#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৭
কিরণ বসে আছে ঝিলের ধারে চিত্রলেখার অপেক্ষায়। আজ সে তাড়াতাড়িই চলে এসেছে। এখনো আসছেনা কেন চিত্রলেখা ভাবতে ভাবতেই চিত্রলেখা রিনরিনে কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালো কিরণ।
চিত্রলেখার ফোলা ফোলা চোখ মুখ দেখে আতকে উঠলো কিরণ। মুহূর্তেই যেন অস্থিরতা বেড়ে উঠলো তার।
চিত্রলেখা নিজের সাদা রঙের ওড়না কপালে থাকা ঘাম মুছে ঝিলের পাশে থমকে থাকা কিরণের পাশে বসলো। কিরণ অস্থির চিত্তে বলে উঠলো
-“কি হলো চিত্রলেখা! তোমাকে এতো অস্বাভাবিক লাগছে কেন!”
চিত্রলেখা ঝিলের পরিষ্কার পানির দিকে তাকিয়ে বলল
-“তোমার কথা বলেছিলাম আম্মুকে।”
কিরণ চিত্রলেখার দিকে তাকিয়ে বলল
-“উনি কি বললেন!”
চিত্রলেখা পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“আমার আম্মু ছোটবেলা থেকে আমাকে আর আমার ভাইকে একা হাতে মানুষ করেছেন। বাবা নামক স্বার্থপর মানুষটা আর ভাই যখন খুব ছোট তখনই উনি আমাদের ছেড়ে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে ছেড়ে চলে যায় আমাদের ছেড়ে। আমার বাবা মা ভালোবেসে বিয়ে করায় আমার মায়ের দিকের পরিবার আমাদের খোঁজ অবদি নেয়নি। তখন থেকেই আমার মায়ের ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়।”
কিরণ যেন আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠে। হুট করে সে চিত্রলেখার ডান হাতটা নিজের দুইহাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নিজের কপালে ছোঁয়ালো।
চিত্রলেখা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চিত্রলেখার নিজেকে আজ খুব অসহায় লাগছে। এর আগে অনেক খারাপ পরিস্থিতি এসেছে কোথায় এমন তো লাগেনি। আজ কেন কথাগুলো গলায় এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে তার। কিরণকে কিভাবে বলছে সে।
কিরণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। চিত্রলেখা কি বলবে তা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে সে। কিন্তু মনে প্রাণে সে চাইছে সেই আন্দাজ যেন ঠিক না হয়। সে তাহলে সহ্য করবে কিভাবে। শরীর থরথর করে কাঁপছে তার।
চারপাশে পিনপতন নিরবতা। সেই নিরবতা কাটিয়ে চিত্রলেখা বলল
-“আম্মু মেনে নিবেনা।”
হুট করে শক্ত করে ধরে থাকা চিত্রলেখার হাত ছেড়ে দিলো। পাশে থাকা ঘাস খামচে ধরলো সে। চিত্রলেখা ছলছল দৃষ্টি তাকিয়ে রইলো কিরণের দিকে। কিরণের দৃষ্টি আবদ্ধ ঝিলের স্বচ্ছ পানির দিকে।
চিত্রলেখা হাত ঘড়িতে তাকিয়ে বলল
-“ছয়টা বাজে কিরণ। আবার দেখা হবে নাকি।”
কিরণ চিৎকার করে বলল
-“চুপ আর একটা কথাও আমি শুনতে চাইছিনা। চলে যা এখান থেকে।”
চিত্রলেখার চোখের কোণে জমে থাকা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। কিরণের এ রূপ তার অচেনা। কিরণ কখনোই তার সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলেনি। ছেলেটা শান্তশিষ্ট। হুট করে রেগে যাওয়ায় চমকে উঠলো চিত্রলেখা।
চিত্রলেখা কিরণের হাত ধরতে নিবে তার আগেই হনহনিয়ে চলে গেল কিরণ। চিত্রলেখা কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে রইলো কিরণের যাওয়ার দিকে।
কিরণ উন্মাদের মতো বাইক চালাচ্ছে। তাকে পাগল পাগল দেখাচ্ছে। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে চিত্রলেখার কান্নাভেজা মুখ।
———————-
শুভ্রতা কাকলির কাছ থেকে আম নিয়ে লবণ মরিচ দিয়ে খেতে লাগল। কাকলিও খাচ্ছে তার সঙ্গে। কাকলির ফোন বেজে উঠতেই শুভ্রতা কপাল কুচকে তাকালো সে। কাকলি কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে কাব্য বলে উঠলো
-“তোরা কোথায় প্রাইভেট গেছিস নাকি। গেলে ওখানেই থাকা আমি অফিস থেকে বের হয়েছি তোদের নিতে আসছি।”
কাকলি বলল
-“দাভাই আজ তো প্রাইভেট ছিল না। আমরা বাসায় আছি।”
কাব্য বলল
-“ও ফাকিবাজ তাহলে বেঁচে গেছে।”
শুভ্রতা চিল্লিয়ে বলল
-“ওই মিয়ার মিয়া কে ফাকিবাজ আপনি ফাকিবাজ।”
কাব্য তাড়াতাড়ি করে কল কেটে দিলো। সে বুঝতে পারেনি যে শুভ্রতা শুনতে পাবে তার কথা। হাসলো সে। আবার নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো সে হাসলো কেন। কিন্তু অনেক ভেবেও যখন কুল কিনারা পেলনা তখন আর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল।
———————
শুভ্রতা আর কাকলি ছাউনিতে বসে ছিল তখন সামনে দিয়ে গটগট পায়ে কিরণ চলে গেল। কাকলি কয়েকবার ডাকলো কিন্তু উত্তর দিলোনা কিরণ। কাকলি অবাক হলো কিরণের আচরণে। হঠাৎ করে কি হলো তার ভাইয়ের।
শুভ্রতার কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো। শুভ্রতা বলে উঠলো
-“ওনাকে এমন দেখাচ্ছিল কেন!”
