অনুপম ভালোবাসা পর্ব ৬

0
29

#অনুপম_ভালোবাসা(৬)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

সকাল দশটা বেজে সতেরো মিনিট। নজরাত মাত্র ঘুম থেকে উঠে হাতের মেয়েদি গুলো দেখছে। বাড়ির সবাই রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত। খুব ছোট করেই বিয়েটা হয়ে থাকবে। তাও বিয়ে বলে কথা কাজ তো থাকবেই। নজরাত কে কেউ বিরক্ত করেনি। তাই সে আরামে ঘুমিয়েছে। হুমাইসা ও তরিকা বেগমের হাতে হাতে সব কাজ করে দিচ্ছে। গতকাল হুমাইসাকে তার পরিবারকে বলে নিয়ে এসেছে নজরাত। বিয়েতে বান্ধবী পাশে থাকলে খুব ভরসা পাওয়া যায়। হুমাইসা ও ভীষণ আনন্দিত বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা কজনের ই বা ভাগ্য হয় বান্ধবীর বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারার? সে থাকতে পারছে আলহামদুলিল্লাহ।

নজরাত বসে বসে রাদ এর কথা ভাবছে। সেদিনের পর থেকে রাদ কে ভীষণ ভালো লেগে গেছে তার।
লোকটা বাহিরের মানুষের সাথে দাম্ভিক হলেও পরিবারের সাথে ভীষণ মিশুক। পরিবারকে গুরুত্ব দেওয়া ছেলে গুলো সবচেয়ে ভালো হয়। ঐদিন বাসায় আসার পর রাফি বোনের হাতে খাবারের পার্সেল দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে। যা দেখে রাদ কে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা হয় নজরাত এর। তার পরিবারের কথা চিন্তা করেছে রাদ এটা ভাবলেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। তনজুবেন নেসা সেদিন নজরাতকে খুচা দিয়ে বলেন,
__” কি নাতনি নাত জামাইকে কেমন বুঝলি?
নজরাত লজ্জায় সেদিন কোন উত্তর দিতে পারেনি শুধু এক গাল হেসে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়।মেয়ের খুশি দেখে তরিকা বেগম স্বস্তির শ্বাস ফেলেন। আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।

ঐ দিন টা বার বার মনে পড়ে নজরাত এর। মনে করে আনমনে হাসে সে।
হুমাইসা আকস্মিক এসে বলল,
__” কিরে বিয়ের কনে একা একা হাসছিস কেন? দুলাভাই কে নিয়ে ভাবছিস বুঝি?
নজরাত লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তারপর যাহ্ বলে বাথরুমে দৌড় দেয়।

দুপুরে যোহরের পড় বর পক্ষের আগমন ঘটে।
ব‌উয়ের জন্য আনা জিনিসপত্র মিসেস কলি বেগম তনজুবেন নেসার হাতে তুলে দেন। সবকিছু খুলে দেখে সবাই। তারপর হুমাইসা নজরাত কে সাজানো শুরু করে।
লিপি বেগম নিজের থেকে কিছু গহনা ছোট ছেলের বউয়ের জন্য নিয়ে এসেছেন। আজকে ছেলের সামর্থ নেই কিন্তু একদিন হবে ইনশা আল্লাহ। ততদিন কি নতুন ব‌উ খালি থাকবে? কক্ষনো না। তাই লিপি বেগম নিজের থেকে কানের দুল আর গলার কন্ঠ হার দিয়েছেন। আর নাকের ফুলের টাকা রাদ দিয়েছে। হাতে আপাতত গোল্ড প্লেট পড়লেই হবে। আল্লাহ তাআলা কোনদিন রাদ এর দেওয়ার তৌফিক দান করলে তখন কিনে দিবেখন।

