#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৬
শুভ্রতা দৌড়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলো তখন কাকলি ওকে ডেকে বলল
-“আরে ভাবি আস্তে যাও দাড়াও একসঙ্গে যাই।”
শুভ্রতা বলল
-“না না দেড়ি হয়ে গেছে শাশুড়ি খেপে যাবে আবার।”
কাকলি কিছু বলতে নিবে তার আগেই শুভ্রতা সেখান থেকে ভো দৌড়। শুভ্রতা খাবার টেবিলে এসে দেখলো সেখানে অলরেডি আনজুমা বেগম,আনিসুল চৌধুরী, আশা বেগম আর কিরণ বসে আছে।
ওরা সবাই ওর দিকে তাকাতেই শুভ্রতা দাঁত বের করে হাসলো। আশা বেগম শুভ্রতার দিকে একবার তাকিয়ে খাওয়াতে মন দিলো। কাকলিও বসে পরলো। আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“শুভ্রতা মা তোর কোনো সমস্যা হচ্ছেনা তো।”
শুভ্রতা বলল
-“না না আব্বু আমার কোনো সমস্যা হচ্ছেনা।”
কাব্য এসে শুভ্রতার পাশের চেয়ারে বসলো।
আশা বেগম আনিসুল চৌধুরীকে বলল
-“কাব্যের সিফট এখানেই করে দিলে ভালো হয়। ঢাকার অফিসের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিয়ে দেও। পরে না হয় কাব্য ওখানে যাবেনি।”
আনিসুল চৌধুরী খাওয়া শেষ করে মুখ মুছতে মুছতে বলল
-“আচ্ছা আমি দেখছি।”
কাব্যকে আশা বেগম আগের দিন বলাতে ও আর কিছু বলল না। আর সে জানে ওর আম্মু যা বলে তা করেই কিছু বলে লাভ নাই।
আনিসুল চৌধুরী আর কাব্য অফিস চলে গেল। আনজুমা বেগম রুমে চলে গেলেন। আশা বেগম শুভ্রতা আর কাকলিকে নিয়ে কলেজ চলে গেলেন।
কিরণ চুপচাপ নিজের রুমে বসে ছিল। তার ফোনটা বেজে উঠতেই কিরণ রিসিভ করে বলল
-“চিত্রলেখা তুমি আজ আটদিন পর আমাকে কল করলে। তোমার কি একবারও আমার কথা মনে পড়েনি। কি হয়েছে তোমার।”
অপরপাশ থেকে চিত্রলেখা বলল
-“আজ বিকালে একটু দেখা করতে পারবে।”
কিরণ ভ্রুকুচকে বলল
-“তুমি কান্না করেছো চিত্রলেখা!”
চিত্রলেখা খট করে কল কেটে দিলো। কিরণের কপাল কুচকে এলো। সে ভাবতে লাগল কি হয়েছে হঠাৎ চিত্রলেখার। চিত্রলেখা তো সহজে কান্না করেনা। কি হলো তার। কিরণের ভাবনায় ছেদ ঘটলো আনুজমা বেগমের ডাকে।
কিরণ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হেসে বলল
-“দাদিমা তুমি আসতে গেলে কেন! আমাকে ডাকতে আমি চলে যেতাম।”
আনজুমা বেগম বেডে কিরণের পাশে এসে বসে বলল
-“কতদিন তোর সঙ্গে গল্প করিনা বাছা। তাই চলে এলাম। দেখলাম তুই ও এমনি বসে আছিস।”
কিরণ আনজুমা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। আনজুমা বেগম মুচকি হেসে কিরণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
-“মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসিস তাইনা।”
কিরণ চমকে গেল। ভ্রুকুচকে বলল
-“কোন মেয়ে দাদিমা!”
আনজুমা বেগম আবারও মেকি হাসি দিয়ে বললেন
-“তোকে সেই ছোটবেলা থেকে নিজের হাতে বড় করেছি। তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু বুঝিনা। তোর ভার্সিটির জুনিয়র যে মেয়েটা ছিল। নামটা কি যেন!”
