মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ৩৭

0
192

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলার ঘুমের ঘোরে মনে হলো কেউ ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। কারো নিশ্বাস ওর চোখে মুখে উপচে পড়ছে।
মেঘলার ঘুম ভীষণ হাল্কা।
মেঘলা পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ পেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
শ্রাবণ মেঘলার এলোমেলো চুলগুলো আলতু করে ঠিক করে দিল। শাড়ির আঁচলটা কাঁপা কাঁপা হাতে ঠিক করে দূরে সরে গেল।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মেঘলা ঠিক আগের মতো ঘুমাচ্ছে চুল এলোমেলো শাড়ির আঁচল সরে গেছে।

শ্রাবণ চোখ সরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

মেঘলা কিছু সময় যেতে শুয়া থেকে উঠে শ্রাবণের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ঘুম কেমন হলো!.??’
মেঘলা অন্ধকার বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঘুমাতে আর দিলেন কই!!.’
শ্রাবণ অবাক হয়ে মেঘলার দিকে তাকালো। মেঘলা মুচকি হেঁসে বাহিরে তাকিয়ে আছে।

শ্রাবণ এক হাতে মাথা চুলকে বলে উঠলো, ‘ আপনি জেগে ছিলেন!.?’
মেঘলাঃ কই নাতো।
শ্রাবণ যা বুঝার বুঝে নিল।

মেঘলা আচমকা শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরলো তাও শক্ত করে।

শ্রাবণ বেশ অবাক হলো। যেখানে এখনো নিজ ইচ্ছায় মেঘলা শ্রাবণের হাতও স্পর্শ করেনি সেই মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে!!!

সময় গড়ায় পাঁচ মিনিট পর মেঘলা শ্রাবণকে ছেড়ে দেয় তবে দূরে যেতে পারে না। প্রথম মেঘলা জড়িয়ে ধরলেও এখন শ্রাবণ মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
মেঘলা ছুটার চেষ্টা করলে শ্রাবণ আরও শক্ত করে ধরে।
শ্রাবণঃ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো একদম নড়াচড়া করবে না।

মেঘলা লজ্জায় মুখ শ্রাবণের বুকে লুকিয়ে রেখেছে। কেমন নির্লজ্জের মতো জড়িয়ে ধরে ছিল শ্রাবণ কে! আজ কাল হুটহাট কি করে নিজেও জানেনা। শ্রাবণকে দেখলে কেমন কেমন ফিল হয়। জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সব সত্যি বলে দিতে ইচ্ছে হয়। এই ঝামেলার জীবন ভালো লাগে না একটু শান্তি চায়। আজ সে ভীষণ ক্লান্ত একটু আশ্রয় চায় শ্রাবণের বুকে৷

______________

রাত করে আশার জন্য ছোঁয়া একটু বকা দিল মহুয়াকে। রাস্তা ঘাটে বিপদ হতে পারে এতো রাতে চলাফেরা করলে।

মহুয়া ছোয়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে গোসল করে আসলো।
ছোঁয়াঃ এতো রাতেও কেন গোসল করতে হয় মহুয়া!.?
মহুয়াঃ তুই তো জানিস ময়লা আমার একদম সহ্য হয় না। বাহির থেকে আসলে মনে হয় শরীর ভার হয়ে আছে গোসল করলে শান্তি লাগে।

ছোঁয়াঃ খাবার নিয়ে আসবো.??
মহুয়াঃ না খাব না আজ।

ওদের কথার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়লো আহনাফ।
ছোঁয়াঃ ভাইয়া তুমি ?
আহনাফঃ মহুয়া নিচে আসো।
মহুয়া চুপচাপ ঘোমটা দিয়ে নিচে গেল।

আহনাফ টেবিলে বসতে বসতে বললো, ” আম্মু দাদীজানের কাছে আছে। ফুপিমণি ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট আম্মুর মন ভালো না আমার জন্য খাবার গরম করে আনো।
মহুয়াঃ প্রথমে বললেই হতো এতো বড় কাহিনী বলার কারণ বুঝলাম না।
আহনাফঃ তোমার তো নিজের স্বামীর প্রতি একটুও মায়া, ভালোবাসা, দায়িত্ব কিছু নেই মহুয়া। কতোটা পাষাণ বউ। স্বামী সারাদিন কাজ করে বাসায় এসেছে কই একটু সেবাযত্ন করবে তা না রুমে গিয়ে বসে আছো!।

মহুয়া চুপচাপ আহনাফের কথা শুনছে আর খাবার গরম করে সামনে রাখছে।

আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল।

একটা প্লেটে খাবার নিয়ে মহুয়ার সামনে দিল।
মহুয়াঃ আমি খাব না আহনাফ।
আহনাফের হাত থেমে গেলো অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই প্রথম তোমার মুখে আমার নাম শুনলাম!.’
মহুয়াঃ এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
আহনাফঃ কিছু না।

