#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১০
কাব্য চিত্রলেখাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“তোমার মা কি জিনিস বলো তো! আমার ভাইটারে ঘোরাচ্ছে খালি।”
চিত্রলেখা মাথা নিচু করে মিনমিনে কন্ঠে বলল
-“আসলে উনি নিজেও খুব বাজেভাবে ঠকেছেন তো। তাই আমাকে নিয়ে ভয় পায়। বাবা নামক মানুষটার মতো কিরণও যদি আমাকে অর্ধেক রাস্তায় ছেড়ে চলে যায়। এই ভয় করেন।”
কাব্য চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে মুখে দুই হাত রেখে কিছুসময় বসে রইলো। আবারও চশমাটা তুলে চোখে দিয়ে বলল
-“আচ্ছা দেখা যাক কি হয়! উনি তো বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আমি দেখছি বাবাকে বলে। আর তোমরা থাকো আমি যাই।”
কিরণ এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিলো। এবার সে মাথা তুলে বলল
-“কিন্তু দাভাই…”
কিরণের কথা থামিয়ে দিয়ে কাব্য বলল
-“এখন কোনো কিন্তু না। দুইজন একটু কথাবার্তা বল। আমি যাই।”
বলেই কাব্য চলে গেল সেখান থেকে। কাব্য চলে যেতে চিত্রলেখা কিরণের হাতে হাত রাখলো। কিরণ তাকালো চিত্রলেখার চোখের দিকে। চিত্রলেখা নরম কন্ঠে বলল
-“ছেড়ে যাবে না তো আমায়। আমার পাশে থেকে গিয়ে প্রমাণ করে দিতে পারবেনা যে সবাই এক না।”
কিরণ অপর হাত দিয়ে চিত্রলেখার হাত শক্ত করে ধরে বলল
-“মৃত্যু ছাড়া তোমার থেকে কেউ আমাকে আলাদা করতে পারবেনা। আমি তোমার পাগল প্রেমিক চিত্রলেখা। যার একটু সুখ চাই তোমার মাঝে। তোমার সঙ্গে থাকতে চাই সবসময়।”
চিত্রলেখা কিরণের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো।
————————-
শুভ্রতা আনজুমা বেগমের সঙ্গে অনেকটা সময় গল্প করলো। মনটা একটু ভালো হলো ওর। কাকলি ছাদে এসে অনেক আগেই ওদের আড্ডায় যোগ দিয়েছিল।
সন্ধ্যা লেগে আসতেই ওরা তিনজন মিলে ছাদ থেকে নেমে গেল। শুভ্রতা মাগরিবের নামাজ পড়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। ব্যস্ততম রাস্তাটা বিরক্ত লাগছে শুভ্রতার। শুভ্রতা দোলনায় বসে চোখ বুজে রইলো।
হুট করেই কাধে কারো হাত পড়তেই চোখ খুললো শুভ্রতা। সামনে কাব্যকে দেখে চুপ করে রইলো শুভ্রতা। কাব্য কপাল কুচকে বলল
-“কি হলো তোমার আবার!”
শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
-“কিছু না। কি হবে আমার আবার!”
কাব্য ধপ করে দোলনায় শুভ্রতার পাশ ঘেঁষে বসে পড়লো। শুভ্রতা খানিকটা দূরে সরে বসলো। কাব্য সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলল
-“জানো তো তুমি ঠিকি ধরেছিলে কিরণ ছ্যাকা খাওয়া ফিলিংস নিয়ে গান গাচ্ছিলো।”
শুভ্রতা কিছু বলল না চুপ করেই রইলো। কাব্য আবারও বলল
-“তবে ঠিক তা নয়। আমি তো ওদের মিলিয়েই ছাড়বো।”
শুভ্রতা এখনো চুপ করে মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য এবার ভ্রুকুচকে তাকালো শুভ্রতার দিকে।
কাব্য শুভ্রতা দুই কাধে হাত রেখে কাব্যের মুখোমুখি করে বসালো। দুইহাতে শুভ্রতা মুখটা আবদ্ধ করে বলল
-“কি হয়েছে বলো। মনে মনে মন কলা খেয়ে থাকলে আমি কি করে বুঝবো বলো তো!”
