের বাবা সবসময় চেষ্টা করেছেন ভালো শিক্ষা দেওয়ার এবং তাঁরাও মেনে চলেছে বরাবর।
কথায় আছে মা যেমন হয় মেয়ে তার তেমন স্বভাব চরিত্র পায় এবং বাবা যেমন হয় ছেলে তার মতো হয়। যদিও সবাই হয় না তবুও বেশিরভাগ হয়।
রাদ সন্ধা বেলা পিজ্জা নিয়ে আসে সবার জন্য। আর নজরাত এর জন্য কাঠ বাদাম, কাজুবাদাম আর কিশমিশ নিয়ে আসে। কিন্তু নজরাত পিজ্জা খেতে চাইলে রাদ না করে। এই সময়ে ফাস্ট ফুড খাওয়া একদম নিষেধ করেছেন ডাক্তার। নজরাত খেতে পারবে না বলে রাদ ও পিজ্জা খেল না। বাদাম নজরাত কে খাইয়ে দিচ্ছে সাথে নিজেও কিছু খাচ্ছে। নজরাত এর মন খারাপ পিজ্জা খেতে দেয়নি বলে তাই তাকে হাসানোর জন্য রাদ কিস করতে গেলে নজরাত মাথা কাত করে সরে গেলে রাদ হেসে বলল,
__” কিস মিস!
__” মানে?
__” এই যে তুমি কিস করতে দিলে না তাই মিস!
নজরাত হেসে নিজেই তাকে কিস করে। তখন রাদ নজরাত এর সামনে কিসমিস ধরে বলে,
__” কিসমিস খাও।
নজরাত খেয়ে রাদ এর বুকে নিজেকে লেপ্টে রাখে। আর তাদের বেবিদের নিয়ে বিভিন্ন প্লান করে।
🌿সমাপ্ত 🌿
(আসসালামু আলাইকুম।
অনেক দিন পর আব্বুর বাড়ি এসেছি তাই আর গল্পটা লিখতে ইচ্ছা করছে না। তাছাড়া আপনাদের অপেক্ষা করতে হয় তাই শেষ করে দিলাম। কেমন হয়েছে জানাবেন।)