মহুয়া চুপচাপ বসে আছে সে খাবে না৷
আহনাফঃ মহুয়া আমি প্লেটে নিয়ে নিয়েছি চুপচাপ বসে না থেকে হাত মুখ চালাও। তোমার খাওয়া শেষ হলে আমি রুমে গিয়ে ঘুমাবো। ভীষণ ঘুম পেয়েছে সারাদিন আজ প্রচুর প্যারার মধ্যে দিয়ে গেছে।

মহুয়া বাধ্য হয়ে খাবারে হাত দিল। কিন্তু আহনাফের সামনে খেতে লজ্জা লাগছে৷
আহনাফ হয়তো বুঝতে পারলো৷ মোবাইল বের করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো।

খাওয়া শেষ করে সব গুছিয়ে মহুয়া নিজের রুমে যাওয়ার সময় আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আহনাফ দুষ্টু হেঁসে মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসলো৷

আহনাফের হাসি দেখে নিজের অজান্তেই মহুয়া দুই পা পিছিয়ে গেল।
আহনাফ মহুয়ার একদম কাছে এসে মহুয়ার মুখের দিকে হাত বাড়ালো।

মহুয়া দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল।
আহনাফ মহুয়ার পেছন থেকে রুমাল নিয়ে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কি ভেবে ছিলে!.?’
মহুয়াঃ আমাকে রুমে কেন এনেছেন! দরজা খুলেন কেউ দেখলে…
আহনাফঃ দরজা লাগানো কেউ কিভাবে দেখবে মহুয়া!.? দিন দিন চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে বুদ্ধি হাঁটুতে চলে আসছে। আর আমার বউ আমার রুমে কে কি বলবে!.?
মহুয়া চুপ করে রইলো, এই লোকের সাথে কথা বলে লাভ নেই।

আহনাফ সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আহনাফঃ মেহু মাথাটা একটু টিপে দাও না ভীষণ যন্ত্রণা করছে।
মহুয়া ধীর পায়ে গিয়ে আহনাফের বিছানার পাশে দাঁড়ালো।
আহনাফ এক টানে মহুয়াকে বসিয়ে দিল।
আহনাফঃ তুমি পরপুরুষের রুমে নেই মেহু। তুমি তোমার স্বামীর রুমে আছো৷
মহুয়া হাত বাড়ালো আহনাফের চুলের দিকে।
আহনাফঃ যত্ন করে ভালোবেসে চুল টেনো আবার দেখো সব জেনো হাতে না চলে আসে। এই চুল আমার ভীষণ প্রিয়। আমি ঘুমালে ডাক দিবে না।
মহুয়া হাসলো আহনাফের কথা শুনে।

_________________

ধীরে ধীরে দরজা খুলে রুম এক নারী প্রবেশ করলো। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে হাতের ছু*রিটা শক্ত করে চেপে ধরলো।

ড্রিমলাইটের আলোয় বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো।

কাঁথা গায়ে দেওয়া কাউকে দেখেই রাগে, ঘৃণায় চোখ জ্বলে উঠলো।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুরিটা বুকের দিকে বসিয়ে দিল। পরপর কয়েকবার ছুরি বসিয়ে তাকালো।
ছুরিতে রক্ত নেই কেন!..?

পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!? আস্তে করে পেছনে ফিরে ভয়ে বিছানায় পড়ে গেল।

” ভয় পেয়েছো!!.? ভেবে ছিলাম তুমি আসবে আমার ভালোবাসার টানে”

নারীটি ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ছুরি সামনে ধরলো।
” আমাকে খু’ন করতে এসে ছিলে!.? নিজের স্বামীকে!!.? নিরু তুমি ঠিক আগের মতো বোকা রয়ে গেছো। আমাকে মা-রা এতো সহজ!.??

~ আমি একদিন তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করবো।
~ পারবে!.? ভালোবাসার মানুষের বুকে ছুরি বসাতে!.? তোমার বুকে বসবে না!.? বুক কাঁপবে না.?
হঠাৎ নিরুপমা শব্দ করে হেঁসে উঠলো। হাসতে হাসতে হুঁ হুঁ করে কেদে উঠলো।

~ আমি তোমার ভালোবাসা আর তোমার বুকে আজ থেকে ২০ বছর আগেই ছুরি বসিয়েছি তাও কিভাবে বেঁচে গেলে!!..??

আফজাল সিগারেট ঠোঁটে চেপে বারান্দায় চলে গেল।

নিরুপমা সেখানে বসেই কাঁদতে শুরু করলো।

চলবে,

( কি লেখেছি!.? নিজেও জানিনা। শরীর ভীষণ খারাপ, মাথা ব্যাথা, জ্বর নিয়ে লেখেছি🙂 ছোট বলে মন খারাপ করবেন না প্লিজ।)

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here