গোধূলি লগ্নে হলো দেখা শেষ পর্ব

0
152

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Last_Part
#ইয়াসমিন_খন্দকার

“আপনিই ইচ্ছা করে আমায় চিংড়ি খাইয়েছেন তাই না? কেন করলেন এমন?”

মান্যতার প্রশ্নের সামনে জুবুথুবু হয়ে যায় ম্যানিলা। কি বলবে কিছু খুঁজে পায় না। সে যে এভাবে ধরা পড়ে যাবে সেটা কখনোই ভাবতে পারে নি। ম্যানিলা আমতা আমতা করে বলে,”আমি কিছু করিনি। তুমি বিশ্বাস করো আমায়।”

“চুপ, একদম চুপ। আপনি যে এমন করেছেন তার সব প্রমাণ আছে আমার কাছে। ”

“প্র.প্রমাণ মানে? কিসের প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”

“আপনি কি ডিস অর্ডার করেছিলেন সেটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। আর আমি অনলাইনে সার্চ দিয়ে দেখেছি সেই খাবারে চিংড়ি থাকে। এছাড়াও কি আপনার আর কোন প্রমাণের দরকার আছে?”

“হ্যাঁ, আমিই ইচ্ছাকৃত ভাবে তোমায় চিংড়ি মেশানো খাবার খাইয়েছিলাম। এবার যা করবে করো যাও।”

“আপনি কেন এমন করলেন?”

“কারণ আমি ভালোবাসি অনুরাগকে। ওর পাশে আমার কাউকে সহ্য হয়না, কাউকে না।”

“তাই বলে আপনি একজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন?”

“হ্যাঁ, প্রয়োজনে তাই করব। তোমার তাতে কি?”

“আপনার এই সব ব্যাপারে আমি অনুরাগকে জানাব তারপর অনুরাগই আপনার শাস্তির ব্যবস্থা করবে।”

“তোমার কি মনে হয় অনুরাগ তোমায় বিশ্বাস করবে? দুই দিনের একটা মেয়ে হয়ে তোমার এত পাওয়ার? অনুরাগ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও আমায় অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। ও আমাকে অবিশ্বাস করবে না।”

“তোমাকে বিশ্বাস করাই আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল ম্যানিলা।”

“অনুরাগ তু..তুমি।”

“হ্যাঁ, আমি। তোমার সব কথা আমি শুনেছি। ছি! ম্যানিলা ছি! তোমাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতেও আমার লজ্জা লাগছে।”

ম্যানিলা অনুরাগের কাছে গিয়ে বলতে থাকে, “বিশ্বাস করো অনুরাগ এই সব মিথ্যা। এই মেয়েটা আমার নামে মিথ্যা এলিগেশন দিয়েছে।”

“বিশ্বাস আর তোমাকে? কখনোই না। তুমি আমার বিশ্বাস ভঙ করেছ। তোমাকে আর কোনমতেই বিশ্বাস করা যায়না। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এখান থেকে। তুমি আমার বন্ধু জন্য তোমাকে এযাত্রায় ছেড়ে দিলাম। নাহলে তোমায় আমি পুলিশে সোপর্দ করতাম।”

“অনুরাগ..”

“চুপ আর একটা কথাও না। বেরিয়ে যাও নাহলে তোমায় আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব।”

