বিয়ের পরের দিন নতুন বউ আম গাছের মগ ডালে বসে আছে। আশা বেগম কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন
-“কাব্য রে তোর বাপ তোরে কার সঙ্গে বিয়ে দিলোরে। বিয়ার পরের দিন নতুন বউ আম গাছের ডালে বসে পা ঝুলিয়ে আম খাচ্ছে। মানুষ এখন কি বলবে বল।”
শুভ্রতা কপাল কুচকে চিল্লিয়ে বলল
-“শাশুড়ি আমার হিরোমার্কা জামাইয়ের কানে কি বিশ ঢালছেন।”
আশা বেগম যেন বাক্যহীন হয়ে পড়লেন। শুভ্রতা আবারও চিল্লিয়ে বলে উঠলো
-“শাশুড়ি আম খাবেন। এখান থেকে ছুরে দিবো নাকি আম।”
কাব্য বিরক্ত নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“নেমে আসো ওখান থেকে তাছাড়া কিন্তু তোমার বাদরামির জন্য তোমাকে আমি শাস্তি দিবো। আর ওখান থেকে যদি পড়ে যাও তাহলে আমি আবার তোমাকে আছাড় দিবো বলে রাখলাম।”
শুভ্রতা পাশের ডালের আরো দুটো আম ছিড়ে নিয়ে গাছ থেকে নেমে আশা বেগমের হাতে ওই দুটো আম গুজে দিয়ে বলল
-“আম দুইটা আপনারা একসঙ্গে খাবেন। অনেক মজা খেয়ে দেখবেন।”
কাব্যের দিকে তাকিয়ে শুভ্রতা একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।
আশা বেগম কাব্যের কাছে এসে বলল
-“বাবুরে এই মেয়েকে নিয়ে তুই কেমনে থাকবি ঢাকায় গিয়ে। এখানেই যা যা করছে ওখানে গেলে তো তোর সবকিছু শেষ করে দিবে।”
কাব্য আশা বেগমের কথায় পাত্তা না দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার যাওয়ার দিকে। শুভ্রতা চোখের আড়ালে চলে যেতেই কাব্য বিরক্তি নিয়ে আশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল
-“আম্মু এখন তোমার বকবক বাদ দিয়ে আমাকে খাবার দেও তো।”
আশা বেগম গটগট পায়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলেন। কাব্যও ওনার পিছন পিছন চলে গেল।
শুভ্রতা দুইপা সোফায় তুলে গালে হাত দিয়ে টিভিতে গোপালভাড় দেখছে। আনিসুল চৌধুরী অফিসের জন্য রেডি হয়ে এসে শুভ্রতার পাশে বসলো। ওনি শুভ্রতার মাথায় হাত রেখে বললেন
-“মা তুমি থাকো তাহলে আমি অফিসে যাচ্ছি। কিছু দরকার হলে কাকলিকে বলবে কেমন। ও আজ আর কলেজ যাবে না।”
শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে বলল
-“বাবা আমি আব্বুর কাছে যাবো।”
আনিসুল চৌধুরী শুভ্রতাকে বলল
-“কাল নিয়ে যাবোনি মা। আজ থাকো এখানে। আর তোমার শাশুড়ি মা তোমাকে কিছু বললে কাকলির ফোন থেকে কল দিও আমাকে।”
শুভ্রতা দাঁত বের করে হেসে বলল
-“তোমাকে বলতে হবে না আমিই দেখে নিবোনি।”
কাব্য গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল
-“বাবা চলেন এখন। দেড়ি হয়ে গেল।”
বলেই চলে গেল কাব্য। শুভ্রতা সেইদিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো। আনিসুল চৌধুরীকে বলল
-“কি এক মুখ গোমড়া ছেলে বানায়ইছেন বলুন তো। সারাদিন মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে রাখে। হুদাই”
আনিসুল চৌধুরী শুভ্রতার কথায় হাসলেন। চলে যেতে যেতে আশা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“আশা তুমি কিন্তু মেয়েটাকে কিছু বলো না। আমার মান সম্মানের ব্যপার। আমি কিন্তু ওকে দায়িত্ব নিয়ে এনেছি।”
আশা বেগম মুখ ভেংচি কেটে বললেন
-“ও যেন আমাকে বিরক্ত করেনা। একটু আগেই আম গাছের মগ ডালে বসে ছিল। মানুষ কি বলবে। সেইদিকে কোনো খেয়াল আছে তোমার।”
আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“গ্রামের মেয়ে বোঝাই তো একটু মানিয়ে নেও না। আর তুমি পারবে আমি জানি।”
আশা বেগম মুখ ফুলিয়ে রাখলেন। কোনো প্রতিউত্তর করলেন না।
—————–
শুভ্রতা লাফাতে লাফাতে চলে গেল রান্না ঘরে। আশা বেগম রান্না করছিলেন। আর হেলপিং হ্যান্ড দুইজন মহিলা ওনাকে কাজে সাহায্য করছিল। শুভ্রতা রান্না ঘরের দরজায় দাড়িয়ে বলল
-“শাশুড়ি আমাকে খেতে দিন তো। আমার ক্ষুধা পেয়েছে।”
আশা বেগম কথা বললেন না। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
-“কি হলো শাশুড়ি আপনি কি কানে শুনছেন না। কানে কি তুলা দিয়েছেন।”
আশা বেগম রাগান্বিত কন্ঠে বললেন
-“ভালো করে কথা বলতে পারোনা। সামান্য কথা বলাটাও তোমার বাবা মা শেখায় নি তোমায়।”
মুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল শুভ্রতার। মুখটা ছোট করে বলল
-“আসলে আমার আম্মু আমাকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা যান। তাই আমার আম্মু আমাকে কিছু শেখাতে পারেনি।”
আশা বেগমের খারাপ লাগল একটু। শুভ্রতা সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“এই মেয়ে দাড়াও। খাবার টেবিলে গিয়ে বসো। আমি তোমার খাবার এনে দিচ্ছি।”
শুভ্রতা মুচকি হাসলো। খাবার খেয়ে একাই পুরো বাড়িটা লাগল সে।
———————
আনিসুল চৌধুরী তার ম্যানেজার মুমিনুল হককে জিঙ্গাসা করলো
-“গ্রামে কি অবস্থা”
মুমিনুল হক মাথা নিচু করে জবাব দিলেন
-“এমপির ছেলে তীব্র কাল রাতে মিস্টার শাহিন আহমেদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় রাতে। আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ওনি।”
আনিসুল চৌধুরী ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন। মাথায় হাত রেখে বলতে লাগলেন
-“আমি বাঁচাতে পারলাম না ওকে। এখন আমি কি জবাব দিব মেয়েটাকে। আমি পারলাম না।”
আনিসুল চৌধুরী রক্তচোখ নিয়ে মুমিনুল হককে বলল
-“তুমি এখন বলছ আমাকে। রাতে কি করছিলে!”
মুমিনুল হক নিচু কন্ঠে বলল
-“সরি স্যার আসলে আমি আপনাকে কল করেছিলাম কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিল।”
#চলবে কি?
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন। রেসপন্স অনুযায়ী পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ 💛)
#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০১