মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ১১

0
21

#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_১১
#নুজাইফা_নূন

-“আদ্রি উৎসের হাতে কাপড় দেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সাবানের উপর পা পিছলে গিয়ে উৎসের গায়ের উপর পড়ে।উৎসের পায়ের তলায় ও শ্যাম্পু ছিলো।উৎস ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আদ্রি কে নিয়ে নিচে পড়ে যায়। না চাইতেও কিছু সময়ের জন্য দুজনের অধর এক হয়ে যায়।ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় আদ্রি। জীবনের প্রথম অধরে অধর ছুঁয়েছে তার। মূহুর্তের মধ্যে লজ্জায় দু গাল রক্তিম হয়ে উঠে। উৎসের চোখে চোখ রাখার সাহস হয় না তার।আদ্রি উৎসের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই হুঁশ ফিরে উৎসের ‌।উৎস তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে তার পরণে থাকা টাওয়ালের গিট ঢিলে হয়ে এসেছে। যেকোনো সময় খুলে যেতে পারে।উৎস সন্তর্পণে আদ্রির উপর থেকে উঠে দেয়ালে পরাপর কয়েক টা ঘুষি মেরে দিয়ে বললো, ড্যাম ইট! আজ যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম?একটার পর একটা অঘটন ঘটে যাচ্ছে।সব এই ঠকবাজ মেয়েটার জন্য।মেয়েটার গালে কষে দুইটা থা’প্প’ড় দিতে পারলে মনটা একটু শান্ত হতো।”

-” আদ্রি ভেবেছিলো উৎস হয়তো তার হাত ধরে তাকে নিচ থেকে তুলবে। কিন্তু উৎস নিজে উঠে গেলেও আদ্রি সেখানে ঠাঁই পড়ে থাকে। এদিকে আদ্রির ভেজা কাপড়ে গা চুলকাতে শুরু করে।আদ্রি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে আবারো পা পিছলে ফ্লোরে পড়ে যায়।যার দরুন ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে আদ্রি।আদ্রির আর্তনাদ কর্ণপাত হতেই উৎস আদ্রির কাছে ছুটে এসে আদ্রির দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।আদ্রি উৎসের হাত না ধরে নিজেই আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়।ব্যাপারটাতে বেশ অপমান বোধ করে উৎস।উৎস কিছু বলতে গিয়েও আদ্রির অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারে না।আদ্রি চোখের পানি মুছে বললো, আমি বাইরে যাচ্ছি।আপনি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিন।আপনি চেঞ্জ করে বের হলে আমি চেঞ্জ করবো।”

-” তুমি বরং আগে চেঞ্জ করে নাও।না হলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

-” উৎসের কথা শুনে আদ্রি কোনো কথা না বাড়িয়ে থ্রিপিস চেঞ্জ একটা শাড়ি পরে রুমে এসে কোমড়ে মুভ ক্রিম লাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।উৎস চেঞ্জ করে বেরিয়ে দেখে আদ্রি কোমড়ে মুভ লাগানোর চেষ্টা করছে।উৎস কে দেখেই আদ্রি নিজের শাড়ি ঠিক করে নেয়।উৎস তৎক্ষণাৎ আদ্রির হাত থেকে মুভ ক্রিম নিয়ে আদ্রি কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেই আদ্রির কোমড়ে ক্রিম লাগিয়ে দেয়।আদ্রি আবেশে চোখ করে বিছানার চাদর খামচে ধরে।তার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বারবার কেঁপে কেঁপে উঠে আদ্রি। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।এর‌ই মধ্যে আদ্রির ফোন বেজে উঠে।আদ্রি ফোনের স্ক্রিনে নাতাশা নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে। নাতাশা সহ তার বাবা মা কিছুদিনের জন্য গ্ৰামের বাড়িতে গিয়েছিলো। এদিকে আদ্রির বাড়িতে বিয়ের ঝামেলা ছিলো।এজন্যই কয়েকটা দিন আদ্রি বাকি দুইটা টিউশনি থেকে ও ছুটি নিয়েছিলো। আজকেই তার ছুটির শেষ দিন। আগামীকাল থেকে আবারো তাকে পড়াতে যেতে হবে। উৎসের স্পর্শ সহ্য হচ্ছিলো না আদ্রির।আদ্রি বারবার উৎসের থেকে পালাতে চাইছিলো। কিন্তু সেটা মুখে বলতেও পারছিলো না।অবশেষে নাতাশার কল পেয়ে আদ্রি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়।আদ্রি ফোন নিয়ে বাইরে এসে কল রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর প্রান্ত থেকে ইতি চৌধুরী বললো ,

-“আমার বেবি ব‌ই খাতা নিয়ে টেবিলে ওয়েট করছে‌।জলদি পড়াতে এসো।”

-” আপনারা গ্ৰাম থেকে চলে এসেছেন?”