ম্যানিলা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যেতে থাকে। যাওয়ার আগে মান্যতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে থাকে,”তোমাকে আমি কিছুতেই অনুরাগের সাথে সুখে থাকতে দেব না মান্যতা। এর শেষ আমি দেখেই ছাড়ব। অনুরাগ যদি আমার না হয় তাহলে আমি ওকে কারো হতে দেবো না কারোই না।”

~~~~
মান্যতা ইদানীং অনুরাগের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। অনুরাগের তার প্রতি কেয়ার, ভালোবাসা এসব দেখে সে ভিনচেঞ্জোকে ভুলে অনুরাগকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।

মান্যতার এই পরিবর্তন অনেকটা সুপ্ত ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে আরেকটা সুখবর হলো আগামী মাসেই তাদের শুভ পরিণয় অর্থ্যাৎ তাদের বিয়ে।

মান্যতার দিন গুলো চলে যাচ্ছে ভীষণ আনন্দ ও উদ্দীপনায়। আজ অনুরাগ তাকে বলেছে সে মান্যতাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায়। মান্যতাকে নাকি কি সারপ্রাইজ দেবে। মান্যতাও অনুরাগের সাথে যেতে রাজি হয়েছে।

মান্যতাকে নিয়ে আজ ভেনিস শহরে এলো অনুরাগ। ভেনিস শহরের সৌন্দর্য মান্যতাকে মুগ্ধ করল ভীষণভাবে। মান্যতা হারিয়ে গেল ভেনিসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই। এরমধ্যে গোধূলি এসে কড়া নাড়ছিল প্রকৃতির বুকে। অনুরাগ হঠাৎ করে মান্যতার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”আজ কেন আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি জানো?”

“না, কেন?”

“কারণ আজ আমার জীবনে একটি বিশেষ দিন। আজকের দিনেই আমি তোমাকে প্রথম দেখেছি?”

“কি আমাদের দেখা গোধূলি লগ্নে হয়েছিল?”

“হুম। এরকমই এক গোধূলি লগ্নে।”

“আমার তো সেটা মনে নেই।”

“তোমার মনে নাই থাকার কথা। আসলে এটা দুই বছর আগের কথা।”

“কিন্তু আপনার সাথে তো আমার ৫ মাস আগে প্রথম দেখা হয়।”

“উহুম। তুমি ভুল জানো সেটা। আমি তোমায় প্রথম দেখি আজ থেকে দুই বছর আগে। সেবার কিছু জরুরি কাজে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম আমি। সেদিন গোধূলি লগ্নে তুমি স্কুল থেকে কাধে ব্যাগ নিয়ে ফিরছেলে। ষড়োষী এক রূপসী তরুণী। যার রূপ লাবণ্য আমার মনে অদ্ভুত ঢেউ তুলেছিল। তারপর না ঠিকমতো খেতে পেরেছি আর না ঘুমাতে। সর্বক্ষণ শুধু তোমার কথা মনে পড়ত। আমি তোমায় অনেক খুঁজেছি কিন্তু কে জানত যে তুমি আমার নিজেরই খালাতো বোন! ভাগ্যিস আম্মু আমায় তোমার ছবি দেখিয়েছিল। নাহলে তো আমি তোমায় আজও খুঁজে পেতাম না।”

“তার মানে..”

“হুম, আমি তোমায় ভালোবাসি। আরো অনেক আগে থেকে।”

মান্যতার মুখে লাল আভায় ছেয়ে যায়। হঠাৎ তার মনে হয় এবার তার সত্যি বলা উচিৎ। তাই সে অনুরাগকে বলে,”আমারও আপনাকে একটা সত্য বলার ছিল।”

“জানি তুমি কি বলবে ভিনচেঞ্জোর কথা তাই তো?”

“আপনি জানেন এটা?”

“অনেক আগে থেকেই জানি। তোমার জ্ঞাতার্থে এটাও জানিয়ে রাখি আমিই ভিনচেঞ্জো।”

“কি!”

হতবাক হয়ে বলে মান্যতা।

“কেন বিশ্বাস হচ্ছে না? দাঁড়াও আমি প্রমাণ দিচ্ছি।”

বলেই একটি ভিডিও রেকর্ড চালু করে। যেখানে অনুরাগ গান গাইছে। এসব দেখে তো মান্যতা বিশ্বাসই করতে পারছে না। তারমানে অনুরাগই তার প্রিয় ভিনচেঞ্জো। যাকে সে এতদিন গোপনে ভালোবেসে গেছে। মান্যতা আবেগাপ্লুত হয়ে অনুরাগকে জড়িয়ে ধরে।

অনুরাগ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছিল না। তাই সে মান্যতার অধরে অধর মিলিয়ে দেয়৷ অতঃপর তাকে কোলে তুলে নেয়। ভেনিসের একটি স্থানীয় মসজিদে গিয়ে অনুরাগ ও মান্যতা বিয়ে করে নেয়। মান্যতাকে নিয়ে এরপর অনুরাগ পৌঁছে যায় ভেনিসের একটি হোস্টেলে। সেখানেই তারা সেদিন রাত্রি অতিবাহিত করে। রচিত করে ভালোবাসার এক অমর কাব্য।

