#অনুপম_ভালোবাসা(৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
কল রিসিভ করে সালাম দিল নজরাত। ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিয়ে বলল,
__” আমি রাদ বলছি।
নজরাত ক্ষীণ একটু হেসে বলল,
__” হুম জানি।
__” কি করে জানলে?
__” এমনিতেই বুঝতে পেরেছি।
__” আচ্ছা। কি করছিলে?
নজরাত বিনা ভূমিকায় বলল,
__” এইতো ফোন স্ক্রল করছিলাম। আপনি কি করছেন?
এই প্রশ্নটা করে নজরাত নিজেই বোকা বনে গেলো। তবুও রাদ বলল,
__” আমার নতুন বউয়ের সাথে কথা বলছি।
এই তরল মন্তব্যে এত লজ্জা পায় নজরাত এর, যা বলে বুঝাতে পারবে না। তাই আর কিছু বলার ভাষা খুজে পেল না। তখন রাদ বলল,
__” আমার একটা ইচ্ছা আছে, বলবো?
__” বলেন?
__” আমার ইচ্ছা ছিল আমার বউয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম করবো।
__” লুকিয়ে প্রেম করবেন মানে? এখন তো আর কেউ কিছু বলবে না তাহলে লুকিয়ে করার দরকার কি?
__” সেটাই তো আসল মজা। দেখ দুজন গার্লফ্রেন্ড আর বয়ফ্রেন্ড যখন পরিবারের অগোচরে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে তখন কিন্তু ওরা খুব আনন্দ পায়।আর যখন বিয়ে করে নেয় তখন কিন্তু আগের মতো আর আনন্দ পায় না। তখন আর সেই ফিলিংস থাকে না। কেন থাকে না জানো?
__” না তো। কেন বলুন তো থাকে না?
__” কারণ তারা বিয়ের পূর্বেই একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ , কথা-বার্তা বলে ফেলে যার কারণে আর নতুনত্ব কিছু থাকে না। তাই আমি ঠিক করেছিলাম বিয়ের পর আমার বউ এর সাথে লুকিয়ে প্রেম করবো। চলো আগামীকাল থেকেই শুরু করা যাক!
__” আগামীকাল থেকেই! কিভাবে শুরু করবো বলেন তো?
__” তোমার আগামীকাল ভার্সিটিতে ক্লাস আছে?
নজরাত ভেবে বলল,
__” না আগামীকাল তো আমার ক্লাস নেই।
__” তাহলে আরো ভালো হয়েছে। আমরা আগামীকাল সারাদিন ঘুরে বেড়াবো কিন্তু বাসায় কাউকে বলবে না।
__” আম্মু তো বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ই জিজ্ঞাসা করবে কোথায় যাচ্ছি তখন কি বলবো তাহলে?
__” বলবে যে একটু দরকার আছে।
__” আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
পরের দিন সকাল বেলা নজরাত বের হওয়ার সময় তরিকা বেগম বললেন আজকে তো তোর ক্লাস নেই তাহলে কোথায় যাচ্ছিস?
__” আম্মু একটু দরকার আছে চলে আসবো তাড়াতাড়ি।
এই বলে নজরাত দৌড়ে বেরিয়ে যায়। মেয়ের ভাবগতি দেখে তরিকা বেগম একটু অবাকই হলেন।
তবে বিষয়টা আমলে নিলেন না। তিনিও তৈরি হয়ে অফিসে রওনা দিবেন।
নজরাত বাসা থেকে বেরিয়ে আসার পর দেখতে পায় রাদ বাইক নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। নজরাত কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল,