আজকেও ভারী মেকআপ করে দিল নজরাতকে।
বিয়ের দিন ভারী মেকআপে বিয়ের সাজ ফুটে উঠে। আজকে কেউ কিছু বলবে না। এই একটা দিন ই তো মেয়েরা মন ভরে সাজে।
লাল জামদানি, দোপাট্রা, গহনা মেকআপ সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ সুন্দর লাগছে নজরাত কে। তার থেকে চোখ ফেরানো দায়। সাজানো শেষে দুই বান্ধবী কিছু ছবি তুলে নেয় স্মৃতি ধরে রাখতে। তারপর জান্নাত আরা জুঁই ও কিছু তুলে।
ছবি তোলা শেষে জুঁই রাদ এর কাছে ফোন দেখিয়ে বলল,
__” ভাইয়া দেখ ভাবীকে কি কিউট লাগছে মা শা আল্লাহ।
রাদ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিয়ে শুরু করা হয়।
প্রথমে রাদ এর মুখে কবুল পড়িয়ে কাবিন নামা তে সাইন করতে দেওয়া হল, রাদ সাইন করার পর নজরাতকে কবুল বলতে বলা হলে তার মুখ দিয়ে যেন শব্দ টা বের হচ্ছে না এই মুহূর্তে। মনে হয় শব্দটা বুঝি অনেক কঠিন। এদিকে সবাই বলতে বলছে। হুমাইসা পাশে থেকে বলছে,
__” বান্ধবী বলে দে সবাই অপেক্ষা করছে।
তারপর অনেক কষ্টে শব্দ টা উচ্চারণ করে সে।
যে বিয়ে করেছে সেই জানে তখন কতটা কঠিন মনে হয় এই ছোট্ট শব্দটা।
তারপর সাইন করতে গিয়ে রাদ এর সাইন দেখতে পায়। সে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে কলমে নিজেকে সম্পূর্ণ লিখে দেয় তার স্বামী নামক মানুষটার নামে।
(গল্পের লেখিকা ইসরাত বিনতে ইসহাক)

তারপর দু’জনকে একসাথে বসিয়ে একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দিতে বলা হয়। প্রথমে রাদ নজরাত এর মুখে মিষ্টি তুলে দিল তারপর নজরাত দিল।
আশেপাশের পরিচিত মানুষরা বিয়ে দেখতে এসেছিল। তারা মিষ্টি মুখ করে যারা পান খায় তারা পান খেয়ে পরে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বলে বাসায় চলে যায়। তাছাড়া যে কজন বিয়ের নিমন্ত্রণে আসে তারা ও চলে যায়।
শেষে নজরাত আর রাদ কে রেখে বাসার লোকজন ও রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
রুমে বসে থাকে নব দম্পতি।
নিরবতা কাটিয়ে রাদ প্রথমে বলে,
__”আপনাকে কিন্তু ভীষণ সুন্দর লাগছে আজ।
সদ্য স্বামীর মুখে নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জায় মরমে মরে যায় নজরাত। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারে না সে।

নজরাত কে চুপ থাকতে দেখে রাদ বলে,
__” আমাকে দেখে বললেন না তো কেমন লাগছে? অবশ্য আমাকে দেখে সব মেয়েরাই বলে আমি সুদর্শন পুরুষ।
রাদের মুখে এ কথা শুনে কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় নজরাত। যা দেখে ভীষণ মজা পায় রাদ।
তারপর হাসি থামিয়ে বলে,
__” আচ্ছা আপনি তো আমার ছোট আমি তুমি করেই বলি কেমন?
__” জ্বি আচ্ছা।
__” আচ্ছা তাহলে আজকে চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো।
রাদ চলে যাবে বলায় মন খারাপ হয়ে গেল নজরাত এর যা বুঝতে পারে রাদ। তাই নজরাত কে শান্তনা দিতে বলল,
__” বিয়েতে বিশ্বাস করি আমি। বিয়েটা মোটেও ছেলেখেলা নয়। বিয়ে যখন করেছি তখন তোমার সব দায়িত্ব আমার। আমি চেষ্টা করবো আমার দায়িত্ব পালন করার ইনশা আল্লাহ।

তোমার মোহরানার টাকা পরিশোধ করে তবেই আমি, তোমাকে সম্পূর্ণ আমার করে নিব ইনশা আল্লাহ। মন খারাপ করো না খুব শীঘ্রই দেখা হবে আমাদের ইনশা আল্লাহ।

তারপর রাদ উঠে চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে বলল আমাদের একটা ছবি তুলে রাখা উচিৎ তাই না? এই দিন টা তো কখনো ফিরে আসবে না।
তারপর সেলফি তুলে আল্লাহ হাফেজ বলে বেরিয়ে যায় রাদ।

