অনুপম ভালোবাসা পর্ব ৮

0
33

#অনুপম_ভালোবাসা(৮)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

সন্ধ্যা বেলা রাদ শাশুড়ির বাসায় আসে! তরিকা বেগম নতুন জামাইকে দেখে কোনটা রেখে কি করবেন ভেবে পান না। তারপর নাস্তা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাদ শাশুড়ি মায়ের কাছে শুনেছে তার ব‌উ বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে গিয়েছে তাই এখানে আর থাকতে ইচ্ছা করছে না তার। কিন্তু চলে গেলে খারাপ দেখাবে তাই অগর্তা বাধ্য হয়ে বসে আছে।
তনজুবেন নেসা এটা সেটা জিজ্ঞাসা করছে তাকে। সেও ভালো ছেলের মতো জবাব দিচ্ছে।

তরিকা বেগম জামাইকে নুডুলস আর ফুল পিঠা খেতে দেন। ফুল পিঠা আগেই বানিয়ে তেলে ভেজে রাখা ছিল, ওগুলো দ্বিতীয় বার তেলে ভেজে গুড়ের সিরায় দিয়েছে। সাথে রাদ এর আনা ফল আর মিষ্টি ও দিল।
তনজুবেন নেসা মেয়েকে বললেন,
__” তরি পানি দিলি না?
তরিকা বেগম বললেন,
__” হ্যাঁ আম্মা দিচ্ছি।
তারপর হন্তদন্ত হয়ে, ছুটে পানি নিয়ে আসেন। বিয়ের পর নতুন জামাই প্রথম আসলো অথচ মেয়েটা বাসায় নেই। তাই তিনি কি করতে কি করবেন ভেবে পান না।
তরিকা বেগম রাদ কে বললেন,
__” বাবা তুমি নাস্তা করো। আমি নজরাত কে বলি বাসায় চলে আসতে।
এ কথা শুনে রাদ ব্যস্ত হয়ে বলল,
__” না আন্টি ওকে কিছু বলার দরকার নেই। আমি এমনিতেই এসেছিলাম চলে যাব এখন।
__” কি বলো বাবা! আজকে থাকবে না? নজরাত নাই বলেই তুমি চলে যেতে চাইছো। আমি এক্ষুনি নজরাত কে আসতে বলছি।
__” না আন্টি প্লীজ ওকে আসতে বলবেন না। রাত হয়ে যাচ্ছে একা আসাটা রিস্ক হবে।

রাদ এর শেষের কথায় দমে যান তরিকা বেগম। সত্যি ই তো রাত হয়ে যাচ্ছে একা মেয়েটা আসবে কিভাবে? পরিস্থিতি তো ভালো না কখন কি
দূর্ঘ/টনা ঘটে তার তো কোন ঠিক নেই।

রাফি কোচিং করে মাত্র বাসায় ঢুকলো। নতুন দুলাভাই কে দেখে দৌড়ে এসে বলল,
__” ভাইয়া কেমন আছেন?
রাদ মুচকি হেসে বলল,
__” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
__” ভালো আছি।
__” পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার?
__” এই চলছে কোনরকম।
__” ভালো নয় কেন?

তরিকা বেগম বললেন,
__” সারাদিন দুষ্টুমিতে মেতে থাকে, একদম পড়াশোনা করতে চায় না। ভালো হবে কিভাবে বলো?
মায়ের কথায় রাফি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। রাদ কিছুক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে রাফিকে বোঝায়। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
.
.
নজরাত হুমাইসাদের বাসায় আসার পর থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। হুমাইসা ও বান্ধবীর সাথে শোক পালন করছে। হুমাইসার মা তাদের জন্য সেমাই রান্না করে নিয়ে আসে। দুই বান্ধবীকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে বললেন,
__” কিরে তোরা দুই বান্ধবী একসাথে হলে বাড়ি মাথায় করে ফেলতি আর এখন এতো নিরব কেন?

