#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার
অনুরাগ অনিমেষ চেয়ে রইল মান্যতার দিকে। মান্যতাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে। সপ্তদশী তরুণীর রূপ লাবন্য যেন তাকে আরো বেশি করে আড়ষ্ট করে তুলল। মান্যতাও খেয়াল করল অনুরাগ তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। ব্যাপারটা বেশ অস্বস্তিজনক ঠেকছিল তার কাছে। এভাবে একজন পুরুষের অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি তার মনে অসন্তোষ তৈরি করল। মান্যতা বিরক্তির সহিত বিড়বিড় করে বলল,”এমন করে দেখছে যেন চোখ দিলেই গিলে খাবে। অসহ্য লোক একটা। আমার ভিনচেঞ্জো ছাড়া আর কাউকে আমি আমার দিকে এভাবে চেয়ে থাকার অধিকার কিছুতেই দেব না।”
এমন ভাবনা থেকেই নিজের গলায় জড়ানো ওড়নাটা দিয়ে নিজের মাথাটা খুব ভালো ভাবে ঢেকে নিলো। ওড়নাটা এমন ভাবে মুখে পেচিয়ে নিলো যেন অনুরাগ তার মুখ দেখতে না পায়। তারপর গিয়ে মান্যতা একটু স্বস্তি পেল।
তবে তার এই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রাহেলা বেগম অনুরাগকে বললেন,”তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন বাবা? সবাই তো খেতে বসে পড়েছে তুমিও এসো।”
অনিতা খানও নিজের ছেলেকে বলেন,”হ্যাঁ, তাই তো৷ তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? এসো, বসো এখানে।”
অনুরাগ সুযোগ বুঝে একদম মান্যতার সামনাসামনি চেয়ারটায় বসে পড়ে। যার ফলে তার আর মান্যতার চেহারা দেখতে কোন অসুবিধা হয় না। এ বিষয়টা মান্যতাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। কিন্তু সে না পারছিল কিছু সইতে আর না পারছিল কিছু বলতে।
মান্যতার মনের অবস্থা ঠিক বুঝতে পারছিল অনুরাগ। তাই তো সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আর মনে মনে বললো,”এভাবেই না চাইতেই একসময় তুমি আমার জীবনে জড়িয়ে যাবে সুইটহার্ট।”
~~~
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর ১২ টা। দেশে বর্তমানে চলছে শীতের আমেজ। তাই এই ভরদুপুরেও সুয্যিমামার কোন দেখা নেই। আকাশ ঢেকে আছে ঘন কুয়াশার আস্তরণে। মান্যতাদের বাড়ি রাজশাহীতে। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই শীতের প্রকোপ বেশি। তাই হাড় কাপানো ঠান্ডা থেকে বাঁচতে মান্যতা কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন চাপছিল। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। মান্যতা বিরক্ত কন্ঠে বলে,”নক না করে ভেতরে আসুন তো!”
অনুরাগ মান্যতার রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল,”কারো রুমে নক না করে প্রবেশ করাকে অভদ্রতা মানা হয় ইটালিতে।”
মান্যতা খানিক খোঁচা দিয়েই বলল,”একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করা বোধহয় আপনাদের ইটালির সভ্যতা?”
অনুরাগ কিছু বলল না। মান্যতা চাইল অনুরাগের পানে। তার পরণে নেই কোন শীতের কাপড়। এই প্রচণ্ড শীতেও ছেলেটা এত হালকা পোশাকে কিভাবে আছে ভেবে পায়না মান্যতা। অনুরাগের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনার কি ঠান্ডা লাগে না?”
অনুরাগ স্মিত হেসে বলে,”এটাকে আবার কেউ ঠান্ডা বলে নাকি? আমার কাছে তো এসব ঠান্ডা কিছুই না। আমাদের ইটালিতে তো টেম্পারেচার মাইনাসে নেমে যায়, স্নো ফলও হয়। তার তুলনায় এখানকার ঠান্ডা তো নস্যি। তাই আমার কিছুই মনে হচ্ছে না।”
“অথচ আমরা এই শীতেই কাঁবু হয়ে যাচ্ছি!'”
“আমার সাথে ইটালিতে চলো। তারপর দেখবা ঠান্ডায় একদম অভ্যস্ত হয়ে যাবা।”
“আমার কোন ইচ্ছা নেই আপনার ইটালি ফিটালিতে যাওয়ার। আপনি যান তো এখান থেকে।”
“আমাকে নিয়ে তোমার সমস্যাটা কি মান্যতা? আমি কি পাত্র হিসেবে খুবই খারাপ?”
মান্যতা বিরক্তিকে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলল,”আমি এত কিছু জানি না। আমি তো আপনাকে বলেইছি আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তাহলে আপনি বুঝছেন না কেন?”
“ওকে। আমি বুঝছি সবটা।”
“হ্যাঁ, বুঝুন।”
” তোমার বয়ফ্রেন্ডের নাম যেন কি বলেছিলে?”
“রাসেল।”
“ইয়াহ, দ্যাটস রাস্কেল। ওর সাথে আমায় দেখা করাও।”
“কে..কেন? আপনি ওর সাথে দেখা করে কি করবেন?”
“এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। তোমাকে যা বলছি করো। আদারওয়াইজ আমি কিন্তু…”
মান্যতার কেন জানি খুব ভয় করতে লাগল। অনুরাগের কথা শুনে তাকে ভীষণ সিরিয়াস লাগছে। যদি কোন উল্টাপাটা কিছু করে দেয়। এমন ভাবনা থেকেই মান্যতা রাসেলকে ম্যাসেজ করে। ম্যাসেজে লিখে,”তুই এক্ষুনি সানরাইজ ক্যাফেতে চলে আয়। কুইক। আজ তোকে আমার বয়ফ্রেন্ডের এক্টিং করতে হবে সেই অনুযায়ী প্রিপারেশন নিয়ে আসবি। আমিও ওখানে যাচ্ছি। সি ইউ।”
ম্যাসেজটা সেন্ড করার পর মান্যতা অনুরাগের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনার খুব শখ না আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করার? বেশ, তাহলে চলুন আমার সাথে। আজ আমি আপনার শখ পূরণ করেই দেই।”
~~~~
ক্যাফেতে মুখোমুখি বসে আছে রাসেল ও অনুরাগ। তাদের মাঝে বসে আছে মান্যতা। অনুরাগ বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাসেলকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। এরপর হঠাৎ করেই ভারী কন্ঠে বলে ওঠে,”তুমিই তাহলে সেই রাস্কেল!”
“রাস্কেল হতে যাবো কেন? আমি রাসেল। বয় শূণ্য রয় আকারে রা, দন্ত সয় রিসিকার আর দন্ত স রাসেল।”
“বেশি কথা না বলে চুপ করে থাকো ষ্টুপিড।”
রাসেল অসহায় চোখে মান্যতার দিকে তাকায়৷ মান্যতা অনুরাগকে বলে,”আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডকে এভাবে অপমান করতে পারেন না মিস্টার অনুরাগ খান।”
“আমি কি পারি আর কি পারি না সেটা তুমি এখন বুঝতে পারবা। এইটুকুনি একটা ছেলে যার নাক টিপলে দুধ বেরোবে, তার সাথে কিনা তুমি রিলেশনে গেছ। আচ্ছা, তুমি যখন ওর সাথে রিলেশনে আছ তখন আমি একটা কাজ করি ওর সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করি।”
মান্যতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,”মা..মানে..”
“মানেটা এক্ষুনি বুঝতে পারবে।”
বলেই অনুরাগ রাসেলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এই রাস্কেল মানে রাসেল তুমি এক্ষুনি তোমার গার্ডিয়ানের ফোন নম্বর দাঁড়াও। আমি মান্যতার মা-বাবাকেও ফোন করছি। আজই তোমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা প্রান্তি হোক।”
রাসেল এবার বেশ ভয় পেয়ে যায়। মান্যতাকে বলে,”এই মান্যতা তোর খালাতো ভাই এসব কি বলছে? আমাকে কি এখন সত্যি তোকে বিয়ে করতে হবে। তাহলে জেসমিনের কি হবে?”
অনুরাগ বলে,”জেসমিন? কে এই জেসমিন? ওহ তোমার আরেকটা গার্লফ্রেন্ড। দেখো মান্যতা আমি তোমাকে বলেছিলাম না এরকম ছেলেরা প্লেবয় হয়। এখন মিললো তো আমার কথা? এই ছেলে তোমার এত বড় সাহস তুমি এই বয়সেই মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলছ, তোমাকে তো আমি…”
“বিশ্বাস করুন ভাই আমার কোন দোষ নেই, আমি নির্দোষ। সব দোষ ঐ মান্যতার। আমি ওর বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড কিছু নই। আমরা তো জাস্ট ফ্রেন্ড!”
“ওহ! এখন গার্লফ্রেন্ড জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল তাইনা? আমার বাইশেপস দেখেছ? এই হাতের দাবাং মার্কা চ*-ড় খেলে তোমার সব ফাতরামি বেরিয়ে যাবে।”
রাসেল এবার ভয়ে মান্যতার ম্যাসেজ অনুরাগকে দেখিয়ে বলে,”এই দেখুন ভাই। মান্যতাই আমাকে নাটকটা করতে বাধ্য করেছিল। আমি কিছু করি নি।”
অনুরাগ বাকা হাসি দিয়ে মান্যতার দিকে তাকিয়ে বলে,”ওহ তাহলে এই ব্যাপার।”
মান্যতা চিৎকার করে বলে ওঠে,”তুই আসলেই একটা রাস্কেল। দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। নয়তো…”
রাসেল আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে উঠে দাঁড়িয়ে ভো দৌড় দেয়। অনুরাগ তখনো হাসতে ব্যস্ত। মান্যতা বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়। সেও উঠে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় অনুরাগ তার হাত ধরে তাকে আটকে দিয়ে বলে,”এবার আর তোমাকে আমি কোন সুযোগ দেব না সুইটহার্ট। আমার স্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও। তোমার কোন নাটক আর চলবে না।”
to be continue
[কেমন লাগছে গল্পটা? সবাই একটু গঠনমুলক কমেন্ট করুন নাহলে লেখার আগ্রহ পাই না। আপনারা গঠনমুলক কমেন্ট করলে শত কষ্ট করে হলেও নিয়মিত গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব।]