#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-১৭
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)
সানাত ভার্সিটির গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে অন্তিমের অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ আগেই অন্তিম ম্যাসেজে লিখে পাঠিয়েছে,
সানাত ক্যাম্পাসের বাইরে আমার জন্য ২০ মিনিট অপেক্ষা করো। আমার ডিউটি এখনো শেষ হয়নি। আমি ২০ মিনিট পর আসছি। একসাথে বের হবো।
তাই সানাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কারণ সে চাইলেও ক্যাম্পাসের ভেতরে অন্তিমের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেনা। কারণ অন্তিম চায়না তাদের সম্পর্কের কথা প্রফেশনাল লাইফে কেউ জানুক। সানাত বেশ বিরক্ত এতে। সে ভেবেই পায়না বাইরে যে মানুষ এত প্রেমিকপুরুষ সেজে থাকে তার সামনে সেই মানুষ কিনা ভার্সিটিতে আসলে পুরো ভোল পাল্টে ফেলে! এমন হাবভাব যেনো চেনেই না তাকে! যেনো আর পাঁচটা মেয়েদের মত সেও তেমন! রাগ হয় সানাতের পরক্ষণেই ভাবে নাহ্ বোধয় একটু বেশিই আশা করে ফেলছে সে অন্তিমের থেকে। অন্তিম তো তাকে একবারও বলেনি সে তাকে ভালোবাসে। সে যা করেছে তা হয়তো বন্ধুত্বের খাতির থেকে। এমন মুহূর্তেই পেছন থেকে আলভী সানাতকে দেখে ডেকে উঠলো,
আরেহ সানাত! তুমি এখানে একা দাড়িয়ে আছো কেনো?
সানাত আলভীকে দেখে এবার মহাবিরক্ত হলো। মনে মনে বলে উঠলো,
উফফ এই ছেলে এখানেও চলে এসেছে! একটু একা দাঁড়িয়েও শান্তি নেই!
কি ব্যাপার সানাত? কথা বলছো না যে?
না মানে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি?
কার জন্য?
সানাত কি বলবে বুঝতে পারছেনা। আলভী আবার বললো,
তুমি কি তোমার ঐ কাজিনের জন্য ওয়েট করছো?
হ্যাঁ আলভী।
ওহ। বাট তোমার ওই কাজিন কেমন একটু জানি। মানে তুমি ওনার রিলেটিভ অথচ ভার্সিটিতে এমন ভাবে ইগনোর করে তোমাকে যেনো তুমি কিছুই হওনা ওনার।
সানাতের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সত্যিই তো আলভীর একটা কথাও ফেলনা না। অন্তিম কেনো করে এমন? কই ভার্সিটির বাইরে তো কতো কোমল তার প্রতি তবে ভার্সিটিতে কেনো এতো কঠিন?
অন্তিম সবে মাত্র ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে। বাইরে সানাতের পাশে আলভীকে দেখেই মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। এই অসভ্য ছেলে তো দেখছি কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা। আর সানাত বেয়াদবটা কম কিসে! সেও তো দিব্যি দাড়িয়ে আছে ওর সাথে! অন্তিম গিয়ে দাঁড়াতেই আলভী বলে উঠলো,
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!
ভাইয়া? আমি তোমার ভাইয়া হলাম কি করে?
যা বাবা আপনি সানাতের বড়ো ভাই বলে কথা। আর সানাত আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। তাহলে ওর ভাই মানে তো আমারও ভাই। তাইনা?
অন্তিম চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে এক ঘুষি মেরে আলভীর সব ক’টা দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে। আর এদিকে সানাত কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি ঘোলা হওয়ার আশঙ্কায় সে অন্তিমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
চলুন যাবেন না? এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি চলুন।
তারপর আলভীর উদ্দেশ্যে বললো,
আচ্ছা আলভী আমরা এখন আসি। বলেই অন্তিমের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো। তারপর একটা রিকশা ডেকে রিকশায় উঠে বসলো। অন্তিম চোয়াল শক্ত করেই বলে উঠলো,
ওই ছেলেটার সাথে তোমার এতো কিসের মেলামেশা? বলেছিনা ওর থেকে দূরে থাকবে। আমার একদম পছন্দ নয় ওই ছেলেকে।
সানাত ইচ্ছে করেই বলে উঠলো,
কেনো? পছন্দ নয় কেনো? আলভী তো খুব ভালো ছেলে। যথেষ্ট অমায়িক।
জাস্ট শাট আপ। এতো নজর কেনো বাইরের ছেলেদের দিকে! ভালো মন্দর তুমি কি বোঝো হ্যাঁ যে বলছো অমায়িক!
আমি তো শুধু…
চুপ থাকো। আর হ্যাঁ ওহী কোথায়?
