#চন্দ্রাণী(০৮)
নির্ঝরের সামনের চেয়ারে বসে আছে টগর। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।নির্ঝর মুচকি হাসছে বসে বসে।
টগর বলেছে সে নিয়াজের একটা কাজেই নদীর পাড়ে গিয়েছিলো।
কাজটা কি জিজ্ঞেস করায় টগর জানায় নিয়াজ একটা ব্যাগ নিয়ে টগরকে যেতে বলেছিলো।টগরের কাজ ছিলো ব্যাগ নিয়ে বটতলায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া।
ব্যাগে কি তা তার জানা নেই।
নির্ঝর টগরের মুখের সামনে ঝুঁকে এসে বললো,”ব্যাগ ভর্তি কি ড্রাগ ছিলো? এরকম কেস তো তোমার এই নতুন না।”
টগর বিরক্ত হয়ে জবাব দিলো, “আমার কাজ ছিলো ব্যাগ নিয়ে যাওয়া,ব্যাগে কি সেটা তদন্ত করা না।সেটা আপনার কাজ,আপনি তদন্ত করুন।”
নির্ঝর হেসে বললো,!”তুমি বেশ স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে চাইছো ব্যাপারটা টগর। বাট ইউ নো,নির্ঝর ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না।এই যে টেবিলের উপর অসমাপ্ত কতগুলো ফাইল জমে আছে, সব কিছু এই কুসুমপুরকে কেন্দ্র করে। আমি এই কুসুমপুরকে কেন্দ্র করে অনেক ক্রাইমের ঘটনা শুনেছি।এখানে বলতে পারো এক প্রকার উপর মহলে অনুরোধ করে জোর করে এসেছি কুসুমপুরের রহস্য সমাধান করতে। আর আমার বিশ্বাস যেদিন সব সলভ হবে,তোমার খেলা ও শেষ হয়ে যাবে সেদিন।আমার সাসপেক্টের তালিকা খুব ছোট টগর, আর তুমি সেখানের ফার্স্ট পার্সন।”
নিয়াজ হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে এলো।টগরকে সে বিশ্বাস করে ব্যাগ নিয়ে পাঠিয়েছে, গাধাটা কতটুকু কি বলেছে কে জানে!
নিয়াজ বসতে যেতেই নির্ঝর বাঁধা দিয়ে বললো, “আপনি বাহিরে অপেক্ষা করুন,আপনাকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
নিয়াজ চিন্তিত হয়ে বের হয়ে গেলো।
নির্ঝরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হাবিলদার বারেক আলী। নির্ঝরের কথা বার্তা শুনে তার মনে হতে লাগলো এই লোক ঘাউড়া প্রকৃতির লোক যেমন তেমনই এই টগর ও ত্যাঁদড় ভীষণ। দু’জন দু’জনকে আগে থেকেই চেনে এবং কোনো একটা কারণে নির্ঝর স্যার টগরকে সন্দেহ করছে।
তবে টগর নির্ঝর স্যারকে পাত্তা দিচ্ছে না খুব একটা।
টগরকে আরেক রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিয়াজ কে ডেকে নিলো নির্ঝর। ঠোঁটে তার তাচ্ছিল্যের হাসি।
নিয়াজ এসে বসে সালাম দিলো।মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে লাগলো নতুন আসা অফিসারকে।নির্ঝর হেসে বললো, ” চা খাবেন নাকি কোক?”
নিয়াজ বিব্রত হয়ে বললো, “না স্যার,কিছু খাবো না।”
নির্ঝর হেসে বললো, “ওকে।তো বলুন,টগরকে কাল রাতে কেনো পাঠালেন ওই জায়গায়।?”
নিয়াজ ভেবে পেলো না টগর কি বলেছে।তবে সিদ্ধান্ত নিলো কৌশলে কথা বলবে।ফাঁসলে টগর ফাঁসবে,সে তো তার পক্ষে সকল এভিডেন্স তৈরি রেখেছে।
হেসে বললো, “স্যার, আমাদের চারটা নৌকা আছে ঘাতে মাছ ধরার।নৌকা,জাল আমাদের। সামনে তো নির্বাচন আমার আব্বার,তাই এই উপলক্ষে আব্বা জেলেদের জন্য কিছু কাপড় পাঠিয়েছে। ”
নির্ঝর হেসে বললো, “বাই এনি চান্স আপনার কি আমাকে দেখলে কোনো ভাবে মনে হয় দুধের বাচ্চা, যে আপনি একটা মনগড়া কথা বলবেন আর আমি বিশ্বাস করে নেবো?”
নিয়াজ বললো, “আপনি চাইলে ক্রসচেক করতে পারেন,আমি এক বিন্দু ও মিথ্যে বলছি না।”
নির্ঝর জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে ব্যাগ এমনভাবে পাঠিয়েছেন কেনো?আর কেনো ই বা টগরকে সরাসরি ব্যাগটা দিতে দেন নি।?”
