#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৯
কাব্য শুভ্রতা নাক টেনে বলল
-“তা এই কথা কি আমার গায়ে পানি দেওয়ার সময় মনে ছিলো না।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচি কাটলো। শুভ্রতা গিয়ে ড্রেস চেন্স করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
কাব্য ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।
শুভ্রতা হাই তুলছে আর বই নিয়ে বসে আছে। আশা বেগম তাকাচ্ছে ওর দিকে। সেইদিকে শুভ্রতার কোনো হুশ নেই। কাকলি বিষয়টি খেয়াল করে শুভ্রতাকে টোকালেও তার কোনো হুশ নেই।
আশা বেগম কিছুক্ষণ পর ধমকে উঠলো। শুভ্রতা চমকে দাড়িয়ে পরলো। শুভ্রতা মাথা নিচু করে বসে পরলো আবার। তার যে ম্যাথ ভালো লাগেনা। এটা কেন কেউ বোঝেনা।
———————-
কিরণ বসে আছে চিত্রলেখার মা শাফিনা বেগমের সামনে। কাব্যের কথায় সে এখানে এসেছে। উনাকে মানাতে। উনি যদি এরপর ও রাজি না হয় তাহলে অন্য প্লান করবে কাব্য। কিরণে বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। হাত দুটো কচলাচ্ছে সে।
শাফিনা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“তুমিই কিরণ চৌধুরী?”
কিরণ খানিকটা কাঁপা কন্ঠে বলল
-“হুম আন্টি আমিই কিরণ।”
শাফিনা বেগম চশমাটা ঠিক করে বলল
-“ভালোবাসো চিত্রলেখাকে!”
কিরণ যেন ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। এতটা অস্থির কোনো দিন লাগেনি তার। শাফিনা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিরণের দিকে তাকিয়ে বলল
-“ভালো প্রেমিক কখনোই ভালো স্বামী হতে পারেনা।”
কিরণ পরপর কয়েকটি নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“আমি বলবোনা যে চিত্রলেখাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা। কারণ এটা কখনোই সত্যি না। তবে ওকে ছাড়া আমার আত্মা মরে যাবে। ও আমার হৃদস্পন্দন যাকে ছাড়া আমার একটু সময়ও চলবোনা।”
শাফিনা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা কিরণ।”
কিরণ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“আন্টি আমি জানি। আপনি যদি মনে করেন আমার বাবা বড় বিজনেস আছে বলেই আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আর আমি আমার বাবার পয়সায় ও বসে খাবোনা। এই বছর আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে। আমি চাকরি করে নিজের টাকা দিয়েই চিত্রলেখার দায়িত্ব নিবো।”
শাফিনা বেগম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন
-“যতো সহজে কথাগুলো বলছো করা কি এতই সহজ!”
কিরণ সামনে থাকা পানির গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলল
-“আমি জানি বাস্তবতা এতটাও সহজ না। কিন্তু চিত্রলেখার জন্য আমাকে করতেই হবে।”
শাফিনা বেগম বললেন
-“তোমার থেকে আমি ভালো ছেলে পাবো চিত্রলেখার জন্য। সেখানে আমি কোন দিক দিয়ে তোমাকে বেছে নিবো!”
কিরণের কথাগুলো আটকে আসছে। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে কিরণ বলল
-“ভালো ছেলে হয় চিত্রলেখার জন্য আপনি অনেক পাবেন। কিন্তু আমার মতো ভালো ওকে কেউ রাখতে পারবেনা। আর কথা হচ্ছে আমি যদি ওতটা খারাপ হতাম তাহলে আপনার পারমিশন নিতে আসতাম না। চিত্রলেখা পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতেই পারতাম। আপনি কিছুই করতে পারতেন না। কিন্তু আমি তা করবোনা। কারণ আপনি আপনার মেয়েকে খুব কষ্ট করে বড় করে তুলেছেন। আপনার অনুমতি ছাড়া আমরা ভালো থাকবো না।”
শাফিনা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
-“তোমার পরিবারের সবাই জানে চিত্রলেখার কথা!”