ঘুরতে গেছে… বলেই জ্বিভ কাটলো সানাত। এইরে মুখ ফস্কে কি বলে ফেললো সে! অন্তিম যদি জানতে পারে তার বোন প্রেমিকের সাথে ঘুরতে গেছে তাহলে আর রক্ষা থাকবেনা। অন্তিম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো,
কার সাথে ঘুরতে গেছে?
ঐশী, মিনহা ওদের সাথে। আমিও যেতাম কিন্তু আপনি তো অপেক্ষা করতে বললেন তাই আর যাওয়া হয়নি।
ওহ্। আচ্ছা।
.
.
🌻
অন্তিম আর সানাত এই মুহূর্তে বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। খাবার অর্ডার করেছে। সানাত চুপ করে বসে আছে। অন্তিম উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
সানাত তুমি বসো আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
ঠিকাছে।
তারপর অন্তিম চলে গেলো। আর সানাত বসে রইলো।
.
.
অন্তিম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসছিল আচমকা কারো সাথে ধাক্কা লাগলো। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে শার্ট ঠিক করতে করতে বললো,
আইএম এক্সট্রিমলি সরি। আসলে… বাকি কথা আর বলতে পারলোনা। দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পরমুহূর্তে একসঙ্গে বলে উঠলো,
তুই!
তারপর সামনের ব্যক্তিটি বলে উঠলো,
আরেহ অন্তিম তুই!
রাদিফ তুই!
তারপর দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। অন্তিম বলে উঠলো,
সেই লাস্ট কবে তোর সাথে দেখা হয়েছিল! তারপর তিন চার বছর হলো কোনো যোগাযোগ নেই। জাস্ট শুনলাম তুই নাকি দেশের বাইরে চলে গেছিস।
হ্যাঁ রে হুট করেই ডিসিশন নেওয়া। তোকে খুব মিস করেছিরে।
হ্যাঁ এতোই মিস করেছিস যে যোগাযোগ করারও সময় পাসনি।
ট্রাস্ট মী তোর নাম্বারটা হারিয়ে গেছিলো। আর আগের আইডি টাও চেঞ্জ করে ফেলেছিলি।অপশন ছিলোনা কোনো। আর ব্যস্ততার মধ্যে এতো ডুবে গেলাম যে খোঁজ করার সময়ও পায়নি।
সেসব তো বুঝলাম এখন কি করছিস?
এইতো বাবার বিজনেস হ্যান্ডেল করছি পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট হিসেবে একটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতেও আছি।
খুব ভালো।
তুই কি করছিস?
এইতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছি।
দারুন ব্যাপার।
তা এখানে কি ফ্যামিলির সাথে এসেছিস নাকি?
আরেহ না।
তাহলে কি ভাবীকে নিয়ে?
না দোস্ত।
বুঝতে পেরেছি প্রেমিকা নিয়ে এসেছিস।
রাদিফ লাজুক হাসলো। অন্তিম বলে উঠলো,
থাক আর লজ্জা পাস না! তা ভাবির সাথে কি দেখা করাবি না নাকি?
হ্যাঁ হ্যাঁ আজই করাবো। তার আগে বল তোর কি খবর?
আমার আর কি অবস্থা আমি তোর মতো প্রেমিকা নিয়ে আসিনি সোজা বউ নিয়ে এসেছি।
কীইইই তুই বিয়ে করে ফেলেছিস!
হ্যাঁ। তুই মিস করে গেলি।
শিট দোস্ত। কবে করলি?
এইতো প্রায় ছয় মাস।
এতো বড়ো ধোঁকা! চল ভাবীকে দেখবো।
.
.
ওহী বোরিং হয়ে বসে আছে। সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছে তবে সেই মানুষটি ওয়াশরুমে যাওয়ার নাম করে যে গেছে এখনও আসার নাম নেই। ওহী বোরিংনেস কাটানোর জন্য সানাতকে ভিডিও কল করলো। সানাতও বোরিং হয়ে বসেছিল এমন সময় ওহীর ভিডিও কল পেয়ে খুশি হলো। তারপর রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওহী বললো,
কিরে শাকচুন্নি, দেখ কালকে তো তোরা ভালোই ঘুরলি রাতে। কতো রোমান্টিক সময় কাটালি দেখ এখন আমিও আসছি বান্ধবী। ওনার সাথে রেস্টুরেন্টে আসছি দেখ।
অত উড়িস না ফকিন্নি আমিও আসছি।
কিইই তুই কই গেছস আবার আর কার সাথে গেছিস?
