শেষ ঠিকানা পর্ব ৯

0
136

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_৯
#মেহরিন_রিম
বিছানার একপাশে বসে সরু চোখে হিমির দিকে তাকিয়ে আছে দিবা। বেশ কিছুক্ষন একইভাবে থাকার পর দিবা হিমির কাছে গিয়ে বললো,
_তুই সিরিয়াসলি বিয়েতে রাজি?

হিমি ফোনের উপর থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
_বলেছি যখন, মিথ্যে তো বলবনা তাইনা।

_কিন্তু তুই হুট করে মত চেঞ্জ করলি কেন?

হিমি দিবার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_সেদিন অর্নবের বাড়ি থেকে লোক আসার কিছুক্ষন আগে ওর মা আমাকে কল করে।

—–
_হ্যালো,কে বলছেন?

_আমি অর্নবের মা বলছি।

হিমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
_জি আন্টি বলুন।

_আমার ছেলেটা তোমায় বড্ড ভালোবাসে মা, তুমি দয়া করে ওকে ফিরিয়ে দিও না। ও তোমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে,আমিতো ওর মা আমি বুঝতে পারি। এর আগে তোমার সঙ্গে ওর কি হয়েছিল আমি জানিনা, কিন্তু আমার ছেলেটা হঠাৎ করে একদম বদলে গেলো জানতো। ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করতো না, সবসময় একা একা থাকতো, ওর শরীর এতো দূর্বল হয়ে গিয়েছিল যে ওকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছিল। আর তারপর তো সে বিদেশেই চলে গেলো, আমি ওকে যেতে দিতে চাইনি জানো। কিন্তু ও আমাকে বললো এখানে থাকলে ও নিজেকে সামলাতে পারবেনা, নিজের অমত থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে দূরে যেতে দিতে হয়েছিল তখন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি মা, আমি মা হয়ে বুঝতে পারি আমার ছেলে ভালো নেই। আমার ছেলেটা তোমাকে খুব ভালো রাখবে মা, তোমার কাছে আমি অনুরোধ করছি,তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাও।

——
_তুই ওনার কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে গেলি?

_আমি ওনার কথায় বিয়েতে রাজি হইনি দিবু, আমি এরপরো অপূর্বকে কল করেছি কিন্তু ও একবারের জন্যও আমার ফোনটা রিসিভ করেনি। আমার মাথায় কাজ করছিলোনা তখন। তারপর চিন্তা করলাম,যে আমাকে এতটা ভালোবাসে আমি তাকে ফিরিয়ে দেবো? যদি অপূর্ব সত্যি ই বিয়ে করে থাকে তাহলে? তাহলে তো এটা অর্নব ভাইয়ার সাথে অন্যায় করা হবে। তুই বিশ্বাস কর দিবু, অপু যদি একবার আমাকে বলতো ও শুধু আমাকে ভালোবাসে, আমি কখনো এসব চিন্তাও করতাম না।

হিমি কিছুটা থেমে আবারো বললো,
_অর্নবের মায়ের কথাগুলো শোনার পর থেকে নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছে। যে মানুষটা আমাকে এতটা ভালোবাসে,আমি তাকে অবহেলা করছি। তাও কার জন্য?যেই মানুষটা আমি হসপিটালে জানার পরও একবার আমার খোজ নেয়নি!

_তোর সব কথাই ঠিক আছে, কিন্তু তুই কি অপূর্ব কে ভুলতে পারবি? পারবি ওকে ভুলে গিয়ে অর্নব ভাইয়ার সঙ্গে সংসার করতে?

_এটাই তো আমার চিন্তার জায়গা দিবু। বারবার মনে হচ্ছে, আমি অর্নব ভাইয়াকে ঠকাচ্ছি না তো?

কোনো উত্তর দিলোনা দিবা, হিমিও আর কিছু বললোনা। এত দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকতে থাকতে অসহ্য লাগছে তার, কেন অর্নব তাকে এতটা ভালোবাসতে গেলো? কি এমন আছে তার মধ্যে?

____
_জানিনা,কেন তোমাকে ভালোবাসি এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আমার।

_কিন্তু আমি যে আপনাকে ভালোবাসি না।

হিমির কথা শুনে তার দিকে তাকালো অর্নব। তারপর আবারো ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_এখন বাসোনা, ভবিষ্যৎ এ বাসবে।

_আমি কিন্তু এখনো অপূর্বকেই ভালোবাসি।
অর্নবের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো হিমি। অর্নব এক পলক হিমির দিকে তাকালো,তবে কোনো উত্তর দিলোনা।

হিমি একইভাবে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললো,
_খারাপ লাগছে না আপনার?

_খারাপ লাগবে কেনো?

_নিজের হবু বউয়ের মুখে অন্য কারোর কথা শুনে একটুও রাগ হচ্ছেনা আপনার? আমি অপূর্বকে ভালোবাসি, কথাটা শুনে আপনার একটুও কষ্ট হচ্ছেনা?

ফোনটা রেখে দিলো অর্নব। হিমির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
_তোমাকে না পাওয়ার কষ্টের কাছে এগুলো কিছুই না।

হিমি চুপ করে রইলো। কিছুক্ষন পর বললো,
_আপনার সেদিনের দেওয়া চিঠিটা কিন্তু আমি পড়তে পারিনি।

অর্নব অবাক হয়ে বললো,
_মানে?