হুমাইসা ঠোঁট উল্টে বলে,
__” আমাদের আজকে মন ভালো নেই।
__” কেন কি হয়েছে?
__” ও তুমি বুঝবে না। নজরাত সেমাইটা খেয়ে নে।
তারপর তারা তিনজনে মিলে সেমাই খায়।

হুমাইসার বাবা একজন প্রবাসী। তারা তিন বোন, বড় বোনের বিয়ে হয়েছে শশুর বাড়িতে থাকে তারপর হুমাইসা এরপর তার ছোট বোন হাবিবা এবার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।
হুমাইসাদের ঘরে বর্তমানে কোন পুরুষ মানুষ থাকে না তাই এখানে নির্দ্বিধায় চলে আসতে পারে নজরাত। তাছাড়া নজরাত দের বাসায় ও উপযুক্ত কোন পুরুষ মানুষ নেই তাই হুমাইসা ও সেখানে নির্দ্বিধায় যেতে পারে। দুই বান্ধবীর দৌলতে তাদের মায়ের মধ্যেও সু-সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই তারা মেয়েদের বাঁধা দেন না।

অপরদিকে রাদ নজরাত কে কল করে তার ফোন বন্ধ পেয়ে তাদের বাসায় এসেছিল। কিন্তু নজরাত কে না পেয়ে মন খারাপ করে চলে যেতে হয়। তার ধারণা সেদিনের ব্যবহারে হয়তো কোন ভাবে নজরাত কষ্ট পেয়েছে তাই ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
তাছাড়া কয়েকদিন রাদ অনেক ব্যস্ত থাকায় নজরাত এর খোঁজ নেওয়ার সময় পাইনি বলে হয়তো মেয়েটা রাগ করে বান্ধবীর বাসায় গিয়ে বসে আছে। লজ্জায় শাশুড়ি মায়ের কাছে নজরাত এর বান্ধবীর বাসার ঠিকানা চাইতে পারেনি সে। এখন বাসায় বসে আফসোস করছে।

সেদিন নজরাত কে দেখার পর থেকে তার মাথায় তাসনুভার কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাসনুভা বলেছিল সেদিন নজরাত যেই ছেলেটার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তার সাথে নজরাত এর সম্পর্ক আছে। অথচ তখন তাদের বিয়ের কথা চলছিল। সত্যিই কি ওই ছেলেটার সাথে নজরাতের সম্পর্ক আছে বা ছিল? আগে সম্পর্ক থাকলেও রাদ এর কোন সমস্যা নেই কিন্তু এখনো যদি থেকে থাকে তাহলে! তাই রাদ সেদিনের ছেলেটাকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু পুরো ভার্সিটিতে খুঁজে পায় না। আসলে কারো নাম ঠিকানা না জানলে খুঁজে বের করা মুশকিল। নজরাত কে জিজ্ঞাসা করাও যাবে না। যদি এসব কিছু সত্যি না হয়ে থাকে তাহলে মেয়েটা কষ্ট পাবে তাই তাকেও জিজ্ঞাসা করতে পারেনি রাদ‌। এদিকে তাসনুভা কে জিজ্ঞাসা করলে ও বলে,
__” শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করেছিস? বিয়ের পরেও অন্য মেয়েদের খবর নিচ্ছিস ব্যাপার কি বলতো? এই তোর চরিত্র! যাকে কিনা অনেকে আইডল মনে করে! তোর বউয়ের সাথে যোগাযোগ করে দিস, তাহলে তাকে সাবধান করে দিব তোকে যেন সব সময় চোখে চোখে রাখে হা হা হা।

মেয়েটার কথা শুনে রাদ সেদিন ভীষণ রে/গে গিয়েছিল তাকে তার বন্ধুরা শান্ত করে, না হলে হয়তো তাসনুভার গায়ে হাত তুলে বসতো।

এরপর দুদিন কেটে যায় নজরাত এখনো বাসায় ফিরে আসেনি। তরিকা বেগম বেশ কয়েকবার কল করে ফোন বন্ধ পেয়েছেন। শেষে বাধ্য হয়ে হুমাইসাকে কল করলে সে জানায় নজরাত এর জ্বর এসেছে। তরিকা বেগম বিচলিত হয়ে পড়লে হুমাইসা জানায় আজকে জ্বরটা ছেড়েছে অনেকটা টেনশনের কিছু নেই।