কিরণ হাতের রুমাল দিয়ে কপালে জমে থাকা সূক্ষ্ম ঘামের বিন্দু গুলো আলতো হাতে মুছতে মুছতে বলল
-“এখনো সবাই জানে না। তবে আমার ফ্যামিলি আমাকে বিশ্বাস করে। ওনারা জানে আমি ভুল কাউকে ভালোবাসবোনা।”
শাফিনা বেগম সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললেন
-“তোমার বাবার নাম্বার দিও। ওনার সঙ্গে আমার কথা আছে।”
কিরণ ভ্রুকুচকে বলল
-“বাবা সঙ্গে কি কথা বলবেন! আপনি কি রাজি চিত্রলেখাকে আমার হাতে তুলে দিতে।”
শাফিনা বেগম পিছনে ঘুরে কিরণের দিকে তাকিয়ে বললেন
-“আমি তো একবারও রাজি হওয়ার কথাটা বলিনি। যা বলেছি তাই করো।”
কিরণের মুখ চুপসে গেল। আনিসুল চৌধুরীর নাম্বার দিয়ে টলমল চোখে বেরিয়ে এলো চিত্রলেখার বাসা থেকে কিরণ।
বাহিরে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলো কাব্য। ফোনে গেমস খেলছিল আর কিরণের অপেক্ষায় বসে ছিলো।
কিরণ গেটে বাইরে আসতেই একটা মেয়ে আছড়ে পরলো কিরণের বুকে।
কাব্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সে দিকে। গাড়িতে বসে মেয়েটাকে দেখতে পেল না সে। তবে তার বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাই চিত্রলেখা।
চিত্রলেখা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো কিরণকে। যেন ছেড়ে দিলেই কিরণ হারিয়ে যাবে চিরজীবনের জন্য। পারলে সে কিরণের বুকের ভিতরে ঢুকে যেত।
কিরণ বস্তুর ন্যায় দাড়িয়ে আছে। চিত্রলেখা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল
-“তুমি এমন করছো কেন কিরণ! কাল রাতে আমি তোমাকে কতবার কল করেছি তুমি জানো। আমার সব কথা না শুনেই তুমি বিকেলে চলে গেলে। তুমি কি একবারও আমার কথা ভাবলে না। আমার কি অবস্থা হয়েছিল!”
কিরণ চুপচাপ আগের মতোই দাড়িয়ে রইলো।
খানিকক্ষণ পর কাব্যের গলা শুনে চিত্রলেখা কিরণকে ছেড়ে ওর পাশে দাড়ালো। কিরণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো কাব্যের দিকে। কিরণ কিছু বলতে নিবে তার আগেই কাব্য ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-“এখন চল এখান থেকে। কফি খেতে খেতে কথা হবে চল।”
কিরণ তাকালো চিত্রলেখার দিকে চোখ মুখ মেয়েটার লাল হয়ে ফুলে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে লেপটে আছে কপালে সাথে।
কাব্য বলল
-“আরে চল দুইজনকেই তো যেতে বলছি।”
কাব্য ওদের নিয়ে গাড়িতে তুলে গাড়ি চালাতে লাগল। উপর থেকে সবকিছুই তীক্ষ্ণ চোখে দেখলেন শাফিনা বেগম। চিত্রলেখা তার কথা শুনলো। সে তো চিত্রলেখাকে না করেছিলো কিরণের সঙ্গে না মিশতে। তারপরেও চিত্রলেখা…। শাফিনা বেগম চলে গেলেন বারান্দা ছেড়ে।
—————————–