কাকলি চিন্তিত কন্ঠে বলল
-“তাই তো বুঝতে পারছিনা।”
কিরণকে এমনভাবে বাসায় ঢুকতে দেখে আনজুমা বেগমের মুখ চুপসে গেল। তবে কি মেয়েটা ধোকা দিলো। এগুলো ভাবনায় তার মাথায় ঘুর ঘুর করছে।
আনজুমা বেগমের ভাবনায় ছেদ ঘটলো ধাম করে দরজা লাগনোর শব্দে। কি হবে এখন তাই উনি ভাবতে লাগলেন।
————————-
কাব্যের বাসায় আসতে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কাব্য বাড়িতে ঢুকে কারো শব্দ না পেয়ে কপাল কুচকে এগিয়ে গেল কাকলির রুমের দিকে।
আশা বেগম কাঠের স্কেল হাতে চোখে চশমা এটে বসে আছেন কাকলি আর শুভ্রতার সামনে। কাকলি পড়ছে। কিন্তু শুভ্রতা শুধু ঠোঁট উল্টাচ্ছে। কাব্য কি যেন মনে করে ফোনটা বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলো শুভ্রতার। ফোনটা পকেটে রেখে গলা পরিষ্কার করে বলল
-“আম্মু”
আশা বেগম ঘুরে তাকালো কাব্যের দিকে। শুভ্রতা ও তাকালো। আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে শুভ্রতাকে বললেন
-“ওর দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আজ পড়া শেষ না করা পযর্ন্ত তোমার উঠা নেই।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচি কাটলো। আশা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল
-“যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ।”
কাব্য শুভ্রতাকে একটা চোখ টিপলো। শুভ্রতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই কাব্য বাঁকা হেসে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল।
আশা শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বললেন
-“মনোযোগ দিয়ে পড়ো।”
শুভ্রতা নাকমুখ কুচকে পড়তে লাগল।
———————–
কাব্য নিজের রুমে গিয়ে শুভ্রতা আর কাকলির জন্য আনা চকলেট বেড সাইড টেবিলে রাখলো। একটা টাওয়েল নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই বেডের উপর আনজুমা বেগমকে চিন্তিত মুখে বসে থাকতে দেখে ভ্রুযুগল কুচকে বলল
-“দাদিমা কিছু কি হয়েছে! তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন!”
আনজুমা বেগম কিছু বলার আগেই ললিতা এসে কাব্যকে নাস্তা দিয়ে গেল। আনজুমা বেগম বললেন
-“তুই আগে খেয়ে নে।”
কাব্য খানিকটা চিন্তিত হয়ে বলল
-“সমস্যা নেই দাদিমা। তুমি বলো কি হয়েছে?”
আনজুমা বেগম বললেন
-“খেয়ে নেও”
কাব্য বাধ্য হয়েই তাড়াতাড়ি নাস্তাটা করে নিলো। নাস্তা শেষ করে বেড এসে আনজুমা বেগমের পাশে বসে শান্ত কন্ঠে বলল
-“কি হয়েছে দাদিমা?”
আনজুমা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিরণের সব ঘটনা বললেন। যা যা উনি জানতেন।
কাব্য আনজুমা বেগমের কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। নিরবতা ভেঙে কাব্য আনজুমা বেগমের হাত ধরে সান্ত্বনা দিয়ে নরম কন্ঠে বলল
-“চিন্তা করো না দাদিমা। আমি দেখছি বিষয়টা। মেয়েটা বিকালে কি বলেছে কিছু জানো।”
আনজুমা বেগম বললেন
-“না ও তো এসেই রুমের দরজা বন্ধ করেছে আর খোলেই নি। মুখ দেখে তো মনে হলো না স্বাভাবিক কিছু হয়েছে।”
কাব্য বলল
-“আচ্ছা আমি দেখছি। তুমি চিন্তা না করে রুমে যাও।”
আনজুমা বেগম কিছুটা নিশ্চিন্ত চিত্তে কাব্যের রুম ত্যাগ করলো।
কাব্য ভাবনায় পড়লো। তখনই শুভ্রতা অলস ভঙ্গিতে বইখাতা নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
কাব্যের ভাবনায় ছেদ ঘটলো শুভ্রতার কন্ঠে। শুভ্রতা চকলেটের দিকে তাকিয়ে বলল
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করে সঙ্গেই থাকবেন ধন্যবাদ।)