#মনে_পড়ে_তোমায়_সন্ধ্যে_বেলায়
#পর্ব_০৭
#নুজাইফা_নূন
-” প্রথমবারের মতো নিজের বর কে দেখে চমকে উঠে আদ্রি।যার দরুন আদ্রির হাত থেকে কফির মগ নিচে পড়ে যায়।মগে থাকা গরম কফি আদ্রির পায়ের উপর পড়ে। তৎক্ষণাৎ আদ্রি ও মাগো বলে চিৎকার করে উঠে।তার চিৎকারে কাজে ব্যাঘাত ঘটে উৎসের ।উৎস বিছানার উপর ল্যাবটপ রেখে দৌড়ে আদ্রির কাছে এসে বললো,
-” আদিতা তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি ঠিক আমার কাছে ফিরে আসবে।তোমাকে নিশ্চয় তোমার পরিবারের লোকজন জোর করে আটকে রেখেছিলো?তোমাকে বাধ্য করেছিলো পালিয়ে যাওয়ার নাটক করতে? তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে তাই না?আমি জানতাম আমার ভালোবাসা ,আমার সন্ধ্যে কন্যা আমার সাথে প্রতারণা করতে পারে না।প্রতারক তোমার পরিবার, তোমার বোন।আমি তোমার বোন , আর পরিবার কে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।”
-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই উৎসের আদ্রির পায়ের উপর নজর পড়ে।উৎস আদ্রির হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আদ্রির পা নিজের হাঁটুর উপর রাখে।পায়ে উৎসের স্পর্শ পেয়ে আদ্রির দেহ শিউরে উঠে। আদ্রি দুহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
-” একি আপনি পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?এটা পাপ।আমাকে দয়া করে পাপের ভাগীদার করবেন না।”
-” কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো।পায়ে যে গরম কফি পড়েছে সে খেয়াল আছে তোমার? জায়গা টা লাল হয়ে উঠেছে। ফোস্কা পড়ে যাবে।আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে তোমার চমকে উঠতে হলো?আমাকে দেখে এমন রিয়েক্ট করলে যেন এই প্রথম তুমি আমাকে দেখছো।”
-” উৎসের কথা শুনে আদ্রি মনে মনে বললো আমি সত্যিই আপনাকে দেখে চমকে উঠেছিলাম।আপনাকে আমার বরের আসনে দেখতে হবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি আমি। সেদিন সন্ধ্যে বেলায় যখন
জীবনের প্রথম বার শরীরে আপনার স্পর্শ পেয়েছিলাম।তখন আপনি সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি ছিলেন।আমি আমার শরীরে আপনার স্পর্শ কিছুতেই মানতে পারি নি। সেদিন বাড়ি ফিরে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে আমার শরীরের যেখানে যেখানে আপনার হাতের স্পর্শ লেগেছিলো , সেখানে সেখানে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা আমাকে স্থির থাকতে দিচ্ছিলো না।ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ কাজ করছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো এতে আমার স্বামী কে ঠকানো হবে।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সেই মানুষটা আমার বিয়ে করা বর।যার জীবনে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।সে আমাকে আদিতা মনে করে করে আমার সেবা শুশ্রূষা করেছে।নিয়তি আজ আমাকে কোথা থেকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে।আদ্রির ভাবনার মাঝে নিজের পায়ে ঠান্ডা অনুভব করলো।আদ্রি তৎক্ষণাৎ উৎসের দিকে তাকিয়ে দেখলো উৎসে আলতো হাতে তার পায়ে মলম লাগিয়ে সেই জায়গায় ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে।আদ্রি আবেশে চোখ বন্ধ করে পুনরায় বিছানার চাদর খামচে ধরে আমতা আমতা করে বললো,
-” আপনি হয়তো আমাকে আদি মনে করে আমার এতো সেবা শুশ্রূষা করছেন। কিন্তু আমি আদি নই, আদ্রি।আদ্রি কথাটা শোনা মাত্রই উৎসের হাত থেমে গেল।উৎস তৎক্ষণাৎ তার হাতে থাকা মলম ছুড়ে ফেলে দিয়ে আদ্রির হাত ধরে বিছানা থেকে টেনে তুলে বললো,
-” তোমাকে বারবার বলেছিলাম তুমি আমার সামনে আসবে না। তারপর ও কেন এসেছো আমার রুমে?”
