এক মুঠো প্রণয় (সিজন টু)পর্ব ৩

0
135

#এক_মুঠো_প্রণয়
#সিজন_টু
#পর্ব_০৩
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

“ শুনেছি মেয়ের মা মেয়েদের ছোটবেলাতেই ছেড়ে গিয়ে পরপুরুষের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন?কথাটা কি সত্যিই? ”

বাক্যটা পাত্রপক্ষের মধ্যে মধ্যবয়স্কা মহিলাটাই বলে উঠলেন৷ মুখে কেমন একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছেন। যেন কথাটা বলেই বেশ মজা পেলেন ভদ্রমহিলা। জ্যোতি একপলক তাকাল মহিলাটার দিকে।পাত্রপক্ষের সামনে এই প্রথমই বসেছে সে৷ তাও দাদীর আদেশে৷ কিন্তু এইখানে যে নিজের জীবনের চরম সত্য কথাটারই সম্মুখীন হবে ফের তা যেন মাথাতেই ছিল না। চোখ বুঝে একবার মায়ের প্রতিচ্ছবি মনে করার চেষ্টা করল। উহ! বুকের ভেতর জ্বলন অনুভব হলো। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই দাদীর ঝংকার তোলা গলায় উত্তর এল,

“ হ, সইত্যই। ক্যান ? ”

মহিলাটা কেমন করে যেন চাইল। সম্ভবত পাত্রের ফুফু বা খালা হবে।জ্যোতির দাদীর দিকে একপলা তাকিয়েই বললেন,

“ খোঁজখবর নিব না খালা ? আমাদের এমন একটা সুপুত্রের বিয়ে কি যেথায় সেথায় দিয়ে দিব নাকি?তাই জিজ্ঞেস করেছি৷ তা শুনলাম মেয়েদের বাবার দ্বিতীয় সংসারেও নাকি মেয়েদের জায়গা হয়নি? ওদের আপনিই বড় করেছেন শুনেছি। তা মেয়ের বাবার সাথে মেয়ের সম্পর্ক নেই ? কোথাও মেয়ের বাবাকে দেখতে পেলাম না তো।”

জ্যোতি আবারো তাকাল মহিলাটার দিকে। কেন জানি না ভদ্রমহিলার বলা কথাগুলো তার ভালো লাগল না৷ এটা সত্য যে জ্যোতির বাবার সাথে খুব একটা ভালো সম্পর্কে নেই তার। বলা চলে বাবার সাথে জ্যোতি মিথি উভয়েরই সম্পর্কটা খুবই জঘন্য। ছোটবেলা থেকেই তাদের বাবা তাদের মায়ের প্রতি সমস্ত ঘৃণাটা উগড়ে দিয়েছেন তাদের উপরই।কোথাও গিয়ে সে ঘৃণাটাই পাহাড়সম হয়ে দূরত্ব বাড়িয়েছে বাবা আর মেয়েদের মধ্যে। সেই দূরত্বটা অবশ্য কোনদিন কমেনি বরং বেড়েছেই।বেড়ে চলেছেই। কিন্তু তাই বলে এভাবে কথা শুনতেও যে ভালো লাগবে তা তো নয়। জ্যোতি নিঃশ্বাস ফেলে একবার দাদীর দিকে চাইল। ততক্ষনে দাদী বলে উঠলেন,

“ হে স্কুলে।এইহানে খুব দরকার নাই বইলাই ছুটি লইয়া বাড়িতে থাকতে কইনাই। ”

“ আসার সময় আপনার ছোট নাতনিকেও দেখলাম উঠোনে। ছোট নাতনির থেকে বড় নাতনির গায়ের রংটা চাপা না? তবে আমাদের ছেলের গায়ের রং কিন্তু অতোটাও চাপা নয় খালা। কি বলেন?”

