#অনুপম_ভালোবাসা(৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
লিপি বেগমের কথায় তরিকা বেগম একটু ভাবুক হয়ে বসে রইলেন। তখন মিসেস কলি চাপা জরুরী গলায় বললেন,
__” ভাবী কিছু বলছেন না যে? এমন ছেলে কিন্তু লাখে একটা। মোটেও হাতছাড়া করা যাবে না।
তরিকা বেগম মলিন একটু হেসে লিপি বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,
__” আপনি কিছু মনে করবেন কিনা বুঝতে পারছি না। আপা মেয়েটার বাবা নেই জানেন তো। তাই আমার মায়ের সাথে একটু কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাতে চাইছিলাম।
লিপি বেগম শশব্যস্তে জবাব দেন,
__” অবশ্যই কেন নয়? উনি ই তো আপনার বাসার বয়োজ্যেষ্ঠ উনাকে ছাড়া আপনার একা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ হবে না। আমার ই ভুল হয়েছে আপা।
ফারুক সাহেব বাহির থেকে আসলে লিপি বেগম উনাকে ডেকে তরিকা বেগমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ফারুক সাহেব এই সম্মন্ধতে খুশি না থাকলেও খুবই ভালো ব্যবহার করলেন পাত্রীর মায়ের সাথে। তারপর রাদ শাহমাত কে ও ডেকে আনলেন লিপি বেগম।
রাদ এসে ভদ্রতার সহিত সালাম দিল। মায়ের কথায় কোনার দিকে একটা সোফায় বসে রইলো চুপচাপ। বেশ কিছুক্ষণ পর তরিকা বেগম লক্ষ্য করলেন রাদ বড়দের মাঝে থেকে আনইজি ফিল করছে তাই তিনি বললেন,
__” আচ্ছা বাবা তুমি যেতে পারো।
রাদ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। যাওয়ার সময় সালাম দিয়ে চলে গেল। কিছুদূর গিয়ে অনুচ্চ স্বরে বলল আম্মার বাচ্চা আম্মা। জান্নাত শুনতে পেয়ে বলল,
__” আম্মার বাচ্চা তো তুই ই
তারপর মৃদু একটু মজা পাওয়ার হাসি হাসলে রাদ বলল,
__” আমার এই করুন দশা দেখে তুই হাসছিস?
__” দেখ ভাই আমি কিন্তু যথেষ্ট তোর হয়ে কথা বলেছি। এখন যখন তুই ফেঁ/সেই গেছিস তখন সবটা হাসিমুখে মেনে নেওয়াই বেটার।
রাদ মন খারাপ করে চলে যায় নিজের রুমে। জান্নাত বুঝতে পারছে ভাইয়ের অবস্থা, কিন্তু এ বাসায় তার মায়ের উপর কেউ কথা বলতে পারে না তাই চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। শুধু এ বাসা নয় তার শশুর বাড়িতেও তার শাশুড়ির কথাই শেষ কথা হয়। যার কারণে তার স্বামীর সাথে বেশিরভাগ সময় ঝগড়া হয়। ভদ্রমহিলা চান না জান্নাত চাকরি করুক। এসব নিয়েই ঝগড়ার শুরু। আসলে মেয়েরা মূলত বাধ্য হয়েই চাকরি করে। ইসলামে একটা নারীর সমস্ত দায়িত্ব একটা পুরুষের উপর দেওয়া হলেও সেই পুরুষ ওই নারীর বড় জোর খাদ্য, বাসস্থান, আর চিকিৎসার ব্যয় ঠিকমতো পালন করলেও এর বাহিরেও যে একটা নারীর হাত খরচ বাবদ টাকার প্রয়োজন হয় এটা খুব কম পুরুষই বুঝতে পারে। আর সেই কারণেই নারীরা সাবলম্বী হতে চায়।
যাই হোক তরিকা বেগম আজকের মতো বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। বাসায় গিয়ে মায়ের সাথে সবকিছু বললেন। তনজুবেন নেসা মেয়ের মুখে পাত্র সম্পর্ক শুনে বললেন,
__” শুন যেই বিয়াতে ছেলের মা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী প্রকাশ করে সেই বিয়া ভালোই হয়। এমন শাশুড়িরা একসময় শাসন করে আবার এক সময় অনেক আদর যত্নে রাখে ছেলের বউদের। আমার কাছে সম্বন্ধটা ভালই মনে হইতাছে। তুই ভাইব্বা দেখ কি করবি।
মা আর নানুর কথা কিছুটা শুনে নজরাত এসে বলল,
__” আম্মু আমি এই বিয়ে করবো না।
মেয়ের কথায় তরিকা বেগম উঠে দাঁড়ান। চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