কিরণ চুপ করে রইছে। আনজুমা বেগম ভেবে বললেন
-“ও হ্যাঁ মনে পড়েছে চিত্রলেখা।”
কিরণ ধপ করেই উঠে বসলো। আনজুমা বেগম একটু জোরেই হেসে দিলো। কিরণের গাল ধরে বলল
-“তোর দাভাইয়ের তো হুট করেই বিয়ে হয়ে গেল। তুই এবার একটা ব্যবস্থা কর। ধুমধাম করে বিয়ে দিই তোকে।”
কিরণ মুখটা ছোট করে বলল
-“কিন্তু দাদিমা চিত্রলেখা কেন যেন কান্না করছিল। বেশ কয়েকদিন ওর সঙ্গে আমার কথা হয়নি। এখন আবার কান্না করছে। কি যে হলো টেনশন হচ্ছে আমার।”
আনজুমা বেগম কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন
-“কল করে কি বললো ও।”
কিরণ চিন্তিত কন্ঠেই বলল
-“বিকালে দেখা করতে বলেছে।”
আনুজমা বেগম আবারও কিরণের মাথা নিজের কোলে নিয়ে বললেন
-“চিন্তা করিস যা হবে ভালো হবে। আর বিকালে তো যাচ্ছিসই।”
কিরণ চুপ করে রইলো।
—————————
বিকেলে কাকলির রুমের জানলা দিয়ে শুভ্রতা ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে বাড়ির পিছনের দিকে।
কাকলি শুভ্রতার ঘাড়ে হাত রেখে বলল
-“তুমি কি পদ্মজা উপন্যাসের পাতালঘরের কথা ভাবছো। কিন্তু ভেবে লাভ নেই কারণ ওখানে কোনো কিছুই নেই।”
শুভ্রতা কাকলির দিকে চোখ ছোট ছোট করে বলল
-“তুমি কিভাবে বুঝলে আমি এমনটা ভাবছি।”
কাকলি দাঁত বের করে হেসে বলল
-“আমি যখন পড়েছিলাম তখন প্রায় সবসময় আমারও এমন মনে হতো। আর আমি কালকে বিকেলে আমার বুক সেলফ থেকে বই নিতে দেখছি।”
কাকলির কথা শুনে শুভ্রতা হাসলো। কাকলিও হেসে দিলো। কাকলি বলল
-“চলো একটু বাগান থেকে ঘুরে আসি। প্রাইভেট যেতে হবে আবার।”
শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে বলল
-“এখন আবার প্রাইভেটও যেতে হবে।”
কাকলি নিজের ওড়নাটা ঠিক করতে করতে বলল
-“হুম তো এখন যাই তাহলে।”
শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে কাকলির সঙ্গে যেতে লাগল। বসার ঘরে যেতে আশা বেগম বলে উঠলেন
-“আজ তোমাদের প্রাইভেট যেতে হবে না। টিচার বন্ধ দিয়ে দিছে। কেবলি কল করে জানিয়ে দিলো আমাকে।”
শুভ্রতা খুশিতে আশা বেগমের কাছে গিয়ে ওনার গালে টুক করে একটা চুমু দিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেল। কাকলিও ওর পিছু পিছু চলে গেল।
আশা বেগম শুভ্রতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বলল
-“পাগলি একটা”
আনজুমা বেগম পাশেই বসে ছিলো। উনি সবটাই দেখছিলেন। উনি আশা বেগমকে বললেন
-“মেয়েটার এখনো বাচ্চামো যায়নি। ছোট থেকে মায়ের আদর পায়নি। তুমি এমন করেই ওকে ভালোবেসো।”
আশা বেগম বললেন
-“আম্মা আমি তো আপনার কাছ থেকেই সবটা শিখেছি। আপনি তো আমাকে সবসময় নিজের মেয়ের মতোই আগলে রেখেছেন। আপনার মতো হয় তো পারবোনা। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো।”
আনজুমা বেগম আশা বেগমের মাথায় হাত রেখে বললেন
-“তোমাদের ভালো হোক এই দোয়াই করি। তোমার সংসার যেন এমনি শান্তিতে পরিপূর্ণ থাকে।”
————————-
কাকলি আর শুভ্রতা বাগানের ছাউনি দেওয়া জায়গায় বসে আছে আর চা খাচ্ছে। আজ আকাশটা বড্ড সুন্দর লাগছে শুভ্রতা। মেঘগুলো সুন্দর আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। শুভ্রতা কি যেন ভেবে কাকলিকে বলল
-“আম খাবে।”
কাকলি ভ্রুকুচকে বলল
-“এখন আম কোথায় পাবে। আব্বুকে বলে দিবোনি রাতে আসার সময় নিয়ে আসবে।”
শুভ্রতা দাঁত কেলিয়ে বলল
-“আরে রাখো এসব। বাজার থেকে আনলে কি আর মজা হয়!”
কাকলি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা আশেপাশে খুঁজে একটা পাথর নিয়ে আম গাছে ছুরে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে দুটো আম গাছ থেকে পড়লো। শুভ্রতা মুচকি হেসে আম দুটো তুলে আবারও ছাউনিতে চলে গেল। কাকলির কাছে আমগুলো দিয়ে বলল
-“আমগুলো রাখো। আমি বাড়ির ভিতর থেকে লবণ মরিচ নিয়ে আসছি।”
বলেই দৌড় দিলো শুভ্রতা। কাকলি শুধু ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার যাওয়ার দিকে।
শুভ্রতা বাড়িতে ঢুকে দেখলো আশা বেগম মন দিয়ে কি যেন করছে সোফায় বসে। শুভ্রতা মনে সাহস নিয়ে পরপর কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়ে যেতে লাগল রান্নাঘরের দিকে।
শুভ্রতা একটা ছোট বাটিতে মরিচ গুড়া আর লবণ নিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে খুব সর্তকতার সাথে লুকিয়ে নিলো। আবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো সে। ধীরপায়ে রান্নাঘর থেকে বসার রুমে আসতেই দেখলো আশা বেগম আগের অবস্থায় আছেন। শুভ্রতা ধীর পায়ে যেতে নিলেই হুট করেই তার পা থেমে যায় ওর আশা বেগমের গম্ভীর কন্ঠে। আশা বেগম বললেন
-“খাচ্ছো খাও। কিন্তু বেশি খেয়েও না পরে সমস্যা হবে।”
শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
-“আচ্ছা শাশুড়ি”
বলেই ভো দৌড় দিলো। বসার রুম পেরোতেই বুকে ফু দিলো শুভ্রতা। নিজেকে স্বাভাবিক করে চলে গেল সে বাগানের দিকে।
———————
কিরণ বসে আছে ঝিলের ধারে চিত্রলেখার অপেক্ষায়। আজ সে তাড়াতাড়িই চলে এসেছে। এখনো আসছেনা কেন চিত্রলেখা ভাবতে ভাবতেই চিত্রলেখা রিনরিনে কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালো কিরণ।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।)