মিথির গায়ের রং ধবধবে ফর্সা।অপরদিকে জ্যোতির গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণের। দুইজনের চেহারার সাথে তাদের দাদীর চেহারার অনেক মিল রয়েছে। চোখজোড়া, ঠোঁট, হাসিসহ অনেকাংশেই সাদৃশ্যতা আছে দুইজনের মধ্যে৷ শুধু বৈসাদৃশ্যটা হলো গায়ের রংটা।জ্যোতি হাঁসফাঁস করল ভদ্রমহিলার কথা শুনে৷ মনে মনে বোধহয় কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো। আর যায় হোক যেখানে যোগ্যতার প্রশ্ন আসে সেখানে উপস্থিত থাকাটা কতোটা উচিত?মস্তিষ্ক মুহুর্তেই বলে উঠল, “ উচিত নয়। একদমই উচিত নয়। ”মস্তিষ্কের পাঠানো উত্তরটা পেয়েও সেই স্থান ত্যাগ করা হয়ে উঠল না জ্যোতির। দাদীর নির্দেশে আরো কিয়ৎক্ষন বসে থাকতে হলো তাকে। অবশেষে যখন মুক্তি মিলল তখনই উপস্থিত হলো মিথি। ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষন চেয়ে থাকল জ্যোতির দিকে। লাল টকটকে শাড়ি, চোখজোড়ায় কালো কাজল আর খুলে রাখা চুল। কি অপূর্ব বোধ হলো নিজের বোনকে।তার বোন তেমন সাজে না। তাই বোনকে আজ এই অল্প সাজে দেখেও বেশ খুশ হলো। বাচ্চাদের মতো বলল,

“জ্যোতি?তোকে কেমন বউ বউ লাগছেরে আজ।কিন্তু তোকে একদমই দেবরবিহীন সংসারে বিয়ে দিব না আমি জ্যোতি। বুঝলি?”

জ্যোতি দ্বিধান্বিত চাহনিতে তাকাল। বলল,

“ বুঝলাম না।”

মিথি বিরক্ত হলে। বলতে লাগল,

“ উহ!আজ যে ছেলেটা এসেছিল, তাকিয়ে দেখেছিস তুই?একদম যেন মায়ের আঁচলে লুকিয়ে থাকা পাঁচ বছরের বাচ্চা।ব্যাক্তিত্ববিহীন! ”

জ্যোতি ভ্রু কুঁচকে তাকাল। এতক্ষন পাত্রপক্ষের সামনে বসে থাকলেও সে কিন্তু একবারও ছেলেটার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। এত সময় পর মিথির কাছে ছেলের বিবরণ শুনে কি বলবে বুঝে উঠল না ঠোক। সে তো তাকায়ইনি ছেলেটার দিকে। মিথি ফের আবারো বলল,

“ সবচেয়ে বড় কথা ছেলের আরো দুটো ভাই আছে। কিন্তু দুইজনই বিবাহিত!শুধু বিবাহিতই নয়, দুই তিনটা বাচ্চাকাচ্চাও আছে। তাহলে কি করে হবে বল? ”

জ্যোতির চোখে দ্বিধা যেন বাড়ল। মিথির দিকে সে দ্বিধা নিয়ে তাকাতেই মিথি দ্বিগুণ বিরক্ত হলো। শুধাল,

“ বুঝিস নি? উহ তোর দেবর থাকলে তাকে নাহয় পটিয়ে বিয়ে করা যেত। তারপর তুই আর আমি একসাথে কোমড়ে আঁচল গুঁজে সংসার করতাম। সুন্দর হতো না? কিন্তু এইক্ষেত্রে তো তোর দেবর নেই।”

জ্যোতি মিনমিনে চোখে তাকাল। মিথির মাথায় আলতো হাতে চাটি মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

“ একটু বেশিই পেঁকে গিয়েছিস মিথি! ”

মিথি মাথায় হাত দিয়ে দূরে সরে গেল৷ কপাল কুঁচকে উত্তর দিল,

“উহ!মারলি কেন জ্যোতি? তোর কি ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে? ছেলেটার তাকানো ও সুন্দর নেই।আমি খেয়াল করেছি বুঝলি?তোকে এই ছেলের কাছে জীবনেও বিয়ে দেওয়া যাবে না।”

.
আর কিছুটা সময় পরই বোধহয় বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামবে। জ্যোতির হুট করেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ল৷ যখন তার মা ছিল! আর পাঁচটা পরিবারের মতো তাদেরও সুখী পরিবার ছিল। কিন্তু তিক্ত হলেও এটাই সত্যি যে এখন তাদের পরিবার নেই, মা -বাবা থেকেও নেই। এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আনমনে হেঁটে পুকুরপাড়ে গেল। পরনে তখনও লাল টকটকে শাড়িটা। চোখের গাঢ় কালো কাজল ফ্যাকাসে হয়েছে। কৃষ্ণকালো লম্বা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে পিঠে। মৃদু বাতাসে অল্প নড়চড় বয়ে গেল চুলগুলোতে। এরমাঝেই কানে এল মেহেরাজের গম্ভীর গলা,