__” তোর কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে?
নজরাত তাড়াতাড়ি জবাব দেয়,
__” না আম্মু ওসব কিছু নেই। কিন্তু এই ছেলেকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা।
__” এই ছেলেকে নিয়ে কি সমস্যা তোর?
__” এই ছেলে আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে। খুবই অহংকার উনার। কারো সাথে কথা বলতে চায় না।
__” কেন তুই কথা বলতে গিয়েছিলি নাকি?
মায়ের কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যায় নজরাত। মিনমিনে গলায় বলে,
__” আম্মু বাদ দেও না আমার এই ছেলেকে ভালো লাগেনা। বুঝতে পারছো না কেন?
তরিকা বেগম যতদূর সম্ভব কঠোর মুখভঙ্গি করে বললেন,
__” এখানে তোর সমস্যা ওই ছেলের তো কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না। তুই যদি ওই ছেলেকে পছন্দ না হওয়ার উপযুক্ত কোন কারণ দেখাতে পারতি তাহলে আমি মেনে নিতাম কিন্তু তুই যেগুলা বলছিস তার কোন ভিত্তি নেই।
তারপর তনজুবেন নেসার দিকে তাকিয়ে বললেন,
__” আম্মা আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমি এখানেই মেয়ে বিয়ে দিব। এটাই আমার শেষ কথা তুমি ওরে বোঝাও।
তরিকা বেগম চলে যাওয়ার পর বৃদ্ধা নাতনি কে নিজের কাছে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
__” শোন নাতনি পোলারা যতই দাম দেখাক বউয়ের কাছে তারা বিলাইয়ের মত বুঝলি? বউয়ের কাছে তারা চাইলেও দাম দেহাইয়া চলতে পারে না।
বাইরে সবার কাছে একটু দাপট দেখাইয়া চলা লাগে। এরমধ্যেই একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব বুঝা যায়। আইজ যদি পোলায়…
__” নানু পোলা শুনতে কেমন যেন লাগছে ছেলে বলো।
__” আইচ্ছা শোন। আইজ যদি ছেলেটা মাইয়াগো লগে কথা কইয়া বেরাইতো, রাস্তাঘাটে মাইয়াগো দেখলে গান ধরত তহন কিন্তু তোর বালা লাগত না। তখন তুই কইতি ছেলেটার চরিত্রের দোষ আছে। শোন নাতনি আমি বলি কি এমন পুরুষরাই এক নারীতে আসক্ত হয়। তুই আর অমত করিস না, রাজি হইয়া যা।
.
.