-” উৎসের কথায় আদ্রির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।উৎস আদ্রির চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
-” এই চোখ দুটো মনে হচ্ছে আমি আগে কোথাও দেখেছি।মনে হচ্ছে যেন চোখ দুটো যেন আমাকে কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু এমনটা মনে হচ্ছে কেন? এই ঠকবাজ ,প্রতারক মেয়েকে আজ প্রথমবার দেখছি আমি। তবুও কেন মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।তার মানে কি? না না। হয়তো তারা জমজ বোন হবার দরুন আমার এমন টা মনে হচ্ছে। কিন্তু এই মেয়েকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাহলে মাথার উপর উঠে নাচতে শুরু করবে।উৎসের ভাবনার মাঝে আদ্রি বললো,
-” আমি জানি আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারছেন না।আপনি ভাবছেন আমি জোর করে আপনার জীবনে প্রবেশ করেছি। কিন্তু আমি জানি আমি কোনো অন্যায় করি নি।উল্টো আদির ভুলের মাশুল আমাকে দিতে হচ্ছে। যেভাবেই হোক আমাদের বিয়ে হয়েছে।নিয়ম অনুযায়ী গতকাল আমাদের বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু যাওয়া হয়নি।বাবা বারবার কল করে আমাদের যেতে বলেছেন। আমাদের হয়তো আপনাদের মতো এতো বড় বাড়ি, গাড়ি , টাকা পয়সা নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমাদের বাড়িতে আপনার আদর অ্যাপয়নে বিন্দুমাত্র ত্রুটি থাকবে না।”
-” আদ্রি কথা বলার পুরোটা সময় উৎস আদ্রির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।আদ্রি কি বলেছে না বলেছে উৎসের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।আদ্রি উৎসের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে উৎসের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসে।আদ্রি নিচে আসার পর পরই উৎসের ফোন বেজে উঠে। উৎস কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সালাম দিয়ে বললো,
-” কেমন আছো বাবা?”
-” জ্বি ভালো। কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।”
-” আমি আদ্রির বাবা বলছি।”
-“জ্বি আঙ্কেল বলুন।”
-” তোমরা কি এ বাড়িতে আসবে না বাবা ?”
-” ঠকবাজ, প্রতারকদের বাড়ির খাবার যে আমার পেটে হজম হবে না আঙ্কেল।আপনি এসে বরং আপনার মেয়েকে নিয়ে যান।আমি তার সাথে একই ছাদের তলায় থাকতে পারবো না।”
-” এসব তুমি কি বলছো বাবা? আদ্রি তোমার স্ত্রী।”
-” কিসের স্ত্রী।আমি মানি না এই বিয়ে। আপনারা সকলে মিলে ঠকিয়েছেন আমাকে।আমি কোনো দিন ও আপনাদের ক্ষমা করতে পারবো না।”
-” অন্যায় আমরা করেছি। কিন্তু আমার মেয়ের কোনো দোষ নেই।”
-” আপনার মেয়ে তো ধোঁয়া তুলসী পাতা। নির্লজ্জের মতো ছোট বোনের হবু বর কে দিয়ে করে নিলো।”
-” এখানে আমার আদ্রি মায়ের সত্যিই কোনো দোষ নেই। এমনকি আদ্রি তো এই বিয়েটা করতেই চায় নি। কিন্তু আমার স্ত্রীর লোভ আর জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।সে ভেবেছিল বড়লোক বাড়িতে বিয়ে দিতে পারলেই হয়তো আমার মেয়েটা সুখী হতে পারবে। কিন্তু সে হয়তো এটা জানে না যে দুইজনের মধ্যে ভালোবাসা না থাকলে রাজপ্রাসাদ , টাকা পয়সা সুখ দিতে পারে না। তবে ভালোবাসা থাকলে কুঁড়ে ঘরে ও সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায়।আদ্রি কে জোর করার পরেও যখন আদ্রি বিয়েটা করতে চায় নি , তখন আমার স্ত্রী হাতে বিষের বোতল নিয়ে বিষ খেয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা
করার হু’ম’কি দেয়।আদ্রি আর কোন উপায় না পেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়।আদ্রি কে চিনতে ভুল করেছো তুমি।আদ্রি একটা খাঁটি সোনা।আমার বলে আমি একটু ওবাড়িয়ে বলছি না।এখন সবটা তোমার ইচ্ছা বাবা।তোমার যদি মন চায় তাহলে আমার মেয়েটা কে নিয়ে এসো।আর যদি না আসো তাহলে আর কিছু করার নেই বলে চোখের পানি মুছে কল কেটে দিলেন সজল খন্দকার।।”
-” আদ্রি নিচে এসে কিচেনে গিয়ে দেখলো সালমা তালুকদার আর ঝর্ণা তালুকদার দুজনে মিলে রান্না করছেন।আদ্রি কে দেখে সালমা তালুকদার বললো,
-” বর কে বলেছো বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা।”
-” হ্যাঁ মা বলেছি। কিন্তু আপনার ছেলে যাবে না বলার আগেই উৎস কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,
-” দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।ফিরে এসে যদি দেখি তুমি রেডি হও নি।তাহলে তোমার বাপের বাড়ি যাওয়া ক্যান্সেল।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।