অনুপম ভালোবাসা পর্ব ৯

0
30

#অনুপম_ভালোবাসা(৯)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

হুমাইসা ভার্সিটিতে ঢুকে ক্যাম্পাস এর এক কোণে বেঞ্চ রাখা জায়গাটায় এসে বসলো। রাদ আর তার বন্ধুরা মিলে এখানেই বেশিরভাগ সময় আড্ডা দেয়। আজকে বোধহয় এখনো আসে নাই। আশেপাশে ভালো করে দেখে নিল, না কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাদের ক্লাসে একবার গিয়ে খুঁজবে কি? কিন্তু এই সময়ে ক্লাস আছে কিনা তার ও তো ঠিক নেই। তাছাড়া রাদ এর কিছুদিন পরেই মাষ্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা এই সময়ে ক্লাস হয় কিনা জানা নেই। আচ্ছা কিছুদিন পর পরীক্ষা বলে রাদ যদি ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করে দেয় তাহলে তো মুশকিল! রাদ এর সাথে কথা বলতে না পারলে ওদের মধ্যে কিচ্ছু ঠিক হবে না।

নানা কথা ভাবতে ভাবতে হুমাইসার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এদিকে নজরাত কে বলে এসেছে শপিং মলে যাবে সে। যদি সত্যি কথা বলতো তাহলে নজরাত বুঝে ফেলতো তখন কিছুতেই হুমাইসাকে ভার্সিটিতে আসতে দিতে চাইতো না।

প্রায় ঘন্টা খানেক এখানে বসে অপেক্ষা করলো হুমাইসা কিন্তু রাদ এর দেখা পেল না। শেষে ধৈর্য হারা হয়ে চলে যাওয়ার জন্য ভার্সিটিতে থেকে বেরিয়ে লেগুনার জন্য দাঁড়ালে পেয়েও যায়। লেগুনায় তার সাথে একজন মহিলা যাত্রী, আর দুজন হলেই বোধহয় গাড়ি ছেড়ে দিবে।
হুমাইসা মন খারাপ করে ভার্সিটির গেইটের দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজন যাত্রী আসতেই গাড়ি ছেড়ে দিবে এমন সময় রাদ কে বাইক সমেত ভার্সিটিতে ঢুকতে দেখা গেল। হুমাইসা দ্রুত বলল,
__” মামা গাড়ি থামান।
ড্রাইভার গাড়ি থামাতে‌ই হুমাইসা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভার্সিটিতে ঢুকে গেল। তার এমন কান্ডে সবাই একটু অবাক হল কিন্তু কেউ কিছু বলল না। ড্রাইভার আর বসতে পারলো না গাড়ি ছেড়ে দিতে হলো। এসব রোডে গাড়ি বেশিক্ষণ দাড় করিয়ে রাখা যায় না তাই।

হুমাইসা ভার্সিটিতে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে সেই বেঞ্চের কাছে রাদ কে দেখতে পেয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রাদ এর কাছে গিয়ে বলল,
__” আসসালামু আলাইকুম। ওহ অবশেষে আপনাকে পেলাম ভাইয়া।
শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে রাদ তার বন্ধুদের দিকে একবার চেয়ে বলল,
__” আমাকে বলছেন?
__” হ্যাঁ ভাইয়া। আমি নজরাত এর বান্ধবী হুমাইসা।
নজরাত এর নাম শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে রাদ বলল,
__” ও কি আপনার বাসায় আছে?
__” হ্যাঁ ভাইয়া, ওর ব্যাপারেই আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি। আপনার কি সময় হবে?
__” হ্যাঁ অবশ্যই। চলেন কোথাও বসে কথা বলি?
__” আচ্ছা।

তারপর রাদ তার বন্ধুদের বলে হুমাইসাকে নিয়ে ভার্সিটির পাশে একটা ছোট রেস্তোরাঁয় বসে। হুমাইসা প্রথমে বলে,
__” ভাইয়া, নজরাত খুব আপসেট হয়ে আছে। আমি ওর থেকে সবকিছু শুনেছি। তাছাড়া বিয়ের আগে আপনি যখন দেখতে যান তখন আমি ই ওকে ওভাবে সাজিয়ে দেই। ও লজ্জায় আপনার সামনে যেতে চাইছিল না সে জন্য। এর আগের দিন ভার্সিটিতে বান্ধবীরা মিলে ডেয়ার দিয়েছিল তাই আপনার সাথে কথা বলতে গিয়েছিল। সবকিছুর জন্য ও খুব লজ্জা পাচ্ছিলো সে জন্য বিয়েটা ও করতে চাইছিল না। এখন আপনি ওকে ভুল বুঝেছেন। আমি কি বলবো ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি হয় তো।