তরিকা বেগম মিসেস কলি বেগমের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি এই বিয়েতে রাজি। শোনে লিপি বেগম ভীষণ খুশি হয়েছেন। বাসায় সবার সাথে কথা বলে দুই সপ্তাহ পরে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করে জানিয়েছেন। এর মাঝে একবার এসে নজরাত কে আংটি পরিয়ে দেন লিপি বেগম। রাদ শাহমাত কে সাথে আসতে বলেছিলেন কিন্তু রাদ আসতে রাজি হয়নি। তাই ফারুক সাহেব আর ছোট মেয়ে জুঁই কে নিয়ে আসেন তিনি। হবু ভাবীকে দেখে জুঁই এর ভীষণ পছন্দ হয়। একদিনেই ভাব করে নেয় নজরাত এর সাথে। তারপর যাওয়ার সময় নজরাত এর ফোন নাম্বার নিয়ে যায়।
নজরাত এর মন ভালো নেই আজ। তাই বিকাল বেলা হুমাইসাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে বলে মাকে জানায়। তরিকা বেগম বারবার বলে দিয়েছেন সন্ধ্যার আগে যেন বাসায় ফিরে আসে। নজরাত বলেছে ফিরে আসবে। হুমাইসাকে তৈরি হতে বলে নিজে তৈরি হতে শুরু করে নজরাত। এর মাঝে তরিকা বেগম অফিস থেকে কল করে জানায় আজকে লিপি বেগম বিয়ের শপিং করতে বের হবেন তার সাথে করে নজরাত কে নিয়ে যেতে চান। যেন নজরাতের পছন্দমত কেনাকাটা করতে পারেন। এ কথা শুনে নজরাত বিরস মুখে বলল,
__” আমি হুমাইসা কে বলে দিয়েছি যাওয়ার কথা এখন আমি ওর সাথে না গিয়ে ওখানে কিভাবে যাব?
__” ওনারা কিছুদিন পর আত্মীয় হতে চলেছেন এখন মুখের উপর কিভাবে না করব। এত বড় হয়েছিস এটুকু জ্ঞান নেই তোর? আমি আর কিছু শুনতে চাই না। সুন্দর করে রেডি হয়ে নে ওরা এসে তোকে নিয়ে যাবে।
অগত্যা নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হুমাইসাকে যাবে না বলে নিষেধ করে দেয় নজরাত। নজরাত এর কান্না আসছে কেন জানি। সব বাদ দিয়ে চুপটি করে শুয়ে থাকে।
বিকেল পাঁচটা বেজে দশ মিনিট,
একটা ভারী কোমল কন্ঠস্বর শুনে ঘুম ভাঙ্গে নজরাত এর। জুঁই খাটের এক পাশে বসে আলতো হাতে নজরাত এর হাতে ধরে বলে,
__” এই যে হবু মিষ্টি ভাবী? তুমি কি আমাদের সাথে শপিং মলে যাবে না?
নজরাত জুঁই কে হঠাৎ দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে। মাথা এখনো ঘুমের ধোঁয়াটে ভাবটা কাটিয়ে উঠেনি। এতো অল্প সময়ের মধ্যে নজরাত এতটা গভীরে ঘুম যাবে বুঝতে পারেনি। জুঁই আবারো বলে,
__” তুমি কি যাবে না?
নজরাত ফিচেল হেসে বলল,
__” সরি তোমাদের অপেক্ষা করানোর জন্য। তোমাদেরকে কি লেট হয়ে যাচ্ছে?
__” না না সমস্যা নেই তুমি ঝটপট তৈরি হয়ে নিতে পারো।
জুঁই এর কথায় নজরাত দ্রুত উঠে গিয়ে মুখ চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে বোরকা আর হিজাবের সাথে লাগোয়া নিকাব পরে নেয়। তারপর নানু কে বলে বের হয়।
রাস্তায় গিয়ে দেখতে পায় গাড়িতে তাদের জন্য লিপি বেগম অপেক্ষা করছেন। নজরাত গিয়ে সালাম দেয় তারপর লিপি বেগম বললেন,
__” জুঁই তুই আমার সাথে বস আর রুপকথা সামনের সিটে বসবে।
তারপর জুঁই তার মায়ের পাশে বসে আর নজরাত সামনে গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে পারে না তখন একটা বলিষ্ঠ হাত দরজাটা খুলে দেয়। তখন নাজরাত দেখতে পায় সামনে ড্রাইভিং সিটে রাদ বসে আছে। রাদ কে দেখতে পেয়ে একটা বড়সড় ধাক্কা খায় নজরাত।….
#চলবে ইনশা আল্লাহ।
(দিন দিন আপনাদের রেসপন্স কমে আসছে। গল্পটা কি ভালো লাগছে না??)