__” তারাতাড়ি চলুন আম্মু এখনি অফিসে যাওয়ার জন্য বের হবে।
রাদ সালামের জবাব দিয়ে বলল,
__” বুঝলাম না ব্যাপারটা। মনে হচ্ছে আমি তোমার জন্য এখানে বসে অপেক্ষা করছি। কি সব বলছো তুমি?
__” আরে আমি আপনার বউ। এখন কথা না বাড়িয়ে চলুন তাড়াতাড়ি।
রাদ আর কথা না বাড়িয়ে বলল,
__” উঠে বস।
তারপর রাদ বাইক নিয়ে অনেক দূর চলে আসে। নদীর উপরে ভাসমান রেস্টুরেন্টে আসে তারা।
দুজনে মুখোমুখি বসে আছে। রাদ গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
__” তুমি সেই মেয়েটা! বলো নি কেন এতো দিন?আর তুমি এতো মেকআপ করে লুকিয়ে ছিলে কেন?
নজরাত একটু সংকোচিত হয়ে বলল,
__” ভার্সিটিতে বান্ধবীরা ডেয়ার দেয় সে জন্য আপনার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনি ওরকম ব্যবহার করলেন যার জন্য আমি বিয়েটাও করতে চাইনি। তাই ওরকম সেজে বিয়েটা যেন না হয় সেই চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আম্মুর জন্য বিয়েটা করতেই হলো।
নজরাত বিয়েতে রাজি ছিল না শুনে রাদ এর মনটা বিষাদে ভরে উঠে। হ্যাঁ সেও বিয়েতে রাজি ছিল না কিন্তু সেটা তো মেকআপ সুন্দরী মেয়েকে দেখে। আচ্ছা যদি তার বদলে নজরাত কে দেখতে পেত তাহলে কি সে রাজি হয়ে যেত? হয়তো হত, তখন তো আর বিয়ে না করার কারণ খুঁজে পেত না তাই রাজি হত বোধহয়।
রাদ অন্যমনা হয়ে পানির দিকে চেয়ে রইল, জবাব দিল না। অনেক্ষণ বাদে হঠাৎ বলল,
__” কি খাবে বলো?
__” আপনার যা খুশি অর্ডার দিন।
রাদ মেনু কার্ড দেখে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই আর কোল্ড ড্রিঙ্কস অর্ডার দিল।
তারপর তাদের মধ্যে নিরবতাই ভয়ে গেল। রাদ এর কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। আগের মতো চঞ্চলতা আর আসছে না। একটা ধাক্কা তাকে নিরব করে দিয়েছে। ভিতরটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। এখানে আর থাকতে ইচ্ছা করছে না। নজরাত আড়চোখে সবটাই খেয়াল করে চলেছে। যা তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। নিজেকে এখন অপরাধী মনে হচ্ছে। সময় টা এখানেই স্থির হয়ে গেলে ভালো হতো বোধহয় হয়? না না সময়টা পেরিয়ে পূর্বের মতো সবকিছু স্বাভাবিক হলে ভালো হতো।
নিরবতার মাঝে লম্বা গরনের চমৎকার একটা চেহারার ছেলে বয়স বেশি হলে পনেরো হবে। ছেলেটা খাবার নিয়ে আসে। ছেলেটা খাবার দিয়ে বলল,
__” আর কিছু লাগলে বলবেন স্যার।
রাদ বলল,
__” কোন ক্লাসে পড় তুমি?
__” জ্বি দশম শ্রেণীতে পড়ি।
__” এখানে কাজ করে পড়াশোনা ঠিক মতো করতে পারো?
__” জ্বি পারি। এটা আমার বাবার রেস্তোরাঁ। বাবাকে সাহায্য করতেই মাঝে মাঝে এসে কাজ করি।
__” আচ্ছা খুব ভালো।
ছেলেটা চলে যাওয়ার পর রাদ কিছুক্ষণ ভাবুক হয়ে বসে রইল। তার মনে হলো ছেলেটার থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। বাবাকে সাহায্য করার কথা কখনো মাথায় আসেনি তার। যদিও তার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন তাই এখানে সাহায্য করার কিছু নেই। কিন্তু বাবা এখন অবসর প্রাপ্ত। বয়স হয়েছে, এই বয়সে এসেও কতো কষ্ট করে বাজার করে আনে তাদের জন্য। অথচ সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হয়ে বসে বসে খায় বাবাকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করে না। কথাটা ভেবে মনে মনে অনুতপ্ত হলো সে।
এদিকে নজরাত আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না। জিজ্ঞাসা করে ফেলল,