রাদ সবটাই শুনলো এবং বুঝতে পারলো। অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলল,
__” আমি বুঝতে পারছি সবকিছু। ওর ফোন বন্ধ পেয়ে আমি ওদের বাসায় গিয়েছিলাম তখন আমার শাশুড়ি মা বললেন, ওর কোন এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে। কিন্তু ফোন কেন বন্ধ করে রেখেছে বলেন তো? ও কি ভুলে গিয়েছে যে, ও এখন বিবাহিত। ওকে ওর হাসব্যান্ড খুঁজতে পারে, এটা কি ও বুঝতে পারছে না বলেন?
__” আপনি নাকি কয়েক দিন ওর সাথে কোন যোগাযোগ করেন নাই? তাই ও ভাবছে আপনি ওর উপর রেগে আছেন তাই ওর সাথে কোন যোগাযোগ করছেন না।
__” হ্যাঁ। কিছুদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া পড়াশোনা আছে, পরীক্ষার তো বেশিদিন নেই। আপনি ওকে ব‌ইলেন আমি ওর উপর রে গে নেই আর ও যেন ফোন বন্ধ না রাখে।
__” আচ্ছা বলবো। আজকে তাহলে আসি ভাইয়া।

হুমাইসা বসা থেকে উঠতে নিলে রাদ দ্রুত বলে উঠে,
__” সেকি কিছু না খেয়েই চলে যাবেন? কি খাবেন বলেন?
__” না ভাইয়া এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গেছে আজকে যেতে হবে।
__” না না, তা বললে তো হবে না আমি অনুরোধ করছি কিছু খেয়ে যান না হলে আমার খারাপ লাগবে।
__” আচ্ছা তাহলে কোল্ড কফি খাব।
__” শুধু কফি?
__” হ্যাঁ ভাইয়া, আমি বাসায় যেতে হবে।

রাদ মুচকি হেসে বলল,
__” আচ্ছা তাহলে নজরাত কে কোনদিন আসবেন তখন বেশি করে খাবেন।

রাদ এর কথায় হুমাইসা ও মুচকি হেসে বলল,
__” ইনশা আল্লাহ।

তারপর, হুমাইসা কোল্ড কফি খেয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়ালে রাদ নিজেই রিক্সা ঠিক করে ভাড়া মিটিয়ে দেয় রিক্সা চালক কে। এতে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে যায় হুমাইসা। রাদ কে বলে,
__” এসবের কি দরকার ছিল ভাইয়া?
__” আমার জন্য‌ই তো আপনার লেইট হলো না? আচ্ছা যাই হোক আপনার বান্ধবীকে মনে করে বলবেন প্লিজ।
__” আচ্ছা বলবো।

হুমাইসা চলে যাওয়ার পর রাদ ও বাসায় চলে যায়। নজরাত এর খোঁজ পাওয়াতে এখন শান্তি লাগছে। মনটা কিছুদিন খুব অস্থির লাগছিল তার।
.
.
ফারুক সাহেব বসে চা পান করছিলেন এমন সময় জুঁই আব্বা বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। ফারুক সাহেব চায়ের কাপ রেখে বললেন,
__- কিরে এভাবে ছোটাছুটি করছিস কেন? ব্যথা পাবি তো।
__” আব্বা খবর শুনেছো? কোটা বাতিলের জন্য ছাত্ররা আন্দোলনে নেমেছে।
__” ভালো কাজে নেমেছে তারা আল্লাহ তাদের সহায় হোন আমিন। জানিস অনেক মানুষ আছে যারা মুক্তিযুদ্ধার নামে জালি য়াতি, প্রতা রণা ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে সরকারি ভাতা নিচ্ছেন। তাছাড়া এই কোটা মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য বা তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য ও ঠিক আছে কিন্তু তাদের নাতিপুতি দের দেওয়া কোন মানে হয় না। তাদের যদি মেধা থাকে তাহলে তারা এমনিতেই নির্বাচিত হবে। সেখানে কোটার তো কোন প্রয়োজন নেই। কোটার জন্য অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
__” জ্বি আব্বা।