~~~~
আজ অবশেষে সেই শুভ দিন চলেই এলো! আজ অনুরাগ ও মান্যতার চার হাত এক হওয়ার দিন। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের বিয়ে হবে। সকাল থেকেই অনুরাগের বাড়ির লোকজন তাই সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। মান্যতার মা-বাবাও এসে পড়েছে।

মান্যতা অনুরাগের রুমে গিয়ে তাকে আলিঙ্গন করে। অনুরাগ মান্যতাকে বলে,”তোমাকে এত মনমরা লাগছে কেন সুইটহার্ট?”

“কেন জানি আমার মনে হচ্ছে আজ খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে।”

“কিছু হবে না সুইটহার্ট। তুমি চিন্তা করো না।”

মান্যতার মন কেন জানি মানছিল না৷ তার বারবার মনে হচ্ছিল কিছুতো খাবার একটা হবেই।

এরইমধ্যে বিয়ের আগে সে চলে যায় পার্লারে সাজগোজ করতে। পার্লার থেকে তৈরি হয়ে মান্যতা চলে যায় একটি স্থানীয় হসপিটালে। অনেক দিন থেকেই তার মন খুঁত খুঁত করছিল। তাই সে আজ সত্যটা নিশ্চিত করতেই এখানে এসেছে।

মান্যতা চেক আপের পর বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। সে যেটা ভেবেছিল সেটাই হয়েছে রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। মান্যতা ফোন লাগায় অনুরাগকে। অনুরাগ ফোন রিসিভ করা মাত্রই সে বলে,”আপনাকে একটা জরুরি কথা বলার ছিল।”

“হ্যাঁ, বলো। এসে জানাচ্ছি।”

বলেই ফোন রেখে দেয় মান্যতা। এরইমধ্যে সে লক্ষ্য করে গাড়িটা অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মান্যতা ড্রাইভারকে বলতে থাকে,”আপনি আমায় এদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? রাস্তা তো ঐদিকে।”

“এদিকে শর্টকার্ট।”

“ওহ।”

মান্যতা আর কথা বাড়ায় না। গাড়িটা তাকে নিয়ে একটি নির্জন স্থানে পৌঁছে যায়। সেখানেই গাড়িটি থামে। মান্যতা বলে,”এটা আপনি আমায় কই নিয়ে এলেন?”

ড্রাইভার নিরুত্তর। এরমধ্যে ম্যানিলা এসে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাকে দেখে মান্যতা ঘাবড়ে গিয়ে বলে,”আপনি..!”

“হ্যাঁ, আমি। কিছু হিসাব বাকি ছিল যে সেটাই পূরণ করতে এলাম।”

মান্যতা কি করবে বুঝতে পারে না। এরমধ্যে তার ফোন বেজে উঠলে মান্যতা সেটা রিসিভ করে নেয়। কিন্তু ম্যানিলা ফোন কেড়ে নিয়ে অনুরাগকে বলে,”তোমার মান্যতা এখন আমার কব্জায়। আমি তোমাকে লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি পারলে চলে আসো। এসে বাঁচিয়ে নেও তোমার মান্যতাকে!”