আমি কি তোর মতো আমি আমার জামাইয়ের সাথে আসছি রেস্টুরেন্টে।
ও বাবাহ! আমার ভাইকে তো ভালো আঁচলে বেধেছিস দেখছি। যাক বাদ দে দেখ আমি কতো নামী দামী রেস্টুরেন্টে বসে আছি। বলেই সে ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। সানাত বলে উঠলো,
এই একমিনিট।
কি হলো আবার?
এই তোর আর আমার ব্যাকরাউন্ড সেইম কেনো লাগছে?
মানে ? আমি তো সিপি রেস্টুরেন্টে এসেছি।
কিইই!! তুই এখানে এসেছিস?
হ্যাঁ কেনো কি হয়েছে?
আমরাও তো এখানেই এসেছি। বলেই পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো ওহী তার ঠিক পেছনের টেবিলেই বসা।
কীইইইই!!! কি বলতেছিস এগুলা? হায় আল্লাহ! মীর জাফর ছেমরি আগে বলছ নাই ক্যান তোরা এখানে আসছিস? আর মরার আর কোনো জায়গা পাসনাই এইনেই আইছস?
এই ফাজিল আমি কি করে জানবো তুই প্রেম করতে এখানে আসবি?
এইসব বাদ দে দোস্ত এখন ভাইয়ার থেকে কিভাবে বাঁচবো আইডিয়া দে। ভাইয়ার সামনে একবার ধরা পড়লে সব শেষ। বাঁচা আমারে।
সানাত উঠে ওহীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
তুই তাড়াতাড়ি এখান থেকে বেরিয়ে যা।
রাদিফ তো এখন এখানে নাই। ও আসলেই ওকে বলে চলে যাবো।
তোর বয়ফ্রেন্ড কই গেছে?
ওয়াশরুমে গেছে।
হায় আল্লাহ। অন্তিমও ওয়াশরুমে গেছে।
দোস্ত আমার ভয় করতেছে। কিছু একটা করে আমারে বাঁচা। কসম আর এইসব ডেটিং ফেটিংয়ে আসমুনা।
সানাত কিছু বলতে যাবে এর মধ্যেই দেখলো অন্তিম এগিয়ে আসছে। আর তার পাশের ব্যক্তিটি আর কেউ নয় ওহীর প্রেমিক রাদিফ। দুজনকে পাশাপাশি দেখে ওহী মনে মনে বললো,
লা হাওলা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ। আল্লাহ বাঁচাইও।
সানাত একবার ওহীর দিকে তাকিয়ে বললো,
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।
অন্তিম সানাতের পাশে ওহীকে দেখে বেশ অবাক হলো। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই রাদিফ বলে উঠলো,
কিরে ভাবী কোথায়?
অন্তিম এগিয়ে গিয়ে সানাতের দিকে ইশারা করে বললো,
এই যে সানাত।
সানাত আর ওহী কেউই কিছু বুঝতে পারছেনা। অন্তিম আর রাদিফকে একসঙ্গে দেখে তাদের মাথা এই মুহূর্তে পুরো ফাঁকা। তারপর ওহীর দিকে তাকিয়ে রাদিফ বলে উঠলো,
আরেহ ওহী তুমি ভাবীকে চেনো?
তুই ওকে চিনিস? অবাক হয়ে বললো অন্তিম।
হ্যাঁ ওকে নিয়েই তো এসেছি। তোর হবু ভাবী। বলেই লাজুক হাসলো রাদিফ। আর এদিকে ওহী ঘেমে নেয়ে একাকার। আজ সে মহা ফাঁসা ফেঁসে গেছে। অন্তিম বলে উঠলো,
কি বললি?
হ্যাঁ তুই না আমার প্রেমিকাকে দেখতে চেয়েছিলি এইতো সে।
ওহী আর তুই… অন্তিমকে থামিয়ে রাদিফ বলে উঠলো,
তুই ওহীকে চিনিস? তোরা পূর্ব পরিচিত?
অন্তিম চোখ মুখ শক্ত করে গম্ভীর হয়ে বললো,
হ্যাঁ ।
ওহী তুমি তো বললে না তুমি অন্তিমকে চেনো?
ওহী কোনরকমে মাথা নিচু করে বললো,
আমার ভাইয়া।
সঙ্গে সঙ্গে রাদিফ হা হয়ে গেলো। ভয়ে তার চোখ মুখের রং বদলে গেছে। কোনো মতে অন্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
দোস্ত গালতি ছে মিস্টেক! বলেই কোনো রকমে কেটে পড়লো। অন্তিম গম্ভীর হয়ে বললো,
সানাত ওকে নিয়ে বাড়ি যাও।
#চলবে
(প্রথমেই দেরিতে পর্ব দেওয়ার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। কলেজ, পরীক্ষা, কোচিং এসবের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করছি। তবুও প্রতিদিন গল্প দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তবুও ব্যর্থ হচ্ছি। একটু মানিয়ে নেবেন।)