“ চোখে দেখিস না তুই ? নাকি চোখ কপালে তুলে হেঁটে বেড়াস? ”

জ্যোতি অবাক হলো। পেঁছন ঘুরে দ্রুত চাইতেই মেহেরাজ ফের চাপা ধমকে বলল,

“ ফুলগুলো তুই মাড়িয়ে গেলি কেন?

জ্যোতি এবারে ভ্রু কুঁচকাল।পুকুরপাড়ের সাথেই শিউলি ফুল গাছ৷ নিচে পড়ে আছে সে গাছেরই সুগন্ধী ফুলগুলো।সেখান থেকেই বোধহয় কিছু ফুল কুড়িয়ে রেখেছিল মেহেরাজ৷ জ্যোতি নিচে তাকিয়ে বুঝতে পারল তা।কিন্তু আপসোসের বিষয় হচ্ছে ফুলগুলো সে মাড়িয়ে এসেছে। ছোট ছোট চোখ করে তাকাতেই মেহেরাজ ফের বলল,

“ এগুলা শিউলি ফুল,কষ্ট করে কুড়িয়ে নিয়েছি। আর তুই ফুলগুলোাে মাড়িয়ে দিয়ে চলে গিয়ে মহান কাজ করে ফেলেছিস ভাবছিস? ”

জ্যোতি এবারে লম্বা শ্বাস ফেলল।মৃদু গলায় শুধাল,

“ দুঃখিত মেহেরাজ ভাই। খেয়ালে ছিল না। ”

কথাটা বলেই মেহেরাজকে এড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্যই পা বাড়াল। মুহুর্তেই আবারো মেহেরাজের গমগমে স্বর কানে আসল,

“ এই তুই তোর এই জঘন্য অপরাধকে এড়িয়ে কোথায় চলে যাচ্ছিস? এক্ষুনি ফুল এনে দিবি। যেভাবেই হোক। ”

জ্যোতি নিস্তেজ চোখে তাকাল। জিজ্ঞেস করল,

“ ফুল দিয়ে কি করবেন আপনি? ”

“ফুলের মালা বানাব। ”

জ্যোতি ভ্রু কুঁচকাল। ফুলের মালা? কি বলে এই লোক! ফের জিজ্ঞেস করে,

“ ফুলের মালা? ”

মেহেরাজ ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,

“হ্যাঁ, তো?”

জ্যোতি কিয়ৎক্ষন ভাবল। পরমুহুর্তেই মনে পড়ল সামান্তা সেদিন বলেছিল, মেহেরাজ সামান্তার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছে। আবার মেহেরাজের ভাষ্যমতে সামান্তা যে চিঠিটা দিয়েছিল তার মধ্যে প্রেমময়ী কথাবার্তা ছিল। ব্যস! আর ভাবতে হলো না। জ্যোতি বুঝে গেল মেহেরাজ আর সামান্তার মাঝে প্রেম বা ভালোবাসাবাসির কোন বিষয় আছে। আর সে কারণেই বোধহয় নিজের প্রিয়তমার জন্য ফুলের মালা বানাচ্ছেন। আহা! এত ব্যাক্তিত্ববান ছেলেও নিজের প্রিয়তমার ভালোবাসার জন্য কি না কি করতে পারে। জ্যোতি মনে মনে মেহেরাজের আরো এক রূপে মুগ্ধ হলো। সে মুগ্ধতার মাঝেই আবারো মেহেরাজ বলল,

“ এতক্ষনে আমি মালা গেঁথে নিতাম। তোর কারণেই দেরি হলো আমার। এখনই তুইই মালা গেঁথে দিবি৷ এটাই শাস্তি তোর। ”

“শাস্তি? ”

“ ভুল করেছিস। শাস্তি তো পাবিই। ”