বসার ঘরে গিয়ে বাবাকে বলে,
__” বাবা রাত বেরে যাচ্ছে আমাদের যাওয়া উচিৎ।

জান্নাত রাদের পাশে বসে চাপা গলায় বলল,
__” তুই চলে গেলে রূপকথার মন খারাপ হবে না? তুই না হয় আজকে থাক এখানে।
রাদ না বুঝার ভান করে বলল,
__” মন খারাপের কি আছে?
__” আছে অনেক কিছু তুই বুঝবি না।

রাদ মোহরানার টাকা পরিশোধ করে তবেই স্ত্রীকে স্পর্শ করার কথা ভেবেছে। কিন্তু রাদ এর মনের কথা কেউ জানে না।

লিপি বেগম ভেবেছিলেন আজকে রাদ থাকবে এখানে। এমনিতেই তার ইচ্ছায় বিয়েটা হয়েছে তাই তিনি আর জোর করতে পারলেন না। সবকিছুতেই জোর করা উচিৎ কাজ নয়। তরিকা বেগম কে বললেন,
__” আপা কিছু মনে করবেন না। আসলে ও একবারে ব‌উকে সময় হলে তুলে নিয়ে যেতে…
সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই তরিকা বেগম বললেন,
__” আমি কিছু মনে করছি না আপা। বিয়ে হয়েছে, এখন ওরা যেটা ভালো মনে করে সেটাই হবে। আমাদের এখানে হস্তক্ষেপ করা ঠিক না।
__” হ্যাঁ অবশ্যই। আচ্ছা আজকে তাহলে আমরা বিদায় নিচ্ছি।
__” আচ্ছা, আবার সবাইকে নিয়ে আসবেন।
__” ইনশা আল্লাহ। আপনারা ও যাবেন কিন্তু।
__” ইনশা আল্লাহ।

তারপর সবাই নজরাত এর সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে যায়। নজরাত একা ঘরে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। কেমন যেন সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।
যেন কিছু হারিয়ে গেছে।
হুমাইসা আজকে ওর সাথে থাকলে ভালো হতো। মেয়েটার মা অসুস্থ তাই আজকে আর থাকতে পারলো না।

ঘন্টা খানেক পর তরিকা বেগম মেয়ের খুঁজ নিতে সময় পান। এতো সময় ঘর গুছাতে ব্যস্ত ছিলেন। মেহমান চলে যাওয়ার পর ঘর অগোছালো হয়ে থাকবে এটা স্বাভাবিক। তাই কিছুটা পরিষ্কার করে মেয়ের কাছে এসে বসলেন।
নজরাত দুই হাঁটুতে থুতনি রেখে বিছানায় আঁকিবুঁকি করছে তখন তরিকা বেগমের কথায় মাথা তুলে তাকায়।
__” কিরে মা মন খারাপ লাগছে?
__” ক‌ই না তো।
__” তাহলে এভাবে বসে আছিস কেন? শাড়ি গহনা খুলে সুতি থ্রিপিস পরে নে আরাম লাগবে।
__” হুম যাচ্ছি আম্মু।
__” আচ্ছা যা, আমি তোর জন্য কিছু একটা নাস্তা বানিয়ে আনি।
__” না আম্মু তুমি এখন রেস্ট নাও। সারাদিন কতো দখল গেল তোমার।
__” তাহলে তোর শশুর বাড়ি থেকে যে মিষ্টি আনা হয়েছে সেই মিষ্টি নিয়ে আসি। তোর তো ছানা মিষ্টি পছন্দ, মিষ্টি খেয়ে একটু শুয়ে থাক ভালো লাগবে।পরে উঠে রাতের খাবার খাবি।

তারপর তরিকা বেগম চলে যাওয়ার পর নজরাত শাড়ি চেঞ্জ করে থ্রিপিস পরে ফ্রেশ হয়ে আসে। এখন খুব হালকা লাগছে নিজেকে।
.
.
রাত সাড়ে এগারোটা,
নজরাত এশার নামাজ পড়ে খাবার খেয়ে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছে এমন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।….

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

(আসসালামু আলাইকুম।
মাসুদ রানা নামের একজন আমার গল্পের নাম আর আমার নাম পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ গল্প কপি করে। এটা দেখার পর গতকাল ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। এরকম ভাবে কপি করলে গল্প লিখতে আর আগ্রহ থাকে না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here