অনুপম ভালোবাসা পর্ব ২

0
56

#অনুপম_ভালোবাসা(২)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

পরের দিন নজরাত ভার্সিটির ক্যাম্পাস পেরিয়ে তার ক্লাসের ভবনে যাওয়ার সময় পেছন থেকে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর বলল,
—” এই মেয়ে দাঁড়াও?
মুহুর্তে‌ই নজরাতের পা থেমে গেল। ভয়ে বুক ধড়ফড় করতে শুরু হলো তার। লোকটার সম্মুখীন হয়ে মিয়নো গলায় বলল,
—” জ্বি ভাইয়া কিছু বলবেন?
মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছে নজরাত। তাকে আবার চিনে ফেললো না তো রাদ শাহমাত? কিন্তু নজরাত কে অবাক করে দিয়ে রাদ শাহমাত বলল,
—” এই মেয়ে তোমার নামটা যেন কি?
নজরাত শান্ত চোখে রাদের দিকে চেয়ে বলল,
—” নজরাত।
—” আগে পরে কিছু নেই?
নজরাত মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বোঝায় নেই।
তারপর রাদ বলল,
—” আচ্ছা তুমি এখন যেতে পারো।
নজরাত অনুমতি পেয়ে দ্রুত পা চালিয়ে নিজের ক্লাসে চলে গেল। নজরাত এর আসল নাম রুপকথা ইসলাম আর ডাক নাম নজরাত। বেচারির দুইটা নাম হ‌ওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গেল।
নজরাত চলে যাওয়ার পর রাদ এর বন্ধু রিয়াদ খোঁচা দিয়ে বলল,
—” কিরে দোস্ত ব্যাপার কি?
রাদ ক্যান্টিনে যেতে যেতে বলল,
—” কোন ব্যাপার না।
ক্যান্টিনে এসে রাদ ক্যান্টিনের মামাকে দুটো করে সিঙ্গারা আর দুটো সমুচা দিতে বলল দুজনকে। তারপর মায়ের ফোন আসলে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মায়ের কথায় কিছুটা রে গে যায় রাদ। শেষে বলে তোমাদের যা ইচ্ছা তাই কর আমি এসবের মধ্যে নেই। এই বলে কল কেটে দেয়।
এরমধ্যে তাদের নাস্তা চলে আসে। নাস্তা খেতে খেতে রিয়াদ বলল,
—” তুই তো আন্টির সাথে কখনো এভাবে কথা বলিস না। তাহলে আজকে কি হল তোর?
—” গতকাল যে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম সেই মেয়েটা অনেকটা নজরাত মেয়েটার মত মনে হল। তবে নজরাত মেয়েটা ন্যাচারাল দেখলেই বোঝা যায় আর্টিফিশিয়াল কিছু ইউজ করে না। তবুও কেন জানি দুটো মেয়ের মধ্যে অনেকটা মিল দেখতে পেলাম আমি। আম্মা ওই গতকালের মেয়েটাকে নিয়ে পড়ে আছে সেজন্যই রা গ ওঠে গেল।
রিয়াদ খানিকটা ভেবে বলল,
—” বাই এনি চান্স তুই কি নজরাত মেয়েটাকে পছন্দ করে ফেলেছিস?
রাদ রে গে যেতে নিলে রিয়াদ হেসে বলল,
—-” আরে দোস্ত মজা করেছি এতো রে গে যাচ্ছিস কেনো?
.

গতকাল তরিকা বেগম অফিস থেকে ফেরার পথে জাম কিনে নিয়ে এসেছেন। দুপুরে রোদের বেলা টক জাতীয় ভর্তা খেতে অমৃতের মত লাগে। তাই নজরাত জাম ভর্তা বানিয়ে রাফিকে ডাকে। আজ নজরাতের ভার্সিটি আর রাফির স্কুল বন্ধ তাই বাসায় আছে তারা।
ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বসে ভাই বোন মিলে আয়েশ করে খাচ্ছে তখন বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। নজরাত রাফি কে বলল,
—” ভাই দরজাটা খুলে দিয়ে আয় তো।
রাফি খেতে খেতে বলল,
—” আমি চলে গেলে তুই আমাকে রেখে সবটা খেয়ে ফেলবি তাই আমি যেতে পারব না তুই যা।
রাফির কথায় তার মাথায় হালকা থাপ্প ড় মেরে উঠে দাঁড়ায় নজরাত। এদিকে নজরাত এর নানু রুম থেকে চেঁচিয়ে বললেন,
—” সেই কখন থেইক্কা বেল বাজতাছে তোরা কানে শুনিস না?
নজরাত দুষ্টুমি করে বলল,
—” এই বুড়ি চেঁচিও না আমি যাইতেছি।
তারপর গায়ের ওরনাটা মাথায় শরীরে ঠিক মতো দিয়ে দরজা খুলে নজরাত। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের দেখে মুখের কথা হারিয়ে ফেলল। বহুক্ষণ বিবশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মিসেস কলি তখন বললেন,
—” কিরে মেহমানদার এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবি?
এতোক্ষণে জ্ঞান ফিরে নজরাত এর। বালিকার মতো সরল অকপট গলায় সালাম দিয়ে বলল,
—” জ্বি ভিতরে আসুন?