বলেই অট্টহাসিতে মেতে ওঠে। মান্যতাকে টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নামায় ম্যানিলা। তার সাথে চার-পাঁচজন গুন্ডাও ছিল। ম্যানিলা মান্যতার চু**লের মুঠি ধরে তাকে চ*ড় থাপ্পড় মা*রতে থাকে। মান্যতাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য একটি ব্লেড দিয়ে মান্যতার মুখে চোখে ইচ্ছা মতো আঁচড় দিতে থকে। মান্যতার আর্তনাদে সব কেপে ওঠে। ম্যানিলা যেন সা*ইকো হয়ে ওঠে। এতেও সে শান্তি পায়না। একটা কলম হাতে নিয়ে মান্যতার ডান চোখে আঘা**ত করে চোখ আউলে দেয়। তারপর মান্যতার পায়ে ভারি কিছু একটা দিয়ে আঘাত করে। মান্যতা কাতড়াতে থাকে। মান্যতা অনুনয় বিনয় করে বলে,”প্লিজ আমায় মে**রো না।। আমি অনুরাগের সন্তানের মা হতে চলেছি। আমার বাচ্চার জন্য হলেও আমায় বাঁচতে দাও।”

এই কথা ম্যানিলাকে আরও ক্ষিপ্ত করে তোলে। ম্যানিলা হাতে একটি রড তুলে নিয়ে মান্যতার পেটে ঢু**কিয়ে দেয়। মান্যতার মুখ দিয়ে এক দলা রক্ত বের হয়ে। ম্যানিলা এতেও ক্ষান্ত হয়না এক এক করে দশবার মান্যতার পেটে র*-ড ঢুকিয়ে দেয়। মান্যতা ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। তার পরাণপাখি উড়াল দিয়েছে। তাও ম্যানিলা থামছে না।

অনেকক্ষণ পর গিয়ে ম্যানিলা থামে। ততক্ষণে অনুরাগও পুলিশকে নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। সকলে এই ভয়াবহ হ**ত্যা**যজ্ঞ দেখে থমকে গেছে। অনুরাগ মান্যতার কাছে যেতে নিলে পুলিশ তাকে বাঁধা দেয়। অনুরাগ আকাশ বাতাস কাপিয়ে কাঁদতে থাকে। চিৎকার করে ম্যানিলার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এটা কি করলে তুমি? কেন করলে? তোমায় ক্ষমা করে দেওয়াই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল ছিল। যার জন্য আমার মান্যতা…আমি তোমাকে এর শাস্তি দেবোই।”

“তোমায় শাস্তি দিতে হবে না। আমি নিজেই নিজেকে শাস্তি দেব। আমি তো এটাতেই খুশি যে মান্যতা তোমার হয়নি।”

বলেই একটা ব**ন্দুক বের করে নিজের কপালে চালিয়ে দেয়। সাথে সাথেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে সে। অনুরাগ মান্যতার নিথর দেহর দিয়ে তাকিয়ে কাঁদতে থাকে। পুলিশ তাকে তার মান্যতার কাছে যেতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু অনুরাগ জানে সে ডাকলে তার মান্যতা আর সাড়া না দিয়ে থাকতে পারবে না…পুলিশ অনুরাগকে মান্যতার পাশেই যেতে দিলো না। মান্যতার দেহটা নিয়ে চলে গেল। অনুরাগ সেখানেই পড়ে রইল। হঠাৎ করে তার সামনে একটি কাগজ উড়ে এলো। মান্যতা কাগজটা কুড়িয়ে দেখে এটা প্রেগ্ন্যাসি টেস্টের রিপোর্ট। রিপোর্ট পজেটিভ। তাহলে কিন্তু মান্যতা তাকে এটাই জানাতে চেয়েছিল। অনুরাগ আরো বেশি কষ্ট পেতে লাগল। তার মান্যতা, তার অনাগত সন্তান দুজনকেই সে হারিয়ে ফেলল নিজের একটা ভুলের জন্য…ম্যানিলাকে ক্ষমা না করে দিলে হয়তো তাকে আর এই দিন দেখতে হতো না…

POV~~ক্ষমা একটি মহৎ গুণ হতে পারে কিন্তু সবাইকে ক্ষমা করতে নেই। কিছু কিছু মানুষকে ক্ষমা করে দিলে পরবর্তীতে তারা আপনার জীবনে এমন অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়ে যাবে যা আর কখনোই পূরণ হবার নয়।

The End

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here