জ্যোতি এক পলক তাকিয়ে দেখল। পরপর পা বাড়িয়ে চলে গেল ফুল গাছের নিচে। মেহেরাজ সেদিক পানে তাকিয়ে রইল। কেন জানি না আজ তার দৃষ্টি সরাতে ইচ্ছে হচ্ছে না৷ উহ! কি সাংঘাতিক অনুভুতি হচ্ছে। মনে হলো সে ফেঁসে যাচ্ছে।খুব জঘন্যভাবে ফেঁসে যাচ্ছে। অস্ফুট স্বরে বলল,

“ এই ভুলটা তো সামান্য! কিন্তু যে ভয়াবহ ভুলটা তোর দ্বারা হয়ে যাচ্ছে তার শাস্তি কতোটা ভয়বহ হবে ভাবতেও পারবি না জ্যোতি। ”

কথাটা বলেই বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস ফেলল। ততক্ষনে জ্যোতি ফুল হাতে করে গাছের নিচ থেকে ফের এগিয়ে আসছে। মেহেরাজ ততক্ষনে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে জ্যোতির দিক থেকে। বিড়বিড় করে বলল,

“ চোখের দৃষ্টিতেও এতোটা মায়া থাকে?উহ ফেঁসে যাচ্ছিস মেহেরাজ,তাকালেই ফেঁসে যাচ্ছিস। দৃষ্টিটা সাংঘাতিক!নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে।মায়াটা আরো বেশিই সাংঘাতিক!”

জ্যোতি ততক্ষনে ফুলগুলো এনে সিঁড়ির উপর রাখল। অতোটা সতেজ দেখাচ্ছে না ফুলগুলোকে। কেমন নিস্তেজ বোধ হলো। বোধহয় গাছ থেকে ঝরে গিয়েছে বলেই। হাতে দিয়ে সেই নিস্তেজ ফুলগুলো রাখতে রাখতেই মেহেরাজের বিড়বিড় বলা কথাগুলোতে কেবল মায়া শব্দটাই বোধগম্য হলো। উঠে দাঁড়িয়ে সুঁই সুতোর জন্য বাড়ির দিকে পা বাড়াতে নিয়েই জিজ্ঞেস করল,

“ মায়াটা মানে? কি বিড়বিড় করছিলেন মেহেরাজ ভাই? ”

মেহেরাজ চমকাল অল্প। কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ করল না একটুও। বরং বিষয়টাকে দামাচাপা দিতে গম্ভীর স্বরে মুখ টানটান করে বলে উঠল,

“ ফুলগুলো পিষে ফেলতে মায়া হয়নি তোর? ”

জ্যোতি মুখ কালো করল। সে কি ইচ্ছে করেই মাড়িয়েছে ফুলগুলো? একবার তো দুঃখিত বলেছে৷কিন্তু এবারে আর কিছু বলল না। দ্রুত পায়ে বাড়ি গিয়ে সুঁই সুতো আনল। মিনিট কয়েকের মধ্যে মালা গেঁথে মেহেরাজে সামনে ধরে স্পষ্ট স্বরে বলল,

” হয়ে গেল শাস্তি পাওয়া।নিন আপনার ফুলের মালা মেহেরাজ ভাই।”

মেহেরাজ মুখচোখ কুঁচকে তাকাল মালাটার দিকে।তীব্র অসন্তুষ্টি নিয়ে বলে উঠল,

“ মালা ও বানাকে পারিস না?বিচ্ছিরি হয়েছে মালাটা। এই বিচ্ছিরি মালাটা দিয়ে কি করব আমি? ”

“ যাকে দেওয়ার কথা তাকেই দিবেন।বিচ্ছিরি তো খুব একটা লাগছে না। ”

“ এই বিচ্ছিরি মালা দেখলে সে সন্তুষ্ট না হয়ে উল্টে অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে।”

কথাটা বলতে বলতেই জ্যোতির হাতটা টেনে নিল মেহেরাজ। চিকন হাতে মালাটা পেঁচিয়ে দিতেই জ্যোতি জিজ্ঞেস করল,

“ মানে?”

মেহেরাজ মুখে তীব্র বিরক্তির রেশ ফুটাল। একপলক তাকিয়ে শান্ত গলায় শুধাল,

“তোর হাতে পরিয়ে ট্রাই করলাম বিচ্ছিরি কিনা। এখন দেখছি সত্যিই বিচ্ছিরি লাগছে।তোর মালা বরং তুইই রাখ।”

.