মেহমানদের বসিয়ে ভেতরে নানুর কাছে চলে যায় নজরাত। মনে মনে হাসি পায় তার। ঐদিন ভারি মেকআপ দেখিয়ে বিদায় করেছিল তাদের আর আজকে ফকিন্নি বেশ দেখে এমনিতেই বিদায় হবে তারা। খুবই সাধারণ একটা থ্রি পিস পড়ে আছে নজরাত। তাও একসেট হলে মানা যেত। তিনটা তিন সেটের থেকে নেওয়া। যেমন একটা ড্রেসের জামা অন্যটার ওড়না এরকম ভাবে পরে আছে নজরাত। মাথার এলোমেলো চুলগুলো পেঁচিয়ে কাটাবেন দিয়ে লাগিয়ে রাখা।
রাফি দৌড়ে গিয়ে কিচেনে বসে বসে আরাম করে খাচ্ছে জাম ভর্তা। মেহমান আশায় সে মহা খুশি কারণ একা একা সবটা খেতে পারছে। ভাই বোনদের এসব খুন ছুটি ভালবাসা একটা সময়ে খুব চলে। তারপর বোন চলে যায় শ্বশুর বাড়ি। তাদের মধ্যে দূরত্ব চলে আসে। তখন আর এসব খুনসুটি ভালোবাসা দেখা যায় না। চাইলেও এই সময়টা ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তরিকা বেগম অফিসে আছেন। নজরাতের নানু এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন। নজরাত সবার জন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত তৈরি করে নিয়ে আসে। এই গরমের মধ্যে লেবুর শরবত যেন মরুভূমিতে একটু পানির দেখা।
তারপর দ্রুত সবার জন্য নুডুলস রান্না করে নিয়ে আসে।
রাদ এর মা লিপি বেগম বললেন,
—” আমরা এসে তোমাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম মা মনে কষ্ট নিও না।
নজরাত শশব্যস্তে জবাব দেয়,
—” ছিঃ ছিঃ আন্টি এসব কি বলছেন? আবদুল্লাহ্‌ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে।[১]

খাদ্য খাওয়ানো নবী-রাসূলগণের প্রিয় একটি কাজ ছিলো। তাঁদের ঘরে খাবার না থাকলে তাঁরা না খেয়ে সবটুকু দিয়ে অতিথী আপ্যায়ন করতেন, বাড়িতে মেহমান আসলে তাঁরা অত্যন্ত খুশি হতেন। অথচ বর্তমানে আমরা বাড়িতে মেহমান আসলে বিরক্ত হই, আপ্যায়নে গাফিলতি করি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত পছন্দের কাজ মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো। সন্তুষ্টিচিত্তে মানুষকে খাওয়ানোর মাধ্যমে সহজেই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই আপনারা আসাতে আমার বরং উপকার ই হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

নজরাত এর কথায় লিপি বেগম এবং তার বোন রানু বেগম অনেক খুশি হলেন। সেদিন নজরাতকে পছন্দ না হলেও আজকে খুবই পছন্দ হলো।
মিসেস কলি তাদের অনেক রিকোয়েস্ট করে আজকে নিয়ে এসেছেন। নজরাত এর মা তরিকা বেগম আজকে বাসায় থাকবেন না তিনি জানতেন এদিকে রাদের জন্য অন্য জায়গায় পাত্রী দেখতে যাবেন বলেছিলেন লিপি বেগম। যদি সেখানে পাত্রী পছন্দ হয়ে যায় সেই ভয়ে তরিকা বেগম বাসায় না থাকা সত্ত্বেও আজকে তাদের নিয়ে এসেছেন মিসেস কলি। লিপি বেগম রাদ কে তাদের সাথে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু রাদ আসবে না বলে দেয় এবং রাদের বোন‌ও ভাইয়ের সাথে মিলে আসবে না বলেছে। তাই লিপি বেগম আর তার বোন এসেছেন আজ।
নজরাত এর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তরিকা বেগম একটা কোম্পানিতে চাকরি করে সংসার চালাচ্ছেন। তাই তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বাহিরে থাকেন। এদিকে নজরাতের ভার্সিটি বন্ধ থাকলে ঘরের সমস্ত কাজ করে রাখে মায়ের কষ্ট যেন লাঘব হয় সেজন্য। তবে তরিকা বেগম ভোরবেলা উঠে রান্না করে দিয়ে যান।

আজকে আর তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না তারা নাজরাতকে। নজরাতের রান্না করা নুডুলস খেয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মিসেস কলি আসলেন। তিনি খুবই উৎফুল্ল হয়ে বললেন,
—” খালাম্মা আমি বলেছিলাম না মেয়ে তাদের পছন্দ হবেই হবে?
নজরাত এর নানু বললেন,
—” আজকে কি ক‌ইলো তারা?
—” মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে এখন বাসায় সবার সাথে বসে কথা বলে জানাবে বলেছেন।
নজরাত নানু আলহামদুলিল্লাহ বলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন।
এদিকে পর্দার আড়ালে থেকে সবটাই শুনলো নজরাত। শুনে কি প্রতিক্রিয়া করবে বুঝতে পারছে না সে।

#চলবে ইনশা আল্লাহ।

রেফারেন্সঃ[১]
সহিহ বুখারী
হাদিস নং ১২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
(২৮, ৬২৩৬; মুসলিম ১/১৪ হাঃ ৪২, আহমাদ ৬৭৬৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here