হুমাইসা ফোন রেখে নজরাত কে বলল,
__” আন্টি তোর অসুস্থতার কথা শুনে টেনশন করছেন। একটু কথা বললে পারতি।
নজরাত খাটের বাজুতে বালিশ ঠেকা দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে। মাথাটা ভীষণ ধরে আছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
__” এখন আম্মুর সাথে কথা বললে ঠিক উনার কথা জিজ্ঞাসা করতো, তাই বলিনি।
__” সম্পর্ক শুরু না হতেই এভাবে ভেঙ্গে যেতে দিবি?
__” উনার বোধহয় আমাকে পছন্দ নয়।
__” কিভাবে জানলি! ভাইয়া কি এ কথা তোকে বলেছেন?
__” উনার রিয়েকশন দেখে বুঝতে পেরেছি আমি। বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে আম্মুকে কিভাবে সামলাবো আমি? এসব ভাবতে ভাবতেই মাথা কাজ করছে না।
__” আর তুই? তুই কষ্ট পাবি না?
__” সেসব ভাবতে পারছি না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার জানিস?
__” আমি না জানলে আর কে জানবে?

হুমাইসা তার বান্ধবীর কষ্ট আর চোখে দেখতে পাচ্ছে না, তাই ঠিক করলো আগামীকাল ভার্সিটিতে গিয়ে রাদ এর সাথে কথা বলবে।
.
.
ছোট কেবিনেটের উপর রাখা দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা। ফারুক সাহেব শূন্য চোখে চেয়ে আছে উপরের দিকে।
জুঁই দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,
__” বাবা আসবো?
__” আয় মা।
__” বাবা তোমার কি শরীর খারাপ?
__” ক‌ই না তো।
__” তাহলে তুমি আগের মতো আমাদের খোঁজ খবর নাও না কেন?
__” মনটা ইদানিং ভালো যায় না রে মা।
__” তোমার মন খারাপ কেন বাবা? চৈতি আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়েটা হয়নি বলে মন খারাপ তোমার?
__” না তার জন্য আর এখন মন খারাপ হয় না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। একটা বিয়ে ঠিক হতে যারা জড়িত থাকে তারা শুধু উছিলা মাত্র। বিয়েটা মূলত আল্লাহ তাআলা ইচ্ছাতেই হয়। অনেকে বলে না যে আমার জন্য বিয়েটা হয়েছে নতুবা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। এসব আসলে ভুল বলে মানুষ। যে বিয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামীন রাজি খুশি হয়ে ঠিক করেন সেই বিয়ে ঠেকায় কে বল?
__” তাহলে তোমার মন খারাপ কেন?
__” ইদানিং পত্রিকা পড়ে মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে যায় বুঝলি? পাতা উল্টালেই নানা দিকে রাজনীতি, চু/রি ডাকা/তি খু/ন খারাপি ছাড়া ভালো কোন সংবাদ পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে আজকাল। ভবিষ্যত প্রজন্মকে এরা কি দিয়ে যাচ্ছে বল তো? স্বাধীন দেশে থেকেও কেমন পরাধীন মনে হয়। এসব ভাবলেই মাথাটা ভীষণ ধরে যায়।
__” তাহলে এসব নিয়ে ভেবো না বাবা।
__” স্বার্থপর হতে বলছিস মা?
__” কি করবো বলো তো? এগুলো দেখা ছাড়া তো আমাদের উপায় নেই। আমরা সাধারণ মানুষ তো কিছু করতে পারবো না। যারা পারবে তারা তো হাত গুটিয়ে বসে আছে।
__” যা বলেছিস। তাদের কাজ নরম মাটিতে
আ/ঘাত করা।
__” ঠিক বলেছো বাবা। আম্মা আমাদের জন্য বসে আছে, এখন নাস্তা করবে চলো।
__” আচ্ছা চল।

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here