সবার হাতে তখন ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ। সন্ধ্যে নেমেছে বেশিক্ষন হলো না।সুবিশাল আকাশে চাঁদ নেই আজ।গুঁটিকয়েক তারারই দেখা মিলল কেবল। সেদিক পানে তাকিয়েই মন খারাপ হলো মেহুর। ছোটবেলায় মা বলতো মানুষরা পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পর আকাশের তারা হয়ে যায়। আজ বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে, তার বাবা-মাও কি আকাশের তারা হয়ে গেছেন? মিটমিটিয়ে উজ্জ্বল তারা হয়ে তাদের দেখছেন? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ টলমল করল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কান্না চেপে চুমুক দিল চায়ের কাপে। ঠিক তখনই কানে এল সাঈদের গলা,

“ গ্রামে এসেছি তিনদিন হলো। অথচ আমি এখনও একটা মেয়ে পটাতে পারলাম না। কি ভীষণ ব্যর্থতা আমার!”

মুহুর্তেই হাসির রোল পড়ল। মেহু ফোঁসফাঁস শ্বাস ফেলল।মন খারাপ ভুলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,

“ এই চরম ব্যর্থতার জন্য তো আপনার এক্ষুনিই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত সাঈদ ভাইয়া।যাচ্ছেন না কেন?”

সাঈদ ফের ঠোঁট বাঁকিয়ে শুধাল,

“পরে যদি তোমাদের গ্রামের মেয়েরা আমার মতো হীরের টুকরো ছেলে হারানোর জন্য আপসোস করে?আপসোস করতে করতে যদি এ্যাটাক ফ্যাটাক করে মরে যায়? তার দায় কে নেবে শুনি?”

মেহু তীক্ষ্ণ চাহনিতে চাইল।উত্তরে বলল,

“ এই যে এখানে আমি, জ্যোতি, মিথি, নাবিলা, সামান্তা সবাই কিন্তু এইগ্রামেরই মেয়ে। আমরা কেউ আপসোস করছি আপনার জন্য? করছি না। তাই চিন্তা করবেন না সে নিয়ে।”

সাঈদ মুখ ভেঙ্গাল। ব্যাথিত সুরে বলল,

“তোমরা তো আসল রত্ন চেনো না। নয়তো এমন অমূল্য রতন পেয়ে কেউ হাতছাড়া করে? ”

নাবিলা পক্ষ নিল সাঈদের। মিষ্টি হেসে উত্তর দিল,

“ অবশ্যই না। সবাই কি আর সব রত্ন চেনে? আপনি একদম আপসোস করবেন না ভাইয়া।আমি অবশ্যই আপনার সাথে একমত!”

সাঈদ খুশি হলো। উচ্ছাস্বিত স্বরে শুধাল,

“ তুমিই বুঝো আমায় নাবিলা।তুমিই আসল প্রেমিকা আমার।”

“ কিন্তু আপনি তো সবার প্রেমিক হয়েই থেকে গেলেন ভাইয়া।”

“কে বলল? প্রেমিক তো তোমার।এই যে এইক্ষন থেকে আমি কেবল মাত্র তোমারই জান। প্রমিজ!”

সবাই হেসে উঠল তৎক্ষনাৎ। কেবল মেহুই হাসল। গম্ভীর চাহনিতে তাকিয়ে একবার দেখল সাঈদকে।ঠিক তখনই মোবাইলের ম্যাসেজ টোন বাঁজল। হাত টেনে স্ক্রিনে তাকাতেই চোখে ভেসে উঠল,

“ অপেক্ষার স্থায়িত্বটা ক্রমশ দীর্ঘ করছো তুমি মেহু।এদিকে যে একটা যুবক সে অপেক্ষা সইতে না পেরে মৃতযন্ত্রনাসম যন্ত্রনা অনুভব করছে সে খেয়াল রেখেছেন মিস? দ্রুত অপেক্ষার অবসান ঘটান।”

মেহু অবাক হলো। নাম্বারটা সেদিনকার সে নাম্বারটাই। কে এই লোক? কেনই বা এভাবে পরিচয় গোপণ রাখছে?

#চলবে…

[ খুব তাড়াহুড়োয় লেখা।ভুল থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here