শুভ্রতা এখনো চুপ করে আছে। এতে কাব্যের কপাল আরো কুচকে এলো। কি এমন হয়েছে যে শুভ্রতা এমন করছে। কাব্য আবারও বলে উঠলো
-“শরীর খারাপ লাগছে।”
তাও কোনো প্রতিউত্তর নেই শুভ্রতার। কাব্য বলল
-“তোমার বাবার কথা মনে পড়ছে।”
শুভ্রতা এখনো চুপচাপ বসে আছে। কাব্য এবার উঠে যেতে যেতে বলল
-“আচ্ছা আমি কাকলিকে ডেকে দিচ্ছি। ওর সঙ্গে কথা বলো ভালো লাগবে।”
কাব্য বারান্দা ছেড়ে চলে চলে যেতে নিলেই শুভ্রতা থমথমে কন্ঠে বলল
-“আপনি বাধ্য হয়ে আমার সঙ্গে আছেন তাই না।”
কাব্যের কপাল কুচকে এলো। প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে শুভ্রতাকে বলল
-“এমন কেন মনে হলো তোমার।”
শুভ্রতা উঠে চলে যেতে নিলেই কাব্য ওর হাত টেনে একদম ওর কাছে নিয়ে আসলো। শুভ্রতা কাব্যের থেকে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলল
-“ছাড়ুন আমাকে। আমি কাকলির কাছে যাবো।”
কাব্য আরো শক্ত করে শুভ্রতাকে আকড়ে ধরে বলল
-“এতো কাকলি কাকলি করো কেন বলো তো। এমন মনে হয় যে ও তোমার জামাই আর আমি তোমার ভাসুর লাগি।”
শুভ্রতা এবার কান্না করে দিয়ে বলল
-“ছাড়ুন আমার লাগছে। ওই মেয়ের হাত ধরুন গিয়ে।”
কাব্য অবাক হয়ে বলল
-“কান্না করছো কেন! ওই মেয়ে আবার কোন মেয়ে!”
শুভ্রতার কান্নার বেগ যেন বেড়ে গেল। হুট করেই সে কাব্যকে জড়িয়ে ধরলো। কাব্য যেন পাথরের ন্যায় হয়ে গেল। সে কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না।
শুভ্রতা ফোপাতে ফোপাতে বলল
-“আপনি ওই মেয়েটাকে খুব ভালোবাসেন তাই না।”
কাব্য শুভ্রতার দুই কাধে হাত রেখে শুভ্রতার মুখটা নিজের মুখোমুখি করে বলল
-“কোন মেয়ে কিসের মেয়ে শুভ্রতা ক্লিয়ার করে বলো। সত্যি বলছি আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
শুভ্রতা বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। কাব্যও ওর পিছু পিছু চলে আসলো রুমে। শুভ্রতা কার্বাট থেকে ছবিটা বের করে কাব্যের হাতে দিলো।
কাব্য থমকে গেল ছবিটা দেখে। ঠোঁটে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলল
-“সব তো শেষ করে দিয়েছিলাম। এটা আবার রয়ে গেল কিভাবে!”
বলেই ছবিটা ছিড়ে কুটিকুটি করে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। ধপ করে বেডে বসে পরলো কাব্য। শুভ্রতাও ওর পাশে বসলো। শুভ্রতা বলল
-“ছবিটা ছিড়ে ফেলেন কেন!”