নিয়াজ আগের মতো সপ্রতিভ জবাব দিলো, “টগর আসলে নেশায় চূর হয়ে থাকে,ওকে বললে ও কাকে রেখে কাকে দিয়ে দিবে নিজেও বুঝবে না।
এতগুলো কাপড় ভুল লোকের কাছে চলে যাবে।আর একবার ভুল হাতে গেলে তো ফিরিয়ে আনা যাবে না।তাই স্যার।”
নির্ঝর হেসে বললো, “আপনি ঠান্ডা মাথায় বেশ গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারেন।আই লাইক ইট।মিথ্যা কথা বললে,অপরাধ করলেও এমনভাবেই কনফিডেন্সের সাথে কথা বলা উচিত। ”
নিয়াজ জানে এসব নির্ঝর তাকে বিব্রত করার জন্য বলছে।না ঘাবড়ে বললো, “মিথ্যা কথার কিন্তু কনফিডেন্স লেভেল লো থাকে স্যার,সত্য কথার কনফিডেন্স হাই থাকে।আমি যেহেতু কোনো অন্যায় করি নি তাই ভয় পাচ্ছি না। ”
নির্ঝর টগরকে ডাকলো।টগর এসে চেয়ার টেনে বসল। নির্ঝর টগরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “ব্যাগে কি ছিলো টগর? যদি উত্তর দাও তবে সাসপেক্টের লিস্ট থেকে তোমার নাম আমি মুছে দিব।”
টগর আগের মতো শান্ত স্বরে বললো, “আমি ব্যাগ খুলে দেখি নি। আমি জানি না।আমার কাজ ছিলো ব্যাগ নিয়ে যাওয়া,আমি নিয়েছি।খুলে দেখা আমার কাজ ছিলো না।”
নির্ঝর অপলক তাকিয়ে রইলো টগরের দিকে কিছুক্ষণ। তারপর গম্ভীর হয়ে বললো, “আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো টগর।”
টগর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “শেষের পরে যদি আর কিছু থাকে আপনি তা ও দেখতে পারেন।টগর এসবের পরোয়া করে না।আর আপনাকে তো আমি কেয়ার ই করি না,আপনার মতো অফিসারদের চেনা আছে আমার। ”
নির্ঝরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। তবুও শান্ত স্বরে বললো, “টগর,৫ বছর আগে মাদক পাচারের অভিযোগ, ভার্সিটি হোস্টেল ড্রাগ সাপ্লায়ার,ড্রাঙ্ক হয়ে একজনকে আহত করা,ভাঙচুর করা সব কিছুই আমার ফাইলে আছে। তোমার জন্য আমি আমার খুব কাছের একজনকে হারিয়েছি।তোমাকে আমি ছাড়ব না।দেখে নিও টগর। ”
টগর হেসে বললো,”আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে করতে আপনার এই জন্ম কেটে যাবে।পরের জন্মে না হয় চেষ্টা করবেন।টগর কাঁচা কাজ করে না,তালে ঠিক থাকে জাতে মাতাল হলেও।”
টগর বের হয়ে গেলো। নিয়াজ হতবাক হয়ে রইলো এই কোন টগরকে দেখছে সে!
মদের নেশায় চূর হয়ে থাকা টগর ইন্সপেক্টরকে জাস্ট পাত্তাই দিলো না।
গলা খাঁকারি দিয়ে নিয়াজ বললো, “স্যার,আপনি টগরকে আগে থেকে চেনেন না-কি? ”
নির্ঝরের মুখ রাগে লাল হয়ে আছে, টেবিলের উপর থাপ্পড় দিয়ে নির্ঝর বললো, “চিনি, খুব ভালো করে চিনি।অভদ্র,অসভ্য,গোঁয়ার একটা ছেলে।রক্তে রক্তে মিশে আছে তার মদ,ড্রাগ।ওর নামে অনেক অভিযোগ আছে ভার্সিটির হলে ড্রাগ সাপ্লায়ার হিসেবে কাজ করে বলে। দুই নার জেলে ও যেতে হয়েছে। আমি ওকে ধরেছিলাম দুই বার।কিন্তু আটকে রাখতে পারি নি। অভিযোগ ছিলো কিন্তু প্রমাণ ছিলো না আমাদের কাছে। কেউ সাক্ষ্য ও দিতে চায় নি। তার উপর যাদের হয়ে কাজ করতো তাদের উপর মহলের সাথে যোগাযোগ থাকে নিশ্চয়, ছাড়া পেয়ে গেছে তাই দুই বারই।
দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করছে ওর মতো লোক।
আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ওকে ঠিকই ধরবো একদিন না একদিন। ”
নিয়াজ বিড়বিড় করে বললো, “আরে শালা, এতো পুরনো পাপী দেখছি।আমি কি-না ওরে চিনতে পারি নি।”
থানা থেকে বের হয়ে নিয়াজ সিদ্ধান্ত নেয় টগরকে কাজে লাগানোর।
————–
শাহজাহান তালুকদারের কাচারি ঘরে বসে আছে নির্ঝর। আপাতত ঘরটা খালি।নির্ঝর চারদিকে তাকিয়ে দেখছে।শাহজাহান তালুকদার ওয়াশরুমে আছেন।
শর্মী হাতে করে একটা বাটি নিয়ে বাবার কাচারি ঘরে এলো।এসে দেখে পুলিশের ইউনিফর্ম পরে একজন লোক বসে আছে। ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে শর্মি গলা উঁচিয়ে বাবা বলে ডাকতেই নির্ঝর বললো, “উনি ওয়াশরুমে আছেন।”
শর্মী অপেক্ষা করতে লাগলো এক পাশে দাঁড়িয়ে। নির্ঝর ভালো করে মেয়েটাকে খেয়াল করতে লাগলো। মেয়েটার নাকের পাশে একটা লাল তিল আছে।দুই চোখ বারবার সেই তিলের দিকেই যাচ্ছে। নির্ঝর নিজেকে ধমক দিলো মনে মনে। এখানে সে ইনভেস্টিগেট করতে এসেছে, অথচ অবাধ্য মনটা বেহায়াপনা করা শুরু করে দিয়েছে।
মনকে শান্ত করতে নির্ঝর শর্মীর পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। শর্মী আড়চোখে একবার তাকিয়ে মনে মনে বললো, “হ্যাংলামি করতে এসেছে না-কি! ”
চলবে……..
রাজিয়া রহমান
জয়েন করুন আমার ফেসবুক গ্রুপ রাজিয়ার গল্প কুটির এ।