__” কি এতো ভাবছেন বলেন তো?
__” ওহ সরি। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খাওয়া শুরু করনি কেন?
তারপর নজরাত এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
__” খাও।
__” হাতে তুলে খাইয়ে দিতে হয়!
রাদ একটু বরকালো পরে হাতে নিয়ে নজরাত কে খাইয়ে দেয়। তারপর নজরাত ও খাইয়ে দেয়।
খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ করে রওনা দেয় তারা। আজকে আর কিছু ভালো লাগছে না রাদ এর। নজরাত কে বাসায় নামিয়ে সেও তার বাসায় চলে আসে।
নজরাত বাসায় ঢুকলে তনজুবেন নেসা জিজ্ঞেস করেন,
__” কি নাতনি বরের লগে ঘুরতে গেছিলি বুঝি?
নজরাত অবাক হয়ে বলে,
__” এই বুড়ি তুমি কিভাবে জানলে?
__” বুঝি বুঝি সব বুঝি।
__” হুম, পাকা বুড়ি তো তুমি।
.
.
তিন দিন পেরিয়ে যায় রাদ এর কোন খবর নেই। নজরাত কে একটা কল মেসেজ কিছুই দেয়নি সে। ভার্সিটিতে ও দেখা যায়নি তাকে। নজরাত আর থাকতে না পেরে পঞ্চম দিনে তার শাশুড়ি মায়ের কাছে কল করে। লিপি বেগম খুশি হন নতুন বউয়ের কল দেখে। কুশল বিনিময় করে লিপি বেগম জিজ্ঞাসা করেন, রাদ এর সাথে কথা হয় কিনা?
নজরাত আমতা আমতা করে বলল,
__” জ্বি হয়।
তারপর লিপি বেগম পর্দার গুরুত্ব বলে বললেন,
__” তুমি তোমার স্বামীর আমানত তাই নিজেকে পর্দায় আবৃত করে রেখো মা। পর্দা ই নারীর সম্বল জানো তো?
__” জ্বি আন্টি।
__” আন্টি নয় আম্মা বলে ডেকো আমায়।
__” জ্বি আচ্ছা।
তারপর রাদ এর কথা শুনতে পায় নজরাত। তার মাকে ডাকছে সে।
লিপি বেগম ছেলের ডাক শুনে বললেন,
__” আচ্ছা মা এখন রাখছি পরে কথা বলবো, ভালো থেকো।
তারপর সালাম দিয়ে কল রেখে দেন লিপি বেগম। ছেলে ডাকছে বলেই তাড়াহুড়ো করে কল রেখে দিলেন তিনি।
এদিকে নজরাত এর মনটা ভীষন্নতায় ভরে গেল।বিমর্ষ বিবর্ন মুখে বসে থেকে কিছু একটা ভেবে উঠে গিয়ে বোরকা পরে তৈরি হয়ে নিল। মায়ের কাছে গিয়ে বলল,
__” আম্মু বাসায় থেকে আমার অনেক বোরিং লাগছে হুমাইসাদের বাসায় দুদিন থেকে আসি।
আজ তরিকা বেগমের অফিস বন্ধ। তিনি শুয়ে ছিলেন, মেয়ের কথায় উঠে বসে বললেন,
__” হঠাৎ ওদের বাড়িতে যাবি কেন? জামাইকে বলেছিস?
নজরাত খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বলল,
__” আমি কি এখনো তাদের বাড়িতে গিয়েছি যে কোথাও যেতে পারমিশন নিয়ে যেতে হবে? আমি যাচ্ছি।
নজরাত চলে গেল। এটা নতুন না, যখনি নজরাত এর মন খারাপ থাকে তখনি সে হুমাইসার কাছে চলে যায়। হুমাইসা ও নজরাত এর বাসায় আসে। তারা দুজন ভীষণ ভালো বান্ধবী তাই কেউ বাঁধা দেয় না।…..
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।