দিন যত যাচ্ছে কোটা বাতিলের আন্দোলন ততো ভয়া বহ রুপ নিতে থাকে। ফারুক সাহেব জুঁই কে আন্দোলনে পাঠাতে চাইলে লিপি বেগম বাধা দিয়ে বলেন,
__” উম্মে যিয়াদ রাঃ বলেন,রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যমানায় আমরা ছয়জন মহিলা খয়বর এর যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য রওয়ানা হলে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর পেয়ে আমাদেরকে ডাকলেন,আমরা তাঁর নূরানী চেহারায় গোস্বার আলামত দেখছিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,তোমরা কার অনুমতি লইয়া আসিয়াছ? আমরা বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা পশম বুনিতে জানি। জেহাদে ইহার প্রয়োজন হয়। আমাদের সাথে জখমের ঔষধও আছে। আর কিছু না হোক মুজাহিদ দের তীর এগিয়ে দেয়ার কাজে সাহায্য করবো,কেউ অসুস্থ হলে সেবা শুশ্রূষার কাজে সাহায্য, ছাতু গোলানো,পানি দেয়ার কাজে সাহায্য করবো। অত:পর তিনি অনুমতি দিলেন।

এর দ্বারা আমরা কি বুঝতে পারলাম? বুঝলাম যে মহিলারা যুদ্ধে যাওয়া রাসুল অপছন্দ করেছেন। আর যারা তখনের দলীল দেন তাদের জানা আবশ্যক যে,মহিলারা ময়দানে নামে নাই। জিহাদের সময় উভয় পক্ষ নিজেদের নির্ধারিত এলাকায় তাবুতে অবস্থান করতো। মহিলারা নিজেদের দলের লোকদেরকে সাহায্য করতো। নন মাহরাম দের গায়ে ধরে ধরে বাঁচাতে নামতো না। আর যখন পর্দার হুকুম নাযিল হলো তখন অনেক কিছুই বদলে গেলো। দাসিরা যেতো সাথে যেন খেদমত করতে পারে। (আবু দাউদ। হেকায়াতে সাহাবা)

সব জায়গায় ইসলাম টানা লাগে না আবার কারো কারো কারণে কিছু জায়গায় ইসলাম কে টেনে আনা লাগে। তাই টেনে আনলাম আরকি।
ইসলামে আবেগের স্থান নেই,থাকলে রাসূলের ইন্তেকালের পর সব সাহাবীর সুই সাইড করার অনুমতি থাকতো। অসুস্থ অবস্থায় ইশারায় হলেও নামাজ পড়া লাগতোনা। ডেলিভারি পেইন নিয়ে বাচ্চার মাথা বের হয়ে যাওয়া অবস্থায়ও নামাজের হুকুম থাকতো না। রোজা রাখতে না পারলে কাজা বা কাফফারা আদায় করা লাগতোনা৷

আপনি আমি নামলে বিজয় হয়ে যাবে ব্যপার টা এমন না। আগে ধর্ম, এরপর ধর্মের কর্ম। আন্দোলনে নামার দরকার নাই,যখন জিহাদের ডাক আসবে আলেম সমাজ আমাদের ব্যপারে যেই ফতোয়া দিবেন আমরা তা মেনে নিবো ইনশাআল্লাহ।

আসমা রাঃ এর ঘটনা জানেন না? তিনি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করেছিলেন পুরুষ রা জামাতে নামাজ পড়ে,জিহাদ করে আমরা তো এগুলো করতে পারিনা। তখন নবিজী কি বলেছিলেন? তিনি বলেন নাই যে আচ্ছা তোমরাও যাইও জামাতে নামাজ পড়তে,তোমরাও যাও জিহাদে। উনি বলেছেন, তোমরা স্বামীর এতায়াত করো,তাদের সাথে উত্তম আচরন করো,এগুলো ঐসব আমলের সমান সওয়াব। (হেকায়াতে সাহাবা,উসদুল গবাহ)©

জুঁই তাও মায়ের অবাধ্য হয়ে বলল,
__” অনেক মেয়েরাই তো নেমেছে আমি গেলে কি হবে আম্মা?
__” যারা নেমেছে তারা কলেজের শিক্ষার্থী।
__” আমিও তো কলেজের স্টুডেন্ট।
__” তারা পর্দার ব্যপারে জানে না বা জানলেও মানে না। তুই তো জানিস তারপরও বলছিস কেন?

শেষে মায়ের সাথে না পেরে জুঁই মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়। আর ফারুক সাহেব বাহিরে বের হন ছাত্রদের কোন সাহায্য করতে পারেন কিনা দেখার জন্য।
এদিকে রাদ শাহমাত এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে শুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে রাত দিন আল্লাহ তাআলা কে ডেকে চলেছে নজরাত….

#চলবে ইনশা আল্লাহ।

(আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার কিছু চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি জানি না কতটুকু পারবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here