-” হ্যাঁ।”

-” কিন্তু ম্যাম আপনাদের তো আজকে আসার কথা ছিলো। আর আমার আগামীকাল থেকে পড়াতে যাওয়ার কথা।”

-” আমি কবে ফিরবো কি ফিরবো না সেটা নিশ্চয় তোমার থেকে জেনে নিবো না।এ কয়দিনে আমার বেবির অনেক পড়া মিস হয়ে গিয়েছে।তুমি দ্রুত চলে আসো।”

-” সরি ম্যাম।আমি আজকে আসতে পারবো না।”

-” আসতে পারবে না মানে কি? তোমাকে মাস শেষে এতো গুলো টাকা দেওয়া হয়।আমি কোনো এক্সিউজ শুনতে চাইছি না।এক ঘন্টার মধ্যে তোমাকে যেন আমার বেবির পড়ার টেবিলে পাই।আদ্রি কিছু বলার আগেই ইতি চৌধুরী সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।আদ্রি বাড়িতে এতো মেহমান রেখে কিভাবে বাড়ি থেকে বের হবে বুঝতে পারে না।আদ্রি কে চিন্তিত দেখে আদ্রির বাবা এসে বললো,

-” তোকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন মা?”

-” আর ব‌ইলো না বাবা‌। নাতাশা আম্মু কল দিয়েছিলো।তিনি এমন ভাব করেন যেন আমি তার মেয়ের টিউটর না।তার বাড়ির কাজের লোক।তিনি গ্ৰামে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন পনেরো তারিখ থেকে পড়াতে যেতে।হুট করে এখন কল দিয়ে বলছেন এক্ষুনি পড়াতে যেতে হবে।”

-” আচ্ছা মা তুই আমাকে একটা কথা বল তো। তুই কি এই সম্পর্ক টা মেনে নিয়েছিস? নাকি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিস?”

-” না বাবা। বাঙ্গালী মেয়েদের বিয়ে একবার ই হয়।বিয়েটা যখন হয়েই গিয়েছে‌।তখন আর আমার ফেরার কোনো রাস্তা নেই বাবা।মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর সাথে আপোষ করে চলতে না পারলে, ডিভোর্স এর পর পুরো পৃথিবীর সাথে আপোষ করে চলতে হয়।আমি না হয় আমার স্বামীর সাথেই আপোষ করে চলবো।কথাটা শোনা মাত্রই সজল খন্দকার আদ্রি কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বললো,

-” আমি তোর মুখ থেকে এটাই শুনতে চেয়েছিলাম মা।তোর এখন বিয়ে হয়েছে, সংসার হয়েছে।এখন আর তোর বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করাতে হবে না।আমি তোর শ্বশুর বাড়ি সম্পর্কে যতোটা শুনেছি।তারা মনে হয় না তোকে এখনো টিউশনি করাতে দিবে। তুই আজকেই সবাই কে বলে আসবি, তুই আর পড়াতে পারবি না।”

-” কিন্তু বাবা কয়েক মাস পরে তিন জনের ই পরীক্ষা।আমার ও তো একটা দায়িত্ব আছে।আমি এইভাবে মাঝপথে সবাইকে ছেড়ে আসতে পারি না বাবা।”

-” ঠিক আছে মা। তুই যা ভালো মনে করিস ।তাই কর।তবে এখন জামাই কে নিয়ে খেতে আয়‌। অনেকক্ষণ হলো তোরা এসেছিস। কিন্তু এখনো তোদের নাস্তা পানি দেওয়া হলো না। তুই আর দেরি করিস না মা‌।জামাইকে নিয়ে আয়‌।আমি গিয়ে দেখি শায়লা কি করছে?”

-“তুমি যাও।আমি আসছি বাবা।”

-” উৎস , আদ্রি আসা উপলক্ষে শায়লা পাকন পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, নকশি পিঠা, দুধচিত‌ই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা , ভাপা পিঠাসহ আরো হরেক রকমের পিঠা বানিয়েছেন।তিনি বড়লোক জামাই কে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছেন না।তাই তো তিনি সালমা তালুকদারের কাছে ফোন করে উৎসের পছন্দের সব খাবার রান্না করেছেন।আদ্রি উৎস কে নিয়ে আসতেই শায়লা খন্দকার ফ্লোরে একটা মাদুর পেতে দেয়। মাদুর দেখে উৎসের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।সে কখনো নিচে বসে খায় নি।আদ্রি উৎসের সমস্যা বুঝতে পেরে উৎস কে অনুনয় বিনয় করে বললো,

-” প্লিজ একটু মানিয়ে নিন‌‌।না হলে এতো গুলো মানুষ কষ্ট পাবে।প্রতিত্তরে উৎস কোনো কথা না বলে চুপচাপ মাদুরে বসে পড়ে। যা দেখে খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠে আদ্রির।”

-” উৎস , আদ্রি দুজনে দুজনের মতো খাচ্ছে এমন সময় আদ্রির নানি এসে বললো, এ কি রে আদু?তোরা আলাদা আলাদা থালে খাচ্ছিস ক্যা রে? বিয়ার পর সোয়ামী ব‌উ দুজনে এক থালে খাতি হয়।তাইলে দুজনের মধ্যে মায়া, মমতা,প্রেম ভালোবাসা, মহব্বত বাড়ে। তার কথা শুনে মনে মনে উৎস তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, আমার জীবনে যার কোনো অস্তিত্ব ই নেই। তার প্রতি কি আদৌ আমার মায়া , মমতা, ভালোবাসা বাড়বে??”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here