হিমি ওকে সবটা খুলে বললো। সবটা শুনে অর্নব খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হিমির দিকে। অত:পর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_এটাই হয়তো আমার ভাগ্যে ছিল, তোমার জন্য প্রতি মুহূর্তে কষ্ট পাওয়া।

কিছুক্ষন চুপ করে রইলো অর্নব। তারপর আবারো হিমির কাছে এসে ওর হাত ধরে বললো,
_আমি আর এগুলো নিয়ে ভাবতে চাইনা হিমপরি। আই জাস্ট ওয়ান্ট টু থিংক অ্যাবাউট দা ফিউচার। যা হয়েছে না হয়েছে সবকিছু আমি ভুলে যেতে চাই। আর এখন থেকে যা হবে সবটা ভালো হবে।

হিমি তাকিয়ে রইলো অর্নব এর দিকে। সত্যি ই কি তাই?সবটা কি আদতেও ভালো হচ্ছে? অর্নবের সাথে কি সে সত্যি ই ভালো থাকতে পারবে!

_____
সেদিনের পর কেটে গেছে আরো পাঁচদিন। আজ অর্নব আর হিমির বিয়ে। অর্নবের বাবা দেশের বাহিরে থাকায় এখনই কোনো বড় অনুষ্ঠান করা হবে না,শুধু পারিবারিকভাবেই বিয়ে পড়ানো হবে। সকলে যদিও চেয়েছিল অর্নবের বাবা দেশে ফেরার পরই ওদের বিয়ের ডেট ঠিক করতে। তবে অর্নব তাতে রাজি হয়নি, সে আর কোনোভাবেই দেড়ি করতে চায়না। যার কারণেই এত তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করা হয়।

হুর এদিক ওদিক ঘুড়ে সবকিছু দেখছে, রিপা রান্নাঘরের সব কাজ ঠিক করে হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখছে। মানিক সাহেব বাড়িতে যে দু একজন লোক এসেছেন তাদের আপ্যায়ন করছে।

কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যে হিমি যেন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। সবটাই নিজের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে সে,তবুও তার মনের মাঝে খচখচ করছে। ভুল সিদ্ধান্ত নিলোনা তো? পরক্ষণেই চিন্তা করছে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে।

মেহরুন কালারের শাড়ি পড়ে বউ সেজে বসে আছে হিমি। হাতের মেহেন্দির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ঠিক মাঝবরাবর ইংরেজি অক্ষরের A লেখা। মুচকি হাসলো হিমি, অক্ষর টা একই থাকলেও মানুষটা এক নয়। অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা হাতে নিয়ে অপূর্বের নম্বর বের করে রেখেছে হিমি। শেষবারের মতো চেষ্টা করবে কিনা ভাবছে সে, অবশেষে কলটা করলো।
হিমি মনে মনে বললো,
_প্লিজ অপু,শুধু একবার কলটা রিসিভ করো।

কিন্তু না, শেষ চেষ্টাতেও সফল হলোনা হিমি। চোখ বন্ধ করে কয়েকবার গভীর নিঃশ্বাস নিলো। অত:পর কাপা কাপা হাতে অপূর্বের নম্বরটা ব্লক করে দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই অন্য একটা নম্বর থেকে কল এলো হিমির ফোনে। মনের মাঝে যেনো এক আশার সঞ্চার হলো হিমির। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে এক ব্যাক্তি বললো,
_হ্যালো?এটাকি হিমির নম্বর।

কণ্ঠ শুনেই হিমি বুঝে গেলো এটা অপূর্ব নয়। চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলো,
_জি বলুন।

_তোমাকে কিছু কথা..

আর শুনতে পারলোনা হিমি। ফোনটা কান থেকে সরিয়ে দিয়ে হুর তড়িঘড়ি করে বললো,
_সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে আপু, চল।

_আরে কিন্তু আমার ফোনটা দে,আমি কথা বলে..

_কথা পড়ে বলবি, এখন চল তো।

কথাটা বলেই হুর ফোনটা বিছানায় ফেলে দিয়ে হিমিকে নিয়ে চলে যেতে লাগলো। ফোনের অপর পাশ থেকে এখনো সেই ব্যাক্তি হ্যালো হ্যালো বলে চলেছে তবে তা কেউ শুনতে পাচ্ছে না।

হিমি পিছন ফিরে একবার ফোনের দিকে তাকালো। তারপর আবারো সামনে তাকালো হিমি। হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলেছে তার। যেনো এক নতুন জীবনে পা দিচ্ছে সে। মনে মনে ভাবলো,
_আমি কি আদতেও ঠিক করছি! এর পরিণতি ভালো হবে তো?

#চলবে

[গত পর্বে আপনাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখে বেশ ভালো লেগেছে আমার। আপনারা এত সুন্দর মন্তব্য করেছেন যে আমার লেখার ইচ্ছে আরো অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, বাস্তবতা সব সময় আমাদের মনের মতো হয়না।
আপনাদের মন্তব্য পড়তে খুবই ভালো লাগে আমার, এভাবে পাশে থাকবেন আশা করি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here