শুভ্রতা রুম গোছাচ্ছিল। কার্বাটের কাপড় গুলো গোছাচ্ছিল সে। কাব্যের কাপড়ের ভাঁজ থেকে হুট করেই একটা ছবি মেঝেতে পড়ে যায়। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে ছবিটা তুলতেই দেখতে পেলো একটা মেয়ের ছবি। ফর্সা মেয়েটির চোখগুলো টানাটানা। ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা তিল। গালে টোল ও দেখা যাচ্ছে। এককথায় অসম্ভব সুন্দরী মেয়ের ছবি এটা।
হুট করেই মন খারাপ হয়ে গেল শুভ্রতার। মেয়েটা কে এটাই ঘুরপাক খেতে থাকলো শুভ্রতার মনে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা এটা।
ছবিটা আবারও আগের জায়গায় রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো। ছবিতে থাকা মেয়েটার মতো ফর্সা গায়ের রঙ নেই তার। না আছে গালে টোল। না আছে ঠোঁটের নিচে তিল। তবে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মায়াবতী সে। তার চোখের মায়ায় আবদ্ধ হলে সেই মায়া ত্যাগ করা খুবই কঠিন। তবুও মন খারাপ হলো তার। মুখ ফুলিয়ে রুম ত্যাগ করলো সে।
সে ছাদের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। ধীর পায়ে ছাদের কাণিশ ঘেষে দাড়ালো সে। কালো রেশমি চুলগুলো বিকেলের মৃদু বাতাসে উড়তে লাগল। বিকেলের বিষণ্নতা যেন শুভ্রতার মন খারাপ আরো একধাপ বাড়িয়ে দিলো। কিছুদিনের মধ্যেই বড় আপন আপন লেগেছে তার কাব্যকে। কাব্যের কাছে অন্য মেয়ের ছবি যত্নে তোলা। ভাবতেই খারাপ লাগছে তার। মেয়েটা কে! আজ বড় একা লাগছে তার। মন খারাপ গুলো যেন একসঙ্গে গলা পাকিয়ে যুদ্ধ করছে।
কাধে কারো আলতো হাতের স্পর্শে আতকে উঠে শুভ্রতা। নিজেকে স্বাভাবিক করে পাশে তাকাতেই দেখলো আনজুমা বেগম দাড়িয়ে আছেন।
শুভ্রতা নিজের ঠোঁটে হাসি এনে বলল
-“দাদিমা তুমি আবার কষ্ট করে আসতে গেলে কেন! আমাকে ডাকতে আমিই চলে যেতাম।”
আনজুমা বেগম মুচকি হেসে বললেন
-“মন খারাপ”
হুট করেই শুভ্রতার মুখ চুপসে গেল। আনজুমা বেগম আবারও মুচকি হাসলেন।
আনজুমা বেগম বললেন
-“বুঝি রে বুঝি। কাব্যের সঙ্গে কিছু হয়েছে তাইনা।”
শুভ্রতা তাকালো আনজুমা বেগমের দিকে। আনজুমা বেগম আবারও বললেন
-“ভাবিস না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। তোদের একসঙ্গে করেছেন আল্লাহ। উনিই সব ঠিক করে দিবেন বুঝলি।”
————————-
কাব্য কিরণ আর চিত্রলেখা বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। কিরণ আর শাফিনা বেগমের কথাগুলো শুনে কিছুটা ভাবনায় পড়লো কাব্য। কাব্য ভাবুক কন্ঠে বলল
-“ওনার মুখের ভাব দেখে কি বুঝলি!”
কিরণ বলল
-“ওনার মনের ভাব উপর থেকে বোঝা সম্ভব না।”
কাব্য ভেবে বলল
-“টেনশন নিস না। কাল রাতে আম্মুর সঙ্গে কথা হয়েছে। আম্মু বাবাকে সব বোঝাবে। আর দেখি ওনি বাবাকে কি বলেন। আমাদের চেষ্টা করতে হবে। ভেঙে পরলে চলবেনা একদম।”
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করে পাশেই থাকবেন ধন্যবাদ।💛)