কাব্য হাসলো। শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
-“আমি কাপুরুষ না যে বিয়ের পর পরকীয়া করবো। এটা মনে রাইখো।”
বলেই কাব্য রুম ছেড়ে চলে গেল। শুভ্রতা কাব্যের যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। শুভ্রতার মনে শতশত প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল।
————————
কাকলি বসে পড়ছিল কিন্তু কিছুতেই পড়াতে মন বসাতে পারছেনা সে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে বই বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
আশা বেগম রুমে এসে কাকলিকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে বললেন
-“এখন যেহেতু পড়তে ভালো লাগছেনা। তাহলে পড়তে হবেনা। রেখে দিয়ে যা অন্য কিছু কর।”
কাকলি মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। রুম থেকে বেড়িয়ে কাব্যের রুমের দিকে যেতে নিলেই দেখলো কাব্য রুম থেকে বের হচ্ছে। কাকলি বলল
-“দাভাই তুই কখন আসলি। আর ভাইয়া কোথায়? দুইজন না একসঙ্গে গেলি।”
কাব্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“একটু আগেই এসেছি। কিরণের কাজ আছে। তাই আসেনি।”
কাকলি “ও আচ্ছা” বলে চলে যেতে নিলেই কাব্য বলল
-“শুভ্রতার মাথায় ভুত চাপছে। ওরে বেশি ঘাটাস না।”
কাকলি ভ্রুকুচকে বলল
-“ওর আবার কি হলো!”
কাব্য ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“তেমন কিছু না। যা গিয়ে কথা বল।”
কাকলি চোখ ছোট ছোট করে বলল
-“তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস।”
কাব্য বলল
-“কোথাও না একটু ছাদে যাচ্ছি।”
কাকলি “ও” বলে শুভ্রতার কাছে গেল।
শুভ্রতা বেডে বসে গাল হাত দিয়ে বসে ছিলো। কাকলি হাউ করে উঠতেই চমকে উঠে শুভ্রতা।
শুভ্রতা বুকে ফু দিয়ে রাগী চোখে কাকলির দিকে তাকাতেই কাকলি হেসে দিলো।
—————————
রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে কিরণ আর চিত্রলেখা গিয়ে বসলো সেই ঝিলের ধারে। ঝিলের স্বচ্ছ পানিতে পা ভিজিয়ে হাতে হাত রেখে বসে রইলো দুইজন।
খানিকক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কিরণ বলল
-“চলো এবার তোমাকে রেখে আসি।”
চিত্রলেখা কিরণের দিকে তাকিয়ে বলল
-“সময়টা যদি এখানে থমকে যেত। সারাজীবন যদি পারতাম তোমার হাতে হাত রেখে অতিবাহিত করতে। তাহলে হয় তো আমার চেয়ে বেশি কেউ খুশি হতোনা।”
কিরণ শক্ত করে চিত্রলেখাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল
-“এখন যেতে হবে না হয় তোমার হিটলার মা আবার খেপে যাবে।”
চিত্রলেখা রাগী চোখ নিয়ে কিরণের দিকে তাকালো। কিরণ বলল
-“আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে আমার। আমি আর কিছু বলবোনা ওনাকে নিয়ে। হয়েছে এবার চলো।”
চিত্রলেখা হেসে দিয়ে বলল
-“বাইক তো নিয়ে আসোনি।”
কিরণ ভাবলেশহীন ভাবে বলল
-“তো”
চিত্রলেখা চোখ ছোট ছোট করে বলল
-“এখন যাবে কিসে করে!”
কিরণ শয়তানি হেসে বলল
-“প্লেনে যাবো।”
চিত্রলেখা কোমরে হাত রেখে রাগী কন্ঠে বলল
-“আমি ভালোভাবে জিঙ্গাসা করলাম আর তুই মজা করছো আমার সঙ্গে।”
কিরণ একটা রিক্সা ডেকে বলল
-“আজ না হয় একসঙ্গে রিক্সায় উঠে কিছু সময় কাটাই।”
চিত্রলেখা রিক্সায় উঠে বসলো। কিরণও উঠে পড়লো। রিক্সার হুট খোলাই রাখলো কিরণ। মৃদু বাতাসে চিত্রলেখার অবাধ্য চুলগুলো উড়ছে। সাদা রঙের জামাটা চিত্রলেখাকে যেন আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কিরণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চিত্রলেখার মেকাপ ছাড়া স্নিগ্ধ চেহারার দিকে।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আগের মতো রেসপন্স পাচ্ছিনা সবাই বেশি বেশি রিয়েক্ট-কমেন্ট করে সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।💛)